X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে নতুন করে পরীক্ষা এবং কয়েকটি প্রশ্ন

রেজানুর রহমান
২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৪০আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৩৩

রেজানুর রহমান কী মজা! বিরাট সুখবর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আবারও পরীক্ষা দিতে হবে। তাদের প্রমাণ করতে হবে যে, তারা প্রকৃত অর্থে মেধাবী। এ যেন আলোচিত সেই ছোট গল্পের মতো, ‘কাদম্বরী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’। এই মাসের ১২ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ ‘ঘ’ ইউনিটের এই ভর্তি পরীক্ষায় লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছিলেন। বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়ায় কী কষ্ট করেই না তারা ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ দেশের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হতে থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করে। পাশাপাশি পরীক্ষার ফলও প্রকাশ করা হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য ছিল, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলবে। কিন্তু পরীক্ষা বাতিল করা হবে না। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহলে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমন খবরও শোনা যায়, ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় যিনি পরীক্ষার্থী প্রথম হয়েছেন, তিনি নাকি অন্য একটি ইউনিটের পরীক্ষায় পাসও করতে পারেননি। পরীক্ষার ক্ষেত্রে এমন আরও অনেক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বাতিল না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। ফলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী, বিশেষ করে যারা কোনও ধরনের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিল না তাদের মাঝে একটা স্বস্তি ফিরে আসে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরবর্তী ধাপের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমনই এক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলো ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থীকেই আবার নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে খুঁজে নিতে কর্তৃপক্ষ যেকোনও সময়ে যেকোনও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ১২ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষার দিনে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পরও কেন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হলো? কর্তৃপক্ষ ‘ঘ’ ইউনিটের উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আবারও নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মানে আমরা ধারণা করতেই প্রশ্নফাঁসের সত্যতা খুঁজে পাওয়া গেছে। এটাই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে তড়িঘড়ি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলো কেন? অবস্থাটা কি এমন যে, পরিস্থিতি যাই হোক, তদন্ত কমিটি গঠন করার নামে এবারও প্রশ্নফাঁসের গুরুতর অভিযোগকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছিল? একথা বলছি এজন্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এটাই প্রশ্নফাঁসের প্রথম ঘটনা নয়। এরআগেও বহুবার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবারই এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতে আর এমন ঘটনা ঘটবে না। অথচ যাহা বাহান্ন তাহাই তেপ্পান্ন। সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। তার মানে সরষের মধ্যেই ভূত আছে? বোধকরি প্রশ্নফাঁসের তথাকথিত ভূতের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কেন পারছে না? সমস্যাটা কোথায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটবে, অথচ দোষী ব্যক্তি শাস্তি পাবে না, এ কেমন কথা? অনেকে মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তি শাস্তি না পাওয়ায় এই অন্যায়, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

১২ অক্টোবর বৃষ্টিস্নাত সকালে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি প্রার্থী ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের বৃষ্টিতে ভিজে নাকাল হওয়ার দৃশ্য দেখে খুব খারাপ লেগেছে। সেদিন কেবলই মনে হয়েছে আহারে! উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হওয়ার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের কী কষ্টই না করতে হয়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছেলেমেয়েরা ঢুকে গেলো পরীক্ষা কেন্দ্রে। বাইরে হাজার হাজার অভিভাবকের সে-কি উদ্বেগাকুল প্রতীক্ষা। দুঃখজনক হলো, আবারও প্রিয় সন্তানদের জন্য তাদের এমনই প্রতীক্ষায় বসতে হবে। এমন তো নয় ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব ছাত্রছাত্রীই ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে। অথচ সবাইকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে।

তবু কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে পাশাপাশি কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর আবশ্যক। ধরা যাক, নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরও প্রকৃত সমস্যাকে শনাক্ত করা সম্ভব হলো না, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী করবেন? আবার যদি ফলে হেরফের হয়, তাহলে কি অবৈধ পন্থা অবলম্বনকারী পরীক্ষার্থীকে শনাক্ত করা যাবে? তারা কি শাস্তি পাবে? পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইতোমধ্যে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা কি প্রকৃত অর্থে শাস্তি পাবে? নাকি অতীতের মতোই দোষী ব্যক্তিরা নানান মেরুকরণে আবারও আড়ালে থেকে যাবেন?

শেষে একটি প্রত্যাশার কথা বলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশসেরা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া জরুরি। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনও অনিয়মের বিচার না হয়, দোষী ব্যক্তিরা যদি সাজা না পায়, তাহলে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তার ঐতিহ্য হারাবে। আমরা কিছুতেই তা হতে দিতে পারি না।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো।

/এসএএস/এমএনএইচ/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ