X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

এইসব মৃত্যু

আমীন আল রশীদ
০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৬আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:০০

আমীন আল রশীদ শ্লীলতাহানির বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন গাজীপুরের হযরত আলী। মেয়ে আয়েশা আক্তারের (৮) ওপর নির্যাতন ও যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন বাবা। কিন্তু বিচার চাইতে গিয়ে পদে পদে হেনস্থা হয়েছেন। এমনকি প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের আয়োজনও চূড়ান্ত করা হয়। আলীর স্ত্রীকে দেওয়া হয় পাগল উপাধি। ফলে চারদিকে যখন হতাশার কালোমেঘ, বিচারহীনতা—তার নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে মেয়েকে নিয়ে রেললাইনে ঝাঁপ দেন হযরত আলী।গাজীপুরের শ্রীপুরে এই ঘটনাটি ঘটে গত বছরের মে মাসে। কিন্তু এরপর তার কথিত পাগল স্ত্রীর খবর কি এই রাষ্ট্র নিয়েছে? জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অবশ্য আলীর স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে এসেছিলেন। আসামিরা গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু যথারীতি জামিনেও বেরিয়ে গেছে। নিশ্চিত করেই বলা যায়, এই মামলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারণ, হযরত আলী ও তার মেয়েকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়ার এই মামলায় কে লড়বেন?
এর কাছাকাছি সময়ে প্রিয়াংকা বিশ্বাস (২২) নামে ঝিনাইদহের এক নারী আত্মহত্যা করেন। স্বামী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। আত্মহত্যার ধরনটাও পরিচিত। অনেক ঘুমের বড়ি, সঙ্গে প্রেশারের ট্যাবলেট। একসঙ্গে খেয়ে ঘুমিয়ে গেছেন এবং সঙ্গত কারণেই সেটা চিরতরে ঘুম। আর এভাবে যে মরতে হয়, সেই পথ বাতলে দিয়েছিলেন তার স্বামীই। মৃত্যুর আগে প্রিয়াংকা তার স্বামীকে ফেসবুক ইনবক্সে লিখেছিলেন, ‘তোমার পরামর্শ মতোই আমি মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন তুমি দেশে আসার জন্য টিকিট কাটতে পারো।’

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, যাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়—সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আবাসিক হলে কিংবা বাসায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে কিসের প্রতিবাদ জানালেন? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি, পড়ালেখার নামে মানসিক নির্যাতন, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কোনও কূলকিনারা করতে না পারা, নাকি এর সবক’টি? এদের মধ্যে সংগীত বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিক মাহবুব আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে দেশের শিক্ষা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে গেছেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া স্ট্যাটাসটি ছিল–‘আই ওয়ান্ট ফ্রিডম অ্যাজ এ বাংলাদেশি ইভেন ইফ ইট কিলস মি ফর দ্য রিজন’।

দিন কয়েক আগে আত্মহত্যা করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। এরমধ্যে আজিমুদ্দিনের পরিবার বলছে, চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগতেন তিনি। অনার্স মাস্টার্স শেষ করার পর নানা জায়গায় চাকরির জন্য ঘুরে ব্যর্থ হয়ে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। একই সময়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ঐশী। তার মৃত্যুর পেছনে প্রেমঘটিত জটিলতাকে প্রাথমিকভাবে দায়ী করা হচ্ছে।

তবে এসব মৃত্যুর তালিকায় সবশেষ যুক্ত হওয়া শিক্ষার্থীর নাম অরিত্রী অধিকারী। রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়তো। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে অরিত্রীর বাবাকে অপমান করেন কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, পরদিন স্কুলে এসে মেয়ের টিসিও নিয়ে যেতে বলা হয়। এই ঘটনায় বাসার ভেতরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রী।

অরিত্রীর আগে গত জুলাই মাসে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ইথিকা (১৬) নামে এক ছাত্রী চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল। তার কয়েকজন সহপাঠীর দাবি, ইথিকাকে টিসির হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই ভয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। যদিও পুলিশ বলছে এটি নিছক দুর্ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে খুব একটা জায়গা পায়নি।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী গণমাধ্যমকে জানান, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় অরিত্রীর কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ডেকে পাঠায়। স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, অরিত্রী মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়ের সামনেই তাকে অনেক অপমান করে। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। নড়েচড়ে বসে অথবা ভীতসন্ত্রস্ত হয় ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষের হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ অরিত্রীর অপরাধ ক্ষমা করেনি। তারা সন্তানের সামনেই বাবাকে অপমান করেছে। কিন্তু এখন সেই অধ্যক্ষই ক্ষমা চাচ্ছেন। তাতে কি অরিত্রীর মায়ের শূন্যবুক পূর্ণ হবে? তারা কি অরিত্রীকে ফেরত পাবে? অভিযুক্তদের শাস্তি হলেই কি অরিত্রীর বাবা মায়ের বুকের আগুন নিভবে?

ধরে নেওয়া গেলো যে, অরিত্রী তার মোবাইল ফোনে নকলই করছিল। কিন্তু এর শাস্তি কি টিসি দেওয়া? এর শাস্তি কি সন্তানের সামনে বাবাকে অপমান করা? একসময় ভিকারুননিসা স্কুলের বেশ নামডাক ছিল। এখন শোনা যায় আর দশটি স্কুলের মতো এটিও এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের নাকি সব বিষয়ে কোচিং করতে হয়। তাহলে ক্লাসে শিক্ষকরা কী পড়ান? এটা স্কুল না কোচিং সেন্টার? সরকারের উচিত হবে, অরিত্রীর আত্মহত্যার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি স্কুলকে কোচিং সেন্টার বানানোরও তদন্ত করা এবং এটি অবিলম্বে বন্ধ করা। এখানে যারা পড়তে আসে তারা শিক্ষার্থী, পণ্যের কাস্টমার নয়।

রাজধানীর কথিত এসব অভিজাত স্কুলের বিরুদ্ধে পড়ালেখার নামে মানসিক রোগী বানিয়ে দেওয়া এবং স্কুলকে পাগলা গারদ বা জেলখানা বানানোর অভিযোগ বেশ পুরনো। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কখনও শক্ত হয়নি। কারণ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসেও আমাদের সামনে কোনও আদর্শ শিক্ষানীতি নেই।

পড়াশোনা মানেই গাধার মতো খাটুনি। তারপর জিপিএ ফাইভের লড়াই। তারপর চাকরির জন্য ছোটো। জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এই জিপিএ ফাইভ আর একটা চাকরির ঘেরাটোপে বন্দি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি মানুষ তৈরি করবে নাকি চাকরিজীবী? শিক্ষার্থীরা জীবনকে বুঝবে, উপভোগ করবে নাকি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত রোবটের মতো প্রতিদিন পৌনঃপুনিকভাবে একইকাজ করতে থাকবে? তাদের মধ্যে জীবনবোধ তৈরি হবে কীভাবে? যে শিক্ষক সন্তানের সামনে বাবাকে অপমান করেন, সেই বিদ্যালয়ে গিয়ে, সেই শিক্ষকের কাছে একজন শিক্ষার্থী মানুষ হওয়ার শিক্ষা কী করে পাবে? ওই শিক্ষক নিজেই তো মানুষ হয়ে উঠতে পারেননি।

শুধু শিক্ষকদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। অভিভাবকরাও দায় এড়াতে পারেন না। শৈশব থেকেই তারা সন্তানের ওপর পাহাড়সমান প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দেন। যেন ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া আর জিপিএ ফাইভ পাওয়াই জীবনের সবকিছু। তাদের মধ্যে মানবিক গুণাবলির কতটুকু বিকাশ হচ্ছে, সে কতটা মানুষ হয়ে উঠছে, সে অন্যের প্রতি কতটা সংবেদনশীল হয়ে উঠছে নাকি আত্মকেন্দ্রিক—সেদিকে অভিভাবকেরও ভ্রূক্ষেপ নেই। যে ভিকারুননিসার বিরুদ্ধে এখন এত ক্ষোভ, দেখা যাবে এ বছরই সেখানে ভর্তির জন্য অভিভাবকের লম্বা লাইন, তদবির। শোনা যায়, মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েও নাকি এখানে সন্তানদের ভর্তি করার অভিভাবকরা। তাহলে শুধু আর স্কুল বা স্কুলের কতিপয় শিক্ষকদের দোষ দিয়ে লাভ কী?

২.

আত্মহত্যা নিয়ে তত্ত্বকথা অনেকেই পছন্দ করেন না। কারণ যার সন্তান ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে পড়ে, তার জীবনে এর চেয়ে বিভীষিকাময় দৃশ্য আর নেই। কিন্তু তারপরও ফ্রয়েডের মতে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকা এবং মৃত্যুবরণের ইচ্ছা আছে। কাজেই প্রত্যেক মানুষের অবচেতন মনে আত্মহত্যা করার ইচ্ছা সুপ্ত থাকে। যদিও সব আত্মহত্যার ধরন ও কারণ অভিন্ন নয়। ভারতে প্রায়ই ঋণের জালে জর্জরিত কৃষকের আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। আফগান বা ইরাকযুদ্ধফেরত অনেক মার্কিন সেনার আত্মহত্যার খবরও আসে।জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য আত্মহত্যা করে। অনেক মানসিক ভারসাম্যহীন লোক না বুঝেই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। ন্যায়বিচার না পাওয়া অনেক সময় মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে যার উদাহরণ গাজীপুরের হযরত আলী। এইসব আত্মহত্যার সঙ্গে পারিবারিক টানাপড়েন, বিশেষ করে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচার নির্যাতনে গৃহবধূর আত্মহত্যার প্রবণতা এই একুশ শতকেও কমার কোনও লক্ষ্মণ নেই, যার সবশেষ শিকার ঝিনাইদহের প্রিয়াংকা।

Initiative Suicide in American Sociological review নামে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, হতাশা হচ্ছে আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় কারণ। যখন কেউ মনে করে তার বেঁচে থাকার আর কোনও অর্থ হয় না, তখন সে নিজের জীবন হরণ করতে চায়। প্রিয়াংকাকে তার স্বামী বলেছিলেন, তুমি আমাকে সন্তান দিতে পারবে না, তাহলে তোমার সঙ্গে আমার সংসার করে কী লাভ? তখন প্রিয়াংকার হয়তো মনে হয়েছে, যদি স্বামীর সংসারই করতে না পারি, তাহলে আর আমারই বেঁচে থেকে কী লাভ? গাজীপুরের হযরত আলী মেয়ের শ্লীলতাহানীর বিচার চাইতে গিয়েছিলেন। বিচার পাননি। তখন তারও মনে হয়েছে, যে সমাজ একটি মেয়ের শ্লীলতাহানীর বিচার করতে পারে না, সেই সমাজে বেঁচে থেকে কী লাভ? হযরত আলী হতাশ হয়েছেন এবং ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছেন মেয়েকে নিয়েই।

হযরত আলীর জীবনে যা ঘটেছে, এমনটা নাও হতে পারতো যদি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে দিতেন। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেননি। দুর্বলের পাশে দাঁড়াননি জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় প্রশাসন। জনপ্রতিনিধিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে সমাজে দুর্বলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। আর সেই মানুষগুলো যখন বুঝে যায় যে এই সমাজে তার বেঁচে থাকার কোনও মানে নেই, তখন সে নিজে এমনকি কখনও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপ দেয় ট্রেনের নিচে। ফলে হযরত আলীদের মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজপতিরা এবং এই রাষ্ট্র।

‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় জীবনানন্দ দাশ সমাজ সংসারে বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুখী একজন মানুষের আত্মহত্যার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন:

অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা

আরও এক বিপন্ন বিস্ময়

আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে।

 কিন্তু যে মৃত্যুগুলো নিয়ে আমরা কথা বলছি, এইসব মৃত্যুর পেছনে কোনও ‘বিপন্ন বিস্ময়’ নেই। এইসব মৃত্যু মূলত আমাদের নিজেদের হাতে তৈরি অসুস্থ বাস্তবতার ফল। এখানে কোনও তাত্ত্বিক ও দার্শনিক কারণ খোঁজার অবকাশ নেই। এইসব মৃত্যুর জন্য দায়ী এই সমাজ ও রাষ্ট্র; এবং সম্মানের সঙ্গে মানুষের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তার অভাব।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঋণের জালে জর্জরিত কৃষকদের আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমের খুবই সাধারণ শিরোনাম। কিন্তু এবার তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ঋণ মওকুফ ও ফসলের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে তারা স্মরণকালের দীর্ঘ পদযাত্রায় নেমেছেন। ফলে আত্মহনন নয়, বরং পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই ঘুরে দাঁড়ানোটাই জরুরি। হযরত আলী, প্রিয়াংকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা সবশেষ অরিত্রি হয়তো সেই ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও পথ পায়নি। তাদের কাছে হয়তো মৃত্যুটা সকল সমস্যার সমাধান মনে হয়েছে কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্রের বিচারহীনতা, জীবিকার অনিশ্চয়তা আর অপমানজনিত তীব্র মানসিক চাপের ফলে তারা হয়তো আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক ও সাহসী কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি, কিন্তু তারপরও এইসব মৃত্যুকে উপেক্ষা সুযোগ নেই। এইসব প্রাণের ‘অপচয়’ রোধের প্রধান অস্ত্র সমাজ ও রাষ্ট্রকে মানবিক করে গড়ে তোলা। একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি গ্রহণের পরেও অন্তত খেয়েপরে বেঁচে থাকার মতো একটা নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্যও যদি অনিশ্চয়তার ভেতরে দিনাতিপাত করতে হয় এবং তার ওপরে পরিবারের চাপ ও ভর্ৎসনাও যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তার সামনে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে পড়ার কী বিকল্প থাকবে?

লেখক: সাংবাদিক। 

/এসএএস/এমএনএইচ/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ