X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

জননেত্রীর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

মু. আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
১৭ মে ২০১৯, ১৩:৫৭আপডেট : ১৭ মে ২০১৯, ১৪:২৮

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু আজ ১৭ মে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৯তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ৩৮ বছর আগে তিনি ৬ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে এক অবরুদ্ধ-গণতন্ত্রহীন স্বৈরশাসনে নিষ্পেষিত বাংলাদেশে আসেন। ২০১৯ সাল এবং ১৯৮১ সালের পার্থক্য অনেক। বাস্তবতা ভিন্ন; দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও এক নয়। ১৯৮১ সালে দেশে ছিল স্বৈরশাসন, গণতন্ত্র ছিল অবরুদ্ধ, প্রতিরাতে তখন কারফিউ দেওয়া হতো। তখন দেশের পরিবেশ ছিল ভয়াবহ এবং মানুষ ছিল সর্বভাবেই ভীতসন্ত্রস্ত। তবুও বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রত্যাবর্তন করেছিলেন স্বদেশের মাটিতে। এ প্রত্যাবর্তন ঐতিহাসিক, তাৎপর্যমণ্ডিত এবং অনন্য মাইলফলক, যার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিধারায় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।

স্বজন হারানোর শোককে পাথর চাপা দিয়ে শক্তিতে পরিণত করেছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।  আপন কর্মমহিমায় তিনি পরিণত হন মানুষের আস্থার নেত্রীতে। এ প্রত্যাবর্তনে ভীত কেঁপে গিয়েছিল স্বৈরশাসকের। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে কমিটিও গঠন করা হয়েছিল, সকল রক্তচক্ষু ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে তিনি স্বদেশ ভূমিতে পা রেখেছিলেন, যা সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পেয়েছিল। শেখ হাসিনাই পরবর্তীতে অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারা এবং মানুষ ফিরে পায় গণতান্ত্রিক অধিকার।

মানবতার ইতিহাসে বর্বরতম, ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী-পরাজিত অশুভ দেশি-বিদেশি ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এ ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১৫ দিন আগে শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে যান। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ১৫ আগস্টে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু স্বৈরশাসক তাদের দেশে ফিরতে দেয়নি।

বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের আপনজনদের হারিয়ে বেদনার পাহাড় বুকে নিয়ে তাদের ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়। স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের আগে শেখ হাসিনা ভারতে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি মতিঝিলের ইডেন হোটেলে তিন দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে সম্মতিক্রমে শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী নির্বাচন হন।

প্রত্যাবর্তনের সেদিন দেশের পরিবেশ ছিল প্রতিকূল; জনগণ ছিল অধিকার বঞ্চিত; তথাপি স্বৈরশাসনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছিল অগণিত মানুষ। দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড়ে রাজপথে ছিল মিছিলের ধারা। জনগণের মনের উচ্ছ্বাস ও রাজপথে উপস্থিতিতে কেউ আর বাধা হতে পারেনি। প্রিয় নেত্রীকে বহনকারী বিমান দেশের মাটিতে  অবতরণ করলে হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা, আবেগ আর অশ্রুজলের মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীরা তাঁকে বরণ করে নেন। প্রচুর বৃষ্টি বাদলের মধ্যেই জনতার ঢেউ ছিল লক্ষণীয়।

জনমানুষের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ উপলক্ষে মানিক মিয়া এভিনিউ’র জনসমুদ্রের উদ্দেশে সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সব হারিয়ে আজ আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি শুধু আমার পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। প্রয়োজনে আমার পিতার মতো জীবন দেবো, তবুও আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আপস করবো না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, ‘...আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেও তিনি ৩২ নম্বরের বাড়িটি ফিরে পাননি। স্বৈরশাসক জিয়া তাঁকে বাড়িতে যেতে বাধা দেয়। কিন্তু পিতার মতো কখনোই দমে যাননি শেখ হাসিনা। শুরু করেন মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পাহাড়সম বাধা সত্ত্বেও তিনি এগিয়ে গেছেন; মানুষের ভালোবাসা তাঁর সর্বদাই আশীর্বাদ। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন গভীরভাবে উপলব্ধির প্রয়োজন রয়েছে। প্রত্যাবর্তন যেন বাঙালির জীবনে নতুন করে বাঁচার আশা জাগিয়েছিল। যদিও পরের ১০ বছর আরেক সেনা শাসকের হাতে দেশ অবরুদ্ধ থাকলেও মানুষের গভীরে অধিকার ফিরে পাওয়ার বাসনাকে শেখ হাসিনা সমুজ্জ্বল করেছে। কারণ, শেখ হাসিনার আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়; স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত অধিকার ফিরে পায়। আমাদের বুঝতে হবে, শেখ হাসিনার সংগ্রামের পথ ছিল বন্ধুর ও কঠিন। কিন্তু তিনি ঠিকই সব অতিক্রম করেছেন সাহস, প্রজ্ঞা ও মেধার মাধ্যমে। বাংলার মানুষের ভালোবাসাকে তিনি হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে গেছেন সত্য ও ন্যায়ের পথে। তিনিই দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও তিনি ছিলেন পিতার মতোই নিঃশঙ্কচিত্ত, অকুতোভয়।

১৯৮১ সালের বাংলাদেশ আর ২০১৯ সালের আজকের বাংলাদেশ এক নয়। সেই দারিদ্র্র্যক্লিষ্ট বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছি। এ অর্জন দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল, এ সুফল আমরা পেয়েছি শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বের গুণে। দীর্ঘ সময় স্বৈরশাসন ছিল এ দেশে, পরাজিত শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের মদতদানকারীরা রাষ্ট্র শাসন করে দেশের উন্নয়নের পরিবর্তে নিজেদের সম্পদ ও প্রতিপত্তি বাড়িয়েছে, মানুষকে তাদের অধিকার থেকে দূরে ঠেলে মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এলে মানুষ আস্থা বিশ্বাস ফিরে পায়। নতুন করে বাঁচার প্রত্যয়ে পথ চলতে শুরু করে।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা কোনও দিন অন্যায়ের সাথে আপস করেননি, দেশের মানুষের কথা সবর্দাই গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই জনগণ তাঁকে বারবার দেশ সেবার সুযোগ করে দিয়েছেন। জনগণকে দেওয়া প্রতিটি ওয়াদা তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। আজকের বাংলাদেশ তাই বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে প্রশংসিত হচ্ছে; বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমরা এগিয়ে চলেছি দুর্বার গতিতে। শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয়; আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাবোই। সেদিন যদি শেখ হাসিনা আমাদের মাঝে ফিরে না আসতেন তবে আমাদের এই শুভ-পরিবর্তন ও উন্নয়ন সব অসম্ভব ছিল; তা সহজেই বলা যায়। তাই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ব বহন করে এবং তিনি আমাদের বিশ্বাস ও ভরসার আশ্রয়স্থল।

আমি বঙ্গবন্ধু-কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

 

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী

 

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ