X
শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আল মাহমুদ, পুনর্জন্ম?

তুষার আবদুল্লাহ
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৯আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৫

তুষার আবদুল্লাহ আমরা সবাই মনে হয় ওঁৎ পেতে ছিলাম। কখন তার প্রস্থান হয়। তিনি বিদায় বলা মাত্র– শুরু আমাদের। বকেয়া শ্রদ্ধা-ভালোবাসা সুদে আসলে মেটানোর সে কী প্রাণান্তকর চেষ্টা আমাদের। আল মাহমুদ বাংলাদেশের প্রধানতম কবি ছিলেন, শক্তিমান কবি ছিলেন, জীবনানন্দ দাশ পরবর্তী সেরা তিনি, এমন বাকযুদ্ধে যাওয়ার রুচি নেই। শুধু বিশ্বাস রাখতে চাই আমার মাটি-জল-বায়ু’র যথার্থ অনুবাদক তিনি। যেমন করে বাংলাকে পাঠ করতে চাই, তেমন সুরেলাভাবেই তিনি বন্দনা করেছেন প্রকৃতিকে। নারীর কাছে যেমন করে সমর্পিত হতে চাই, আল মাহমুদ তেমন নকশাই এঁকেছেন তার কবিতায়। শুধু কি কবিতায়, ওনার গদ্য? তিতাসের জলের মতোই অমৃত।
আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভাজনের ফাঁদে পড়েছিলেন আল মাহমুদ। কবি, লেখকের রাজনৈতিক বিভক্তি সব দেশেই ছিল, আছে। সমাজ, রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের ফসল এটি। লেখক, কবিকে তার সমকালীন সমাজ সইতে পারে না। অস্বস্তিতে ভোগে। সেই রাজন্যদের সময় থেকেই জানি, রাজ্যসভার পরিষদ কবিরাই রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এসেছেন। পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া কবিকেও রাজ্য ছাড়া, মর্ত্য ছাড়া হতে হয়েছে এমন উদাহরণও আছে। আবার কবি-লেখকরা নিজেরাও শক্তিমানকে কোণঠাসা রাখতে বিভাজন তৈরি করে। সমাজ-রাষ্ট্র সেই সুযোগটা কাজে লাগায়। আল মাহমুদের বেলায় যে তা হয়নি এমন বলার সততা কি আমাদের আছে? তবে আল মাহমুদের কোনও বিশেষ গোষ্ঠীতে ভিড়ে যাওয়ার অনিবার্যতা ছিলই? কতজনই তো মিশে গেলেন। তিনিও না হয় একলা থাকতেন। মিশে গিয়ে নিজের ও বাংলা কবিতার অপচয় করেছেন তিনি। যে মতাদর্শে বা যারা তাকে নিজেদের মনে করে আসছিল দৃশ্যত, সেখানে অবস্থানকালে উচ্চারিত বা লিখিত পংক্তি তার পূর্ব সময়ের উচ্চারণকে ডিঙিয়ে যেতে পারেনি। তাই বলা যায় অপচয় হয়েছে তার কবি শক্তির। একটি আরোপিত চিন্তা বা মতাদর্শ শুদ্ধ ফসল ফলাতে পারে না। আল মাহমুদ সেই উদাহরণ।

কবি’র সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। এসেছিলেন আমার একটি অনুষ্ঠানে। কানের সক্ষমতা কমে এসেছিল। তাই খুব কাছাকাছি বসে সংলাপ বিনিময় হয়েছে। বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে তার সক্রিয়তার কথা। বলেছিলেন তার সংসার জীবনের লড়াইয়ের কথা। কেউ তাকে চাকরি দিচ্ছিল না। কিন্তু কাঁধে পুরো সংসার। সেই সুযোগ নিয়েছিল কেউ। বলেছিলেন কবিদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। তাকে মৌলবাদী আখ্যা দেওয়ার পরেও অসাম্প্রদায়িক দাবিদার কাগজগুলো তার দিকেই হাত পেতে থাকে। তিনি বলছিলেন, শিল্পকলা ও ধর্মবিশ্বাসকে মিশিয়ে ফেলা ঠিক নয়। এমন কথা তিনি অন্যান্য গণমাধ্যমেও বলেছিলেন। তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গেও আমার আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। শহীদ কাদরীর সঙ্গে নিউ ইয়র্কে দুই দফা আড্ডা হয়েছে। সেই আড্ডার অনেকটা জুড়ে ছিলেন আল মাহমুদ। তিনি বলেছিলেন– আল মাহমুদ ষড়যন্ত্রের শিকার। ওর শক্তি সইতে পারেনি সমকালীন কবিরাই। শামসুর রাহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম ২০০২ সালে। তিনিও আফসোস করেছিলেন, আল মাহমুদকে বিশেষ ‘বেড়া’য় ঘিরে দেওয়ায়। এজন্য তিনি তাঁর বন্ধুকে যেমন দায়ী করেছেন, তেমনি নিজেদের দায়ও অস্বীকার করেননি। হুমায়ুন আজাদ ১৯৯৮ সালে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছিলেন, আল মাহমুদকে আমি সবার ওপরে রাখবো। এইতো সেদিন হাসান আজিজুল হকও প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে বললেন–  ও আরও অনেক দিতে পারতো জানো। ও-ই নষ্ট হয়ে গেলো, নাকি আমরাই ওকে সরিয়ে দিলাম।

আসলে তাকে আমরা সরাতে পারিনি। যারা বুকে টেনে নিয়েছিল ওনাকে। তারাই বরং কবিকে পায়নি। কবি আমাদেরই ছিলেন। সব সাহস যে আমরাই হারিয়ে বসেছিলাম। সমাজের কথা ভেবে, নিজের আবরণ খসে পড়ার ভয়ে আল মাহমুদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারিনি– আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন। তার মতো করেই আমরা জীবনকে কর্কশ না ভেবে সোনালি ভেবে আসছি। তিনি আমাদের কাছে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন প্রচণ্ডভাবে।

বিদায়কালে আমাদের সেই জবানবন্দিতে কবি পরাজিত নয়, বিজয়ীর বেশেই বিদায় নিলেন।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/জেএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দুই উপজেলায় ১৪৪ ধারা
দুই উপজেলায় ১৪৪ ধারা
তাদের প্রেমময় ফটোশুট, সঙ্গী আইফেল টাওয়ার!
তাদের প্রেমময় ফটোশুট, সঙ্গী আইফেল টাওয়ার!
পুলিশ পরিদর্শকের ওপর হামলা-ডাকাতি: ৬ জন রিমান্ডে
পুলিশ পরিদর্শকের ওপর হামলা-ডাকাতি: ৬ জন রিমান্ডে
ইরানে এখনও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল: আইডিএফ
ইরানে এখনও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল: আইডিএফ
সর্বশেষসর্বাধিক