X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্র সংসদ নির্বাচনই পারে রাজনীতিকে বাঁচাতে

লীনা পারভীন
২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৩০আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৪৩

 

লীনা পারভীন রাজনীতি বলতে আসলে কী বুঝি আমরা? কতটা বুঝি? রাজনীতিতে নাম লেখানোর জন্য কি কোনও জ্ঞানের প্রয়োজন আছে? থাকলে সেটা কোন জ্ঞান? তোষামোদি জ্ঞান, না রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রনীতির সম্পর্কে জ্ঞান? রাষ্ট্রের কাজে নামতে গেলে কোন জায়গাটি আগে বুঝতে হয়? এমন হাজার প্রশ্ন যদি মগজে নাড়া না দেয় তবেই বুঝতে হবে আপনি রাজনীতি নামক পাঠের প্রাথমিক স্তরেও নেই। আর এই জ্ঞান কি এমনি এমনি চলে আসে? চাইলেই কি যে কেউ রাজনৈতিক নেতা হয়ে যেতে পারেন?

বাংলাদেশের রাষ্ট্রনৈতিক যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সর্বোচ্চ স্থান হচ্ছে জাতীয় সংসদ। সেখানে আসলে কী হয়? এই যে এত সুন্দর একটি স্থাপনা, এটা কি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য না এর ভেতরেই রচিত হয় এই রাষ্ট্রটির ভাগ্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত।
আগে জানতাম রাজনীতি মানেই হচ্ছে জনগণের ধমনীকে বুঝতে পারা ও ধমনীর রক্ত সঞ্চালনকে তাজা রাখার মন্ত্র। অর্থাৎ রাজনৈতিক পাঠ মানেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরই চাওয়া অনুযায়ী রাষ্ট্রকে সুপথে পরিচালিত করার জন্য নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থকে ত্যাগ করে সামষ্টিক চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়ার নিমিত্তে নিয়োজিত থাকা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা কী দেখছি? আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, রাজনীতি হচ্ছে ‘গরিবের ভাউজ’ অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই এখানে এন্ট্রি দিতে পারে। এর জন্য নেই কোনও সীমানা নির্ধারণ বা প্রস্তুতি।

বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো দিনে দিনে নিজেদের মাঠ থেকে তুলে এনে করপোরেট হাউজের কাছে নিবন্ধিত করছেন বলে আমার মনে হয়। ইউরোপ আমেরিকায় যে রাজনীতি কাঠামো, আমাদের দেশের কাঠামো কিন্তু এখনও ঠিক তার বিপরীত। এখনও আমাদের দেশের জনগণকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়, এখনও নারীদের তাদের ন্যায্য পাওনার জন্য লড়াই করতে হয় প্রতিনিয়ত। সুশাসন এখনও আমাদের কাছে এক সোনার হরিণ। প্রতিদিন জনগণের কপালে জুটছে নানা যন্ত্রণার ঘটনা। কিন্তু সেসব নিয়ে কথা বলার লোকের সংখ্যা কি বাড়ছে না কমছে?

এবারের সংরক্ষিত নারী আসনের সরকার দলীয় প্রার্থীদের দিকে তাকালে বাস্তবতার কিছুটা ছোঁয়া পাওয়া যায়। রাজনীতি কি এতটাই সহজ ও সহজলভ্য হয়ে গেলো? ক্ষমতায় যাওয়াটা কি দায়িত্বের সাথে যুক্ত নয়? যদি তাই হয় তাহলে রাজনীতির পাঠ নেওয়াটাও কি জরুরি নয়? আর ক্ষমতায় যাওয়া মানেই যদি হয় শো-অফ তাহলে সেখানে জনগণের সংশ্লিষ্টতা কীভাবে পাবো আমরা।

যেসব তারকা এবার মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন তারা আসলে কতটা মাটির মানুষ? কতটা জানেন দেশের মানুষের চাওয়া পাওয়াকে? কী তাদের অবদান আছে নিজের এলাকায় বা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে?

এসব প্রশ্ন আমাদেরই করতে হবে জনগণ হিসেবে। কারণ, আমরা আমাদের ভাগ্যের হিসাব যেনতেন লোকের হাতে তুলে দিতে পারি না। আর কোনও দল যদি সেই চেষ্টা করে থাকে তবে তাদেরও এই মেসেজটি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে হবে। ম্যান্ডেট দেওয়ার মালিক জনগণ। অন্য কেউই নয়।
এবার আসি ডাকসুসহ সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে। গত প্রায় ২২/২৩ বছর ধরেই অচল হয়ে আছে ডাকসুর মতো একটি রাজনৈতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এজন্যই বলছি যে এখান থেকেই হাতেখড়ি ও অভিজ্ঞতা হয় ভবিষ্যৎ দেশনেতাদের। এই সূতিকাগারকে অচল করে দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত সুকৌশলে। মাননীয় রাষ্ট্রপতির আদেশের পরে যদিও নড়াচড়া করতে শুরু করেছিলো এই প্রক্রিয়াটি। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ডাকসু নির্বাচনের পথ এখন খুলেছে।
একথা অস্বীকারের কোনই উপায় নেই যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডাকসুর মতো সংগঠনগুলোর ভূমিকা ছিল বা এখনও আছে। রাজনীতি মূলত একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া। এখানেও রয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষার কারবার। আর এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কেবল একজন নেতা তৈরি হতে পারে, যিনি ধারণ করেন গোটা দেশের মানুষের ভালোমন্দকে। লড়াই করেন জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে।
আমাদের দেশে অনেক আগেই বিরাজনীতিকরণের এক ধরনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ছাত্র রাজনীতিকে অচল করে রাখা গেলে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আত্মীয়করণ বা ব্যক্তির পছন্দের রাজনীতির চর্চা করা যায় বিনা চ্যালেঞ্জে। আমরা জেনে বা না জেনে সেই প্রক্রিয়াকেই উসকে যাচ্ছি ক্রমাগত। তাই বলে আমি বলছি না সমাজের অন্যান্য শ্রেণির থেকে কেউ রাজনীতিতে আসতে পারবেন না। অবশ্যই পারবেন তবে তাকেও শিখে আসতে হবে রাজনীতির প্রাথমিক পাঠকে। দল থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রতিটা স্তরকে শিখেই তবে দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে থেমে গেলেই পিছিয়ে পড়তে হয়। আপনি জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে থাকা মানুষ হতে পারেন কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে যদি মানুষ পাঠের বিদ্যায় পিছিয়ে পড়েন বা এগিয়ে না থাকেন, তবে বুঝতে হবে মানুষের নেতা হওয়া আপনার জায়গা নয়।
তাই অতি দ্রুত রাজনীতিকে তার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই আনার কাজটি করতে হবে আমাদের সবাইকে মিলে। এই দেশ আমার, সিদ্ধান্তও আমার। জীবন আমার, তাই এই জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে কে কেমন করে ভূমিকা রাখতে পারবে সে ব্যাপারেও থাকবে আমার মতামতের গুরুত্ব। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হবে কেবল স্লোগানে বাংলাদেশ বললেই হবে না, হৃদয়ে ধারণ করতে হবে লাল সবুজের পতাকাকে, আর শিক্ষা নিতে হবে তাদের কাছ থেকে, যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি এই লাল সবুজ পতাকা।
ক্ষমতাকে চাইলেই কেউ আপন খায়েশের সিঁড়ি বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না, হতে দেওয়া যায় না। রাজনীতি অন্য কোনও পেশার মানুষের জন্য রিহ্যাবিলিয়েটেশনের জায়গা হতে পারে না।

 লেখক: কলামিস্ট

/আইএ/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
‘চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হোন’
‘চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হোন’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ