X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বমন্দার পদধ্বনি

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
২৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:৫৮আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:৫৯

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী বিশ্বের নামকরা অর্থনীতি বিষয়ক পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইকোনোমিস্টসহ বিভিন্ন পত্রিকা এবং অর্থনীতিবিদেরা বলছেন বিশ্ব একটা মন্দার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। তারা যদিওবা দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে কখন মন্দাটা শুরু হচ্ছে তা বলেননি। তবে তারা মন্দার আগমন সম্পর্কে নিঃসন্দেহ এবং মন্দা সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
২০১৭ সালেও বড় অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃত্তি বেড়েছিল। বিশ্ব বাণিজ্যে তেজিভাব ছিল। আমেরিকার মতো বৃহত্তম অর্থনীতি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিরও তেজিভাব অব্যাহত ছিল। বিশ্বে এ দুটি বৃহৎ অর্থনীতি প্রসারিতও হচ্ছিল। ২০১৮ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ায় শেয়ারবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে থাকে। এক বছরের মাঝে এই অস্থিরতা দুইবার লক্ষ করা গেছে। উদ্বেগ সৃষ্টির কারণ হলো বিশ্বব্যাপী মন্থর প্রবৃদ্ধি এবং আমেরিকায় কঠোর আর্থিক নীতির নেতিবাচক প্রভাব।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর হ্রাস করেছে। ফলে প্রান্তিক প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের ওপরে উঠেছে। আমেরিকার বেকারত্ব ১৯৬৯ সালের পর সর্বনিম্ন স্তরে এসে উপস্থিত হয়েছে। অনুরূপ আশাপ্রদ অগ্রগতির পরও আইএমএফ বলছে উন্নত বিশ্বের প্রবৃদ্ধি এ বছর মন্থর হবে। আবার তারা এই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে যে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো সমস্যায় পড়বে। অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আমেরিকার ব্যবধান হওয়ার কারণ হচ্ছে তার ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অনুসরণের ফল।

আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ২০১৫ সালের পর থেকে সুদের হার ৭ বার বাড়িয়েছে। অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সময়ের মাঝে একবার মাত্র সুদের হার বাড়িয়েছিল। জাপানের সুদের হারও নেতিবাচক। আমেরিকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে অনেক দেশের বিশেষ করে তার প্রধান টার্গেট চীনের অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে। তাই তারা তাদের মুদ্রানীতি শিথিল করেছে।

আমেরিকায় যখন সুদের হার বাড়বে আর কোথাও সুদের হারের তেমন হেরফের হবে না। তখন ডলারের মূল্যমান বেড়ে যায়। ফলে অগ্রসরমান দেশগুলো ডলারে তাদের ঋণের কিস্তি সুদের টাকা পরিশোধ করতে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়। বর্তমান তুরস্ক ও আর্জেন্টিনা অনুরূপ সমস্যায় পড়েছে। পাকিস্তান তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের কাছে ঋণ চেয়েছে।

আমেরিকার অর্থনীতিতে তেজিভাব চলছে সত্য তবে এ তেজীভাব কতদিন চলবে? মন্দার পদধ্বনি যখন শোনা যাচ্ছে তবে তেজিভাব ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। আমেরিকার অর্থনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আমেরিকার অর্থনীতির কোনও তেজিভাবই এক দশকের ওপরে স্থায়ী হয়নি। কোনও দেশেই প্রবৃদ্ধি সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অবশ্য কানাডা, অস্ট্রেলিয়া আর নেদারল্যান্ডে টানা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দীর্ঘ ২০ বছরব্যাপী স্থায়ী হয়েছে।

সব ভালোরও একটা শেষ আছে। আর সব মন্দেরও একটা পরিসমাপ্তি নিশ্চয়ই আছে। বৈশ্বিক মন্দার লক্ষণ হলো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত মন্দা হয়ে যাওয়া এবং প্রকৃত মাথাপিছু জিডিপি হ্রাস পাওয়া। আমেরিকা কিছু দিন আগে কর হ্রাস করার যে নীতি গ্রহণ করেছে তাতে ঘাটতি স্ফীত হবে এবং আমেরিকানদের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তবে অন্য সব ধনী দেশের ঋণ গ্রহণ হ্রাস পাচ্ছে। চীন সরকারও ঋণ নির্ভরতা হ্রাস টেনে ধরেছে। উদীয়মান দেশগুলোর ঘাটতি হ্রাস পাবে।

অনেক নামকরা অর্থনীতিবিদেরা বলছেন যে ১৯৬১ সালের পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনীতির ইতিহাসে দীর্ঘতম অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের মাঝে রয়েছে। তবে এটা অর্থনীতিবিদেরা উপলব্ধি করছেন যে অনুরূপ বাস্তবতার পরও আমেরিকার অর্থনৈতিক লক্ষণগুলো বলছে যে অধিক সময়ব্যাপী এই তেজীভাব না থাকার সম্ভাবনা প্রবল। আইএমএফ বলছে, আগামী বছর প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৩.৯ শতাংশ।

উইটম্যান নামক এক বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদের মতে বাণিজ্যক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মাঝে যেভাবে টানাপড়েন বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে অন্য যেসব কারণ যুক্ত হচ্ছে তাতে এ ধারণা করা অসমীচীন নয় যে শিগগিরই হোক আর বিলম্বে হোক বিশ্বব্যাপী আর একটা মন্দা দ্রুত এগিয়ে আসছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চেহারা আপাতত ভালো। মন্দার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে গভীর দৃষ্টি নিয়ে য সব পাঠক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ব্লুমবার্গের সম্পাদকীয় নিবন্ধনগুলো পাঠ করেন তারা নিশ্চয়ই উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেন যে, আরেক মন্দার কথাই তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছেন এবং তা ২০২০ সালের মাঝে আঘাত করবে।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ নরিয়ের রুবিনির মতে ইউরোজোন, ব্রিটেন, জাপান ও বেশিরভাগ উদীয়মান দেশে প্রবৃদ্ধি মন্দা হয়ে পড়েছে। মার্কিন ও চীনা প্রবৃদ্ধির এখনও প্রসার ঘটে চললেও মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আর্থিক প্রণোদনা দ্বারা চালিত হচ্ছে, যা কখনও টেকসই নয়। ট্রাম্প প্রশাসন শুল্কের প্রাচীর তুলে বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য যে প্রাচীর সৃষ্টি করেছে তা দ্বারা মার্কিন অর্থনীতিসহ বিশ্ব অর্থনীতি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

১৯৮০ সাল থেকে এই পর্যন্ত চারবার মন্দা বিশ্বকে আঘাত করেছে। এ মন্দার মাঝে বাংলাদেশ নিজের অর্থনীতিকে রক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশে এ বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের বৃহত্তম স্বার্থে কামনা করি সরকার যেন ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পুনরায় নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’-এর সুবিধা বিরাজ করছে। ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’-এর অর্থ হলো যে দেশে ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সের লোকসংখ্যা বেশি। জাপান সে অবস্থার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন তার উন্নয়নকে সফলভাবে শীর্ষে পৌঁছিয়েছে। চীনও তার ডেমোগ্রোফিক ডিভিডেন্ডের ফায়দা ভোগ করছে। এখন উভয় দেশে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী জানুয়ারি মাসে যে দলের সরকারই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের ফায়দা গ্রহণের চেষ্টা করে উন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো উচিত।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ