X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংরক্ষিত নারী আসনে যেমন সাংসদ চাই

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:২৮আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:১৯

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের জন্য শাসক দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে যে সাড়া দেখা গেছে তা আগে কখনও দেখা যায়নি। সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরপরই বড় ভিড় দেখা গেছে দলীয় কার্যালয়ে। এবার বড় বিজয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ, ফলে সবখানেই বড় প্রত্যাশার পাশাপাশি বড় অংশগ্রহণের প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। 
বাংলাদেশের সংসদে, প্রথাগতভাবে, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীরাই নির্বাচিত হতেন। কখনও কখনও বিরোধী দলের নারী প্রার্থীদের কয়েকটা আসনে। তবে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী অনুযায়ী, ২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে নির্ধারণ করা হয় যে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে (সে সময় ৪৫টি) একটি দল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী সাংসদকে সুযোগ দেওয়া হবে; এবং তা হবে সংসদে ওই দলের কতজন প্রতিনিধি রয়েছেন তার অনুপাতে। অর্থাৎ একটি রাজনৈতিক দলের ৬ জন যদি নির্বাচিত সাংসদ হন, তাহলে ওই দল থেকে একজন প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ হবেন।

একটা বিতর্ক নানা সময়েই ওঠে যে, দেশের নারীরা শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে, রাজনীতিতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তখন তাদের এই সংরক্ষিত করে রাখার জন্য কেন এত আয়োজন? কারণ, বাংলাদেশের নারীরা আর পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী নয়। পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি আসবে জানি। প্রতিক্রিয়াশীলতা ও ধর্মীয় মৌলবাদীদের ক্রমাগত আক্রমণের মধ্যেও বাংলাদেশে নারী প্রগতি অপ্রতিরোধ্য। সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বেশি থাকবে, সেটাও কাম্য। তবে নারী-পুরুষ সমানাধিকার ও সমমর্যাদার প্রশ্নে কোটা পদ্ধতি কতটা মর্যাদাকর সেই বিতর্ক আছে। নারী সংগঠন ও নারীবাদীদের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে দাবি ছিল প্রত্যক্ষ ভোটে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী সংসদ সদস্য নির্বাচনের। কিন্তু তা হয়নি। সরকারি দল যেটি করেছে, তা হলো সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বাড়িয়েছে। অনেকেই হয়তো বলবেন, ক্ষমতায়নে ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে নারীর ভূমিকা রাখতে হলে সংরক্ষিত নারী আসন না রাখাই যুক্তিসঙ্গত। রাজনীতিতে নারীর প্রবেশ বাড়াতে বিভিন্ন দেশে যেসব কৌশল ও প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে, তার অন্যতম হলো রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চার প্রসার ও আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দলীয় মনোনয়নে নারীর জন্য কোটা সংরক্ষণ করা।

জাতীয় সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন নারী সমাজের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। এই ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য, যা আজও শেষ হয়নি। মাত্র ১৫টি আসন নিয়ে এই ব্যবস্থার সূচনা হলেও ক্রমশ বেড়ে এই আসন সংখ্যা সংসদে বর্তমানে ৫০, যেখানে আনুপাতিক হারে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল থেকে নারীরা নির্বাচিত হন। নির্বাচিত নারীরা এ পদে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। এই পদ্ধতি নারীর ক্ষমতায়নের পথ কতটা সুগম করে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এদের প্রচেষ্টাকে খাটো করার সুযোগ নেই। যেহেতু এটি এখন বাস্তবতা, তাই সেই আলোচনা দীর্ঘ করার অভিপ্রায় নেই। যারা আসবেন, দল থেকেই আসবেন এবং প্রত্যাশা হলো, দল যেন যোগ্যতার বিচার করে।  

যে নারী মেয়েদের শিক্ষা প্রসারের কাজে তার সময় ও জীবন উৎসর্গ করছেন, উগ্র ধর্মতন্ত্রের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে সোচ্চার আছেন, যে নারীর সাংগঠনিক শক্তি প্রমাণিত, যিনি উদার-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বপ্নকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তার রাজনীতিকে বিবেচনা করা হবে এমন একটা প্রত্যাশা স্বাভাবিক কারণেই থাকে।

তবে এ কথাও সত্য যে, রাজনীতি ও সমাজ একটা বিভাজনের রেখা সবসময়ই টানতে চাইবে, যখন রাজনীতিতে নারীর বড় অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ আসবে, বিশেষ করে আইন প্রণয়নের সুযোগ যখন তাদের সামনে উপস্থিত হয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, আরও অনেক নারী রাজনীতি ও প্রশাসনের শীর্ষ জায়গায় থাকার পরও নারীর রাজনৈতিক পরিচয় গঠনে বহুবিধ জটিলতা এখনও বিরাজমান। তাদের গৃহলক্ষ্মী-রূপ ঘরের বাইরে দেখতে চাইবে না অনেকেই, আবার চাইলেও তাদের মতো করেই চাইবে।

আজকাল নারীরা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি করছেন, জেলে যাচ্ছেন, লেখালেখি করছেন, ঘরও করছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যও চালাচ্ছেন এবং এসবের মধ্য দিয়ে অন্যের প্রতি, নিজেদের প্রতি এবং কাজ ও কাজের লক্ষ্যের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। তাই দেশীয় রাজনীতির গতিপথের অংশীদার হয়ে যে নারীরা শেষ পর্যন্ত সংসদে যাবেন তাদের সংসদে উপস্থিতি নিশ্চয়ই আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী বিষয়সমূহ কিছুটা হলেও ভিন্ন ভাবনার ছোঁয়া পাবে।

রাজনৈতিক সংগঠনে নারীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকলেও তাদের মতামত ও আদর্শগত প্রভাব পুরুষদের সমান নয়। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের বাইরের মেয়েদের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির বৃত্তে টেনে আনার প্রয়াস সবসময়ই রেখেছে। শিক্ষিত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সমাজই উদারনৈতিক সংস্কারমনস্কতাকে উৎসাহিত করে। স্ত্রী-পুরুষের সমানাধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে মেয়েদের রাজনীতিতে সক্রিয়তার চেষ্টা করে উদারপন্থীরাই। তাই সংসদে তেমন নারীদের দেখতে চাই আমরা, যারা এই লড়াইটা করবেন আইন প্রণেতা হয়ে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বর্ষার আগেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, মোকাবিলায় যা করছে ডিএনসিসি
বর্ষার আগেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, মোকাবিলায় যা করছে ডিএনসিসি
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ