X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

যাবে কি দিন এমন করেই?

তুষার আবদুল্লাহ
২৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:২২আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৩

তুষার আবদুল্লাহ হেমন্তের সকালে পাশের গাড়িতে গানটা কে বাজালো, চালক নিজে, নাকি এফএম বেতারের রেডিও জকি? জানালার কাঁচ নামানো ছিল দুই গাড়িরই। তাই গানটি কানে এসে প্রবেশ করলো অনুমতি না নিয়েই–‘এমনি করে যায় যদি দিন যাক না’। ট্রাফিক সিগন্যালে ধীরে ধীরে গাড়ি এগুচ্ছে। গানটি আমাকে ছাড়ছে না। দুই গাড়ির যখন দূরত্ব বেড়ে গেলো, সুরের জায়গা নিলে এসে ভেঁপু। তখন ওই গানের জন্য পরান পুড়তে লাগলো। নিজ গাড়ির এফএম হাতড়ে আর ওই গান ফিরে পেলাম না। আমার কেবলই মনে হতে থাকলো এই গানটিই এ সময়ে আমাদের প্রতিপাদ্য সঙ্গীত, যাকে থিমসং বলা যেতে পারে। আমরা যেমন তেমন করে দিন পেরিয়ে যেতে চাইছি সবাই। সময়ের সঙ্গে আপস করে যাচ্ছি।
আমাদের ছেলে-মেয়েরা পথে নেমে নিরাপদ সড়কের জন্য প্রতিবাদ করলো। পেছনে ছিল পুরনোকে ভেঙে ফেলার বিদ্রোহ। নতুন করে রাষ্ট্রকে তৈরি করার অঙ্গীকার। কই, ওরা পথ থেকে চলে যাওয়া মাত্র আমরা ফিরে গেলাম পুরনো অভ্যাসে। দুই দফা ট্রাফিক সপ্তাহ করেও সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি। সন্তানদের প্রতিবাদের প্রতিশোধ যেন নিচ্ছে পরিবহন। সড়কে হত্যা চলছেই। সড়ক পরিবহন আইন করেও চোখ রাঙানি দেখতে হচ্ছে পরিবহন মালিক, চালক, শ্রমিকদের। যখন-তখন ধর্মঘট ডাকছে তারা। আমরা ‘সাধারণ’রা, এমনকি রাষ্ট্রও সেই চোখ রাঙানি সহে যাচ্ছে।

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হলো। মাদক বহন, বিক্রির অভিযোগে কত মানুষ আটক হলো। বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলো কত মানুষ। তারপরও কি মাদক বহন, বেচা, সেবন বন্ধ হলো? বরং এই অভিযানের নামে নিরপরাধ মানুষকেও নাকি মাদকব্যবসায়ের অভিযোগে আটক, নির্যাতন করা হলো। চাঁদা দিতে পেরে কেউ কেউ প্রাণে বেঁচেছেন। কিন্তু  প্রকৃত ব্যবসায়ীরা রয়ে গেলেন নিরাপদ দূরত্বে। অথচ একেকটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কীভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে এই মাদকের ছোবলে, আমরা সবাই জানি। জানলে কী হবে, যাচ্ছে যে সময় যাক না। উদরপূর্তি-পকেট পূর্তি হচ্ছে হোক না।

প্রশ্নফাঁস-কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে দাঁড়াল সমাজ, রাষ্ট্র। কই প্রশ্নফাঁস ঠেকানো তো গেলো না। বন্ধ হলো না কোচিং সেন্টার। গাইডবই ব্যবসা আরও রমরমা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিপীড়নের শিকার। ভর্তি হওয়ার লড়াইটা আরও অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। কে মেধাবী, কে ফাঁস করা প্রশ্ন দেখে শীর্ষে, এই যাচাই-বাছাই করবে কে? মাঝখান দিয়ে উচ্চশিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে দাঁড়িপাল্লায় তুলে দেওয়া হলো। ফল কেবলই হতাশার। অভিভাবকরা কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। বাংলা মাধ্যমের ওপর তাদের ভরসা চলে গেছে অনেক আগেই। এখন ইংরেজি মাধ্যম নিয়ে দোটানায় আছে। বলা যায় দেশের শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতির কাঠামোটিই ভেঙে পড়েছে।

মানুষের আয়ের উৎস বেড়েছে। ব্যয়ের খাত কমেনি। বরং বাড়ছে। তারপরও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা ভেবে সাধারণ মানুষ কোথাও বিনিয়োগ করবেন, সঞ্চয় করবেন, সেই আস্থার জায়গা নষ্ট হয়েছে। ব্যাংকগুলো বিশ্বাসের জায়গায় নেই। একের পর এক ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের খবরে উদ্বিগ্ন ক্ষুদ্র আমানতকারীরা। পুঁজিবাজারেও হতাশা। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা নিয়েও আছে নানা গুঞ্জন। সাধারণ মানুষ কোন খুঁটি ধরে দাঁড়াবে?

রাজনীতিবিদরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। ভোটের সময় মুদি দোকানি, ভ্যান চালক, মাঝির কথা মনে পড়ে। ভোট সামনে দেখে এখন তেমনটাই দেখতে পাচ্ছি। কেমন আপন করে ভোটারকে জড়িয়ে ধরছেন। ঘর্মাক্ত শরীরের সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছেন শরীর। কত সহজ প্রবেশদ্বার তাদের বুক বা হৃদয়ের। কিন্তু ঘরে ফিরে গিয়ে সেই ঘর্মাক্ত পিরানের কী পরিণতি হয়, তার কিছুটা আমাদের সবার জানা। ওই পিরানের মতোই পরিণতি ঘটে ভোটারের, ভোটের পরে। নির্বাচন, ভোট এখন বেশিরভাগ রাজনীতিবিদের ব্যবসায়িক বিনিয়োগের জায়গা হয়ে গেছে। বণিকেরা ভোটের বাজারে আসছেন। চড়া দামে ভোট কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। খাঁটি রাজনীতিবিদরা মন খারাপ করে খালি হাতে ঘরে ফিরছেন, নয়তো অক্ষমতায় ভোটের বাজারেই যাচ্ছেন না। আমরা ভোটের এই বাজার দেখছি। কিন্তু কোনও প্রতিবাদ নেই। সৎ রাজনীতিবিদের পাশে দাঁড়ানোটাই যে বিশাল প্রতিবাদ এবং শক্তি গড়ে তোলার উপায়, সেই উপায়ের সঙ্গী হওয়ার সাহস, ইচ্ছে হারিয়ে বসে আছি। চোখ বুজে প্রলাপ বকছি–এমনি করে যায় যদি দিন যাক না!

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ