X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরুপায় ভোটার

তুষার আবদুল্লাহ
০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৩২আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:১২

তুষার আবদুল্লাহ ভোটের মাঠের লাইনআপ প্রায় চূড়ান্ত। ঐক্যফ্রন্ট-মহাজোট দল গুছিয়ে নিয়েছে। দল গোছাতে ঐক্যফ্রন্ট, বিশেষ করে বিএনপিকে ঝড়-ঝঞ্জার মুখে পড়তে হয়েছে বেশি। আসনের তিনগুণ প্রার্থীর মনোনয়ন দিয়েও তিনশ আসনে প্রার্থী রক্ষা করতে মোটামুটি আইনের লড়াইয়ে নামতে হয়েছে বিএনপিকে। জাতীয় পার্টি ও অন্য কয়েকটি দলের কতিপয় প্রার্থীকেও ঝড়ের কবলে পড়তে হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন ‘শক্তিমান’ ও ‘তারকা’ প্রার্থী বাদ পড়েছেন। তাদের এবার সাইডলাইনে বসেই ভোটের খেলা দেখতে হবে। খেলার মাঠ সমতল হলো কতটা, তা নিয়ে এখন আর আলাপ আলোচনা নেই। কারণ সমতল ও মসৃণ মাঠ নিয়ে আপত্তি তুলবে যারা, তারা এখন আর মাঠের মসৃণতা নিয়ে ভাবছে না। যে কোনও মূল্যে তারা মাঠে নামতে চায়।
ক্ষমতাসীন দলের দল গোছাতে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি, এমন বলা যাবে না। তারা মোটামুটি পুরনো দল মাঠে নামাচ্ছেন। আগে যেমন শোনা গিয়েছিল তৃণমূল জরিপের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান সংসদ সদস্যদের আমলনামা তৈরি হয়েছে। আমার মনে হয়, সেই আমলনামা দেখে মনোনয়ন দিলে পুরনো অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্যকেই এবারের ভোটের মাঠে দেখা যাওয়ার কথা না। ওই শোনা কথার ভরসায় নতুনরা গা গরম করে তৈরি হচ্ছিলেন মাঠে নামার জন্য। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে পুরনোরাই জায়গা করে নিয়েছেন। যতটুকু পরিবর্তন হয়েছে, ততটুকুতে উত্তরাধিকার বা পারিবারিক অংশীদার বেশি। সুতরাং নবীনদের আবারও আশায় বুক বেঁধে থাকতে হলো।

প্রার্থী প্রত্যাহারের পরদিন থেকে ভোটের প্রকৃত আবহাওয়া বোঝা যাবে। মহাজোট, ঐক্যফ্রন্টের মাঠ কেমন হবে­– সেই শক্তির আঁচ ১০ ডিসেম্বরের পর থেকেই স্পষ্ট হবে। নির্বাচনে শক্তিমানের সঙ্গে শক্তিমানের সব আসনে দেখা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও উভয় প্রার্থীই স্থানীয় ভোটারদের কাছে নতুন বা দুর্বল মনে হতে পারে। কিন্তু ভোটাররা নিশ্চয় এই মহারণে প্রার্থী বিচারে নামবেন না। তারা খুঁজবেন মার্কা। সন্দেহ নেই সেদিক থেকে নৌকা, ধানের শীষ তাদের কাছে মোটেও অপরিচিত প্রতীক নয়। দুর্বল তো নয় অবশ্যই। কোনও কোনও আসনে এই দুইয়ের চেয়ে এখনও লাঙ্গলের প্রতাপ বেশি। প্রতীকের সঙ্গে অবশ্যই দুই জোটের মূল নেত্রীদের মোহ ও প্রভাবও থাকবে। একজন মাঠে থাকবেন, অন্যজন কারাগারে থাকলেও, তার প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

লক্ষ্য এখন ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশন নানারকম টিপস দিয়ে যাচ্ছে। নিরপেক্ষ, নির্মোহ থাকার জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে থাকবেন। সেনাবাহিনী থাকা না থাকা নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল, শেষপর্যন্ত সেনাবাহিনীও ভোটের মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তারপরও ভোটের দিন নিয়ে সংশয়ে আছেন ভোটাররা। সব প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে নিয়েই তাদের ভাবনা-ভোটের মাঠ শান্ত রাখা হবে তো, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ থাকবে তো?

প্রার্থী ও দল যেকোনোভাবে ৩০ ডিসেম্বরের দিনটি পার করতে চাইছে। কারণ দিন পার হলেই ক্ষমতার দালানে ওঠে যাওয়া গেলো। যারা যেতে পারলেন না, তারা ক্ষণিকের জন্য দমে গিয়ে পরের ভোটের জন্য তৈরি হতে থাকবেন। ভোটারদের ক্ষমতা নিয়ে ভাবনা নেই। তারা শুধু ভোটকেন্দ্রে যেতে চান একবার। নির্বিঘ্নে নিজের ভোট দেওয়ার সুযোগ চান। এই এক সুযোগে তিনি তার ক্ষোভ ও চাহিদার হিসাব মিলিয়ে আসবেন। তাদের এই এক মুহূর্তের সুযোগের আছে অফুরান জাদুকরী শক্তি। সেই শক্তিকেই ভয় পায় রাজনৈতিক দলগুলো। মুখে যতই তারা বলুক না কেন– জনগণই সব ক্ষমতার উৎস কিংবা ভোটাররা যে রায় দেবেন, তাই মেনে নেবেন। কিন্তু বুকে কাঁপুনি চলে নিরন্তর। কারণ এই পক্ষগুলোর মধ্যে ভোটারকল্যাণে নিবেদিত থাকার আমলনামার তফাৎ নেই বললেই চলে। প্রার্থীদের গুণগত মানের বেশ-কমও নেই। তারপরও ভোটারদের কাছে এক, দুই, তিনের বেশি মার্কা নেই। রাজনৈতিক শুদ্ধতা, কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনা-চিন্তা ইশতেহারে না থাকায় রাষ্ট্রে বিকল্প আদর্শিক চিন্তার বিকাশ ঘটেনি। যারা এক, দুইবার  এই দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিল, তারাও বড় দুই পক্ষের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে ভোটের দিন জনগণকে পুরনো চিহ্নকেই বেছে নিতে হয়। কতটা ইচ্ছায়, আর কতটা অনিচ্ছায়, তা ভোটসংশ্লিষ্টরাই বলতে পারবেন।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ