X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ডাকসু নির্বাচন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৬ মার্চ ২০১৯, ১৩:৫৮আপডেট : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৪:০৯

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আগামী সোমবার (১১ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ উপলক্ষে যেমন নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়েছে, সেই প্রচারণা কতটা জমজমাট হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণের আগেই জানা গেলো বিনাভোটে নির্বাচনের ঢেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও লেগেছে। ১৮টি আবাসিক হল সংসদ নির্বাচনে মোট ২৩৪টি পদের মধ্যে ৫৬টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছেন প্রার্থীরা। রাজনৈতিক বাস্তবতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বা স্থানীয় নির্বাচনে বড় বিরোধী পক্ষের অনুপস্থিতিতে এমনটা হলেও, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সংস্কৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় প্রবেশ করবে, এটা খুব সহজে কেউ ভাবেননি। শিক্ষকদের মধ্যে যারা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তারা বিষয়টি আরেকটু গভীরভাবে ভাবতে পারতেন যেন এমনটা না হয়।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ায় প্রত্যাশার মাত্রা অনেক বেশি। অতি প্রত্যাশা সহজেই হতাশা ডেকে আনতে পারে বলেই সতর্কতা বেশি প্রয়োজন। আশার কথা এই যে, এখনও ডাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদে ২২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।

ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থরক্ষায় ছাত্র প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাস প্রশাসনের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করবে এবং সেটা করার জন্য শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের প্রতিনিধি চয়ন করবে, এটাই এই নির্বাচনের উদ্দেশ্য। সমস্যা আসলে এখানেই। আমাদের ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক কার্যকলাপ পরিচালনায় নেই, আছে রাজনৈতিক দলের প্রশাখা হয়ে। যখন যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ব্যবস্থাপনাকে নাজুক করে রাখে। আজকে যে ছাত্রদল এত অভিযোগ করছে, তাদের মূল দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারাও ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত হতে দেয়নি। এর একটিই কারণ– ছাত্ররা তাদের নিজস্বতা হারিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রীড়নক হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর ‘রঙ্গমঞ্চে’ পরিণত হয়েছে।

ডাকসু বা যেকোনও ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন সেখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বিষয়। বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা গেলে এই অবস্থাটা থাকতো না বলেই সবাই মনে করেন। ছাত্র রাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল দখল আর যাই হোক, ছাত্র রাজনীতি নয়, রাজনীতির ব্যঙ্গচিত্র।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একান্ত নিজস্ব বিষয়, তার বিষয়ে অন্যে সিদ্ধান্ত স্থির করলে ক্যাম্পাস স্বতন্ত্র লাঘব হয়, এই বিশ্বাস জাতীয় পর্যায়ে না আসলে এসব নির্বাচন করেও কোনও ফল পাওয়া যাবে না। বরং নির্বাচনের মাধ্যমে আধিপত্য কায়েমের স্বভাবকে মেনে নিতে হবে।

ছাত্র রাজনীতিতে এত দুর্বৃত্তায়নের আবির্ভাব ঘটল কীভাবে সে নিয়ে অনেক আলোচনা করে যাবে, তবে তার সময় এখন নয়। ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রসমাজ বিভিন্ন সময় দাবি করে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার কথা উল্লেখ করে নির্বাচন আয়োজনে সাহসী ভূমিকা নিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে নির্বাচনের আয়োজন করতে হচ্ছে। ডাকসুর মাধ্যমে অচল অবস্থা নিশ্চয় কেটে যাবে। আশা করি দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও এগিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য। ২৮ বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্র সংগঠনগুলোকে অভিনন্দন জানাতেই হয়।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনসমূহ থেকে। কর্তৃপক্ষকে এসব অভিযোগ আমলে নিতে হবে। যেহেতু এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেহেতু এখানকার নির্বাচনটি নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠবে না, এটিই সবাই আশা করে। কারণ, যারা নির্বাচনটি পরিচালনা করছেন, তারা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, সমাজের সম্মানিত মানুষ। বিরোধী ছাত্রসংগঠনের অভিযোগ, হলগুলো এখনও সরকারি ছাত্রসংগঠনটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এই ভয়টা জয় করার সুযোগ শিক্ষকরাই করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অবশ্যই তারা সম্পন্ন করতে পারেন। যদি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও শিক্ষকরা মিলে তাদের স্বশাসনের অধিকার এবং ছাত্রদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেন তবে অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এর জন্য দলীয় সম্মতি বা সরকারি আদেশের প্রয়োজন হয় না।

তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর নিজেদের দায়িত্বও কম নয়। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সংগঠন, ছাত্রলীগ যদি ঠিক থাকে, তারা যদি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে প্রতিবন্ধক না হয়; তবে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা কঠিন নয়।

ডাকসুতে সবসময় সরকার বিরোধীরাই নির্বাচিত হয়েছে। সামরিক জান্তা ও স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে ছাত্ররা অতীতে রায় দিয়েছে। বর্তমানে সেই পরিবেশ নেই, সে রকম সরকারও নেই। গত কয়েকদিন ক্যাম্পাসে ঘুরে যেটা মনে হয়েছে, ছাত্রলীগ সবচেয়ে সংগঠিত ছাত্রসংগঠন। তাদের সমর্থন ভিত্তি অনেক শক্ত, সাংগঠনিক কাঠামোও মজবুত। তাই ছাত্রলীগের দিক থেকেই উদারতা বেশি প্রত্যাশিত।

নির্বাচনে যে ছাত্র সংগঠনই জয়ী হোক না কেন, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করবে। তাই নির্বাচনে ছাত্রসমাজ যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বকেই সামনে আনতে চাইবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ ২৮ বছরের অচল অবস্থা কাটিয়ে প্রগতির পথে যাত্রা করবে ক্যাম্পাস। এই নির্বাচনই হয়তো হয়ে উঠতে পারে ক্যাম্পাস গণতন্ত্রের নতুন মানদণ্ড। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি নয়, চার পাশের জগৎ সম্পর্কে স্বাধীন চেতনা লাভ, সমাজবোধের উন্মেষ, প্রতিবাদের প্রত্যয়ের নামই ছাত্র রাজনীতি।  

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ