X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ

মো. জাকির হোসেন
৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:০৭আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:১০

মো. জাকির হোসেন উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক অভিভাবক। উচ্চশিক্ষায় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার মান নিম্নগামী হওয়ার অন্যতম কারণ যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। একটা সময় ছিল উপাচার্যের পদ অত্যন্ত সম্মানিত ছিল। বিগত কয়েক দশকের বিবেচনায় এ পদের মান-মর্যাদা অনেকখানিই লুপ্ত হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নন্দিত উপাচার্য যেমন ছিলেন, তেমনি নিন্দিতও হয়েছেন অনেকে। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হওয়া মানে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের ওপর বসা। তারপরও এর মাঝে কী জাদু বা মধু আছে জানি না, উপাচার্য পদ এখনও অনেকের কাছে অতি কাঙ্ক্ষিত, লোভনীয়। ‘তদবিরে তকদির ফিরে’, এ বিশ্বাসে উপাচার্য পদ পেতে অনেকেই দৌড়-ঝাঁপ-লবিং করে থাকেন। প্রতিদ্বন্দ্বী-প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চরিত্র হনন থেকে শুরু করে নানা কসরত-কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পির-মুর্শিদের দোআর পাশাপাশি মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনৈতিক নেতা, বর্তমান-সাবেক ছাত্রনেতা, আমলাসহ নানা মাধ্যমে লবিংয়ের নানা চমকপ্রদ কাহিনি বাজারে প্রচলিত আছে।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কেনিয়া, নামিবিয়া, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে, মালাবি, ঘানা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ পদ্ধতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় উপাচার্য নিয়োগের ছয়টি পদ্ধতি রয়েছে – এক. বিশ্বদ্যিালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল বা সিন্ডিকেটের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে রাষ্ট্রপ্রধান বা চ্যান্সেলর কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপ্রধান নিজে চ্যান্সেলর হতে পারেন কিংবা তিনি কাউকে চ্যান্সেলর হিসাবে নিয়োগ দিতে পারেন।

দুই. বিশ্বদ্যিালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল বা সিন্ডিকেটের সঙ্গে আলোচনা না করে রাষ্ট্রপ্রধান বা চ্যান্সেলর কর্তৃক একক ক্ষমতা বলে উপাচার্য নিয়োগ। তিন. বিশ্বদ্যিালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল বা উপাচার্য নিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত বিশেষ সিলেকশন কমিটি বা সার্চ কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত প্যানেল থেকে সরকার কর্তৃক একজনকে উপাচার্য নিয়োগ দান।

চার. সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ।

পাঁচ. এক-তৃতীয়াংশের বেশি সরকারি প্রতিনিধি আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ, যেখানে সরকারের অনুমোদনের কোনও প্রয়োজন নেই। ছয়. বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ যে কাউন্সিলে অল্পসংখ্যক সরকারি প্রতিনিধি বা কোনও সরকারি প্রতিনিধি নেই এবং কাউন্সিলের নিয়োগ সরকারের অনুমোদনেরও প্রয়োজন নেই।

উপরে বর্ণিত নিয়োগ পদ্ধতি থেকে এটা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, উপাচার্য নিয়োগে সরকারের সংশ্লিষ্টতা কেবল বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এটি অনুশীলন করা হয়। ছয়টি পদ্ধতির মধ্যে দু’টিতে অতি চরমপন্থা রয়েছে। একটিতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান বা চ্যান্সেলর সর্বেসর্বা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও পরিষদ বা অঙ্গের সঙ্গে আলোচনা বা পরামর্শ করা ছাড়াই রাষ্ট্রপ্রধান বা চ্যান্সেলর উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলে সরকারি প্রতিনিধি থাকুক বা না থাকুক কাউন্সিল সদস্য নিজেরাই উপাচার্যের নাম চূড়ান্ত করতে ও সরকারের অনুমোদন ছাড়াই উপাচার্য নিয়োগ করতে পারেন। এরূপ নিয়োগে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই বললেই চলে। অন্য নিয়োগ পদ্ধতিগুলো এ দুই চরমপন্থার মাঝামাঝি। এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রাষ্ট্রপ্রধান বা চ্যান্সেলররাই উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন। উল্লেখ্য, এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানরা সাধারণত চ্যান্সেলর। Commonwealth Higher Education Management Service (CHEMS) কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, এশিয়া মহাদেশের ৫৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয় সরকার কর্তৃক। বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল কর্তৃক বাছাইকৃত ও সরকারের অনুমোদনক্রমে ১৮ শতাংশ উপাচার্য নিয়োগ হয়। সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব সিদ্ধান্তে ২৭ শতাংশ উপাচার্য নিয়োগ করে থাকে। জরিপে আরও প্রকাশিত হয়েছে আফ্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উপাচার্য নিয়োগে সরকারের সম্পৃক্ততা এশিয়ার চেয়ে অনেক কম। মাত্র ২৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ হয়। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে ১৭ শতাংশ উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল। আফ্রিকার ৫০ শতাংশ উপাচার্য নিযুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল কর্তৃক, যেখানে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেকশন বা সার্চ কমিটি এক বা একাধিক ব্যক্তির নাম প্যানেলভুক্ত করে রাষ্ট্রপ্রধান বা চ্যান্সেলরের কাছে পাঠান সেখানে কমিটিকে একটি দীর্ঘ বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ও কানাডার অন্টারিও-র Brock University St. Catharines-এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে আগ্রহী প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর সার্চ কমিটি আইন নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে উপযুক্ত প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। প্রাথমিক তালিকা তৈরির জন্য ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে উপাচার্য প্রার্থীর মূল্যায়ন করা হয়। ১০০ নম্বরের মধ্যে ৩০ নম্বর শিক্ষাগত যোগ্যতা, ৩৫ নম্বর গবেষণা-প্রকাশনা ও ৩৫ নম্বর পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বণ্টন করা হয়। ১০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৭৫ বা তার চেয়ে বেশি নম্বর পাওয়াদের একটি তালিকা করা হয়। ৭৫-এর চেয়ে কম নম্বর পেলে তিনি উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্রাথমিক তালিকাভুক্তির যোগ্য বিবেচিত হবেন না। প্রাথমিক তালিকাভুক্তদের ১০০ নম্বরের সাক্ষাৎকারের জন্য সার্চ কমিটির সামনে ডাকা হবে। সাক্ষাৎকারে প্রাপ্ত নম্বর ও পূর্বে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি তিনজনের নামের একটি প্যানেল চিফ মিনিস্টারের কাছে পাঠাবেন এবং তিনি একজনকে উপাচার্য নিয়োগ করবেন।

Brock University St. Catharines-এ উপাচার্য নিয়োগ আরও কঠোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচাই করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি উপাচার্য নিয়োগের জন্য কমিটি গঠন করে। কমিটি শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির পর প্রার্থীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যদের মতামত আহ্বান করেন। এরপর সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্তদের র‌্যাংকিং করে প্রার্থীদের পৃথক পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংস্থা যেমন, সিনেট, ডিন কমিটি, বিভাগীয় সভাপতি, শিক্ষক সমিতি, স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বোর্ড অব ট্রাস্টির সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ দেওয়া হয়। উপাচার্য নিয়োগ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের এসব প্রতিনিধির মতামত বিবেচনা সাপেক্ষে উপযুক্ত প্রার্থীর নাম চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করে।

ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উপাচার্য নিয়োগের একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশকৃত তালিকা থেকে ভিজিটর (রাষ্ট্রপ্রধান) বা চ্যান্সেলর উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যলয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল বা সিন্ডিকেটের সুপারিশকৃত প্যানেল থেকে ভিজিটর (রাষ্ট্রপ্রধান) বা চ্যান্সেলর উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রণীত প্যানেল থেকে ভিজিটর (রাষ্ট্রপ্রধান) বা চ্যান্সেলর কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগের বিধান রয়েছে। উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে পূর্বনির্ধারিত ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে প্রার্থীর মূল্যায়ন করে উপাচার্য নিয়োগের ব্যবস্থাও ভারতে রয়েছে।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের দু’টি পদ্ধতি রয়েছে। ১৯৭৩ সালে প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের আওতায় পরিচালিত ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের ভোটে নির্বাচিত তিনজনের একটি প্যানেল থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক একজনকে উপাচার্য নিয়োগের বিধান রয়েছে। এর বাইরে অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সরকারের একচ্ছত্র অধিকার। সিনেট থেকে প্যানেল না পাঠালেও ১৯৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের ১১(২) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিজস্ব ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিতে পারেন। এই ধারায় বলা হয়েছে, ছুটি, অসুস্থতা, পদত্যাগ বা অন্য কোনও কারণে রাষ্ট্রপতি অস্থায়ীভাবে কাউকে এ পদে নিয়োগ দিতে পারবেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে ব্রিটিশ সরকারের কালাকানুন ১৮৯৭ সালের জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনানুগভাবে নিয়োগকৃত ১১ জন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারকে অপসারণ করে নিজেদের পছন্দমতো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ দেয়। এরপর থেকে একই ধারায় সরকার কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ’৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুযায়ী অন্যসব নির্বাচন হলেও উপাচার্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। সিনেট নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্য প্যানেল তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সিনেটের মাধ্যমে প্যানেল নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের অনাগ্রহ, মামলা ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতার কারণে ’৯১-এর পর থেকে ’৭৩-এর অ্যাক্টের অধীনে পরিচালিত প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। আমি এতে দোষের কিছু দেখি না। কারণ এ ব্যর্থতার দায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর, সরকারের নয়। সরকার কর্তৃক এককভাবে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের বিধান পুরোদস্তুর চালু হওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে। ‘তদবিরে তকদির ফিরে’ নীতির ভিত্তিতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের বিধান চালুর ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য পদপ্রার্থী শিক্ষকদের মাঝে কখনও কখনও অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক উপাচার্যের পদ পেতে প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতিযোগিতাকে সম্প্রতি ফেসবুকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বরের বলী খেলার সাথে তুলনা করেছেন। বলী খেলায় এক বলী আরেক বলীকে শক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করে ভূপাতিত করে পরাজিত করে নিজের বিজয় ছিনিয়ে আনেন। উপাচার্য পদ পেতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার সমর্থকদের মাঝে তিক্ততা-শত্রুতা সৃষ্টি করছে। প্রতিযোগিতায় যারা সফলকাম হতে ব্যর্থ হন তারা ‘আঙুর ফল টক’ নীতিতে বিশ্বাস করে চুপচাপ বসে থাকতে রাজি নন। বরং ব্যর্থতার ক্ষোভে, বিশ্ববিদ্যালয়কে সেবা না করতে পারার দুঃখে অনেক সময় আঙুর গাছটিই উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন, যার প্রভাব পড়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে। যিনি লবিং করে নিয়োগ পান তার জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগসহকারে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ক্ষমতার মসনদ সুরক্ষিত রাখতে তার সময় ও মেধার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় ব্যয় করতে হয়। তদবির-লবিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের বৈধতার সংকটের কারণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের দ্বার অবারিত হয়। নিয়োগে সহায়তাকারীরা সময়ে সময়ে নাজায়েজ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন, তা-ও উপাচার্যের জন্য বিব্রতকর। সর্বোপরি একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পক্ষে একটি পদের জন্য তদবির-লবিং করা সামাজিকভাবে সম্মানজনক নয়, নৈতিকভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়।

সবকিছু বিবেচনায় সরকারের কাছে বিনীত নিবেদন উপাচার্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তদবির-লবিংকে অযোগ্যতা হিসাবে ঘোষণা বা বিবেচনা করুন। আগ্রহী প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলুন। প্রয়োজনে তাদেরকে সাক্ষাৎকারে ডাকুন। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণা, পেশাগত ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা, সততা নানা আঙ্গিকে মূল্যায়ন করুন। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে তাদের স্বপ্ন ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথা শুনুন। নিশ্চয়ই তাদের বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করুন। তারপর যাকে উপযুক্ত মনে করেন তাকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিন। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পাবে অপেক্ষাকৃত যোগ্য মানুষের নেতৃত্ব ও সেবা। আর এমনটি করা হলে শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তা নিশ্চিতভাবেই কল্যাণকর হবে, এ কথা সহজেই অনুমেয়।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তিন গোলে জেতার আশা করেননি পুলিশের রোমানিয়ান কোচ
তিন গোলে জেতার আশা করেননি পুলিশের রোমানিয়ান কোচ
বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট
বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট
তীব্র গরমে যেসব অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে
তীব্র গরমে যেসব অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে
চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
উপজেলা নির্বাচনচেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ