X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি'র বিরুদ্ধে ‘প্যাড চুরি’র অভিযোগ, তারপর?

মোস্তফা হোসেইন
০৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৩৯আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৪৪

মোস্তফা হোসেইন শপথের বেড়াজালে আবার আটকে গেলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্যের শপথের পর এবার হিসাবের পালা বিএনপির। মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ ৬ জন কি শপথ নেবেন? সুর বদলে গেছে, এমনটা বলা না গেলেও গুঞ্জনের কথা অস্বীকার করবে কে? আন্দোলনই একমাত্র পথ বলে মনে করেন যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, তার কথাও কেমন ‘ম্যাড়মেড়ে’। আন্দোলন নাকি সংসদে যাওয়া– এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করে দিলেন তিনি নিজেই। বললেন, যে নির্বাচনে হয়ে গেলো ওই নির্বাচনে যদি অংশ নেওয়া যায়, তাহলে সংসদে গেলেও আশ্চর্যের কিছু নেই। বললেন, ‘কখন কী ঝড় ওঠে বলা যায় না।’ কিন্তু একইসঙ্গে বললেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে যাওয়ার বিরুদ্ধেও বিএনপির ৯৯ শতাংশ নেতাকর্মী ছিল আবার সংসদে যাওয়ার বিরুদ্ধেও ৯৯ শতাংশই আছে।
তার এই তত্ত্ব নিজেই কি বিতর্কের জন্ম দেয় না। ৯৯ শতাংশই যদি সংসদে না যাওয়ার পক্ষের হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিত তারা ১ শতাংশের পক্ষে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু তিনি যখন ‘কখন কী ঝড় ওঠে বলা যায় না’ উচ্চারণ করেন, তখন মনে হতেই পারে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই ৯৯ শতাংশ এমন কোনও বাণী দেবেন যাতে করে তারা সংসদে যেতে পারেন। তাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে এমন কোনও তৎপরতা কি চোখে পড়ে, যাতে মনে করা যায় ৯৯ শতাংশ নেতাকর্মীর মধ্যে যোগসূত্র ওইভাবে দৃঢ়তর?

বিএনপির একাধিক উচ্চপর্যায়ের নেতার সঙ্গে নিবন্ধকারের কথা হয়েছে কয়েক দিন আগে। গলা নিচু করে বলতে শোনা গেছে, সংসদে যাওয়ার পক্ষেই তাদের মত। ইঙ্গিতে লন্ডনের কথাও বেরিয়ে এসেছে তার মুখ থেকে। বোঝা গেলো ঢাকার মতো লন্ডনও এখন দ্বিধায়। দ্বিধা কিন্তু সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে নয়। অন্য কোথাও।

এটা তো স্পষ্ট, আন্দোলনের বর্তমান ধারা আঁকড়ে ধরে তারা বেশি দূর এগিয়ে যাওয়ার শক্তি রাখে না। তাই নিজেদের কথা বলার জন্য সংসদে যাওয়া অপরিহার্য। সংসদের ভেতরে ও বাইরে আন্দোলন চালানোর সুযোগ হাতছাড়া করার মতো কাজ নিশ্চয়ই তাদের করার কথা নয়। তারপরও এই দ্বিধা কেন?

দ্বিধান্বিত হওয়ার পেছনেও কাজ করছে নেতৃত্ব। তারা এটা বোঝেন, এই মুহূর্তে সংসদে এই ৬ জনও যদি যান তাহলে দলের জন্য ভালো হবে। নির্বাচিত এই ৬ জন যদি সংসদে যান, তাহলে মির্জা ফখরুল ভেতরে ও বাইরে আলোচিত ব্যক্তি হিসেবে স্থান করে নেবেন। এতে কোনও সন্দেহ নেই। আরও স্পষ্ট করে যদি বলি, সংসদে ঘোষিত বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি মিডিয়ায় যে জায়গা পাবে, ৬ সদস্যের বিএনপি তারচেয়ে বেশি স্থান পাবে। সেক্ষেত্রে সংসদের আইনানুগ বিরোধীদলীয় নেতার পরিবর্তে অঘোষিত বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্থান করে নিতে পারবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। যা হয়তো বিএনপি’র নেতৃত্বের জন্য বড় পরিবর্তনের সূচনাও হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে গত নির্বাচনে স্থায়ী কমিটির কোনও নেতা নির্বাচিত না হওয়ায় মির্জা ফখরুলের পথ আরও  প্রশস্ত হয়ে গেছে। খোলাখুলি বললে, লন্ডনি নেতা কি সেটা মেনে নিতে পারবেন?  প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি মির্জা ফখরুলকে বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত করে রেখেছিলেন, সেই নেতা কি এটা সহজে মেনে নেবেন? সুতরাং তাদের সংসদে না যাওয়ার যুক্তি হিসেবে যতই কারণ দেখানো হোক না কেন, পেছনে যে অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের বিষয়টি জড়িয়ে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যে শপথের পক্ষে তা সহজেই অনুমেয়। আবার তারা সবাই দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতা না হলেও তাদের পক্ষে যে বড় একটি অংশ আছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এই অংশটি দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে এই মুহূর্তে চুপ করে থাকলেও শপথের বিষয়ে সহসাই তাদের মুখও খুলতে দেখা যাবে। তেমন সম্ভাবনা যে জোরালোই আছে তাতে সন্দেহ নেই। অর্থাৎ শুধু গণফোরামই নয় বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও সংসদে যেতে পারেন এমন সম্ভাবনাটাই শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের কথাই মনে আসে, বিএনপি সংসদে না গেলে অস্তিত্ব সংকটকেই বাড়িয়ে দেবে। সেই বোধটা বিএনপি নেতাদের কাছেও স্পষ্ট।

আর সেই সুবাদে আমরা বলতেই পারি, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ নড়েচড়ে বসবেন। দলীয় নেতৃত্বকে শপথের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করবেন।

এ তো গেলো বিএনপির বিষয়। ঐক্যফ্রন্টের প্রতিক্রিয়া কী এবার দেখা যাক। অনেক নাটকীয়তার মধ্যেই গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যই সংসদে গেলেন। নাটকের দৃশ্য পরিবর্তন হলেও কাহিনি বদল হয়নি তাদের। যে মুহূর্তে মোকাব্বির খান দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে শপথের কথা বলছিলেন তখনই তাদের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বললেন, ‘মোকাব্বির দলীয় প্যাড চুরি করে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। এটি প্রতারণা ও ফ্রড। শিগগিরই দলের সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এর আগে তাদের দলের অপর নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ৭ মার্চ শপথ নেওয়ার পর দলীয় সিদ্ধান্তে তাকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। মোকাব্বির খানের ভাগ্যে তো আরেক ধাপ বেশি অভিযোগ এসে যুক্ত হয়েছে। সুলতান মনসুরের সময় দলীয় প্যাড চুরির অভিযোগ আসেনি। এবার স্বয়ং নির্বাহী সভাপতি প্যাড চুরির অভিযোগ উত্থাপন করলেন। নির্বাহী সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী যদি মোকাব্বির খান দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করেন তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। কিন্তু চুরির অভিযোগে কি তাকে ফৌজদারি মামলায় জড়ানো হবে?

যেহেতু সুলতান মনসুর শপথ নেওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাই মোকাব্বির খানের ক্ষেত্রেও তাদের একই পথ অনুসরণ করতে হবে। এদিকে সুলতান মনসুর শপথ নেওয়ার পর বলেছেন তিনি আওয়ামী লীগে ছিলেন, এখনও আওয়ামী লীগই করেন। যদিও তার আওয়ামী লীগ করার বিষয়টি ইতোমধ্যে স্পষ্টত বিতর্কিত বিষয় হিসেবে গণ্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গণফোরামের দুই সদস্যকে আর দলে স্থান করে দেওয়ার সুযোগও তাদের নেই। আর সুলতান মনসুর যেখানে নিজেই বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগে আছেন তাই তাকে গণফোরামে ফেরত নেওয়া কিংবা তিনি যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি বিএনপির ৬ সদস্য সংসদে যোগ দেন তাহলে গণফোরামের গোলা যে চালশূন্য হয়ে পড়বে। আর বিএনপিকে নিজেদের দিকে আনার চেষ্টাও বিফলই হবে।

এদিকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক না বলায় প্রকাশ্যেই প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়েছে ড. কামাল হোসেনকে। তিনি সেখানে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা, তার নেতৃত্বের কথা অকপটে বললেন। কিন্তু বিএনপির ভুল-সূত্র মুক্তিযুদ্ধের ‘প্রাণভোমরা’ জিয়াউর রহমান এই তত্ত্ব স্বীকার করলেন না। আগেও তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি কাজ করবেন। বিএনপি নেতা তারেক রহমান যেখানে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক মানতেই নারাজ সেখানে ড. কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতির জনক। তার এহেন বক্তব্য বিএনপিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিল। এবার প্রকাশ্য প্রতিবাদ হয়েছে। তবে সেটা দেওয়ালের ভেতরে হয়েছে। আর এটা তো শুরু মাত্র। পরের দৃশ্যটা হতে পারে- ঐক্যফ্রন্টের সমাধি পর্যন্ত।

বাকি থাকে ২০ দলীয় জোট। ২০ দলীয় জোটের ভেতরে ক্ষোভ প্রকাশ হয়ে গেছে নির্বাচনের আগে থেকে। শুধু জামায়াত প্রশ্নেই নয়, ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোকে অবজ্ঞা করা হয় এমন অভিযোগ তো প্রকাশ্যেই হয়েছে। এখন বাকি আছে ঘোষণা দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে ভেঙে দেওয়ার।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলো মন্তব্য- বিএনপি যদি সংসদে যায় তাহলে সরকারকে বৈধতা দেওয়া হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন- এখনও কি বৈধতা পাওয়ার বাকি আছে? আর 'অবৈধ সরকার'কে সরানোর ক্ষমতাও তাদের নেই, সেটাও প্রমাণিত। অন্তত ক্ষমতা পাওয়ার সূত্র ধরার জন্য হলেও তারা যে শপথ নিয়ে সংসদে যাবেন তা ওপেন সিক্রেট। দেখা যাক বাকি তিন সপ্তাহের মধ্যে কোনদিন ৬ এমপি শপথ নিতে শেরেবাংলা নগরে রওনা হবেন। 

লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে হত্যা, ভাতিজার যাবজ্জীবন
মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে হত্যা, ভাতিজার যাবজ্জীবন
ডিএনসিসি ও চীনের আনহুই প্রদেশের সহযোগিতামূলক চুক্তি সই
ডিএনসিসি ও চীনের আনহুই প্রদেশের সহযোগিতামূলক চুক্তি সই
চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক গ্রেফতার
চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক গ্রেফতার
টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে ফের পাকিস্তানের এক নম্বর বোলার শাহীন
টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে ফের পাকিস্তানের এক নম্বর বোলার শাহীন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ