X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

টার্নিং পয়েন্টে গণমাধ্যম

প্রভাষ আমিন
১৩ মে ২০১৯, ০০:০২আপডেট : ১৩ মে ২০১৯, ১৫:১৪

প্রভাষ আমিন গণমাধ্যম এখন একটা টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে। সেটা যেমন বাংলাদেশের গণমাধ্যম, তেমনি বিশ্ব গণমাধ্যমও। তবে আমাদের আলোচনা বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে। আমাদের সামনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। ১০ বছর পর গণমাধ্যমের মাধ্যম কী হবে? এমন প্রশ্নও উঠেছে, প্রচলিত ধারার সংবাদপত্র টিকবে কিনা? প্রশ্ন আছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, দায়িত্বশীলতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো দ্রুত ঘুচে যাচ্ছে গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবধান।
এমন অনেককে চিনি, যারা সংবাদতৃষ্ণা মেটানোর জন্য পত্রিকা পড়েন না বা টিভিও দেখেন না। তারা শুধু ফেসবুক পড়েন। জরুরি খবরের লিংক তারা পেয়ে যান সেখান থেকেই। এই অবস্থায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম সত্যিই একটা টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যতে কোন দিকে যাবে, সেটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। ভালো দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে, আছে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও। কোনদিকে যাবে, সেটা নির্ভর করছে সরকারের ওপর যেমন, আমাদের মানে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। এই সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত আরও অনেক সমস্যা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে পাঠক বা দর্শক প্রত্যাখ্যান করে। দর্শক বা পাঠক না থাকলে বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ কমে যায়। তাতে ক্ষতির মুখে পড়ে পত্রিকা, টেলিভিশন, নিউজপোর্টাল তথা গণমাধ্যম। চাকরি হারান সাংবাদিকরা। অস্থিরতা তৈরি হয় গণমাধ্যমে। এই এক বিশাল চক্র। এ চক্র সৃষ্টির দায় আমাদের, ভাঙতে হলেও আমাদেরই ভাঙতে হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে এ বছরও বাংলাদেশের অবনমন হয়েছে। এই সূচক আমি পুরোপুরি অবিশ্বাস করি না। কারণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতারও নানা চ্যালেঞ্জ আছে। এটা ঠিক বাংলাদেশে এই মুহূর্তে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নেই। এজন্য সরকারের নানা আইনি প্রতিবন্ধকতা যেমন আছে, তেমনি আছে আমাদের দায়ও। আমরা যতটা না সরকারের ভয়ে, তার চেয়ে বেশি স্বেচ্ছায় নিজেদের কণ্ঠ চেপে রেখেছি। এটা কিছুটা স্বার্থে, কিছুটা আনুগত্যে। বর্তমান সরকার অনেক টেলিভিশনের অনুমোদন দিয়েছে। অনলাইনের জোয়ার চলছে। গণমাধ্যম কোয়ানটিটিতে বাড়লেও কোয়ালিটি বাড়ে তো নাই-ই, বরং কমেছে।

এই সেলফ সেন্সরশিপ আর ভালো কনটেন্টের অভাবেই গণমাধ্যমের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এ কারণেই গণমাধ্যমে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এখন সর্বাধিক প্রচারিত একটি দৈনিক খরচ কমাতে লোক ছাঁটাই করছে। আবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের নিউজ ডেস্ক বন্ধ করে দিয়েছে। আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানে লোক ছাঁটাই চলছে। সব মিলিয়ে গণমাধ্যম চরম সংকটকাল পার করছে। এই সংকটের সময়েও আশার আলো ছড়াচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান। বাংলা ট্রিবিউন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে কর্মীদের প্রমোশন দিয়েছে, ইনক্রিমেন্টও দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের হাসিমুখের ছবি দেখতে ভালো লাগছে।

সংকটকাল কবে কাটবে, গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎই বা কী? আমি বরাবরই আশাবাদী মানুষ। আমি জানি সংকট কেটে যাবে। তবে এ জন্য সরকারের কিছু নীতি-সহায়তা লাগবে। সরকার ইতোমধ্যে বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টেলিভিশনের আয়ের একমাত্র উৎস বিজ্ঞাপন। কিন্তু টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে ফেসবুক আর ইউটিউবে। এ ব্যাপারেও সরকার ওয়াকিবহাল। সবচেয়ে বড় আশার কথা হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে গণমাধ্যমবান্ধব মানুষ এবং গণমাধ্যমের ভেতর-বাইরের দিক তার জানা। তার সবশেষ সংবাদ সম্মেলনে দেশে সংবাদপত্র শিল্পের নানামুখী সংকট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হচ্ছে একটা যুগের অথবা প্রযুক্তির প্রভাব। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার প্রভাবে এভাবে বিবর্তন আসতেই থাকবে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আধুনিক যুগে পৃথিবীর বহু দেশে অনেক নামিদামি পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। ছাপা কাগজের পরিবর্তে সেখানে অনলাইন সংস্করণ চলছে। অনেক নামিদামি পত্রিকা শুধু অনলাইনেই চলে; ছাপানোটা আর হয় না, একদম নেই। এ রকম বহু নামকরা পত্রিকা এখন চলে গেছে অনলাইনে। কাগজ আর ব্যবহারই হয় না।

প্রধানমন্ত্রী অল্পকথায় পুরোটা বলে দিয়েছেন। পুরনো ধারার গতানুগতিক সাংবাদিকতার দিন ফুরিয়ে আসছে। যারা সময়ের সঙ্গে, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে, টিকে থাকবে তারাই। টিকে থাকার সূত্র পুরনো, সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট। যিনি যোগ্য, দক্ষ, দূরদর্শী; তাদের কোনও সংকট থাকবে না। এখন পত্রিকা মানে শুধু ছাপার পত্রিকা নয়। অনেক পত্রিকারই ছাপার চেয়ে অনলাইনে পাঠক বেশি। পত্রিকায় থাকে ভিডিও কনটেন্টও। টেলিভিশনও আর নিছক টেলিভিশন নয়; তারও থাকছে অনলাইন ভার্সন। অনলাইন নিউজপোর্টালও আর শুধু নিউজ নয়, থাকে নানা ভিডিও কনটেন্টও। এসব কনটেন্ট দিয়ে ইউটিউব থেকে বাড়ছে আয়। এভাবেই যারা সব মিলিয়ে ভাবতে পারবে, টিকবে তারাই।

তবে অবশ্যই গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফারাকটা স্পষ্ট রাখতে হবে। গণমাধ্যমকে সাহসের সঙ্গে সত্য তুলে ধরতে হবে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। স্বাধীনতার সঙ্গে দায়বদ্ধতার কথাও মাথায় রাখতে হবে। ভালো ও স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া উন্নয়ন, গণতন্ত্র সব অর্থহীন। তাই ভালো, স্বাধীন, দায়বদ্ধ সাংবাদিকতার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

 

/এমএনএইচ/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ