X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপ হোক অংশগ্রহণমূলক

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৪৯আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:০৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা রাজনীতি যেহেতু খেলা, সেই খেলায় জেতার জন্য ড. কামাল হোসেনসহ কিছু বিদ্বজ্জনকে দলে পুরে রেখেছে বিএনপি। তাদের ভাবনার জায়গা থেকে রাজনৈতিক লাভ অনেকটাই হয়েছে বলতে হয়। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিত্ব দেওয়া, ১৯৭৫’র খুনিদের পুরস্কৃত করা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায়, তাদের শাসনামলের দুর্নীতি আর জঙ্গি সন্ত্রাসসহ যেসব রাজনৈতিক বিষয় সবসময় বিএনপিকে বিব্রত করে, সেসব আড়াল করতে এরচেয়ে বড় কৌশল আসলে আর কিছু ছিল না।
এবার সেই বিদ্বজ্জনদের ডাক পড়েছে গণভবনে। কামাল হোসেনের চিঠির উত্তরে বসতে রাজি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কাল সংলাপ। আকস্মিকভাবে সংলাপের প্রস্তাব গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে চমকে দিয়েছেন। আমার ধারণা, সবচেয়ে বেশি চমকিত হয়েছে বিএনপি। কারণ, এ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছিলেন সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যাত হবে এবং তারা আরেক দফা রাজনীতির মাইলেজ পাবেন। ইতোমধ্যেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির ফলে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, সংলাপে বিএনপির অবস্থান হবে সাত দফা দাবি। একটাই অবস্থান। এর বাইরে কোনও অবস্থান নেই। সাত দফার সবই যদি মেনে নিতে হয়, তাহলে আর সংলাপে বসার যৌক্তিকতা কোথায়?

নাগরিক সমাজে বিদ্বজ্জনের প্রথম পরিচয় হলো রাজনৈতিক দল, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে তাদের স্বাতন্ত্র্য। রাষ্ট্রশক্তি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিধির সীমা নির্দিষ্ট করাই নাগরিক সমাজের কাজ। ড. কামাল হোসেনরা রাজনীতিই করেছেন আজীবন। তবু তাদের একটি নাগরিক বিদ্বজ্জনের পরিচয় আছে। তবে এই পরিচয় থাকলেও তারা নিজেদের রাজনৈতিক দল, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চান না। একটা সময় আমরা দেখলাম আমাদের এই বিদ্বজ্জনের সমাজ সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে বেসামরিক ব্যবস্থা চালু করেছিল এই দেশে, যা ১/১১ নামে বেশি পরিচিত। এখন হয়তোবা তারা নিজেরাই ক্ষমতার স্বাদ নিতে চাচ্ছেন। আর চাচ্ছেন বলেই এখন তারা জাতীয় বেশ কিছু মীমাংসিত বিষয়, যেমন–১৯৭১, ১৯৭৪ ও একুশে আগস্ট – যে ঘটনাবলি বাংলাদেশের সমাজকে চিরস্থায়ী বিভক্ত করেছে, সেসব ভুলে সেই হোতাদের সঙ্গেই গা ভাসিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর কিংবা তার আগে থেকেই জঙ্গি আগ্রাসন, ও এর ফলে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অসহিষ্ণুতার যে বাতাবরণ সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে তারা আমলে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এমন এক  বাস্তবতায়ই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপে হতে যাচ্ছে। এখনকার রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এটি ইতিবাচক অগ্রগতি নিশ্চয়ই। তবে সমস্যার সমাধান রাতারাতি হবে তাও কেউ ভাবছেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আলোচনার ব্যাপারে সম্মতি মাত্রই কিছু অর্জিত হওয়া নয়, সমাধানের প্রশ্ন তো অনেক দূরের বিষয়। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে ঐক্যের যে দাবি, তা আসলে বিএনপির দলীয় দাবি বা ২০ দলীয় দাবি। এই দাবিতে শক্ত থাকলে সংলাপ ব্যর্থ হতে বাধ্য। কারণ, এই দাবি সম্পর্কে আওয়ামী লীগ প্রথমেই বলবে যে এটি আদালতের বিষয়। নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিও সহজে সমাধান হবে বলে মনে হয় না।

আমাদের রাজনীতিতে সংলাপ আগেও হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিরোধীপক্ষের আলোচনা কখনোই সফল হয়নি, এমনকি বিদেশি মধ্যস্থতাকারী সত্ত্বেও। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। খালেদা জিয়া এখন দণ্ডিত হিসেবে কারাগারে; তার নির্বাচনে অংশগ্রহণও অনিশ্চিত। ফলে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থানটিই একটি বড় বিষয় হয়ে থাকবে সমগ্র আলোচনায়। বিএনপি যদি অনড় থাকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে, আর ড. কামালরা যদি সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন তাহলে ঐক্যফ্রন্টের ভাঙন অবধারিত। আর এখানেই বিএনপি সংশয়ী, সন্দিহান। মানুষের মনেও এমন ধারণা আছে। 

বিএনপি ভাবতে পারে শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে শেখ হাসিনাকে আনা গেছে, এটাই বড় সাফল্য। আর  আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপির সঙ্গে তাদের আলোচনা করতে হচ্ছে না, খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সংলাপে বসতে হচ্ছে না।  সেটা তাদের সাফল্য।

সংলাপ শুরু হচ্ছে এটি ভালো উদ্যোগ। আলোচনা কীভাবে এগুবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আলোচনাই যদি হবে তাহলে শুধু ঐক্যফ্রন্ট কেন, এই প্রশ্নও উঠবে। অন্যান্য জোট ও দলের সঙ্গে আলোচনাও নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত। এক্ষেত্রে আলোচনার টেবিলে বিকল্পধারাও বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীও এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিকল্পধারার সঙ্গে সংলাপে বসবেন ২ নভেম্বর।  

ফলে সংলাপের ক্ষেত্র প্রসারিত করে নির্বাচনের মাঠে ও রাজনীতিতে গুরুত্ব আছে এমন ব্যক্তি ও দলের সঙ্গেও সংলাপ করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন চাইলে সবার অংশগ্রহণে ফলপ্রসূ সংলাপও প্রত্যাশিত। 

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ