X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোচিং ও গাইড বই বাণিজ্য

তুষার আবদুল্লাহ
০৬ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৪৯আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৩২

তুষার আবদুল্লাহ গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ যেতে হয়েছিল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে। সন্ধ্যার পর বৈঠক। শহরের একটি খ্যাতনামা স্কুলে বৈঠকের স্থান। আমরা সাতটার দিকে স্কুলে পৌঁছে যাই। ধারণা ছিল, ওই সময়ে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরা থাকবেন না। স্কুল ফাঁকা থাকবে বলেই সেখানে বৈঠক হবে। কিন্তু স্কুলে গিয়ে দেখি সরগরম। শিক্ষার্থী অভিভাবকে ভরপুর। ক্লাসে ক্লাসে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবক। শিক্ষার্থীরা স্কুল ইউনিফর্ম পরা নেই। খোঁজ নিয়ে জানলাম, ক্লাস শেষে তারা বাড়িতে চলে গিয়েছিল। আবার সন্ধ্যায় ফিরে এসেছে কোচিংয়ের জন্য। কোচিং ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরা বসে ক্লাস করছেন, অর্থাৎ পড়া বুঝে নিচ্ছেন। কোচিং করাচ্ছেন ওই স্কুলের শিক্ষকরা। পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে বাধ্য করা হয় কোচিংয়ের জন্য। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, পরীক্ষায় ছেলে-মেয়েদের ভালো ফলের জন্য স্কুল শিক্ষকদের দিয়ে তারা কোচিং করাতে বাধ্যই হচ্ছেন। এর কোনও বিকল্প তাদের সামনে নেই। স্কুলের বাইরের শিক্ষক দিয়ে পড়িয়ে ফায়দা হচ্ছে না। স্কুলের পাঠাগার দেখার সুযোগ হলো। মুগ্ধ হওয়ার মতো পাঠাগার। ভালোমানের বইতে সমৃদ্ধ। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিংয়ে সময় দেবে নাকি পাঠাগারে?

কৈশোর তারুণ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেশের নানা প্রান্তের স্কুলে যেতে হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলি। স্কুলে কিছু সময় কাটানোর কারণে, স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলেই কোচিংয়ের মতো বিষয়গুলো আড়ালে রাখতে পারেন না। কারণ স্কুল সময়ের পরেও যখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্কুলে রয়ে যান, তখন দেখা যায় জমে উঠতে থাকে স্কুল কোচিং। বিষয়গুলো রাজধানীসহ দেশের সব জেলা-উপজেলা শহরেই প্রকাশ্য। আরেকটি বিষয় এখন প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে, গাইড বই বা সহায়ক বই বাণিজ্যের সঙ্গে শিক্ষকদের সরাসরি সম্পর্ক। যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো গাইড বা সহায়ক বই প্রকাশ করে, তাদের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষকরা। তারা ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্য করেন তাদের সঙ্গে চুক্তি হওয়া বা কমিশন পাওয়া প্রকাশনীর গাইড বই কিনতে। ওই গাইড বই থেকে উত্তর না লিখলে নম্বরও পাওয়া যায় না। প্রকাশনীগুলো এখন স্কুল-কলেজ দখল করে অনেকটা নিলামের ভিত্তিতে। যে প্রকাশনী যত বেশি টাকা দেবে শিক্ষকদের, সেই প্রকাশনীর বই ওই স্কুল-কলেজে প্রবেশ করতে পারবে। স্কুল-কলেজের নানা রকম অনুষ্ঠানের স্পন্সর করছে গাইড বই প্রকাশকেরা। ফলে কৃতজ্ঞতাবশত তাদের গাইডবই শিক্ষার্থীদের হাতে তো তুলে দেবেনই শিক্ষকরা। গাইড বই ব্যবসায়ীরা কোনও কোনও স্কুল-কলেজে বাৎসরিক কোটি টাকার ওপরে ব্যবসা করছেন। ফলে দেখতে পাচ্ছি স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা মূল পাঠ্যপুস্তক প্রায় ছুঁয়ে দেখছে না বলা যায়। আমরা কৈশোর তারুণ্যে বই-থেকে বইমেলা আয়োজন করার সময়ে শিক্ষার্থীদের মুক্তগদ্য লিখতে বলি। শিক্ষার্থীরা ৩০০-৫০০ শব্দের মধ্যে নিজের মতো করে কিছু লিখুক, সেটাই আমরা চাই। সাধারণ কিছু বিষয় দেওয়ার পর দেখলাম, যে বিষয়গুলো গাইডবইতে পাওয়া যাচ্ছে, সেই বিষয়ে হাজার শব্দ লিখে ফেলছে তারা। একই লেখা সবাই লিখছে বিরতি চিহ্নসহ হুবহু এক। কিন্তু গাইড বইয়ের সঙ্গে মিলবে না এমন বিষয় দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের হাতেগোনা কয়েকজন ছোট করে কিছু লিখে দিতে পারছে। আমরা তাতেই আত্মহারা। যাক নিজে থেকে লিখতে পেরেছে কেউ।

কিন্তু কোচিংয়ের বিরুদ্ধে এত অভিযান। সেই অভিযানের ফলতো দেখা যায় শূন্যই। স্কুলের কোচিং যখন বন্ধ করা গেলো না, তখন আর অভিযানের ফল খুঁজে লাভ কী? স্কুলের বাইরের কোচিং সেন্টারের বাণিজ্য এখনও রমরমা। গাইডবই ব্যবসায়ীদের টাকার উত্তাপে শিক্ষকরা নিজেদের নৈতিকতা বিকিয়ে দিচ্ছেন তাদের কাছে। শুধু কি শিক্ষক? শিক্ষার নীতি-নির্ধারকরাও এই বেচা-বিক্রির বাইরে নন। অতএব যতদোষ সন্তানদের কাঁধে কেন তুলে দেই? ওরা পাঠ্যসূচির বাইরের কিছু শিখছে না। কোচিং ছাড়া ভালো ফল করতে পারছে না। এর সব দায় কিন্তু আমাদেরই। সন্তানদের আমরা পণ্য বানিয়ে বাণিজ্য করছি, এখানে শিক্ষার মান খুঁজে লাভ নেই।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
জেল থেকে বেরিয়ে ফের শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রে জড়ান শিশুসাহিত্যিক টিপু!
জেল থেকে বেরিয়ে ফের শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রে জড়ান শিশুসাহিত্যিক টিপু!
বক্সিংয়ে বাংলাদেশকে সোনা এনে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জিন্নাত
বক্সিংয়ে বাংলাদেশকে সোনা এনে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জিন্নাত
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ