X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ্যায় ভর করে নির্বাচনে জামায়াত

প্রভাষ আমিন
২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২২আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৩১

প্রভাষ আমিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীকে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা যেমন স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন, মানবতাবিরোধী সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছেন; তেমনি সংগঠন হিসেবে জামায়াতও যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে পারে না। শুধু একাত্তর নয়, স্বাধীনতার পরও ‘খাসলত’ বদলায়নি জামায়াত এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। তারা দেশজুড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশে রগ কাটা হলো শিবিরের ট্রেডমার্ক। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে, এমন গুজবে জামায়াত-শিবির দেশজুড়ে যে সন্ত্রাস চালিয়েছে, তা নজিরবিহীন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইতোমধ্যে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বিচার চলছে আরও অনেকের। সংগঠন হিসেবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে চিহ্নিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারায় জামায়াত। তাই একাদশ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না জামায়াতের। সুযোগ ছিল এবার জামায়াতকে নির্বাসনে পাঠানোর। কিন্তু বিএনপির কাঁধে ভর করে তারা নির্বাচনের মাঠে টিকে আছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের লাইফলাইন হয়ে এলো!

একাদশ নির্বাচনে জামায়াতের ২৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে ২২ জন নির্বাচন করছে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। জামায়াত নেতারা কীভাবে রাতারাতি বিএনপি বনে গেলেন? তারা কি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছেন, জামায়াত কি তাদের বহিষ্কার করেছে, তারা কি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন? কিছুই হয়নি, তাও জামায়াত নেতারা বিএনপি বনে গেছেন। জামায়াতে ইসলামী সবসময় ‘সৎ লোকের’ শাসনের কথা বলে। কিন্তু তারা নির্বাচনের শুরুটাই করেছে ডাহা মিথ্যার ওপর ভর করে। কাগজে কলমে তারা বিএনপি প্রার্থী; কিন্তু বাস্তবে জামায়াতের। বিএনপি নেতারাও জামায়াতের এই মিথ্যায় সহায়তা করছে। সবাই কোরাসে বলছে জামায়াত বলে কিছু নেই, সবাই বিএনপি। নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অবলীলায় অসত্য কথা বলেছেন, এদের জামায়াত মনোনয়ন দেয়নি, বিএনপি দিয়েছে। ওয়েবসাইটে জামায়াত নেতাদের পদ-পদবী আছে, এমন অভিযোগের জবাবে নজরুল ইসলাম খান আরও লজ্জাহীন, ‘ওয়েবসাইটে পদ-পদবী থাকুক। আপনারাও যদি আমাদের কাছে মনোনয়ন চান, আমরা দিতে পারি’। অথচ বাস্তবতা হলো বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জামায়াতের দীর্ঘ দরকষাকষি হয়েছে। ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মিলে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে জামায়াতই। তবে ২২ আসনেও সন্তুষ্ট ছিল না জামায়াত। সমঝোতা ভেঙে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২২ আসনে ধানের শীষের পাশাপাশি আরও ৩টি আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছে জামায়াত। তার মানে এই ২২ আসনের প্রার্থীরা জামায়াত নয়, বিএনপির মনোনীত; এটা ডাহা মিথ্যা। এমনকি ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনও এই মিথ্যাচারে শামিল হয়েছেন। বুদ্ধিজীবী দিবসে জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছেন তিনি। এক টিভি টকশোতে তিনি বলেছেন, ধানের শীষে কেউ জামায়াত আছে কিনা তারা যাচাই করে দেখবেন। হায় হায়, ড. কামালও চোখের মাথা খেয়েছেন নাকি।

জামায়াত-বিএনপি আর ঐক্যফ্রন্টের ধারাবাহিক মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ চারজন। তারা জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন জানিয়ে রিট করেছিলেন। হাইকোর্ট তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্বাচন কমিশনে পাঠায়। এরইমধ্যে প্রজন্ম ‘৭১ ও গৌরব ‘৭১ জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে জানিয়ে দেয়, এ পর্যায়ে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জামায়াত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের আইনগত কোনও সুযোগ তাদের নেই। আমি নির্বাচন কমিশনের অপারগতার সঙ্গে একমত। যদি কেউ ঋণখেলাপি, দেউলিয়া, মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ বা দণ্ডিত না হন এবং যদি কোনও নিবন্ধিত দলের মহাসচিব কাউকে মনোনয়ন দেন; তাহলে আসলে তার প্রার্থিতা বাতিলের কোনও সুযোগ হয়তো নির্বাচন কমিশনের নেই। কিন্তু হাইকোর্ট বিষয়টি অন্যভাবে দেখতে পারে। রিটকারীদের আইনজীবীরা যদি আদালতে প্রমাণ করতে পারেন, এই প্রার্থীরা বিএনপির কেউ নয়, তারা নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতের পদধারী নেতা; তাহলে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত পাল্টেও দিতে পারেন। এবার হাইকোর্ট অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটা করেছেন।

কিন্তু একটা মিথ্যা ঢাকতে আরও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে জামায়াত। ওয়েবসাইট দেখে যাতে জামায়াত নেতাদের চিহ্নিত করা না যায়, সে কারণে ওয়েবসাইটটি আপাতত বন্ধ করে রেখেছে। সত্য হলো সূর্যের মতো। মিথ্যার মেঘ কতক্ষণ তা ঢেকে রাখতে পারবে। বিএনপি জামায়াতকে ২২টি আসন ছেড়েছে তো বটেই, এমনকি প্রথমবারের মতো ঢাকা শহরের জামায়াত জোটের মনোনয়ন পেয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন ঢাকা-১৫ আসন থেকে। দলের নায়েবে আমির শামসুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনে, আরেক নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্বাচন করছেন খুলনা-১৫ থেকে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলদের মধ্যে আব্দুল্লাহ মো. তাহের লড়ছেন কুমিল্লা-১১ থেকে, রফিকুল ইসলাম খান মনোনয়ন পেয়েছেন সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে। দলের অন্তত ৭ জন জেলা আমিরও ভোটের মাঠে আছেন ধানের শীষ নিয়ে। বাকিরাও জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে আছেন। এরপরও জামায়াত-বিএনপি ক্রমাগত বলে যাচ্ছে, এরা জামায়াত নয় বিএনপি।

আইনের কাছে অপারগ নির্বাচন কমিশন, হাইকোর্টও যদি তাদের প্রার্থিতা বাতিল করতে না পারে; তাহলে শেষ ভরসা জনগণ। জনতার আদালতই পারে মিথ্যায় ভর করে নির্বাচনে আসা যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করতে। বিএনপি যাদের নির্বাচনে এনেছে, জনগণই পারে তাদের নির্বাসনে পাঠাতে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
চিকিৎসক ছাড়াই রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময় হাজির ম্যাজিস্ট্রেট
চিকিৎসক ছাড়াই রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময় হাজির ম্যাজিস্ট্রেট
অশ্রু ঝরিয়ে বৃষ্টির প্রার্থনা
অশ্রু ঝরিয়ে বৃষ্টির প্রার্থনা
নাইজেরিয়ায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি
নাইজেরিয়ায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ