X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাড়তি চাওয়া

রাশেদা রওনক খান
১৪ মে ২০১৯, ১৬:৫৩আপডেট : ১৪ মে ২০১৯, ১৬:৫৫

রাশেদা রওনক খান এক, দুই করে পাঁচ বছর পার করলো বাংলা ট্রিবিউন! পাঠকের আস্থা ও ভালোবাসা দুটোই পেয়েছে খুব স্বল্প সময়েই! তাই অভিনন্দন বাংলা ট্রিবিউনকে। এই সাইবার ওয়ার্ল্ডের ডিজিটাল যুগে ও বাস্তব জীবনের অস্থির সময়ে একটি অনলাইন পত্রিকা এভাবে এত দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া সহজ অর্জন নয়। অনুমান করতে পারি, এ জন্য পত্রিকাটির প্রকাশক, সম্পাদক হতে শুরু করে প্রতিটি সংবাদকর্মী কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এর মানোন্নয়নে। অভিনন্দন আজকের দিনে পুরো টিমকে, অল্পসময়ে এতটা পথ চলার জন্য।
পাঠকের আস্থা অর্জন এক বিশাল বিষয়, এই আস্থা অর্জনের জন্য যা যা করণীয় নিশ্চয়ই বাংলা ট্রিবিউন পরিবার তা করে চলছে। আমি একজন শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে আজ কয়েকটি বাড়তি বিষয় আশা করছি বাংলা ট্রিবিউন হতে।
প্রথমেই যেটা চাই, তা হলো যে কোনও একটি অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে সেই ঘটনার পেছনে দিনের পর দিন লেগে থাকা, ধারাবাহিকভাবে এর প্রচার করা, একটি ঘটনার শেষ কি হয় তা পর্যন্ত বিষয়টিকে পাঠকের হৃদয়ে জিইয়ে রাখা। যেমন, তনু হত্যাকা-ের ঘটনা। বিচারের কি হলো? আসামি কে? বিচারপ্রক্রিয়া কেন এত বিলম্বিত হচ্ছে- ইত্যাদি পাঠককে জানান দেওয়া। নুসরাতের বিষয়টিও তা-ই। এখন ওই নরপিশাচ সিরাজ কোথায়? ওসি এখন কোথায়? তার বিচার-প্রক্রিয়া কতদূর? নুসরাতের বাবা-মায়ের কি অবস্থা? আফসানা হত্যাকা-ের জড়িতরা কোথায়? প্রতিদিন এর যে কোনও অপরাধমূলক কাজকে অনেকটাই আলোচনায় নিয়ে আসার দায়িত্ব গণমাধ্যমের। আমরা আজ এতটা অস্থির সময় পার করছি যে, একদিন পরেই সব ভুলে যাই, কিন্তু গণমাধ্যমের কাজ হবে তা প্রতিদিন পাঠককে মনে করিয়ে দেওয়া। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, রিমাকে মেরে ফেলার পর মনির-খুকুর ছবিসহ খবর প্রতিদিন মূলধারার গণমাধ্যমের প্রথম পাতায় প্রকাশ পেতো। অথচ এখন প্রতিদিন এত ঘটনা যে, কোনটা রেখে কোনটা প্রকাশ করবে গণমাধ্যম? কিন্তু তার মাঝেও গণমাধ্যমকে পথ বের করতে হবে প্রতিটি খুন, ধর্ষণ, নিপীড়নের খবর পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। চেষ্টা করা মিডিয়া ট্রায়ালের। কারণ, আমরা ইদানীং দেখেছি কয়েকটি ঘটনা হতেই যে, মিডিয়া ট্রায়াল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই নুসরাতের ঘটনায় চাপা পড়ে যেত যদি না ফেসবুকে, অনলাইন পত্রিকাগুলো এতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তুলে না ধরতো। এরকম বহু নুসরাতের নিপীড়কেরা পার পেয়ে যাচ্ছে কেবল সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে না বলে!
দ্বিতীয়ত, সংবাদ প্রচারের চেয়েও বাড়তি দায়িত্ব পালন করার মতো পরিণত আজ বাংলা ট্রিবিউন। তাই পাঠকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা, পাঠককে পত্রিকার অংশ করে তোলা, পাঠককেও একইভাবে সাংবাদিকতায় যুক্ত করার সময় এসেছে। আজকের তরুণেরা অনেক বেশি ডিজিটাল। তারা যে কোনও সংবাদ সহজেই পাঠাতে পারবে, যদি যুক্ততা তৈরি হয়। এছাড়া তরুণদের জঙ্গিবাদ, মাদকসহ নানা অপকর্ম থেকে মুক্ত করতে তাদের সাংগঠনিকভাবে যুক্ত করতে হবে প্রতিটি গণমাধ্যমকে। জেলা-উপজেলাসহ গ্রামের স্কুল-কলেজগুলোতে পৌঁছাতে হবে গণমাধ্যমের কার্যক্রম। বাংলা ট্রিবিউন অফিস পরিদর্শনে  বিভিন্ন স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। এতে বাচ্চাদের অনেক কিছু মনে প্রশ্ন জাগে, ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ তৈরি হয়, গণমাধ্যমের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যত বেশি সংগঠনিকভাবে যুক্ত হবে গণমাধ্যমের সঙ্গে, ততই তাদের সচেতনতা, তাদের পড়ার প্রতি আগ্রহ ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা বাড়বে।
তৃতীয়ত, কিছু সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বাংলা ট্রিবিউন। যেমন, গ্রাম ও শহরভিত্তিক বিতর্ক-রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সরাসরি। অন্য কেউ আয়োজন করছে তার মিডিয়া পার্টনার না হয়ে সরাসরি যুক্ত হলে তরুণদের যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রবল হবে। শুরুটা হতে পারে বাংলা ট্রিবিউন পরিবারের সদস্যদের নিজেদের গ্রাম বা শহর দিয়েই। তাহলে যার গ্রাম বা শহরে হবে, তিনিই মূলত পুরো কার্যক্রমটি দায়িত্বের সঙ্গে শুরু এবং শেষ করবেন। প্রতিযোগীদের সবাইকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করা, যেখানে তাদের স্বপ্নের মানুষজন কথা বলবেন, গান গাইবেন, কবিতা পড়বেন কিংবা গল্প শোনাবেন। সে জন্য অবশ্য আমাদের স্বপ্নের মানুষজনকেও সময় দিতে হবে এবং সেই সময় তাদের কাছ থেকে বের করার দায়িত্ব বাংলা ট্রিবিউন পরিবারকেই নিতে হবে।
এই উত্তরাধুনিক করপোরেট যুগে গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা বাড়িয়ে তোলার কাজটি গণমাধ্যমকেই করতে হবে, এটাই শেষ কথা। মানুষের ওপর মানুষের আস্থা যেখানে কমে যাচ্ছে সেখানে গণমাধ্যমের ওপর আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ, তবু চেষ্টা করতে হবে আমাদেরই। বাংলা ট্রিবিউন সেই চেষ্টাটা চালিয়ে যাবে নিরন্তর, এই আশাটুকুই করছি আজ। আবারও শুভেচ্ছা রইলো বাংলা ট্রিবিউন পরিবারের প্রতি। শুভ হোক সামনের পথচলা।
লেখক: শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


/এমওএফ/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
হলমার্কের দুর্নীতির এক মামলার রায় আজ
হলমার্কের দুর্নীতির এক মামলার রায় আজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ