X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা নববর্ষ, বাঙালির কার্নিভাল, বিদেশে

দাউদ হায়দার
১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:২০আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:৩১

দাউদ হায়দার

‘বাংলাদেশে কী কার্নিভাল হয়?’ বছর ৩২ আগে কোলোনে একজন প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নকর্তা ডয়েচে ভেলের স্প্যানিশ বিভাগের সাংবাদিক। বলি, ‘হয়। তোমাদের দেশের মতো নয়।’ ‘হয়’ শুনে কৌতূহলী। জানতে চান, ‘কখন, কবে, কোন মাসে?’

-‘বসন্তকালে। যদিও, বসন্ত যেদিন শেষ হয়, পরের দিন গ্রীষ্মের সূচনায় এবং এই সূচনা বাঙালির নববর্ষের। বাংলা নববর্ষ। নতুন বছরকে আবাহন। বাংলা নববর্ষের রূপচরিত্র-সামাজিকতায় গ্রামীণ তথা লোকসংস্কৃতির যে চিত্র-পরিবেশ, পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের সঙ্গে মিশ খায় না, সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের নববর্ষে ঐতিহ্য –যাকে এথনিক কালচার বলে- মাটিমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত, জাতিভেদ, ধর্মাধর্ম নেই। লোকসংস্কৃতি বা লোকসংস্কৃতির পরম্পরায় ব্যবসা বাণিজ্য-অর্থনীতিরও বিকাশ। বাংলার নববর্ষে উৎসব একদা ঘরোয়া, গ্রামীণ সামাজিকতায় যূথবদ্ধ ছিল, দিনকাল পাল্টেছে, এখন শাহরিকও।’

‘অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত? কী করে?’

-‘ভুলে যাচ্ছো, তোমাদের দেশে, খ্রিস্টমাসের শুরুতে শহরাঞ্চল হরেক রঙিন আলোকমালায় ঝলমলে, যারা আলোকিত করেন, তাদের জন্য ব্যবসা। খ্রিস্টমাস উপলক্ষে পথেঘাটে-পার্কে-চত্বরে, সব দোকানে নানা পসরা, জামাকাপড় থেকে শুরু করে মায় গাড়ি, স্মার্টফোনেও ছাড় (রিবেট)।

আমাদের বাংলায় ‘চৈত্র সেল’ বলে ব্যবসা আছে। বাংলা নববর্ষের শুরুর কয়েক দিন আগে। নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশে বিপণিবিতানগুলোর ব্যবসা, বিক্রি বাট্টা ইদানীং নব্য কালচার। সাজগোজ করে, নতুন পোশাক পরে আবালবৃদ্ধবনিতা– অবশ্য, অধিকাংশ তরুণ-তরুণী- রাজধানী ঢাকা মুখরিত করে সকাল থেকে। ঢাকার বিশাল রমনা পার্কে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থিকথিকে ভিড়, এক-পা হাঁটাও দুষ্কর, যুবতীরা গলায় ফুলের মালা পরে প্রত্যেকে যেন অপ্সরা। গোটা পরিবেশ যৌবনে ভরপূর। ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে, ‘আনন্দযজ্ঞে তুমিও নিমন্ত্রিত।’

-বলা হয়নি (তখন অবশ্য চালু হয়নি, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা, নান মুখোশ, ব্যঙ্গ পোস্টারের কালচার পয়লা বৈশাখে।) বিদেশি কার্নিভালের প্রভাব শুরু। বাহুল্য বলা এই প্রভাব দেশীয়। সব দেশই এখন বিশ্ববলয়ে আবর্তিত। ব্রাজিলের কার্নিভাল ভিন্ন, রূপচেহারায় আলাদা, মনমানসিকতায় ভিন্ন দ্যোতনা, ইদানীং নাকি মেজাজে হেরফের, রাজনীতিও আছে, ধর্মও আছে। ধর্মেও আছে জিরাফেও আছে। তের বছর আগে সানপাওলোয় যে কার্নিভাল দেখেছিলাম, চার বছর পরে গিয়ে মনে হলো ফারাক। সাম্বা নাচেও রাজনীতির প্রকাশ, এমনকি নাচের খোলামেলা পোশাকেও।

চিলি, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ের কার্নিভালে দেখি ঐতিহ্যশালী লোকসংস্কৃতির ঘাটতি, রাজনীতির মিশ্রণ, ফ্যাশনেও নিম্নমানের আধুনিকতা।

কার্নিভাল মূলত রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়-দেশের বসন্তের সর্বসাধারণের উৎসব, হৈ হুল্লোড়। খাওয়া দাওয়া। পানাহার। নাচ গান। হরেক পোশাকে সজ্জিত, শোভাযাত্রা, পথে পথে, উৎসব, প্রমোদ।

কলকাতায় এখনও পুরোদস্তুর শুরু হয়নি, টেক্কা দিয়েছে ঢাকা। লক্ষ-লক্ষ মানুষ সকাল থেকে, রমনা পার্কে সমবেত। রবীন্দ্রগান দিয়ে শুরু, শেষও রবীন্দ্রনাথের গানে। বিখ্যাত গায়ক গায়িকার সমাবেশ, গান। শ্রোতাকূল উদ্বেল।

ঢাকায় পয়লা বৈশাখের উৎসব-উদযাপনের মূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’, সঙ্গীত বিশারদ ওয়াহিদুল হক এবং গায়িকা (অধ্যাপক-লেখক) সনজীদা খাতুন। শুরু ১৯৬৮ সালে। শনৈ শনৈ বেড়েছে কালকেতু।

পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা নির্ভেজাল বাঙালির অনুষ্ঠান, নির্ভেজাল অসাম্প্রদায়িক। নববর্ষের প্রথম দিনে ‘পান্তা ইলিশ’ খাওয়া (এই ‘সংস্কৃতি’ সাম্প্রতিক। পয়লা বৈশাখে ‘পান্তা ইলিশ’ খাওয়ার কোনও চালাক-দুর্জন শুরু করেন, অজানা। করলেও গোটা বাংলাদেশে এখন পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়ার হিড়িক, কালচারে পরিণত। চৈত্র শেষে ইলিশের দাম বেড়ে যায় একশ-দেড়শগুণ। ইলিশ ব্যবসায়ীর পোয়াবারো।) কুলীনতা। এই কুলীনতা বিদেশেও। প্যারিসবাসী বহু খ্যাতিমান শিল্পী শাহাবুদ্দীনের স্ত্রী নামী লেখিকা, শিল্পযোদ্ধা-সমালোচক আনা ইসলামের প্যারিসের একটি বাঙালি দোকানে কাঁচামরিচ, করল্লা কিনতে গিয়ে শোনেন, ‘পহেলা বৈশাখ, নববর্ষ উপলক্ষে ইলিশের দাম জিগাইবেন না। আট ইউরো এক কেজি ইলিশ অহন চুয়ান্ন ইউরো।’ বার্লিনেও প্রায় একই। ইলিশ ছাড়া বাঙালির নববর্ষ, পয়লা বৈশাখ নয়।

বিশ্বের সর্বত্র, যেখানেই বাঙালি, বিশেষত বাংলাদেশের বাঙালি, পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মরিয়া। নানা অনুষ্ঠান। বাদ নেই প্রভাতফেরি, শোভাযাত্রা। লন্ডন, নিউ ইয়র্কের দেখাদেখি শিকাগোয়, ফ্লোরিডায়, প্যারিসে, লিসবনে, বার্লিনে। এও এক কার্নিভাল, বঙ্গীয় সংস্কৃতির আধার বিদেশে। প্রবাসীর। দেশকে কাছে-পাওয়ার রূপসংস্কৃতির ঐতিহ্যে ঝলসিত হওয়ার আনন্দ। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। চরাচরে। বাংলা নববর্ষে শুভেচ্ছায় আত্মীকতা।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ