X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জোটে ভোট: ১৩ বাড়ির এক উঠান

আনিস আলমগীর
২৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:০৮আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:০৯

আনিস আলমগীর ১৩ বাড়ির এক উঠান ব্যবহার যেমন কঠিন তেমনি মহাজোট-ঐক্যফ্রন্ট করে নির্বাচন করাও দুরূহ ব্যাপার। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি তাদের নির্বাচনি শরিকদের জন্য আসন রেখে নিজেদের সিংহভাগ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ধারণা করছি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত শরিকদের সঙ্গে তাদের আসন নিয়ে বোঝাপড়া চলতে থাকবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে মনোনয়নের নামে আওয়ামী লীগ বানরের পিঠা ভাগ করতে চায় না। যাদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদেরই দল মনোনয়ন দেবে। অন্যদিকে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আসন ভাগাভাগি একটি চ্যালেঞ্জের কাজ। পিঠা ভাগের সময়ও টানাটানি করতে হয়।
শুধু আসন ভাগাভাগি নয়, বাংলাদেশের মাটির অতীত ইতিহাস বলে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতা ছিল বেশি। ১৯৫৪ সালে যখন নির্বাচন হয় তখন কথা ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ নির্বাচনে মুসলিম লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হবে। আর নেতৃত্ব দেবেন হক, ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দী। ভারত বিভক্তির পর ফজলুল হক কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে রাজনীতি করেননি। তিনি পূর্ব-পাকিস্তান সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা অর্থাৎ অ্যাটর্নি জেনারেল হয়েছিলেন। স্থির হয়েছিল শেরেবাংলা ফজলুল হক আওয়ামী লীগে যোগদান করবেন।

নির্বাচনের যখন হাওয়া বইছিল তখন শেরেবাংলা তার পুরনো লোকদের কানকথা শুনে ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান না করে হঠাৎ করে তার পুরনো দল কৃষক প্রজা পার্টি পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। দল যখন দুটি তখন তো যুক্তফ্রন্ট করতেই হয়। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরবর্তী সময়ে মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টিও যোগদান করেছিল। ফলে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট প্রাথমিকভাবে তিন দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টই জয়যুক্ত হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনসহ মুসলিম লীগের বাঘা বাঘা নেতারা পরাজিত হয়েছিলেন।

তখন পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন চৌধুরী খালিকুজ্জামান। ১৯৪০ সালে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাবের উত্থাপক ছিলেন ফজলুল হক আর সমর্থক ছিলেন চৌধুরী খালিকুজ্জামান। দুজনের আগে থেকেই হরিহর আত্মা। নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগের সদস্য বেশি নির্বাচিত হয়েছিলেন, কৃষক প্রজা পার্টির সদস্য সংখ্যা ছিল কম। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে হবে এমন সংশয়ে শেরেবাংলা ফজলুল হক পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিং না ডেকে, নেতা নির্বাচিত না হয়ে পুরনো বন্ধু গভর্নর চৌধুরী খালিকুজ্জামানকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাকে শপথ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে গভর্নর শেরেবাংলাকে শপথ পাঠ করিয়ে বসেন। যুক্তফ্রন্টের যাত্রার বিসমিল্লাতে গলদ ছিল।

যাক, ১৯৫৪ সালে এই দেশের রাজনীতিতে বহুদলীয় যুক্তফ্রন্ট সংস্কৃতির উদ্ভব হলেও তা ছিল সম্পূর্ণ ব্যর্থ এক প্রচেষ্টা। শেষ পর্যন্ত অন্তকলহের কারণে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে সদস্যদের নিক্ষিপ্ত মাইকের ডান্ডার আঘাতে গুরুতর আহত হন এবং এর তিন দিন পরে হাসপাতালে মারা যান। শাহেদ আলী ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য। কৃষক প্রজা পার্টির সদস্যদের আক্রমণে তিনি আহত হয়েছিলেন। আক্রমণের হোতা ছিলেন নাকি চট্টগ্রামের মাহামুদুন্নবী চৌধুরী আর ফরিদপুরের মোহন মিঞা চৌধুরী।

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর যখন আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে দেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন মানুষ খুশিই হয়েছিল। কেন্দ্রের ষড়যন্ত্র আর অন্তকলহের কারণে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট ব্যর্থ হয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট সম্পর্কে এদেশের মানুষের ধারণাও ভালো নয়। সেই থেকে স্বাধীনতার আগে আর কখনও যুক্তফ্রন্ট হয়নি।

অবশ্য আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যুক্তফ্রন্ট করার জন্য বিরোধী দলসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছিল। ১৯৭০ সালে যখন নির্বাচন হয় তখন আওয়ামী লীগ, ন্যাপ মোজাফ্ফর ও ভাসানী ন্যাপের সঙ্গে একটা জোট গঠনের কথা বলাবলি হয়েছিল, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সে কথা কানেও তোলেননি। আর এই ভুল না করার কারণে বঙ্গবন্ধু নির্বিঘ্নে স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন। নয়তো জোট সঙ্গীদের কারণে সব বানচাল হয়ে যেত।

বাংলাদেশের আগের নির্বাচনগুলোতে খুচরাভাবে জোটের ভোট হলেও বহুদিন পর একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোরালোভাবে জোট আর ফ্রন্টের রাজনীতি ফিরে এসেছে। অবশ্য এবার আওয়ামী লীগের মহাজোটে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপিই প্রধান শক্তি। উভয় দলের সঙ্গে যেসব সার্কাস পার্টি রয়েছে সে পার্টিগুলোর অধিকাংশ দলের সভাপতি আছে তো সেক্রেটারি নেই অবস্থা। আবার অনেক দলের নিবন্ধনও নেই। সুতরাং তারা প্রধান দু’দলের রাজনীতিতে ব্যাপক কোনও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারবে না।

এই দুই দলের বাইরে চরমোনাইর পীরের দল ইসলামিক আন্দোলন ধীরে ধীরে একটা অবস্থানে গিয়ে পৌঁছবে বলে মনে হচ্ছে। তারা কোনও জোটে-ফ্রন্টে নেই। ইসলামিক আন্দোলনই প্রথম দল যারা সবার আগে গত ২৩ নভেম্বর তিনশ’ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।

গত মেয়র নির্বাচনেও তারা প্রতিটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দিয়েছিল এবং তাদের প্রার্থীদের ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল আওয়ামী লীগ আর বিএনপির পর তৃতীয় স্থানে। একটা নবগঠিত দলের জন্য এটা বড় সাফল্য। দলটিতে আরও কিছু ইংরেজি শিক্ষিত মানুষের সমাগম হলে দলটি সম্ভবত উল্লেখযোগ্যভাবে সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারতো। এবারের নির্বাচনে তাদের দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী হয়তো নির্বাচিত হবে না। কারণ, তাদের কমিটেড ভোটারের সংখ্যা এখনও প্রসারিত হয়নি। তবে ধীরে চললে সে অভাবও পূরণ হবে।

২৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগও তাদের দলীয় প্রার্থীর ২৩০ জনের নাম ঘোষণা করেছে। সম্ভবত বাকি ৭০টি আসন তাদের জোটভুক্ত দলগুলোর জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছে। তাও হয়তো অচিরেই ঘোষণা করবে। দেখলাম আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার পূর্বের দুই আসন  টুঙ্গিপাড়া ও পীরগঞ্জ থেকেই নির্বাচন করবেন। আর কাউকে দুই সিট থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়নি। পরদিন ২৬ নভেম্বর বিএনপিরও মনোনয়নপত্রদানের কাজ শুরু হয়েছে।

জাতীয় পার্টির এরশাদকে নিয়ে যন্ত্রণায় আছে আওয়ামী লীগ। তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা বলে সমগ্র নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। জাতীয় পার্টি গতবার তিনশ’ আসনে নির্বাচন করলে নির্বাচনটা হয়তো বিতর্কিত হতো না। দলটির অবস্থাও মজবুত হতো। নির্বাচনের আগে তিনি সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। এবারও ভর্তি হয়েছেন। এই অশীতিপর বৃদ্ধ লোকটি এখন ঢাকা-১৭, নারায়ণগঞ্জ-১ এবং রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। এত আসনে নির্বাচন করার কি প্রয়োজন আশিরও অধিক বয়স্ক লোকটির? তার নাকি সিট বিক্রির বদ-অভ্যাসও আছে। যার এক পা কবরে তার এত স্মার্ট হওয়া উচিত নয়। কোন প্রয়োজনে তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবেন! প্রার্থী একোমোডেশনে যেখানে আওয়ামী লীগের নাভিশ্বাস উঠেছে সেখানে কোনও জোটসঙ্গীর একাধিক আসনে নির্বাচনের বিলাসিতা থাকা উচিত নয়।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী জোট এবং বিএনপি জোটের মাঝে ভালো লড়াই হবে। আওয়ামী লীগ টানা দশ বছর ক্ষমতায়। সুতরাং মূল সমস্যা হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধিতা। তবে দেশের উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। ধীরে হলেও সঠিক পথে হাঁটতে শুরু করেছে দেশটি।

কিন্তু একটা বিষয়ে লক্ষ করেছি, এই উপমহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের ভোটারেরা একটা সরকার অর্থনীতির হাল ফেরাতে পারছে কিনা, ভোটের রাজনীতিতে তার কোনও বিচারই করে না। আর এই তিন দেশে তো দুর্নীতি এখন সংস্কৃতি হয়ে গেছে। দুর্নীতিবাজদের প্রতি কোনও ঘৃণাবোধই নেই। দুর্নীতিবাজেরা ময়দানে এসে বৃহত্তর স্বার্থের কথা বলে আবার জনসমর্থন আদায় করে। রাজনীতিবিদের কাছে বৃহত্তম স্বার্থটা কি? অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদেরা নিজের স্বার্থকে বৃহত্তম স্বার্থ বলে প্রতিপন্ন করতে চায়, সেই স্বার্থকে একটা নৈর্ব্যক্তিকতা বা সর্বজনীনতার মোড়কে পুরে সাধারণ মানুষের কাছে পেশ করে। তাদের সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করে সফলও হয়। সাধারণ মানুষ তাদের বিশ্বাস করে, প্রতারিতও হয়।

বিএনপি প্রধান বেগম জিয়া এখন জেলে। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার ১৭ বছর জেল হয়েছে। সাজা স্থগিত না হলে তার পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্ভব হবে না। নাইকো দুর্নীতি মামলারও বিচার হচ্ছে। এ মামলার তদন্ত করেছে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই আর কানাডার রয়েল মাউন্টেড পুলিশ। তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পৌঁছেছে। তাই দুই বিদেশি তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা সাক্ষ্য দিতে বাংলাদেশে আসবেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলার বিচার সম্পন্ন হলে সম্ভবত তার শতাধিক বছর জেল হতে পারে। এরপরও তার জনপ্রিয়তা আছে। কারণ, বিএনপি হচ্ছে সারাদেশের আওয়ামী বিরোধীদের একটা সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। এখানে রাজাকার আছে, আল-বদর আছে, মুসলিম লীগ আছে, ন্যাপ আছে, হাতেগোনা মুক্তিযোদ্ধাও আছে। পাগলের ঝুড়ির মতো এমন কোনও জিনিস নেই যা বিএনপিতে নেই। এবং বেগম জিয়া হচ্ছেন তাদের নেতা। বেগম জিয়ার দৃঢ়তাও আছে। সুতরাং তার জনপ্রিয়তায় ভাটার টান কম।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা টানা দশ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী। মৃদু অহমিকাবোধ থাকলেও বাংলাদেশের নেতা, নেত্রীর মাঝে তিনিই দেশে, বিদেশে সর্বত্র সমাদৃত। তার সততা ও ধীশক্তির জন্য তিনি সর্বজনবন্দিতা। দেশের মানুষের কাছেও তার প্রচুর সুনাম সুখ্যাতি রয়েছে। এমনকি তার জনপ্রিয়তা তার দলের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।

শেখ হাসিনা তুরস্কের এরদোগান হলে একক জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য দেশের শাসনব্যবস্থাকে রাষ্ট্রপতির শাসিত সরকারের পরিবর্তনের কথা চিন্তা করতেন। তার জনপ্রিয়তা নিয়ে তেমন কোনও বিতর্ক নেই। শেখ হাসিনা সমকালীন বাংলাদেশে বিরল নেত্রী। যারা তার কাছাকাছি এসেছেন, তাকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের পক্ষে এমন নেত্রীর গুণমুগ্ধ হয়ে পড়া স্বাভাবিক। ৩০ ডিসেম্বর জাতির রুচি পরীক্ষার দিন। দেখা যাক সেদিন জাতি কী সুমতির পথে চলে, না আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

 

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ