X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আহা ভোটার

তুষার আবদুল্লাহ
০২ মার্চ ২০১৯, ১৩:২৯আপডেট : ০২ মার্চ ২০১৯, ১৩:৩৩

তুষার আবদুল্লাহ মায়া হচ্ছে ‘ভোট’-এর জন্য। বেচারা ভোট নাজুক অবস্থায় আছে। নিঃসঙ্গও বলা যায়। তাকে সঙ্গ দেওয়ার মানুষের আকাল। জনগণ এক সময় তাকেই পরম অবলম্বন ভাবতো। এখন ছেড়ে চলে গেছে। ভোট অবশ্য  উল্টো নিজের কাছে জানতে চাইছে– জনগণকেও নিজেই কি দূরে ঠেলে দিয়েছে? চিন্তার এক টানাপোড়নের মধ্যে আছে ভোট। ভোট এবং ভোটারের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্ব নতুন নয়। কত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে। সবাই এসে নিজের মতো করে ভোটের আয়োজন করেছে। কখনও কখনও ভোটের আয়োজনে ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ বা তত্ত্বাবধায়কের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। ভোটাররা যেভাবে ভোট নিয়ে উৎসব করতে চেয়েছে, কোনও কোনও সময় তা হয়ে উঠেনি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতো করে ভোট নিজের করে নিয়েছিল। সাময়িকভাবে ভোটাররা মনক্ষুণ্ন হয়েছেন। তাদের বুকে হাহাকারের প্লাবন বয়ে গেছে। কিন্তু যখনই আন্তরিক নিমন্ত্রণ পেয়েছেন,তখনই ভোট উৎসবে হাজির হয়েছেন। প্রচলিত আছে– ভোট গ্রহণের সময়টুকুতে রাজমুকুট থাকে ভোটারের মাথায়। ভোটারদের এখন সেই রাজমুকুটেও অরুচি।

এই অরুচির জন্য দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোই। কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে এর জন্য দায়ী করা যাবে না। সবাই সমান পাপী। এই পাপের সূত্রপাত স্বৈরাচারদের হাতে। তারা গণভোট, ‘হ্যাঁ-না’ ভোট নামে রকমারি কত ভোটের আয়োজন করে। সেখানে ভোটের অঙ্কও কত হবে তাও ঠিক করে নিয়েছিল নিজেদের মতো করে। দৃশ্য গণমাধ্যমে ভোটারদের  সাদাকালো-রঙিন চলচ্চিত্র দর্শনে চুবিয়ে দিয়ে ব্যালট বাকসো ভরাট করার সত্যি গল্প আমাদের জানা। ১৯৮৬ সালের ভোটের অস্বস্তি  দূর করেছিল ১৯৯১ সালের  নির্বাচন।  ভোটারদের মনে আস্থা ফিরে এসেছিল। তাদের রাজমুকুটের দ্যুতি পুরো রাজনৈতিক ময়দানকে আলোকিত করে তোলে। কিন্তু পাঁচ বছরের মেয়াদ পেরোতেই আবারও ভোটাররা আবার প্রতারিত হলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটারদের তোয়াক্কা করা হলো না। ভোটের অঙ্ক তৈরি হলো ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের মর্জি মতো। অবশ্য তারা টেকসই হতে পারেনি। জুনে  ভোটের ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে’ ডেকে নেওয়া হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে। ভোটাররা আবার ইজ্জত ফিরে পান। ২০০১ এবং ২০০৮ মোটামুটি  ভোটাররা পাত্তা পেয়ে আসছিলেন। তবে এর মাঝেও মাগুরা, মেহেরপুর, ঢাকা-১০, ঝালকাঠি -১ এর নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের সম্মান রক্ষা হয়নি।

পরবর্তীতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়েও ভোটাররা সন্তুষ্ট নন। এই নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। মাঝের কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খানিকটা হলেও ভোটাররা আদর পেয়েছিলেন। তবে সেই আদর প্রত্যাশার কানাকড়ি মাত্র।

ভোটে যে ভোটাররা বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি বা অনিবার্যতা হারাচ্ছে, এজন্য কোনও বিশেষ দলকে দায়ী করা যাবে না। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনিহাও এর জন্য দায়ী। ভোট বর্জন। যথাযথ প্রস্তুতি, লক্ষ্য ও ইশতেহার ছাড়া নির্বাচনের মাঠে নামাও ভোটারদের ভোটকেন্দ্র মুখি না হওয়ার অন্যতম কারণ। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে এলো ঠিকই, কিন্তু তারা তাদের সমর্থক এবং ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি জয়ী বা বিজিত হলে কে হবেন তাদের নেতা? ভোটাররা সংশয়ে ছিলেন। ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ নেতা হবেন, তা জানতে পারলে ভোটের রঙ খানিকটা হলেও বদলাতে পারতো। তাদের সাংগঠনিক এই দুর্বল অবস্থান দেখে ক্ষমতাসীন দল আর ভোটারদের খোঁজ করেনি। তারই ধারাবাহিকতা দেখা গেলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। কাউন্সিলরদের জন্য কিছু ভোটার ভোট কেন্দ্রে গেলেও, মেয়রকে ভোট দেওয়ার তাগিদ ছিল না ভোটারদের।

এই অনুশীলন শুধু গণতন্ত্র নয়। দেশের রাজনীতি চর্চার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দল মাত্রই যখন চরম এই উপলব্ধিতে পৌঁছবে– ভোটার না হলেও ভোটের আয়োজেন করা যায়। ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। তখন দৃশ্যমান গণতন্ত্রটুকুও খসে পড়বে। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের এই অসহায়ত্ব, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, বিলুপ্ত প্রায় অবস্থা আঁচ করতে পেরেছে। তাই বিলুপ্ত প্রজাতি রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে যেমন দিবস পালন করা হয়, তেমন করে তারা পহেলা মার্চ ভোটার দিবস পালন করতে শুরু করেছে। বাঘের মতো ভোটারের অস্তিত্ব গণনাও হয়তো শুরু করা যাবে। কিন্তু এদিয়ে  নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মান রক্ষা করা যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটারের রায় নিয়েই  সকল প্রকার  নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে  হবে। এই শুভবোধ,চর্চায় ফিরে না গেলে, ভোটারদের জন্য মায়া কান্না দেখিয়ে নোনা জলের অপচয়ই করা হবে শুধু।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ