X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারত না পাকিস্তান?

আহসান কবির
০৪ মার্চ ২০১৯, ১৪:২৮আপডেট : ০৪ মার্চ ২০১৯, ১৯:১৯

আহসান কবির বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী একটা উক্তি এমন– ‘পৃথিবী আজ দুই শিবিরে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে’। পাকিস্তান আর ভারতকে নিয়ে লিখতে গেলেও এ দেশের মানুষেরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। যুদ্ধ যদিও ‘ধ্বংস এবং হত্যার মতো নির্মম বিষয়’ (জাপান-জার্মানি- ইতালি এমনকি পাকিস্তান জানে পরাজয়ের কী জ্বালা), ক্রিকেট খেলা হলেও এই বাস্তবতা খুব ভালোভাবে ফুটে ওঠে। তারচেয়ে বরং পাকিস্তান আর ভারতকে নিয়ে খুব প্রচলিত কৌতুকগুলো নাড়াচাড়া করা যাক। কৌতুকের ভেতরও ফুটে ওঠে রাজনৈতিক বাস্তবতা,এমনকি সমর্থনের প্রসঙ্গ। আপনি যাকে সমর্থন করেন কৌতুক তার পক্ষে যাবে!
এই খবর এখন পুরনো যে ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের কাশ্মিরে আত্মঘাতী এক বোমা হামলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৬০ জন সদস্য প্রাণ হারান এবং পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ এই ঘটনার দায় স্বীকার করে। পুরো ঘটনার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারত পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে হামলা চালায়। ফলাফল ভারতীয় দুই বিমান ধ্বংস এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ‘অভিনন্দন বর্তমান’ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। ‘শান্তির বার্তা’ হিসেবে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী (সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেট টিমের  ক্যাপ্টেন) ইমরান খান ‘অভিনন্দন’কে ভারতে ফেরত পাঠান। এই সেনসেটিভ ঘটনা নিয়েও কৌতুক বেরিয়েছে। যেমন–

অভিনন্দনকে মুক্তিদানের পর ইমরান খানের সাবেক প্রেমিকা খ্যাত চিত্রনায়িকা মুনমুন সেনের মন্তব্য- ‘আমি জানিতো ইমরান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না!’ এটা নিতান্তই কৌতুক। দয়া করে এর ভেতর কেউ সত্য মিথ্যা কিংবা অন্য কোনও অর্থ খুঁজতে যাবেন না। এমন কৌতুক আরও বেরিয়েছে। যেমন-

ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেট তারকা অনিল কুম্বলের দাবি, পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ করা হোক। এই দাবির বিপরীতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার মন্তব্য-এটা আদৌ সম্ভব নয়! (সানিয়া আবার পাকিস্তানি ক্রিকেট খেলোয়াড়ের স্ত্রী কিনা!)।

এ বিষয় নিয়ে কৌতুকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। যেমন-পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর অভিনন্দনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে চা খেতে দেওয়া হলো। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার কাছে চা’র  বিল আসলো। বিল পেপারে লেখা- এক কাপ চা সমান সমান একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত মিগ-২৯! (বলাবাহুল্য বিমানটা ভূপাতিত হওয়ার সময় অভিনন্দন বিমান থেকে প্যারাসুটসহ বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং ধরা পড়েন পাকিস্তানিদের হাতে!)

ভারত আর পাকিস্তানকে নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি কৌতুক ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকেই অব্যাহত আছে। যেমন, একদা পাকিস্তানের প্রবল প্রতাপশালী একনায়ক আইয়ুব খান প্রচার করতেন তিনি পাকিস্তানের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। উন্নয়নের জোয়ারে তিনি পাকিস্তানকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তো একদিন তিনি তার এক মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন জনগণ আমাকে কতটা ভালোবাসে? মন্ত্রী জানালেন- তুমুল ভালোবাসে এবং তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে হাততালি দেয়। পরীক্ষা করার জন্য আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানে এসে ছদ্মবেশে গেলেন ঢাকার গুলিস্তান সিনেমা হলে। সিনেমার শুরুতে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেখানো হতো। ফিরিস্তি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার দর্শকরা তুমুল করতালি শুরু করে দিলো। করতালির শব্দে জেনারেল আইয়ুব খানের চোখে পানি এসে গেলো। আর তখনই পাশের দর্শক কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে তাকে বললো- ‘আবে হালায় তালি দিবার লাগছস না কেন? মরজ্বালা। আইয়ুবের পুলিশ ভি দেখলে তো প্যাদানি দিয়া শেছ কইরা ফেলবো!’

এমন কৌতুক ছিল একাত্তর সালকে ঘিরেও। যেমন-

এক.

-পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে মূলত কী শেখানো হয়?

-(উত্তর) বিভিন্ন ভাষায় আত্মসমর্পণের কলাকৌশল!

দুই.

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন তার সিনিয়র অফিসার এক মেজরকে বললো-

-স্যার, আমি মহা এক অসাধ্য সাধন করেছি।

-কী সেটা?

-স্যার, আমি দুইশজন সৈনিককে বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলেছি।

-গুড। ভেরি গুড। তো এই দুইশজন কয়জন বাঙালি সৈনিকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে?

-স্যার, পঞ্চাশজনের সঙ্গে তো পারবেই!

এমনকি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পরও এই কৌতুক ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা ছিল। তখন সারা পাকিস্তান ইয়াহিয়া ও নিয়াজীকে ভাবতো কাপুরুষ। তো ইয়াহিয়া খান এক সৈনিককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেন। তাকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে ইয়াহিয়া খান আরও বললেন-যাও। আমাকে গালাগালি দিতে দিতে যাও। প্রয়োজনে মরে যাবার পরে আমার কবরের ওপর ‘হিসি’ও করতে পারো। সৈনিক উত্তর দিলো- স্যার, আমাকে অন্য কোন শাস্তি দেন। আপনার কবরের ওপর হিসি করার জন্য আমি হাজার মানুষের পেছনে লাইনে দাঁড়াতে পারবো না।

আসলে যখনই কোনও আলোচিত ঘটনা ঘটে তখনই সেই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে কৌতুক রচিত হয়। ছয়জন জেনারেলকে ডিঙ্গিয়ে জেনারেল জিয়াউল হককে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। সেই জিয়াউল হক ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলান। ভুট্টোকে যারা শয়তানের সঙ্গে তুলনা করতো তাদের কাছে জেনারেল জিয়াউল হক ছিলেন ফেরেশতা! জিয়াউল হককে নিয়ে সবচেয়ে বড় কৌতুকটা ছিল এমন–

জিয়াউল হক যখনই চুল কাটাতে যেতেন নাপিত তখনই তার কাছে জানতে চাইতেন, স্যার নির্বাচন কবে দেবেন। দু-তিনবার খেয়াল করার পর জিয়াউল হক নাপিতকে হুংকার দিয়ে জানতে চাইলেন– বারবার নির্বাচনের কথা জানতে চাস কেন? নাপিত ভয়ে ভয়ে বললো- স্যার যখনই নির্বাচনের কথা জানতে চাই আপনার চুলগুলো টেনশনে খাড়া হয়ে যায়। আমার চুল কাটতে তখন ভারি সুবিধা হয়!

জিয়াউল হক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পরে পাকিস্তানের কেউ কেউ বলতেন- গণতন্ত্রের জন্য মাঝে মাঝে এমন বিমান দুর্ঘটনার প্রয়োজন হয়!

ভারতকে নিয়ে যে এমন কৌতুক নেই তা নয়। যেমন ভারতের কংগ্রেস দলের বিরোধীরা বলতো- ইন্দিরা গান্ধী ভারতকে নিয়ে ভাববেন কখন? দুই ছেলেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তার দিন যায়। শিখ দেহরক্ষীর হাতে ইন্দিরা নিহত হওয়ার দুই বছর পর কংগ্রেস বিরোধীরা আবার বলা শুরু করে- ইন্দিরার দুই ছেলে ছিল। একজনের কাজ ছিল দেশ চালানো আর অন্যজনের কাজ ছিল বিমান চালানো। যার দেশ চালানোর কথা সেই সঞ্জয় গান্ধী গেলো বিমান চালাতে। ফলাফল সঞ্জয়ের মৃত্যু আর বিমান ধ্বংস। এরপর যিনি বিমান চালাতেন সেই রাজীব গান্ধী আসলেন দেশ চালাতে। ফলাফল ভারত ধ্বংস।

মোদির অবস্থা এখন কেমন? তিনিও ভারতের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন জনগণের সামনে। তাকে নিয়ে যে কৌতুকটা ছড়িয়ে পড়েছে তা এমন- মোদিজি ভারতকে সবদিক থেকে বদলে দেবেন বলেছেন। এ কারণে প্রতিদিন তিনি প্রার্থনাসভার আয়োজন করে চলেছেন। ঈশ্বর কবে যে তার প্রার্থনা কবুল করবেন সেটা কেউ বুঝতে পারছে না! ভারত বদলাতে যতদিন লাগবে ততদিনে কী মোদিজি নিজেই বদলে যাবেন? ভারত আর পাকিস্তানের যুদ্ধ উন্মাদনা যেন শেষ হয়, যেন শান্তি ফিরে আসে, প্রতিবেশী সুলভ ভালোবাসাবাসি যেন সব সময় বজায় থাকে সেই কামনা করে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক আরও একটা কৌতুক বলে বিদায় নেই।

অখণ্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ এসেছেন ভারত সফরে। ভারতে এসে ব্রেজনেভ বললেন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কোনও একটা জায়গায় যেতে চাই। তাকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নিয়ে যাওয়া হলো। ইন্দিরা গান্ধীও সঙ্গে গেলেন। দেখা গেলো এক লোক গাছের আড়ালে হিসি করছে। ব্রেজনেভ গলা খাকারি দিয়ে বললেন-ভারতীয়রা পুরোপুরি সভ্য হতে পারেনি। ইন্দিরা গান্ধী লজ্জা পেলেন। পরের বছর তিনি গেলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে। তিনিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কোনও মনুমেন্টে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো। সাথে গেলেন ব্রেজনেভ। সেখানেও দেখা গেলো এক লোক গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে হিসি করছে। ইন্ধিরা গান্ধী গলা খাকারি দিলেন। ব্রেজনেভ বুঝলেন ব্যাপারটা। তিনি গার্ড রেজিমেন্টের এক সৈন্যকে ওই লোকটাকে ধরে আনার হুকুম দিলেন। হিসি যে করছিল তাকে ধরে আনার পর জানতে চাওয়া হলো- তুমি কী করো? লোকটি উত্তর দিলো- আমি ভারতীয় দূতাবাসে কাজ করি!!

পাকিস্তানি সৈন্যরা মার্চপাস্ট (কুচকাওয়াজ) করছে। একজনের হাত পা মিলছে না। বারবার ভুল করছে। অফিসার ওই সৈনিককে থামালেন। হুংকার দিয়ে বললেন, এবার হাত পা মিলাতে না পারলে গুলি করে ঘিলু উড়ায়ে দেবো। সৈনিক উত্তর দিলো- দেন স্যার। পাকিস্তান সেনাবাহিনী হচ্ছে একমাত্র জায়গা, যেখানে ঘিলু ছাড়াও চাকরি করা যায়।

লেখক: রম্যলেখক

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ