X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বদলায়, কিন্তু আসলে বদলায় না

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:১৪আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:১৭

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা সুবিধার পায়ে নীতিকে বিসর্জন দিতে না পারলে নাকি রাজনীতি হয় না। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক মেরুকরণে এমনটাই ধারণা হতে পারে অনেকের। কারণ, এদেশের রাজনীতির বড় বৈশিষ্ট্য হলো, যত পরিবর্তন ঘটে, ততই অপরিবর্তিত থেকে যায়। সরকার পরিবর্তনের জন্য বিএনপি কিছু অতি পুরনো মুখকে নতুন করে ডেকে এনেছে। এটি একটি বড় পরিবর্তন অবশ্যই। তবে নিজে অপরিবর্তিত রয়েছে জামাতসহ ২০ দল জিইয়ে রেখে এবং হাত সম্প্রসারিত করেছে ১/১১ নামের দর্শনের কারিগরের সঙ্গে মিলে। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আ.স.ম. আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই পরিচিত মুখগুলো বিএনপির এই সমীকরণ মেনে নিয়ে বিএনপির হাত ধরেছেন, যেই হাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও একুশে আগস্টের ভয়াল গ্রেনেড হামলার দোসরদের হৃদয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত।
একথা ঠিক যে ড. কামাল হোসেনরা সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে চেয়েছেন। রাজনীতিতে আপস থাকে। তবে এই এক অন্যরকম সমঝোতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর আমলে সংবিধান প্রণেতা, নিজেকে এখনও দাবি করে থাকেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। সেই তিনি এমন এক দলের সঙ্গে গিয়েছেন যাকে পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত বলে এবং যে দল বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বারবার পুরস্কৃত করেছে। ড. কামাল নিজেও একথাগুলো নিশ্চয়ই বিশ্বাস করতেন যখন তিনি আওয়ামী লীগ করতেন।

বিএনপি ড. কামাল বা সুলতান মনসুরের আদর্শ ধারণ করে না, একথা প্রকাশ্যেই বলেছে। কিন্তু এখন তার সামনে অন্য সমস্যা। দলটি স্পষ্ট করে দিয়েছে আগামী নির্বাচনে তাদের প্রধান চাওয়া শেখ হাসিনার শাসনাবসান। তাই এ মুহূর্তে ড. কামালকে সামনে রেখে বিএনপি এগুতে চায়। কারণ, দেশের মানুষের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তির সংকট আছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, বিএনপি লাভ খুঁজছে, এবং খোঁজাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দলের হাত ধরলে ড. কামালদের রাজনৈতিক লাভ কী? এ প্রশ্নের জবাব একটাই। রাজনীতিতে একজন নেতা বা একটি দল অনেক সময় এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় যাতে তাদের রাজনৈতিক লাভ নেই, কিন্তু ব্যক্তিগত লাভ আছে। তার সামনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মুলা ঝোলানো আছে। এ এক ধরনের প্রলোভনের চাপ হয়তোবা।

সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারাকে জোটে নিয়েও নেননি ড. কামাল। বাসায় দাওয়াত দিয়ে সটকে পড়েছেন। দরজা থেকে ফিরে এসে অভিমান করেছেন। এখন ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বাসায় পাঠিয়েও মান ভাঙাতে পারেননি জোট নেতারা। তবে বিকল্প ধারা না আসায় খুশি বিএনপি। জামায়াত প্রশ্নে বিকল্প ধারার অবস্থান কোনও মতেই স্বস্তি দিচ্ছিলো  না বিএনপিকে। সেদিক থেকে ড. কামাল, সুলতান মনসুর, আ.স.ম. আবদুর রব এবং মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির জন্য অনেক স্বস্তিদায়ক। কারণ, তারা জামায়াতকে বিএনপির বলয়ে রেখে চলতে সমস্যা মনে করছেন না, জামায়াত ছাড়ার চাপও দেননি।  

ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপি এক নতুন যুগ শুরু করছে কিনা, করলে তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে, তার অপেক্ষায় সবাই। তবে বলতেই হবে ড. কামালরা এক রূপান্তর পর্বের মধ্যে প্রবেশ করেছেন। নির্বাচনে কী ফলাফল হবে তা এখনই বলা যাবে না। তবে, নির্বাচনে জিতুক বা না জিতুক, বিএনপির ক্ষমতার নাটাই সবসময় তারেক রহমানের হাতেই আছে এবং থাকবে এবং বিএনপির সামগ্রিক দর্শনে জামায়াতের ব্যাপক প্রভাব সবসময়ই প্রাধান্য পাবে। সেই প্রেক্ষাপট থেকে এদেশে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মেরুকরণ বহমান। সেখানে নিজেদের কীভাবে মানানসই করবেন অসাম্প্রদায়িক বলে পরিচিত এই নেতারা?

ড. কামালরা যখন বিএনপিকে আলিঙ্গন করেছে, তখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়লো জেবেল রহমান গাণি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ এবং খন্দকার গোলাম মর্তোজা নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি)। মঙ্গলবার তা এই ঘোষণা দেওয়ার সময় জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে যাদের অগ্রণী ভূমিকা লক্ষ করেছি, তাদের অনেকেই ১/১১ সরকার প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তারা অনেকেই মাইনাস টু ফর্মুলায় জড়িত ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, সে মামলার নায়ক ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের উপদেষ্টা যখন বিএনপির পাশে থাকে তখন আমরা ব্যথিত হই।’

এটিও এক নতুন মেরুকরণ। দেখতে হবে আর কত কী অপেক্ষা করছে। ড. কামালরা বলছেন, দেশে একটি ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে, যার ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাবার জন্য তারা বিএনপির সঙ্গে জামায়াত আছে জেনেও তার প্রতি কৌশলগত ‘নমনীয়তা’ দেখাচ্ছেন তারা। কিন্তু এটি দ্বিচারিতার শামিল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করার জন্যই জোট ঠিক আদর্শিক নয়, যতটা আদর্শিক তাদের প্রচারণা। যেসব অভিযোগ এই সরকারের বিরুদ্ধে আছে যেমন গণবিরোধী, দুর্নীতিগ্রস্ত ইত্যাদি, ঠিক এই অভিযোগগুলোর সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের তকমা নিয়ে বিদায় নিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। তাহলে তারাই মিত্রশক্তি হয়ে যায় কীভাবে? শুধু ভোটের জন্য? আসলে রাজনীতি করতে গেলে গণভিত্তি লাগে, সেটি যার নেই সে যতই জোট করুক, বরাবরই বিভ্রান্ত ও অপ্রাসঙ্গিক থাকে রাজনীতির ময়দানে। ভাবনাহীন সমঝোতায় দুই আর দুইয়ের যোগফল চার না হয়ে শূন্যও হয়ে যেতে পারে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ