X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনায় জামায়াত-শিবির

শান্তনু চৌধুরী
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:০৩আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৩১

শান্তনু চৌধুরী নির্বাচন নিয়ে সরব এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। আওয়ামী লীগ আক্ষরিক অর্থেই চালু করে দিয়েছে নির্বাচনি ট্রেন। বিএনপি ট্রেন চালু করবে কিনা এ নিয়ে দোলাচলে এখনও। নানা শর্তে আবদ্ধ দলটি। এরমধ্যে যুক্তফ্রন্ট গঠন হয়েছে। হয়েছে রাজনৈতিক নতুন মেরুকরণও। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই নানা আলাপ আলোচনা চলছে। ঝড় উঠছে চায়ের কাপ থেকে শুরু করে টকশোর আসরেও। এরই মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হয়েও আলোচনায় জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ বা জামায়াত-শিবির। নতুন ঐক্য গড়ার সপ্তাহ গড়ালো মাত্র। কিন্তু এরই মধ্যে জামায়াত ইস্যুতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে। সেই ঐক্যের ক্ষেত্রে আগুনে ঘি হিসেবে বাক্যবাণ ছুঁড়ছে বিএনপির নেতারা তাদের বক্তব্যসহ টেলিভিশনের টকশোতে।
বেশ কিছুদিন প্রক্রিয়া চলার পর ১৫ সেপ্টেম্বর বিকল্পধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণফোরামের ড. কামাল হোসেন মিলে গড়ে তোলেন জাতীয় ঐক্য। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর তারা সমাবেশও করে। যেখানে যোগ দেয় বিএনপি। তার আগে তারা ৯টি লক্ষ্য ও ৫ দফা দাবিমালা পেশ করেছেন। কিন্তু বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে তারা যখন বিএনপির সঙ্গে যেতে চাচ্ছে বা অন্যদিকে বলা যায় বিএনপি যখন চাচ্ছে এই জোটটি তাদের সঙ্গে মিলে সরকারবিরোধী একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলুক বা সরকার হটানোর আন্দোলনে শামিল হোক, সেক্ষেত্রে কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। যদিও এটি বলে দেওয়া সহজ যে, জামায়াত কোনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয় এবং একই সঙ্গে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না নিজেদের ব্যানারে। সেক্ষেত্রে এদের নিয়ে কথা বলার কী আছে! বিষয়টা সরলীকরণ হলে সমস্যা হতো না। বিষয়টা আদৌ সহজ নয় এই কারণে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘হরিহর আত্মা’ হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। সবসময় বিএনপির পুরো সমর্থন পেয়ে আসছে জামায়াত। আর তার প্রতিদান দিতে কখনও ভুলে না ইসলাম ধর্মভিত্তিক এই দলটি। ২০০১ থেকে ভোটের ভিত্তিতে যে জোট নির্ধারিত হয়েছে, সেই বিষয়টির দিকে যদি আমরা তাকাই তবে বুঝতে পারি, বিএনপিকে জামায়াত থেকে আলাদা করার কোনও সুযোগ নেই। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যে হৃদ্যতা সেটি কখনও ছিন্ন হওয়ার নয়। কারণ, জামায়াতের অতীত ইতিহাস সুবিধা নিয়ে মিশে থাকা। তেমনি বিএনপিও জানে জামায়াতের বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে দেশে। যেটা এখন তারা প্রকাশ্যে বলছে, তাদের নতুন বন্ধুদের চেয়ে এই ভোট কোনও অংশে কম নয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন হয়ে ফেরার পর সেই কণ্ঠ আরও উচ্চ হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘জামায়াতকে ছাড়ার প্রশ্নই আসে না’। তার মানে দলের নীতিনির্ধারকরা কোনও মতেই জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে রাজি নন। বিএনপির এখনকার রাজনীতি এবং জামায়াতের যে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই এই দুটো এক হয়ে যাওয়ার কারণে সেটি বোধহয় আরো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। নইলে গেলো নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত ছাড়ার জন্য বিএনপিকে নানা মহল থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে বিষয়টি গেলো কয়েকবছরে আরো সামনে আসে। কিন্তু নানা সমালোচনার মুখেও বছরের পুরনো মিত্র জামায়াতকে ছাড়তে চাইছে না বিএনপি। আগামী নির্বাচনে জোট গঠনে জামায়াতকে বাদ দিয়ে নানা সমীকরণকেও উপেক্ষা করছে দলটি। এর একটাই কারণ, বিএনপি মনে করে রাজপথের শক্তি ও ভোটের হিসেবে জামায়াত নির্ভরযোগ্য বন্ধু। সংবাদমাধ্যম বলছে, দুর্নীতির দণ্ড মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া কোনোভাবেই ছিন্ন না করার। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের যা কিছু অর্জন সবই এসেছে বিএনপির হাত ধরে। এ প্রসঙ্গে একটু ইতিহাস আলোচনা করলে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ৭৫-এর পর জামায়াত বিএনপির কাছ থেকে যতো সুযোগ সুবিধা পেয়েছে পৃথিবীর আর কোনও দেশে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকা দল বা ব্যক্তি এতো সুযোগ সুবিধা পায়নি। 

ইতিহাস বলছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের প্রশ্রয়ে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামে জামায়াত কাজ শুরু করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই পালিয়ে যাওয়া গোলাম আযম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এলে ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ নামে দল গোছানোর কাজ শুরু হয়। নিজ নামে জামায়াত বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে। সেবার তারা ১০টি আসন লাভ করে। এরপর ১৯৯৬ সালে ৩টি, ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করে ১৭টি আর ২০০৮ সালে দু’টি আসন লাভ করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জামায়াতের দু’জন মন্ত্রী ছিলেন। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২৫শে মার্চ যুদ্ধাপরাধের বিচারে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ। ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, ‘জামায়াতের গঠনতন্ত্র শুধু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকই নয়, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল।’ পরে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। ফলে দলটি এখন আর দলীয়ভাবে এবং দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, কিন্তু দল হিসেবে জামায়াত এখনও বৈধ একটি রাজনৈতিক সংগঠন। কারণ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাধিকবার সংসদে আইন পাস করে দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বললেও এখনও সেটি হয়নি। এখানে আওয়ামী লীগের গড়িমসির বিষয়টি বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা কেন এখন পর্যন্ত সেটি করতে পারলো না সেটিই বড় প্রশ্ন। কারণ, সারাদেশে জামায়াতের সমর্থন যে একেবারে তলানির দিকে সেটি স্থানীয় নির্বাচন বিশেষ করে সিলেট সিটি নির্বাচনে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে একথাও উঠেছে জামায়াতের কট্টরপন্থীরা অনেকেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ার ফলে দলটির গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছে। অধিকাংশ জঙ্গির অতীত যে ‘জামায়াতে ইসলামী’ সেটা বারবার প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে প্রথম দফায় আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। এবং সে কারণে ২০০১-এ ক্ষমতায় ফিরে বিএনপি, জামায়াত নেতাদের মন্ত্রিত্ব দিয়ে আরো মর্যাদার আসন দিতে পেরেছে। এরপরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে চুপ সবাই। বিশেষ করে সামনে নির্বাচন। তবে একথা ঠিক যে ১৯৪১ সাল থেকে জামায়াত যতবারই বিপর্যয়ের মুখোমুখি পড়েছে ততবারই তারা সেটা কাটিয়ে উঠেছে নানা কৌশলে। জামায়াত এই উপমহাদেশে দুবার নিষিদ্ধ হয়েছে। একবার পাকিস্তানে, আরেকবার বাংলাদেশে। জামায়াতের রাজনীতির সূচনা হয়েছিল ১৯৪১ সালে। অবিভক্ত ভারতে সেই বছরই ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’ নামে একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে যখন ভারত থেকে পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটির উদ্ভব প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন সেই প্রক্রিয়ার বিরোধিতাই করেছে ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’। অর্থাৎ জামায়াত তখন মুসলমানদের জন্য আলাদা কোনও দেশ চায়নি। কিন্তু দেশভাগের পর পাকিস্তান চলে যান জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী। ১৯৪৮ সালে তিনি ‘ইসলামী সংবিধান’ ও ‘ইসলামী সরকার’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার করতে থাকেন। ফলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মারা গেলে সবকিছু উলটপালট হয়। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান জামায়াতের ‘ইসলামী সংবিধানের রূপরেখা’ গ্রহণ করে মওদুদীকে মুক্তি দেয়। পাঁচ বছরের মধ্যে মওদুদীর নেতৃত্বে আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়। দলটি তখন আহমদিয়াদের ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করার দাবিতে মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়। লাহোরে বেঁধে যায় দাঙ্গা। এতে কমপক্ষে দু’শ জন আহমদিয়া মারা যান। দাঙ্গার পর মওদুদীসহ জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকেই গ্রেফতার করা হয়। তখন সামরিক আদালতে মওদুদীর ফাঁসির আদেশও হয়। কিন্তু সেই আদেশ আর কার্যকর হয়নি। একপর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড লঘু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তারপর যাবজ্জীবনের দণ্ডও মওকুফ করে মুক্তি দেওয়া হয় মওদুদীকে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় আসেন আইয়ুব খান। তিনি সব ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। ফলে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়। ১৯৬৪ সালে আইয়ুব সরকার মওদুদীকে আবার জেলে পাঠায়। কিন্তু সে বছরই আবার মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। এতো গেলো ভিনদেশের ইতিহাস। এবার বাংলাদেশের প্রসঙ্গ যদি বলি, ১৯৭১-এ জামায়াত শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাই করেনি, হত্যা, লুট, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে পাকিস্তানের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। তারা চেয়েছে যেন বাংলাদেশের জন্ম না হোক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দলটি নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফেরানোর নামে জামায়াতকেও ফিরিয়ে আনে রাজনীতিতে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে মূল রাজনৈতিক স্রোতে ফিরিয়ে আনতে বিএনপির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ঐতিহাসিক ও দীর্ঘ পরীক্ষিত বন্ধুত্ব রয়েছে, যা সহজে ভাঙার প্রশ্নই আসে না। কাজেই ড. কামাল গংদের কথায় সেটি নষ্ট হবে এমনটি ভাবার কারণ নেই। জামায়াতকে রেখে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সারা জীবনে করিনি, শেষ জীবনে করতে যাবো কেন? ওরা তো এখন দলও না। নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।’ বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের ঘোষণায় এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা ছাড়া এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও নাগরিক সমাজ এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে পারবে।’ প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিতে কারা স্বাধীনতাবিরোধী দল বা ব্যক্তি, তা সবাই জানেন। বিএনপির জন্ম স্বাধীনতার অনেক পরে। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও মুক্তিযোদ্ধা। ফলে বিষয়টি যে জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে সেটি বলাই বাহুল্য। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে নতুন ঐক্যের এই আবেদন পুরোটা মিলিয়ে ততটা জোরালো বলে মনে হয় না। কারণ, তারা জানেন বিএনপির কাছে তাদের চেয়ে জামায়াতের কদর বেশি। তারা এও জানেন, বিএনপি যদি জামায়াতকে ছাড়তো সেটি অনেক আগেই ছাড়তো।

ইতোমধ্যে জামায়াতও বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কয়েক সপ্তাহে সারাদেশে গোপন বৈঠকের সময় গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মীকে। মন্ত্রী এমপিরা আবারো জামায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন। সংসদে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গুজব ছড়ানো ও মন্ত্রী সাংসদদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ফেসবুকে অনেক পেজ খোলা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত দেশের বাইরে থেকে এসব পেজ পরিচালনা করছে। এজন্য গুজব শনাক্ত ও প্রতিরোধ সেলও গঠন করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দিয়েছে জামায়াত সম্পর্কে ভয়ঙ্কর তথ্য। নির্বাচনের আগে তারা বড় ধরনের নাশকতা করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এমনকি পুলিশের ওপর লাগাতার হামলার কথাও বলা হয়েছে এতে। গ্রেফতার শিবির নেতাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সংবাদমাধ্যকে জানাচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরপরই তারা মাঠে নামবে। সব মিলিয়ে বলা চলে, দল হিসেবে নিবন্ধিত না হয়েও এবং সক্রিয় না থেকেও আলোচনায় তুঙ্গে এখন জামায়াত-শিবির। সেটি যতই নেতিবাচক হোক না কেন। 

নির্বাচনি ওয়ার্মআপে আওয়ামী লীগ বা বিশ দলীয় জোট যতটা এগিয়েছে সে তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে বিএনপি। ১৪ বা আঠারো দলীয় জোট বলছি না এই কারণে যে, ইসলামী দলগুলো কিন্তু তাদের ভোটের রাজনীতির গন্তব্য ঠিক করে ফেলেছে। কাজেই সময় বেশি নেই বিএনপির জন্য। যদি নির্বাচনে যেতে চায় দলটি তবে কালক্ষেপণ যেন আর না হয়। এছাড়া সামনের সময়টিও সুসময় হবে বলে মনে হচ্ছে না। আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে বা সব দল মেনে নেবে এমন কোনও ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনি প্রক্রিয়া এখনও বের করা যায়নি। আলোচনা হবে বলেও মনে হয় না। জনগণেরও তেমন মাথাব্যথা নেই সংবিধানের বাইরে যাওয়ার। ফলে আগামী কয়েক মাস রাজনীতির মাঠ স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ যদি না থাকে তবে এই অমসৃণ মাঠেই ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা চালাবে জামায়াত-শিবির। আবারো প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে নিজেদের। সেটি শক্তি, সামর্থ্য বা প্রদর্শনী দিয়ে। যেমনটি তারা অতীতে নানাভাবে করে ফিরে এসেছে। এতে কোন দলের কী ক্ষতি হলো তাতে জামায়াত-শিবিরের কিছুই যায় আসে না।

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ