X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় চমকের মন্ত্রিসভা

মো. জাকির হোসেন
২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:০৬আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:০৯

মো. জাকির হোসেন সোনার বাংলা নির্মাণের দায়িত্ব কাকে দেবেন নির্বাচনের আগে এ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে একটা কলাম লিখেছিলাম। কলামে বঙ্গবন্ধুর রক্তের, আদর্শের উত্তরাধিকারী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের সবচেয়ে যোগ্য ও বিশ্বস্ত সারথী হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম। আমার এ চাওয়ার পেছনে গত দশ বছরে শনৈ শনৈ উন্নতি ছাড়াও দুটি বৈজ্ঞানিক কারণ ছিল। এক. কন্যাদের মায়ের চেয়ে বাবার প্রতি বেশি দুর্বলতা থাকে। একাধিক গবেষণা বলছে, পিতারা সাধারণত কন্যাদের রোল মডেল হয়ে থাকে। আরেক গবেষণা বলছে, কন্যার জীবনে মায়ের চাইতে বাবার প্রভাব বেশি থাকে। দুই. কন্যা যদি বাবার জিন বহন করেন তবে বাবার অনেক বৈশিষ্ট্য কন্যার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। আমি দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছি, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ও কয়েক দশকের ব্যবধানে ঘটেছে। অথচ চিন্তায়-পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু ও কন্যা শেখ হাসিনার মধ্যে কতটা মিল দেখুন।
সাবেক সিএসপি কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘোড়দৌড় বন্ধ করে দেওয়া হলো। বঙ্গবন্ধু বললেন, এই ঘোড়ার ওপর বাজি ধরে বহু পরিবার ফতুর হয়ে গেছে। এটি আর চলবে না। তিনি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ডেকে বললেন, ‘রেসিং ট্র্যাকের ওপর সারিবদ্ধভাবে নারকেল গাছ লাগাও’। একজন কর্মকর্তা আপত্তি জানিয়ে বললেন, ফলের গাছ লাগালে লোকজন সেই ফল চুরি করে খাবে এবং এ নিয়ে মারামারি হবে। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, ‘জনগণের জমি, জনগণের গাছ। জনগণ যদি ফল খায়, আপনার-আমার আপত্তি কেন?’ এ ঘটনার কয়েক দশকে পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস লিখেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটা লন্ড্রি লিস্ট তুলে ধরলাম, যার মধ্যে ছাত্রছাত্রী ও ক্যাম্পাসের সম্পদের নিরাপত্তার খাতিরে এর চারদিকে দেয়াল নির্মাণ অন্যতম ছিল। ‘দেয়াল কেন?’- প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন। উপাচার্য জবাব দিলেন, ‘তা না হলে বহিরাগতরা বেশ বিরক্ত করে।’ প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘তার চেয়ে বরং প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করুন– যেমন দিঘি বা পুকুর কাটুন। মাছ চাষও হবে, বহিরাগতদের অবাধ চলাচলও বাধাগ্রস্ত হবে।’ উপাচার্যের পাল্টা জবাব, ‘কিন্তু নেত্রী, মানুষ যে মাছ চুরি করে খেয়ে ফেলবে?’ প্রধানমন্ত্রী ঝটপট জবাব দেন, ‘আর তাতে কী? একটু-আধটু খাক না, তবুও তো প্রোটিন পাবে। তারপরও যা থাকবে তা আপনার জন্য কম হবে না।’

বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরীকেই বাংলার জনগণ বেছে নিয়েছেন সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণে। প্রধানমন্ত্রীও কালক্ষেপণ না করে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচনের পর ব্যাপক আলোচনা ছিল মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে। অবশেষে গঠিত হয়েছে মন্ত্রিসভা। চমকে ঠাসা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় চমক সদ্য ঘোষিত মন্ত্রিসভা। পথে-বাজারে সাধারণ মানুষের আলোচনায় শুনেছি একজন বাদে সবাই ক্লিন ইমেজের মানুষ। ওই একজন আগে যখন মন্ত্রী ছিলেন তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। পত্র-পত্রিকায়ও তার নানা দুর্নীতির খবর ছাপা হয়েছিলো। ১-২ শতাংশ মানবিক ভুল (Human error) প্রকৃতির সর্বজনীন নিয়মে অগ্রহণযোগ্য নয়। এবারের মন্ত্রিসভায় সর্বাধিক ২৭ জন আনকোরা একেবারে নতুন মন্ত্রী হয়েছেন। এরমধ্যে প্রথমবার নির্বাচিত হয়েই মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়ে গেছেন পাঁচজন সংসদ সদস্য। তাদের মধ্যে দুজন পূর্ণ মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখের সংযোজন এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০০৮ সালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন নতুন মুখকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করেছিলেন। তারুণ্যনির্ভর নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে নানাজনের প্রতিক্রিয়ায় উচ্ছ্বাস ও শঙ্কা উভয়ই প্রকাশ পেয়েছে। অনেকে মনে করছেন, উদ্যমী এই তরুণদের উদ্ভাবনী সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে বদলে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী। তরুণরা ত্বরিতগতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অনেকে। প্রবীণদের বাদপড়া নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা-গবেষণার জবাব দিয়েছেন মন্ত্রিসভার অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। তিনি বলেছেন, নতুনদের মন্ত্রী বানিয়েছি, এর মানে এই নয় যে পুরনোরা ব্যর্থ ছিলেন। পুরনোরা সফল ছিলেন বলেই দেশ আজ অনেকদূর এগিয়েছে। নতুনদের বানিয়েছি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করার জন্য। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে এরই মধ্যে। তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা পূরণ করবে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা, বাংলাদেশকে উন্নীত করবে উন্নত দেশে– এই প্রত্যাশা জেগেছে মানুষের মনে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত সোনার বাংলার নির্মাণ শেষ করে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে সমহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড় করাবেন শেখ হাসিনা, সেই বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে উঠছে বাঙালির হৃদয়ে। ২০০৯ সালে অনেক নতুন মুখকে মন্ত্রী করা হলেও বেশ কয়েকজনের নামে অদক্ষতা ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ ওঠেছিল। একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারের দুর্নীতির কথা পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়েছে অনেকবার।

নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর চাটুকারদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মন্ত্রী হওয়ার আগে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কবে, কোথায় কে সেলফি-ছবি তুলেছিলো তা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। ছবির সঙ্গে চাটুকারিতায় ভরপুর কিছু বক্তব্যও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। তরুণীর মাথা খাওয়ার জন্য তার রূপের যৎসামান্য স্তুতিই যেমন যথেষ্ট, তেমনি মন্ত্রীর মাথা নষ্ট করার জন্য সামান্য চাটুকারিতাই মোক্ষম দাওয়াই। মন্ত্রিসভার মাননীয় সদস্যদের মনে রাখতে হবে, আপনার সামনে যে প্রশংসা করে তার মধ্যে নিশ্চয়ই অবৈধ কোনও মতলব আছে। চাটুকারিতার কারণে অবৈধভাবে কাউকে বিশেষ অনুগ্রহ করলে বা প্রতিপক্ষের প্রতি বৈরী আচরণ করলে তা শপথভঙ্গের শামিল হবে। কেননা, আপনারা শপথ গ্রহণ করেছেন যে কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হবেন না। কারও সামনে প্রশংসা করার বিষয়ে ইসলাম নিষেধ করেছে। প্রশংসা করতে হলে মনে রাখতে হবে, কারও উপস্থিতিতে তার সম্মুখে প্রশংসা করা যাবে না। প্রশংসা করতে হবে তার অনুপস্থিতিতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা অত্যধিক প্রশংসাকারীদের দেখবে, তাদের মুখে মৃত্তিকা নিক্ষেপ করবে। প্রশংসা করতে গিয়ে সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। একবার এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর সামনে অন্যের প্রশংসা করল। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, তোমার অকল্যাণ হোক। তুমি তো তোমার ভ্রাতাকে হত্যা করলে। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, যদি তোমাদের কেউ কারও প্রশংসা করতেই হয়, সে যেন এরূপ বলে যে, আমি অমুক ব্যক্তি সম্পর্কে এরূপ ধারণা রাখি, তবে প্রকৃত অবস্থা আল্লাহতায়ালা অবগত। আর তা তখনই বলবে যখন প্রকৃতই তুমি বিশ্বাস করবে যে, ওই ব্যক্তি এরূপই’। (বুখারি ও মুসলিম)।

মন্ত্রিসভার সদস্যরা দক্ষতার পাশাপাশি যদি নিজ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে পৌঁছে যাবে সরকারের এ মেয়াদেই। সেই সঙ্গে সরকার ও রাজনীতিরও গুণগত পরিবর্তনও হবে। মন্ত্রীদের দুর্নীতিমুক্ত হয়ে দক্ষতার সঙ্গে সরকার পরিচালনার লক্ষ্যে আমজনতার পক্ষ থেকে আমার কয়েকটি প্রস্তাব–

এক. মন্ত্রিসভার সদস্যদের এ ম্যাসেজ দেওয়া যে, কারও বিরুদ্ধে পেশিশক্তি, দুর্বৃত্তায়ন, ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা সন্ত্রাসী-গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানের অভিযোগ উঠলে কেবল মন্ত্রিত্ব বাতিল নয়, আইনের কাছেও সোপর্দ করা হবে।

দুই. দলের প্রবীণ অভিজ্ঞরা যাতে সরকার পরিচালনায় নতুনদের সহযোগিতা ও তদারকি করতে পারেন, সেজন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে তাদের নিয়োগদান।

তিন. মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংবর্ধনা গ্রহণে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা। অতীতে দেখা গেছে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের মন্ত্রীর অগমনের জন্য রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। মন্ত্রিসভার হাতেগোনা কয়েকজন সদস্য দেশের ১৭ কোটি মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করে রাষ্ট্রকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে পরিচালনার অত্যন্ত কঠিন, দুর্বহ ও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের নাওয়া-খাওয়া, নিদ্রা-আরাম বিসর্জন দিতে হবে। এটি তাদের জন্য খুব সুখের, আনন্দের বিষয় নয়, বরং ভয়ঙ্কর কঠিন এক দায়িত্বের বিষয়। তাহলে কেন সংবর্ধনা? দায়িত্ব পালনে তিনি সফল হবেন, না ব্যর্থ হবেন তার জন্য অপেক্ষা না করেই কেন এত আয়োজন? সংবর্ধনা পাওয়া মন্ত্রী যদি ব্যর্থ হন, ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা সন্ত্রাসী-গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন, তখন এই সংবর্ধনার কী হবে? এখন সংবর্ধনা, ক’দিন পর কাঁটার মালা। এর চেয়ে বরং তাঁরা কাজ করতে থাকুন। যদি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা সন্ত্রাসমুক্ত থেকে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তখন না হয় আমরা দেশবাসী সবাই মিলে চার, সাড়ে চার বছর পর তাদের সংবর্ধনা দেবো।

চার. মন্ত্রিসভার সদস্যরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা তা তাঁদের অনুধাবনের জন্য ও জনগণের মতামত জানার জন্য উন্মুক্ত ও সবার প্রবেশাধিকার আছে এমন ফিডব্যাকের ব্যবস্থা থাকা দরকার। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুক পেজ খোলা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

পাঁচ. যেকোনও মূল্যে মন্ত্রিসভার সদস্যদের অতিকথনে রাশ টেনে ধরতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও মন্ত্রীদের কথা কম বলার পরামর্শ দিয়েছেন। অতিকথনে মানুষ কেবল বিরক্তই হন না, সময়মতো পৃষ্ঠ প্রদর্শনও করেন। ইতোমধ্যেই একজন মন্ত্রী আগের মতোই অতিকথন শুরু করেছেন। নিজের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন বিষয়ে আজ এক কথা বলে পরের দিন আবার ভিন্ন কথা বলছেন। মানুষ তার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। তার অতীব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিচালনায় গত মেয়াদেও তিনি দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারেননি।

ছয়. মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে মানুষ বিনয় ও প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সম্মানজনক ভাষা ও আচরণ প্রত্যাশা করে। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অসম্মানজনক কথা বলেছেন কেউ বলতে পারবেন না। মন্ত্রিসভার সদস্য মানে আপনারা এ জাতির, রাষ্ট্রের অভিভাবক। অভিভাবকের কাছ থেকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার, আঘাত করে কথা বলা মানুষ মোটেও পছন্দ করেন না। প্রতিপক্ষের আক্রমণাত্মক, হিংসাত্মক ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের জবাবের ক্ষেত্রেও মানুষ সরকারের মন্ত্রীদের কাছ থেকে যুক্তিনির্ভর, তথ্যভিত্তিক ও বিনয় ভাষণ প্রত্যাশা করে। পাল্টা আক্রমণ নয়।

সাত. গত দুই মেয়াদে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলেও এবারের মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের। ঠাঁই হয়নি শরিকদের। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য বজায় রাখতে তাদের কাউকে কাউকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ঐক্যফ্রন্ট ও বাম মোর্চা নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত স্পষ্টতর হচ্ছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অধিকাংশ বামরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছে। এদিকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই   বিএনপি নেতার সঙ্গে টেলিফোন আলাপে যে বড় খেলার ইঙ্গিত দিয়েছে তা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সামনে বড় ও ফাইনাল খেলা অপেক্ষা করছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিভক্ত হলেও বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য অটুট রয়েছে। বড় খেলায় এক পক্ষে থাকবে পাকিস্তান, বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা ইসলামি দলগুলো, ছদ্মবেশী সুশীলরা ও কূলহারা কলঙ্কিত কিছু মুক্তিযাদ্ধা, কিছু বিভ্রান্ত বাম, বর্ণচোরা কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং কিছু এনজিও। অন্যদিকে থাকবে আওয়ামী লীগ ও যাদের আওয়ামী লীগ পক্ষে রাখতে পারবে তারা।

আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে শহুরে নাগরিক সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়া; উন্নত অর্থনীতি, দারিদ্র্যমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি সড়ক, রেল, জ্বালানিসহ ভৌত অবকাঠামো খাতে বড় বড় প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করার ঘোষণা করেছে। পথশিশু, অনুন্নত সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণদের সুরক্ষার কথাও উল্লেখ রয়েছে ইশতেহারে। এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হলে চমকের মন্ত্রিসভাকে সভার আগে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন ভেঙে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চমক দেখাতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
আজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছরআজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ