X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আসছে ‘উপভোগ্য’ ভোট

তুষার আবদুল্লাহ
০৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:০৩আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:০৯

তুষার আবদুল্লাহ ‘দাওয়াতি বাড়ির’ উদারতা ছিল। আপ্যায়নে অতিথিদের প্রতি ছিল শ্রদ্ধাবোধ। তাই অতিথিদের কাছ থেকে অগ্রিম ফর্দ জেনে নেওয়া হয়েছিল। আলোচনার টেবিলের পরিবেশনা ছিল সেই মতোই। আয়োজন এত তীব্র ছিল যে, আলোচনা শুরু আগে ফটোসেশনেই তোলা হয়েছিল খাবার। বিভিন্ন মাধ্যমে সেই দৃশ্য আমরা উপভোগ করলাম। পরবর্তী সময়ে মোবাইল ক্যামেরায় তোলা ছবিতেও অতিথিদের খাবার গ্রহণের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই জেনে গেলাম কে কী এবং কীভাবে খাবার গ্রহণ করছেন। ‘দাওয়াতি বাড়ির’ কারও খাবার গ্রহণের ছবি দেখা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। বিষয়টি লেভেল প্লেয়িং হয়নি মোটেও। এটা অতিথিদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হলো কি?

‘দাওয়াতি বাড়ির’ দরজা অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত আছে। আরও জোট আরও দল, খাবারের স্বাদ নিতে চিঠি লিখছে, আবদার করছে। জানি না কতজনের আবদার রক্ষা করার ধৈর্য দেখাবে। তবে যিনি নিমন্ত্রণ করছেন, তার এবং জনগণের মূল আগ্রহ ঐক্যফ্রন্টের অতিথিদের প্রতি। ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, আরও ছোট পরিসরে ওই ফ্রন্টের অতিথিরা আরও এক বা একাধিকবার ‘দাওয়াতি বাড়িতে’ যাওয়ার আমন্ত্রণ পাবেন। প্রথম খানাপিনায় অনেক লোক সমাবেশ ছিল উভয়পক্ষ থেকেই। এত ভিড়ে আসল কথা, কাজের কথা খুব একটা হয় না। দুই পক্ষের কুশল বিনিময়েই সময় ফুরিয়েছে। নানা শর্ত নিয়ে দর কষাকষি শেষে পাকা কথায় পৌঁছানো এমন জমায়েতে সম্ভব নয়। তাই পরিসর কমিয়ে মুরব্বিরা বসবেন হয়তো শিগগিরই। প্রথমদিনের খানাপিনা শেষে অতিথিদের কারও তাৎক্ষণিক মন্তব্য ছিল–আলোচনা ভালো হয়েছে। কেউ বলেছেন–নিজ দলের বিবেচনায় আলোচনায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে অতিথিদের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া-সংলাপের অঙ্ক সমাধান খুঁজে পায়নি। তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশে বাধা না দেওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেলেও অন্য বিষয়ে কোনও সুরাহা হয়নি। তবে, তাদের দিক থেকে হতাশার সুরও ভেসে আসেনি। নির্বাচনমুখী সড়ক থেকে সরে আসেননি তারা। বরং ভরসা রেখেছেন, বলতে চাইছেন, ‘বল প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে’। সাতদফা দাবি তিনি কতটা মেনে নেবেন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবেন বলে তারা আশাবাদী? সংবিধানসম্মতভাবে সাতদফা মেনে নেওয়া সম্ভব বলেও তারা মনে করছেন। তবে সরকারকে চাপে রাখতে কেউ কেউ এমন মন্তব্যও করছেন–সংলাপে সাতদফা মূল দফা ছিল নির্বাচন। সেটা শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে সম্ভব নয়। সাত দফার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা যাবে না।

‘অতিথি বাড়ির’ প্রতিক্রিয়া হলো, বরফ গলতে শুরু করেছে। সংলাপের মাধ্যমে বরফ গলবেই। সংলাপের এখানেই শেষ নেই। ঐক্যফ্রন্টের মূল দল বা অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলেই তাদের বিশ্বাস।

অন্য যারা সংলাপের আবরণে অতিথি বাড়িমুখী, তাদের দিকে জনগণের আগ্রহ কম। বিএনপি তাদের চেয়ারপারসন কারাগারে থাকায় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের শাস্তি হওয়ায় বিপাকে রয়েছে। দলের হাল কে ধরবেন ভোটের মাঠে? প্রধান ওই ব্যক্তি ছাড়া নির্বাচনে যাবে বিএনপি? এ নিয়ে সংশয় এবং প্রশ্ন রয়েছে তাদের সমর্থক ও জনগণের মাঝে। আবার গত দশ বছরে মাঠের আন্দোলনে বিএনপি সফল হয়নি। ভোট যখন দ্বারপ্রান্তে তখন বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলত পারবে সেই ভরসাও নেতা-কর্মীদের মাঝে খুব জোরালো নয়। তবে ভোটের মাঠে বিএনপি সক্রিয় আছে। সম্ভাব্য প্রার্থী প্রায় সব আসনেই ভোটারদের কাছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপি প্রবলভাবে ভোটে অংশ নিতে আগ্রহী। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ছাড় দিতেও রাজি তারা। মূল কথা হলো, সংসদের বাইরে থাকতে চাইছে না বিএনপি। আওয়ামী লীগের দিক থেকেও একলা যেকোনও দলকে নিয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছে নেই। তারা ভোটের প্রতিযোগিতায় প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপিকেই চাইছে।

গত দশ বছরে দুই দলের মধ্যে যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা কমিয়ে আনার মুদ্রা ঐক্যফ্রন্ট। মুদ্রা নিক্ষেপের মাধ্যমে মাঠ কতটা উপযোগী করা যায়, তার মাধ্যম হিসেবে উভয়পক্ষই ড. কামাল হোসেনকে বেছে নিয়েছে। অতএব সংলাপের এই পর্যায়ে খাবারের প্লেটের দিকে নজর না দিয়ে রাজনীতি কোন দিকে গড়ায়, ভোটের দিনক্ষণ কত দূরে গিয়ে ঠেকে, সেদিকে মনোযোগ দিলে রাজনীতি উপভোগ্য হবে। ভোটও হবে সবার জন্য উপভোগ্য।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ