X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট দিতে হবে সুবিবেচনায়

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৩আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:০৯

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী দুইদিন পরে সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনে যেন বর্তমান সরকার পুনরায় নির্বাচিত হয় তার জন্য ভোটারদের শুভ বুদ্ধির প্রতি যেমন আবেদন জানাবো তেমনি মহান আল্লাহ্‌’র দরবারেও প্রার্থনা করবো বাংলাদেশের গরিব মানুষগুলোর প্রতি যেন মহান আল্লাহতালা করুণা করেন। কোনও ভনিতার আশ্রয় না নিয়ে বলছি, গত ২৭/২৮ বছরব্যাপী কলাম লিখি, একটা গভীর পর্যবেক্ষণের অভ্যাস এরই মাঝে রপ্ত করেছি বলে বিশ্বাস। আমার পর্যবেক্ষণ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে ১৯৭৫ সালের পর যত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার মাঝে শেখ হাসিনার সরকারই সব বিবেচনায় উত্তম সরকার।
শেখ হাসিনার সরকার ধীরে ধীরে দেশটাকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। এ উন্নতিটাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে এবং তাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। বিশ্বে যেসব গরিবদেশ উন্নতি করেছে আমরা যদি তাদের উন্নতির বিষয়টা পর্যালোচনা করি তবে দেখবো যে কোনও না কোনোভাবে দেশটা কোনও বেনিভোলেন্ট শাসকের হাতে দীর্ঘদিন ব্যাপী পরিচালিত হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার জেনারেল পার্ক চুংহি সুদীর্ঘকাল ক্ষমতায় ছিলেন। তার সময়েই দক্ষিণ কোরিয়া উন্নত রাষ্ট্রের পর্যায়ে উঠে আসে। মহাথির মুহাম্মদ মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন একটানা দীর্ঘ ২৩ বছর। তিনি মালয়েশিয়াকে উন্নত রাষ্ট্রের পর্যায়ে তুলে আনেন। সিঙ্গাপুরের অবস্থাও একই। অথচ সিঙ্গাপুর ছোট একটা দ্বীপ রাষ্ট্র। তার উন্নতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমেরিকাও তার থেকে ধার হাওলাত নিয়ে থাকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানও বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু একটানা শাসনের কারণে জাপানও আবার মাথা তুলেছে তারা এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। অথচ জাপানে বাংলাদেশের মতো উল্লেখযোগ্য কোনও প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। চীনেও অসংখ্য মানুষ ছাড়া কী ছিল? দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো। মাও পরিবর্তন আনার জন্য বিপ্লব করেছিলেন। কিন্তু ভুলনীতির কারণে দীর্ঘ ৪১ বছর প্রচেষ্টা চালিয়েও মাও সেতুং চীনের মানুষকে যথাযথ সুখ সমৃদ্ধি দিতে পারেননি অথচ চৌ এন লাই এর একটানা শাসন অব্যাহত ছিল। সুতরাং একটানা শাসন থাকলে যে সমৃদ্ধি আসে তাও নয়। সঙ্গে শাসক সম্প্রদায়কেও বিচক্ষণ হতে হয়, প্রগতিশীল হতে হয়।

আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা মার্কসীয় দর্শনের কচকচানীকে প্রগতিশীলতা বলে মনে করেন। আসলে তা ভ্রান্ত ধারণা। মেহনতী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য যে পন্থা অবলম্বন করলে আসু ভাগ্য উন্নয়নের পথ খুলে যাবে তাতে দ্রুত সময়োপযোগী ও কার্যকর পরিবর্তন আনাই হচ্ছে প্রগতিশীলতা। ১৯৮০ সালে মাও ও চৌন এন লাই এর পর যখন ক্ষমতাচ্যুত দেং জিয়াও পিং পুনরায় ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি সময় উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করে চীনের ভাগ্য পরিবর্তনের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বলতেন বিড়াল সাদা কী কালো তা বড় কথা নয়, বিড়াল ইঁদুর ধরে কিনা তাই মুখ্য বিবেচ্য বিষয়। তিনি প্রথম সাংহাই সহ বড় বড় শহরে এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন খুলে বিদেশি পুঁজি আহ্বান করেন। বিদেশিরা এত নির্ভয় আশ্বাস পেয়েছিলেন যে দলে দলে তারা এসে পুঁজি বিনিয়োগ করতে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেননি। এমনকি তাইওয়ানের পুঁজিপতিরাও এসেছিলেন।

১৯৮০ সাল থেকে ২০১৮ সাল অর্থাৎ মাত্র ৩৮ বছরের মাঝে চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির অধিকারী দেশ। শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে অনুরূপ একটা উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তা ফলপ্রসূ করতে তাকে আরও কিছু সময় দেওয়া প্রয়োজন। তাই কামনা করছি তার সরকার আগামী ভোটে জয় নিয়ে পুনরায় ফিরে আসুক। এখন বাংলাদেশে বছরে যে পরিমাণ তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার রফতানি করে তা ভারতও পাকিস্তানের সম্মিলিত রফতানির চেয়ে বেশি। নোবেল বিজয়ী অর্মত্য সেন বলেছেন বাংলাদেশ বহু ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। ইকোনোমিস্ট বলেছে বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে এবং মাথাপিছু আয় পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।

আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছি আর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির শাসনও দেখেছি। সবার সময়ে কিছু না কিছু উন্নয়ন হয়। কিন্তু কিছু দরিদ্র জাতির ভাগ্য পরিবর্তন খুবই কঠিন ব্যাপার তার উন্নয়ন করতে যে পরিকল্পনা ও শাসক সম্প্রদায়ের যে কঠোর পরিশ্রম দরকার তার কোনও নমুনা বিএনপির শাসনের সময় ছিল না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে প্রজ্ঞা যে দূরদর্শিতা, কঠোর পরিশ্রম করার সে মানসিকতা রয়েছে।

আমরা কুটনীতিতেও তার অসামান্য কৃতিত্ব লক্ষ্য করেছি আমাদের পাশে আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি ভারত। তার শানদৃষ্টি বাংলাদেশের প্রতিটি কার্যক্রমের প্রতি। ভারতের সে শানদৃষ্টিকে এড়িয়ে সুকৌশলে তিনি চীন, জাপান, রাশিয়ার সঙ্গে পরস্পর স্বার্থের বিরোধকে সমন্বয় করে এগুচ্ছেন, চীন থেকে অত্যাধুনিক দুইটা সাব-মেরিন কিনেছেন আবার রাশিয়াকে দিয়ে রূপপুরে আনবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপনের কাজ আরম্ভ করেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতকে দিয়ে সমুদ্র সীমাও চিহ্নিত করিয়ে নিয়েছেন। ১ লাখ ১৮ হাজার ২৫৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা ২০০ নটিক্যাল মাইলে সার্বভৌম কর্তৃত্ব মহিসোপানের মালিকানা লাভ করে ব্লু ইকনোমির এক সুদূর প্রসারি দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন আমরা সমুদ্রের যে এলাকার স্বীকৃত অধিকার পেয়েছি তাতে নাকি ৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ আহরণ করতে গেলে বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রয়োজন। সে জন্যই ভোটারদের কাছে আবেদন রেখে এ লেখা লিখছি যেন তারা দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির কথা চিন্তা করে শেখ হাসিনাকে ভোট দেন। জীবিত নেতৃবৃন্দের মাঝে তার সমতুল্য নেতৃত্ব আপাতত নেই। ড. কামাল ভদ্রলোক, তিনি আইনের ডাক্তার, রাষ্ট্র শাসনের ক্ষেত্রে তার দক্ষতা পরীক্ষিত নয়। আর তার কাছে কোনও শক্তিশালী সংগঠন নেই। শক্তিশালী সংগঠন না থাকলে এ দেশে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনা করা কঠিন। কারণ সব অর্জন বানচাল করে দেওয়ার প্রতিপক্ষ খুবই শক্তিশালী।

প্রত্যেক দেশে উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। শেখ হাসিনা যখন ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন হন তখন দেশে ৩৪০০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। গত দশ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। শিল্প উন্নয়নের জন্য আরও বিদ্যুৎ প্রয়োজন। রংপুর এবং দিনাজপুর জেলায় একশত বর্গকিলোমিটার এলাকায় মাটির নিচে উন্নতমানের কয়লা মজুদ রয়েছে। সে কয়লা আহরণ করে আরও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। বসতি উচ্ছেদ করে এবং জনসাধারণের যেন কোনও অসুবিধা না হয় তাদের পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করে কয়লা আহরণ করে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সুতরাং সরকারকে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সময় দিতে হবে যেন পরিকল্পিত কাজগুলো শেষ করতে পারে।

সরকার একশত রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং তার কাজ এখন পূর্ণগতিতে চলছে। এরই মধ্যে, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত নিজস্ব ইপিজেড প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে। কোরিয়াকে চট্টগ্রামে জায়গা প্রদান করা হয়েছে। এসব কাজ সম্পন্ন করতে সময়ের প্রয়োজন। চীন তৈরি পোশাক শিল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। সুতরাং চীনের পরিত্যক্ত পোশাক শিল্পের ব্যবসাটা বাংলাদেশকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে হবে। পোশাক শিল্পে যে কাপড়ের প্রয়োজন হয় তা বিদেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয় আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে বস্ত্রকল স্থাপিত হয়নি। প্রয়োজনীয় বস্ত্রকল স্থাপিত হলে দেশের বেকারত্ব দূর হবে এবং রফতানি কাজেও সময় বেঁচে যাবে। সুতরাং এ বিষয়েও সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সে পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন তাদের স্ব-স্ব ইশতেহার প্রকাশ করেছে। ঐক্যফ্রন্টও বিএনপি একটা কমন কথা বলেছে যে তারা চাকরির বয়স সীমা তুলে দেবে। ৮০ বছরের বৃদ্ধ আর ২০ বছরের যুবক একসঙ্গে চাকরির প্রার্থী হতে পারেন, এটা এক অভিনব কথা। সম্ভবতো তারা কোনও অর্থনীতির জ্ঞান সম্পন্ন লোককে ইশতেহার তৈরির সময় রাখেননি যে কারণে ইশতেহারে অনুরূপ কথা সংযোজন করেছেন। অর্থনীতিতে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বলে একটা কথা আছে। ১৫ বছর থেকে ৬০ বছরের লোক সংখ্যাকেই ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বলা হয়। লোক সংখ্যার মাঝে এ বয়সের লোকেরাই উত্তম অংশ। জাপান আর চীনের উন্নতির মূখ্য কারণ ছিল ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ এর ফল ভোগ করা।

এখন উভয় রাষ্ট্রের সে বয়সের লোক কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে তা এখনও আশানুরূপ ভাবে বর্তমান। সুতরাং এ সংখ্যার ফল ভোগ করাই উচিত। চীনে এ বয়সের লোকদেরকে স্টেডিয়ামে একত্রিত করে ক্লাস বসানো হচ্ছে এবং সফটওয়্যারের বিস্তারিত জ্ঞান দান করা হচ্ছে যেন ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রগুলোতে ম্যানপাওয়ার সাপ্লাই করা যায়। বাংলাদেশেরও অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

পরিশেষে সবাইকে বলবো, সুবিবেচনাপ্রসূত হয়ে ভোট প্রদান করুন।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ