X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিরা হিরো, ডাক্তাররা সুপার হিরো

প্রভাষ আমিন
০২ মে ২০১৯, ১৯:২১আপডেট : ০৩ মে ২০১৯, ১১:১৭

প্রভাষ আমিন ডাক্তারদের ঐক্য আমাকে মুগ্ধ করে। কোনও একজন ডাক্তারের বিপদে বাকি সবাই অন্ধের মতো তার পাশে দাঁড়ান। এমনটাই হয়তো হওয়া উচিত। কিন্তু সবসময় অন্ধের মতো সহ-পেশার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা কি আসলেই উচিত? একজন উচ্চশিক্ষিত বিবেকবান মানুষ হিসেবে ন্যায়-অন্যায়বোধ থাকবে, বিবেচনাবোধ থাকবে। কিন্তু বন্ধুর বিপদে পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমরা কখনও কখনও এই বোধটা হারিয়ে ফেলি। ইদানীং এই প্রবণতা ডাক্তারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তিনটি পেশার মানুষের প্রতি সাধারণ মানুষের এক ধরনের অকারণ ঘৃণা আছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা। কিন্তু হতে পারেনি। পুলিশ ২৪ ঘণ্টা জেগে থাকে আমাদের জীবন নিরাপদ করতে। ট্রাফিক পুলিশ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের পথচলা নির্বিঘ্ন রাখে। কিন্তু আমরা বাধ্য না হলে পুলিশের কাছে যাই না। দূর থেকে আমরা তাদের ভয় পাই, আর গালি দেই। বিপদে পড়লে আমরা সাংবাদিকদের কাছে ছুটে যাই। কিন্তু আমরা তাদের ভালোবাসি না। বিপদটা উদ্ধার হলেই ‘সাংঘাতিক’ বলে গালি দেই। অসুস্থ হলে তো ডাক্তারদের কাছে যেতেই হয়। কিন্তু চেম্বার থেকেই বেরিয়েই আমরা তাদের ‘কসাই’ বলে গালি দেই।
যাই হোক, বলছিলাম ডাক্তারদের অতি স্পর্শকাতরতা নিয়ে। কিছু হলেই আমরা সবাই মিলে যেভাবে ডাক্তারদের গালাগাল করি, ডাক্তাররাও ইদানীং কিছু হলেই এক হয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে আক্রান্ত হতে হতে ডাক্তাররা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। রোগী মারা গেলেই আমরা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে ডাক্তারদের ওপর হামলা করি, হাসপাতাল ভাঙচুর করি। নিজেদের বাঁচাতে ডাক্তাররা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাদের আছে বিএমএ, স্বাচিপ, ড্যাব। আর এখন আছে ফেসবুক। ডাক্তাররা প্রতিবাদ করেন, গালাগাল করেন, ধর্মঘটও করেন। করতে করতে তারা নিজেদের আমাদের মতো সাধারণের কাতারে নামিয়ে এনেছেন।

আলোচনায় ডাক্তার প্রসঙ্গটা এলো মাশরাফির কারণে। মাশরাফি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। একসময় তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শতভাগ মানুষের নয়নের মণি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর বিএনপির পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। আর গত ২৫ এপ্রিলের পর থেকে তিনি ডাক্তারদের চক্ষুশূল। কী হয়েছিল সেদিন, সেটা এখন বাংলাদেশের সবাই জানেন। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এলাকাবাসীর দোয়া নিতে নড়াইল গিয়েছিলেন মাশরাফি। ২৫ এপ্রিল

তিনি নড়াইল হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। গিয়ে তিনি ডাক্তারদের হাসপাতালে পাননি। রোগী সেজে তিনি একজনকে ফোন করেন, যার হাসপাতালেই তখন থাকার কথা ছিল। কিন্তু বিনা নোটিশে অনুপস্থিত ছিলেন। মাশরাফি তাকে ফোন করেছিলেন বৃহস্পতিবার। তিনি তাকে রবিবার আসার পরামর্শ দেন। এরপর মাশরাফি নিজের পরিচয় দিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান, ‘স্যার, এখন আপনিই বলুন আপনার ব্যাপারে আমি কী করতে পারি?' কিন্তু ও প্রান্তে ডাক্তার ছিলেন নিশ্চুপ।

একাধিকবার জিজ্ঞাসা করার পর একপর্যায়ে মাশরাফি বলেন, ‘আপনি কি আমার সাথে ফাইজলামি করছেন।’ এই হলো ঘটনা।

ডাক্তারদের প্রতিক্রিয়ার তিনটি পয়েন্ট। প্রথম কথা হলো সংসদ সদস্য হিসেবে মাশরাফি এভাবে হাসপাতাল পরিদর্শন করতে পারেন কিনা? আমি মনে করি পারেন। এমনিতে সংসদ সদস্যদের মূল কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদ সদস্যরা আইন প্রণয়নের চেয়ে স্থানীয় উন্নয়ন কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। আর একজন জনপ্রতিনিধি জনগণের পাশে থাকলে, তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখলে, জনগণের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে কোনও হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট করলে আমার অন্তত আপত্তি নেই। আর মাশরাফি এবার হঠাৎ করে গেলেও নড়াইল হাসপাতাল নিয়ে তার অভিযোগ পুরনো। দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো, এভাবে ভিডিও করে তা ভাইরাল করা উচিত কিনা? এটা মাশরাফির স্ট্যান্টবাজি। প্রথম কথা হলো, মাশরাফির কাভারেজের জন্য বা জনপ্রিয়তার জন্য স্ট্যান্টবাজি করতে হয় না। এখনও তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ। আর বাংলাদেশে এখন এ ধরনের ভিডিও ভাইরাল করাই প্রবণতা। সেটা উচিত কি অনুচিত, তা আলাদা বিতর্ক। তবে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় অনুপস্থিত থাকা ডাক্তাররা যতটা চাপে পড়েছেন, না করলে ততটা পড়তেন না। আমি মনে করি, যারা সময়মতো অফিস করেন না, তাদের চাপ দিতে হবে।

তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে যে কোনও মূল্যে। মাশরাফি তো একদিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তো বারবার বলছেন, সুযোগ পেলেই বলছেন। তৃতীয় পয়েন্ট হলো, ডাক্তারের সঙ্গে মাশরাফির আচরণ বা শব্দচয়ন ঠিক ছিল কিনা? এখানে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মাশরাফি কিন্তু সেই ডাক্তারকে 'স্যার' বলেই সম্বোধন করেছেন। যদিও প্রটোকলে এমপির অবস্থান অনেক ওপরে। তবুও মাশরাফি ব্যক্তিগতবোধ থেকেই তাকে সম্মান করেছেন। তবে 'ফাইজলামি করছেন' এই শব্দচয়নটা ভালো লাগেনি। অন্তত মাশরাফির কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি। তবে মাশরাফিও মানুষ।

তিনিও মেজাজ হারাতে পারেন। তবুও মাশরাফির অতীত রেকর্ড দেখে তার একটি শব্দকে বড় করে না দেখলেও পারতেন ডাক্তার বন্ধুরা। পরে মাশরাফি তার এই শব্দের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। গণমাধ্যমে তো ক্ষমা চেয়েছেনই, সেই ডাক্তারের কাছে ব্যক্তিগতভাবেও ক্ষমা চেয়েছেন। মাশরাফির পরিদর্শনের পর নড়াইল হাসপাতালের চার ডাক্তারকে প্রথমে ওএসডি এবং পরে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।

মাশরাফির উদ্যোগেই কিন্তু তাদের কাজে পুনর্বহাল করা হয়েছে। তারপরও ডাক্তারদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমার আপত্তি নেই। ডাক্তাররা যদি নিছক আপত্তি করতেন বা প্রতিবাদ করতেন, তাহলে ঠিকই ছিল। কিন্তু মাশরাফির এক ‘ফাইজলামি’র জবাবে তারা যা করেছেন, যা বলেছেন; তা তীব্র আপত্তিকর।

মাশরাফির উচ্চারণ করা শব্দটি ভালো নয়, তবুও সেটা কিন্তু এখানে লেখা গেছে। কিন্তু ডাক্তাররা প্রতিবাদের নামে যা বলেছেন, তা উচ্চারণযোগ্য নয়। শব্দের বিবেচনায় মাশরাফি যদি খারাপ হন, তাহলে ডাক্তাররা তো হাজারগুণ খারাপ। ডাক্তাররা যে এত গালি জানেন, আগে জানা ছিল না। ডাক্তারদের কেউ কেউ বলেছেন, মাশরাফি কি থানা বা ডিসি-এসপি’র অফিসে সারপ্রাইজ ভিজিটে যেতে পারবেন?

প্রয়োজনে অবশ্যই পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ডাক্তার ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে অনুপস্থিতির অভিযোগ নেই। থানায় গিয়ে ঘুষের অভিযোগ পেতে পারেন, অনুপস্থিতির অভিযোগ নয়। পুলিশের ঘুষ খাওয়ার সময় আছে, দম ফেলার সময় নেই।

মফস্বলে পোস্টিং এমন অনেক ডাক্তার ঢাকায় থেকে অফিস করেন। কিন্তু ডিসি, এসপি, ইউএনওরা ঢাকায় থেকে অফিস করতে পারেন না, করেনও না। ডাক্তাররা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থার আরও অনেক অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা তুলে ধরেছেন। প্রয়োজনের চেয়ে ডাক্তার অনেক কম থাকার কথা বলেছেন। কিন্তু সবকিছু মেনে নিলেও তাদের অনুপস্থিতিকে অনুমোদন করার কোনোই সুযোগ নেই। কয়জন ডাক্তার গ্রামে যেতে চান? বাধ্য হয়ে গেলে কয়জন সেখানে নিয়মিত থাকেন? গিয়েই তো তারা ফেরার জন্য তদবির শুরু করেন। সব ডাক্তারের পোস্টিং যদি ঢাকায় হয়, তাহলে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা দেবে কে?

নড়াইল হাসপাতালে ডাক্তারদের কেউই সময়মতো ছিলেন না, এই অনিয়মটুকু মেনে যদি ডাক্তাররা প্রতিবাদটুকু করতেন তাহলে আমার আপত্তি ছিল না। কিন্তু ডাক্তার বন্ধুরা কখনোই নিজেদের দোষটুকু দেখেন না। এটাই সমস্যা। সমালোচনাকে নিতে না পারলে, আত্মসমালোচনা করতে না পারলে কিন্তু সমস্যাগুলো আরও বাড়বে।

ডাক্তারদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্বও আরও বাড়বে। কারপেটের নিচে ময়লা রেখে কিন্তু কখনোই ঘর পরিষ্কার করা যায় না।

ডাক্তার বন্ধুরা আমাকে বলেন ‘ডাক্তারবান্ধব’ সাংবাদিক। তবে আমি তাদের বলি, আমি ন্যায্যতাবান্ধব সাংবাদিক। শুধু ডাক্তার নয়, সবার সমস্যা মমতা দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি, পরিস্থিতি বিবেচনা করি ন্যায্যতা দিয়ে। তবে ডাক্তারদের প্রতি আমার ভালোবাসাটা একটু বেশি। একাডেমিক বিবেচনায় ডাক্তাররা অবশ্যই মেধাবী। কঠিন পরীক্ষা দিয়ে তাদের ডাক্তারি পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। যোগ্যতা অর্জন করার পরও প্রচুর পড়তে হয়। পড়া শেষ করে এমবিবিএস ডাক্তার হওয়ার পরেই কি শেষ? মোটেই তা নয়। আপনি যদি ভেবে থাকেন

নামের আগে 'ডাক্তার' থাকলেই তিনি সকাল-বিকাল চেম্বার করবেন, চেম্বারের সামনে রোগীর ভিড় থাকবে, সকাল-বিকাল মানুষের পেট কাটবেন আর পকেট কাটবেন, অঢেল টাকা চলে আসবে; তাহলে ভুল। এমবিবিএস পাস করা অনেক ডাক্তারকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়। মাস্টার্স পাস করেই অন্য অনেকে ক্যারিয়ার শুরু করেন। কিন্তু এমবিবিএস পাস করার পর আসলে ডাক্তারদের পড়াশোনা শুরু হয়। আরও ডিগ্রি চাই। ডিগ্রি পেলেই শেষ নয়, ভালো ডাক্তার হতে হলে তাকে প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে হয়। এতকিছুর পর যখন কিছুটা পসার হয়, তখন জীবনের সূর্য অস্তপাটে। একজন ব্যস্ত ডাক্তারের একদিনের রুটিন ফলো করলে আপনার তাদেরকে মানুষ হবে না। আসলেই ডাক্তারদের আমার মানুষ মনে হয় না, জিন বা ফেরেশতা মনে হয়। আমরা অসুস্থ হয়ে ডাক্তারদের কাছে গিয়ে বলি, ডাক্তার সাব, আমাকে বাঁচান। ওপরে আল্লাহ, নিচে আপনি। ডাক্তাররা নিশ্চয়ই চেষ্টা করেন। তারপরও রোগী মারা যায়। ভুল চিকিৎসায় যেমন রোগী মারা যায়, তেমনি সঠিক চিকিৎসায়ও মারা যেতে পারে। মানছি, চিকিৎসাটা ভুল না সঠিক, সেটা যাচাইয়ের মতো দক্ষতা সাংবাদিকদের নেই। কিন্তু যাদের আছে, তারা কি সেটা করছেন? বিএমডিসি এখন পর্যন্ত ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার জন্য কয়জন ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? আমরা না হয় বুঝি না; কিন্তু ডাক্তার বন্ধুরা তো জানেন কোনটা ভুল চিকিৎসা। তারা কি তাদের বন্ধুকে বলেন সেটা, ভুলটা ধরিয়ে দেন? ডাক্তার ভুল করুক, শুদ্ধ করুক, অফিসে থাকুক না থাকুক; অন্য ডাক্তাররা তার পাশে দাঁড়িয়ে যান। এটা হওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।

এটা ঠিক বাংলাদেশে মানুষ বেশি। একজন ডাক্তারকে অনেক বেশি রোগী দেখতে হয়। ঢাকা মেডিক্যালে যে পরিবেশে ডাক্তাররা চিকিৎসা দেন, তা অবিশ্বাস্য, অমানবিক। শেষ পর্যন্ত ডাক্তাররাও তো মানুষ। অনিচ্ছাকৃত মানবিক ভুল তাদেরও হতে পারে। সেই ভুলটা স্বীকার করলে, মেনে নিলেই, ভুল থেকে শিক্ষা নিলেই সমস্যা কমে আসবে। কিন্তু ডাক্তাররা নিজেদের ভুল মানতে চান না। স্কয়ার

হাসপাতালে গেলে দেখবেন সব ঝকঝকে তকতকে। কিন্তু হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গেলে মনে হবে মাছের বাজার। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটকে কিন্তু চাইলে ঝকঝকে রাখা সম্ভব। তাহলে তাদের আসন সংখ্যার বেশি রোগী এলে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু ফিরিয়ে দিলে তো হাসপাতাল গেটেই রোগী মারা যাবে। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ডাক্তাররা মানুষের জীবন বাঁচান। তাই হাসপাতালকে ঝকঝকে রাখা সম্ভব হয় না।

যারা ডাক্তারদের ঢালাও গালি দেন, তাদের একরাত হৃদরোগের ইমার্জেন্সি বা সিসিইউতে দাঁড়িয়ে থাকার অনুরোধ করছি। সকালে বাসায় ফেরার সময় আপনি অবশ্যই তাকে পা ছুঁয়ে সালাম করে আসবেন। আপনাকে মানতেই হবে ডাক্তাররা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ নন, তারা অতিমানব। ডাক্তার বন্ধুরা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনাদের ভুল হয় না? আপনারা কসাইখানা হয়ে ওঠা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষায় অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেন না? আপনারা অপ্রয়োজনে

রোগীকে আইসিইউতে পাঠান না? সেখানে দিনের পর দিন, এমনকি কখনো কখনো মৃত্যুর পরও তাদের আটকে রাখেন না? ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন নেন না? ওষুধ কোম্পানি থেকে অন্যায্য গিফট নেন না? আপনারা নিজেদের প্রশ্ন করুন কেন বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে যায়?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন, আত্মসমালোচনা করুন, দুর্বৃত্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। সব ঠিক হয়ে যাবে। মাশরাফি খারাপ খেললে বাংলাদেশ একটি ম্যাচ হারবে, সাংবাদিক খারাপ হলে আপনার মান যাবে। কিন্তু একজন ডাক্তার খারাপ হলে বা অবহেলা করলে মানুষের প্রাণ যাবে। তাই ডাক্তারদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। মাশরাফিরাই তো আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় হিরো। সেই মাশরাফিই কিন্তু বলেছেন, ডাক্তাররাই আসল হিরো। আমি বলি, মাশরাফিরা হিরো হলে ডাক্তাররা সুপার হিরো। প্রত্যেক ডাক্তারই একেকজন সুপার হিরো। কারণ, একজন ডাক্তার মানুষের জীবন বাঁচান। এই ক্ষমতা আর কারও নেই। আমার ছেলে প্রসূনের জীবন বাঁচিয়েছিলেন শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডাক্তার মঞ্জুর হোসেন। এখনও তাকে দেখলে আমার সুপার হিরো মনে হয়। কিন্তু বেদনাটা হলো, প্রসূনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার দায়ও কিন্তু আরেকজন ডাক্তারেরই। তাই সুপার হিরো ডাক্তার যেমন আছেন, আবার কসাই ডাক্তারও আছেন। এই সত্যটা মানতে হবে ডাক্তারদের। কোনও ডাক্তার ভুল করলে, বিনা নোটিশে অনুপস্থিত থাকলে; ডাক্তারদেরই উচিত তাদের ভর্ৎসনা

করা। সবাই মিলে তার অন্যায়কে জায়েজ করা কোনও কাজের কথা নয়। ডাক্তারদের আমি ফেরশতা মনে করি, অতিমানব মনে করি; তারা নিজেদের সেই মর্যাদার আসনে রাখলেই ভালো। কিন্তু তারাও যদি আমাদের সাধারণ মানুষের মতো প্রতিক্রিয়া দেখান, দলবেঁধে গালাগাল করেন; তাহলে তারাও তো আমাদের মতো সাধারণের কাতারে চলে এলেন। আমরা, আমি অন্তত সেটা চাই না। আমরা আপনাদের ফেরেশতার আসনে বসিয়ে মাথায় করেই রাখতে চাই। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং যেমন বলেছেন, ভালো ডাক্তার হতে হলে আগে ভালো মানুষ হতে হবে। আমাদের সবাইকে ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টাটা করতে হবে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হেরে গেলেন নিপুণ, মিশা-ডিপজল প্যানেলের বড় চমক
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনহেরে গেলেন নিপুণ, মিশা-ডিপজল প্যানেলের বড় চমক
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ