X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

দফতরি বুদ্ধিজীবী

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩৫আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩৭

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলাদেশের সমাজ জীবনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা, যারা বুদ্ধিজীবী নামে পরিচিত তারাই শ্রেষ্ঠ। আরও বেশি অগ্রসর যদি তিনি হন কোনও সামন্তের সন্তান। বুদ্ধিজীবী মাত্রই উপদেষ্টা, তারা সমাজ ও রাজনীতির শুভচিন্তক। তারাই ‘নসিহত হোসেন’, জাতির পায়ে আঘাত করায় এদের জুড়ি নেই। এর টাটকা নমুনা আমরা সম্প্রতি দেখতে পেয়েছি।
পাড়ার ‘ছিঁচকে মাস্তান’ তারা নন। কিন্তু তাদের মতোই আস্তিন গুটিয়ে, গলার শিরা ফুলিয়ে, ভুলভাবে স্যুট আর টাই পরার মাঝখান থেকে বেরিয়ে এসেছে কণ্ঠ-বিস্ফোরণ। এই বুদ্ধিজীবীরা সর্বত্র বিরাজমান। এরা আসলে ব্যাপক কিছুর প্রতীক। এরাই সুশাসন, এরাই প্রগতিশীল। কোনও বিরুদ্ধ মত সইতে না পারলেও এরাই সামাজিক উদারবাদী। কেননা, এরা সকলেই বৃহদার্থে সমাজের সামাজিক-অর্থনৈতিক শ্রেণিগুলোকে বিভাজিত করতে পারেন। অর্থাৎ এদের অবস্থানটা হলো বিদ্যমান ক্ষমতাকাঠামোকে এমনভাবে টিকিয়ে রাখা, যাতে সামাজিক-অর্থনৈতিক বঞ্চনাগুলো বজায় থাকে এবং বঞ্চিতদের কোনও নিজস্ব সক্ষমতা না থাকে।

১/১১ নামের সেই কোনও এক ভালো সরকারের ‘জাবর কাটে’ এখনও কেউ কেউ। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করতে গিয়ে সেই প্রত্যাখ্যাত মানুষদের রাজনীতির পথ এখন শনৈ শনৈ ধাবমান। ক্ষমতার ক্ষির-ননী খাওয়া নধর একজন সেই প্রত্যাখাত ১/১১ সরকারের বুদ্ধিজীবী উপদেষ্টা। এখন তিনি বিরোধী নিধন, দুর্বৃত্ত পোষণ, ধর্ষণ; শাসন-নিষ্ক্রিয়তা, দরিদ্র-নিপীড়িতদের ক্ষমতায়নের নতুন মিশনে সামনের কাতারে।

এই ‘নসিহত হোসেনরা’ আসলে কারা? এরা আসলে সমাজের প্রাচীন উচ্চবর্গীয় কাঠামোকে মজবুত করার কারিগর। এরা বরাবরই কুকর্মের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী। সামনের নির্বাচনকে সামনে রেখে জেগে ওঠা দফতরি বুদ্ধিজীবী। তাই মতাদর্শগত ও সাংগঠনিক পুষ্টিহীনতায় শীর্ণ একটি দলের বল সংগ্রহের জন্য বন্ধুবৃত্তটা বাড়াতে এগিয়ে এসেছেন। কারণ চরিত্র তো একই।

পরিস্থিতি বদলেছে, এখন আর সামন্ত প্রথা নেই। কিন্তু দীর্ঘ অভ্যাসে যার বুদ্ধি নিষ্ক্রিয় এবং দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়, তার ব্যাধির নিরাময় অতি কঠিন। কোনও এক ব্যারিস্টারের সেই রোগই হয়েছে। অর্থাৎ তার বোধ নেই যে পরিস্থিতি তার অনুকূলে নেই। আভিধানিক অর্থে মইনুল সামন্ত প্রভু। আজকের বাংলাদেশের দরিদ্র, অবদমিত, ক্ষমতাবৃত্তের বহু দূরে থাকা নিষ্পেষিত জনতার পক্ষে তার কণ্ঠস্বর কখনও জোরালো হয়নি। হয়নি বলেই আজকের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে তার সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ।

টকশোতে মাসুদা ভাট্টির সঙ্গে ব্যারিস্টার মইনুলের আচরণ নতুন দিক উন্মোচন করেছে। দেখছি কতজন, কত প্রকারের এই বিতর্কে ঢুকে নিজস্ব কৃতিত্ব জাহিরের চেষ্টা করছে। দেশের বিদেশে অনেকেই যে ভাষা ব্যবহার করছে, তাদের সুশীল বদনও চিনতে সুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে নারীবাদ ইস্যুতে। নাগরিক, শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত সমাজের পরিসরে যারা বিচরণ করেন, যারা গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে খুব সক্রিয়, যারা রাজনীতির গতি-প্রকৃতির খোঁজ রাখেন তারা বাস্তব কারণেই পুরুষতন্ত্র ও নারীর অধিকার নিয়ে সচেতন থাকেন।

ব্যারিস্টার মইনুল বলছেন তিনি রাগের মাথায় বলে ফেলেছেন। কিন্তু যেসব বড় সম্পাদক বা কলামিস্ট মইনুলকে গালি দেওয়ার ছলে মাসুদাকে আবারও চরিত্রহীন বলছেন, তারা বড় জায়গা দখল করে আছেন ঠিকই, তবে আলোকপ্রাপ্ত নন। সামাজিক নারী-আন্দোলনে এরা শরিক হয় ঠিকই, তবে তারা দেহতত্ত্ব এবং নারীদেহের চাহিদা থেকে বের হতে পারছেন না। বলা যায় এরা সেসব লোভী ও ভীতু  পুরুষ, যারা নিজের আশু ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় নাজেহাল। আসল কথা হলো, আমাদের দেশে বহু শিক্ষিত মানুষ দ্বিধাহীনভাবে নারী চরিত্রের বিশ্লেষক এবং দ্বিধাহীনভাবে তারা সেই মনোভাব প্রকাশ করে থাকেন।

আরেক দল আছে যেখানে নারী পুরুষ উভয়েই এক নারীবাদ চর্চা করেন, যা গড়ে উঠতে চায় নারীকেই আক্রমণ করেই। নাম আর যশের মোহে বা আলোচনায় থাকার ইচ্ছায় মোক্ষম সময়ে আঘাতটা তারা নারীকেই করেন। কিংবা প্রগতিশীল লেখক/বুদ্ধিজীবীরাই তাদের সবসময়ের আক্রমণের শিকার।

মইনুলের পক্ষ নেওয়ার অনেক প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণি আছে। কিন্তু আছে আরও অনেক যারা আমাদের চাপরপাশেই থাকে, প্রগতিশীলতার দাবি করে। তারা আসলে পুরুষ বা নারী, কিন্তু মানুষ হয়নি। এরা সস্তা, এরা অশালীন।

আমাদের নাগরিক জীবনে এই যে লেখক, সম্পাদক, বুদ্ধিজীবী, যারা আমাদের চারপাশে অবস্থান করে নারীকে আক্রমণ করে, আক্রমণকে সমর্থন করে, তাদের নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। নারী টকশোতে আক্রমণের শিকার হবে, রাতে সিএনজি করে কেন ঘরে ফিরছে তাই সে পুলিশি আক্রমণের মুখেও দৃঢ় থাকবে। আর এভাবেই সে বদলাবে প্রতিদিন। কিন্তু সেইসব পুরুষ আর নারী, যারা চরিত্র বিশ্লেষণকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আবার চারিত্রিক হয় উঠতে চায়, তারা বদলাবে না। তারা একই জায়গায় স্থবির। এদের মনোজগতে নারী কিংবা মানুষ সেই এক প্রতিপক্ষ যাকে চোখ রাঙানো যায়, শায়েস্তা করা যায় বা বারবার প্রতিশোধ নেওয়া যায়।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘আমি কোনও ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না’
‘আমি কোনও ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না’
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ