X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি কি তার প্রত্যাশিত গন্তব্যে?

আবদুল মান্নান
১১ মে ২০১৯, ১৪:৩০আপডেট : ১১ মে ২০১৯, ১৪:৪৩

আবদুল মান্নান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির জন্ম ছিল অস্বাভাবিক, আর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হওয়া স্বাভাবিক দলটি এই মুহূর্তে লাইফ সাপোর্টে আছে। মৃত্যু সময়ের ব্যাপার। রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, যেসব রাজনৈতিক দল অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছিল প্রত্যাশিত স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। সাধারণত তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করেন এবং অনেকেই তাকে পাকাপোক্ত করতে অন্যদের নিষিদ্ধ করে নিজেরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, কিন্তু সেইসব রাজনৈতিক দল স্থায়ী হয় না। এমন ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশে ঘটেছে। বাংলাদেশে দু’জন সামরিক শাসক এই পথে দেশের শাসনভার পাকাপোক্ত করতে এই কাজটি করেছিলেন। অন্যদিকে একটি রাজনৈতিক দল যদি স্বাভাবিক নিয়মে গঠিত হয় এবং তার যদি যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্ব থাকে তাহলে সেই রাজনৈতিক দল টিকে থাকে আর জনগণ সমর্থন করলে এক সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও যেতে পারে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসেবে। আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাঙালিদের শোষণের প্রতিবাদের একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। দলটি পাকিস্তান আমলে নিষিদ্ধ হয়েছে একাধিকবার, দলে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে কমপক্ষে তিনবার, আবার সেই দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রক্ষমতায় গেছে, আর সাড়ে তিন বছরের মাথায় এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা হারিয়েছে, আর ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে রাষ্ট্রের জন্মদাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হয়েছেন, কারা অভ্যন্তরে হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার জাতীয় নেতাকে। এসব ষড়যন্ত্র আর রক্তপাতের মধ্য দিয়েই তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া ১৯৭৬ সালে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন। মাঝখানে প্রথমদিকে ষড়যন্ত্রের মূল হোতা খোন্দকার মুশতাক ৮৬ দিনের জন্য স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা ভোগ করেন। এরপর আসেন বঙ্গবন্ধুর নিয়োগপ্রাপ্ত দেশের প্রধান বিচারপতি এএসএম সায়েম। তিনি ছিলেন একজন ‘সাক্ষীগোপাল’ রাষ্ট্রপতি, আসল ক্ষমতা ছিল জিয়ার হাতে। একদিন জিয়া তাকে বঙ্গভবন হতে রাতের অন্ধকারে বের করে দিয়ে ঘোষণা করেন ‘আমি তোমাদের ত্রাতা, আমি প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক’। অবসরের পর সায়েম বঙ্গভবনে তার অবস্থানকালের স্মৃতিকথা At Bangabhaban: last phase এ লিখেছেন জিয়া ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতালিপ্সু; ‘তিনি প্রতিরাতে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আমার শয়নকক্ষে প্রবেশ করতেন, বিছানার উপর পা তুলে দিয়ে হাতে একটি রিভলবার নিয়ে আমাকে হুমকি দিতেন এবং রাষ্ট্রপতির পদ হতে পদত্যাগ করতে চাপ দিতেন। আমি তাতে সাড়া না দিলে একরাতে তিনি একটি পদত্যাগপত্র হাতে নিয়ে আসেন এবং তাতে সাক্ষর করতে আমাকে বাধ্য করেন।’

সায়েমকে সরিয়ে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা দখল করেন। এরপর তিনি তার পূর্বসূরি জেনারেল আইয়ুব খানের পথ অনুসরণ করে একটি ‘হ্যাঁ’ ‘না’ রেফারেন্ডামের মাধ্যমে নিজেকে ‘নির্বাচিত’ রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। জিয়া জানতেন ক্ষমতায় অধিষ্ঠ থাকতে একটি বেসামরিক লেবাস পরানোর জন্য তার দরকার একটি রাজনৈতিক দল। তিনি এই কাজে ব্যবহার করলেন তার উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে। বিচারপতি সাত্তার সব কিসিমের রাজনৈতিক ‘টোকাই’, সাবেক সামরিক বেসামরিক আমলা, চরম দক্ষিণ আর চরম বামপন্থী, স্বাধীনতাবিরোধী আর কিছু পেশাজীবীকে নিয়ে প্রথমে বানালেন জাগোদল, যা পরে নামকরণ করা হয় বিএনপি। এই কাজে সাত্তারকে জিয়ার হুকুমে সহায়তা করে তার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। জিয়ার আমলের প্রথম দু’বছরের বেশি তিনি শাসন করেছিলেন রাতে কারফিউ দিয়ে। যারা জিয়াকে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বাহবা দেন তারা কিন্তু কখনও এই সব কথা বলেন না। ১৯৭৯ সালে জিয়ার আমলে একটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যাতে আওয়ামী লীগের ভাগ্যে জোটে ৩৯টি আসন। এই নির্বাচনে জিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একান্ত ঘনিষ্ঠ তাঁবেদার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী পদে ও কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলিমকে বানান রেলমন্ত্রী। জিয়া সেনাবাহিনী হতে মেজর জেনারেল হিসেবে ১৯৭৮ সালের এপ্রিল মাসে অবসর নেন এবং নজিরবিহীনভাবে নিজেকে পেছনের তারিখ দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস হতে লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি দেন। জিয়ার আমলে ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করার জন্য জিয়ার আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার (পরে বিএনপি’র মহাসচিব) সংসদে একটি বিল (সংবিধানের কুখ্যাত পঞ্চম সংশোধনী) উত্থাপন করেন। সংসদে বিএনপি’র সদস্যসংখ্যা ২০৭। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের সংখ্যা মাত্র ৩৯, আর মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি খণ্ড অংশের সদস্যসংখ্যা ২ জন। সংসদে আরো ছিলেন একতা পার্টির সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (পরে আওয়ামী লীগের প্রেসেডিয়াম সদস্য, বর্তমানে প্রয়াত)। সংখ্যার জোরে বিলটি পাস হবে, তা বলাবাহুল্য। সংসদে বিরোধী দলের নেতা আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন সে দিন। কিন্তু তিনি তার বক্তব্য শেষ করার আগেই তাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুধাংশু শেখর হালদার, মিজানুর রহমান সে দিন বলেছিলেন, ‘আ জ আপনারা সংখ্যার জোর দেখাচ্ছেন। ইতিহাস আপনাদের বিচার করবে। একদিন ২০৭ যখন শুধু সাত হয়ে যাবে তখন সংসদে আপনাদের দলের সদস্য খুঁজতে দুরবিন লাগবে।’ ইতিহাস খুবই নির্মম, কাউকে ক্ষমা করে না। বিএনপি’র বর্তমান হাল চিরায়ত ইতিহাসের যথার্থতা প্রমাণ করেছে।

১৯৮১ সলের মে মাসে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় ৩০ মে উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাকেও ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত করে জিয়ার দেখানো পথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। এক গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ ১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন। সেই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ, শ্রমিক সংগঠনগুলো ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চৌদ্দদলীয় জোট, বিএনপি’র নেতৃত্বে সাতদলীয় জোট আর পাঁচটি বামপন্থী দল। সঙ্গে ছিল দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ১৯৯১ সালে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সহায়তায় ক্ষমতা আসে। খালেদা জিয়া হন দেশের প্রধানমন্ত্রী। যেহেতু দলটিতে দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব ছিল সেহেতু সরকার হয়ে পড়ে আমলানির্ভর। সরকারের চারপাশে সুবিধালোভীরা ভিড় করে। ১৯৯১-৯৬ সালের সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসে। সরকার গঠন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। একুশ বছর পর ক্ষমতায় আসা। বস্তুতপক্ষে এই সময় বাংলাদেশের একটি নবযাত্রা শুরু হয়। এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল ১৯৭৯ সালে জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধ করার জন্য সংবিধানে যে সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন সেই সংশোধনী সংসদে রহিত করা এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা করা। ভারতের সঙ্গে বহু বছরের অমীমাংসিত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রক্তপাত বন্ধ করা। শেখ হাসিনার এই মেয়াদে দেশের অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত উন্নতি হয়। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার প্রসার ঘটে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দিকে কৃষি যাত্রা শুরু হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এবার জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে জোটবদ্ধ হয়ে। এই মেয়াদে বিএনপি এক নবরূপে আবির্ভূত হয়। খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ্পুত্র তারেক রহমান গুলশানের হাওয়া ভবন হতে শুরু করে একটি সমান্তরাল সরকার পরিচালনা। তার নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি আর লুটপাট একটি শিল্পে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত এক দলীয় র‌্যালিতে চৌদ্দটি গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও নিহত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২৩ নেতাকর্মী। এই মেয়াদে সিলেটে নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী। উত্থান হয় জঙ্গিবাদের।

২০০৬ সালের অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনটি ছিল বিএনপি’র জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। যে কোনোভাবে নির্বাচনে জিততে হবে। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো এক কোটি তেইশ লাখ ভোটার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে শুরু হলো এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শুরু হলো এক গণআন্দোলন। ১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে দেশে জরুরি আইন জারি করে ক্ষমতা দখল করে সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন। এই সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ধস নামানো বিজয় ছিনিয়ে এনে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। ২০০৯-১৪ মেয়াদকালে দেশের উচ্চ-আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের ও গণতন্ত্রের মৌলিক চিন্তা চেতনার পরিপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে বাতিল করে। বিএনপি ও তার মিত্ররা গোঁ ধরে ২০১৪ সালের নির্বাচন দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক রহিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। দেশে শুরু হলো আন্দোলনের নামে এক ভয়াবহ পেট্রোল সন্ত্রাস। এই সন্ত্রাসের শিকার শুধু সাধারণ মানুষই নয়, প্রাণ হারালেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, স্কুলগামী খুদে শিক্ষার্থী, গবাদিপশুসহ ক্ষতি হলো কয়েকশত কোটি টাকার সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ। অনেকেই শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের দাবি মেনে নির্বাচনের আয়োজন করতে। সংবিধানের প্রতি আস্থা রেখে শেখ হাসিনা নির্বাচন করলেন। নিরঙ্কুশ বিজয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গে থাকা জোটের। বিএনপি-জামায়াত ঘোষণা করেছিল যে কোনোভাবেই হোক এই নির্বাচন ঠেকাবে। শেষতক হেরে গেলো বঙ্গবন্ধু কন্যার সাহস আর দৃঢ়তার কাছে। একজন মার্কিন গবেষক এই নির্বাচন নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে আসলে তাকে বলেছিলাম বিএনপি’র এই নির্বাচন বয়কট করা হতে পারে তাদের জন্য আত্মঘাতী। যদিও তারা বলে জনগণকে নিয়ে তারা এই ‘অবৈধ’ সরকারকে উৎখাত করবে তা তারা পারবে না, কারণ বিএনপি কখনও একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সুবিধাভোগীদের ক্লাব। আর মধ্যবিত্তের দেশে বিপ্লব হয় না। নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি একশত না হোক অন্তত পঞ্চাশটা হলেও আসন পেত।

২০১৪ সালের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেছে অনেকখানি। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে। বয়স আর শারীরিক সমস্যার কারণে তার রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান তার দণ্ডপ্রাপ্ত ছেলে তারেক রহমান পলাতক জীবন-যাপন করছে লন্ডনে। বিএনপিতে যেসব শিক্ষিত নেতা আছেন তারা তারেক জিয়ার বশ্যতা স্বীকার করেছেন অনেক আগেই, যদিও তারেক জিয়ার চরিত্র হচ্ছে সে তার পিতার মতো অত্যন্ত কর্তৃত্বপরায়ণ এবং অর্থলোভী। অহংকার আর লোভ তাকে গ্রাস করেছে। এই দুটি বৈশিষ্ট্য যদি একজন ব্যক্তি ধারণ করে তার পতন অবশ্যম্ভাবী। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিএনপিকে রক্ষা করতে এসেছিলেন এককালের বঙ্গবন্ধুর স্নেহ ও কৃপাধন্য ড. কামাল হোসেন ও কিছু তামাদি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাদের জন্ম আওয়ামী লীগের ঔরসে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিলেও তাতে দল না যতটা লাভবান হয়েছে তার চেয়েও বেশি লাভবান হয়েছে তারেক রহমান, কারণ বেশিরভাগ মনোনয়ন তিনি চড়া মূল্যে বিক্রি করেছেন। লন্ডনে বসে সে মনোনয়ন দিয়েছে। ড. কামাল হোসেনের মতো মানুষের এমন একজন অর্বাচীনের কাছে আত্মসমর্পণ লজ্জাজনক। নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ মার্কা নিয়ে বিজয় লাভ করেছেন মাত্র পাঁচ জন। শুরুতে ঘোষণা করা হয় বিএনপি এই ফল মানে না। তাদের কোনও সদস্য শপথ নেবে না। শেষতক চার জন সদস্য শপথ নিলেন। শুধু আত্মাহুতি দিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল। বুঝতে পারেননি বিএনপি’র মৃত্যু হলে তারেকের কোনও ক্ষতি বৃদ্ধি নেই। তিন পুরুষ চলার মতো সে অর্থ কামাই করে নিয়েছে। মির্জা ফখরুলের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ছিল যা তিনি বুঝে হোক আর না বুঝে হোক বিসর্জন দিয়েছেন। ১৯৮৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র দুটি আসনে জয়লাভ করেছিল। বর্তমানে ও তার পূর্বের মেয়াদে বিজেপি ক্ষমতায়। বিএনপি ১৯৭৯ সালে ২০৭টি আসন নিয়ে নির্বাচনের রাজনীতি শুরু করেছিল। বর্তমানে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও তার সতীর্থদের ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ২০৭ এখন চার-এ নেমে এসেছে। একজন প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী নেতৃত্ব ছাড়া বিএনপি পুনরায় উঠে দাঁড়াবে তার সম্ভাবনা নেই। দলটির জন্ম হয়েছিল আস্বাভাবিকভাবে। মৃত্যু অনেকটা প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। বিএনপি’র মুসলিম লীগে পরিণত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিতর্কিত দ্বীপ নিয়ে জাপানের কূটনীতিককে তলব দ. কোরিয়ার
বিতর্কিত দ্বীপ নিয়ে জাপানের কূটনীতিককে তলব দ. কোরিয়ার
সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
সিজারে প্রসূতির মৃত্যু, মুচলেকা নিয়ে মরদেহ হস্তান্তর
সিজারে প্রসূতির মৃত্যু, মুচলেকা নিয়ে মরদেহ হস্তান্তর
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ