X
শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সভ্যতায় নেই আমরা

তুষার আবদুল্লাহ
০৬ জুলাই ২০১৯, ১৪:৪৯আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৯, ১৪:৫২

তুষার আবদুল্লাহ আমরা এক অভিশপ্ত সময়ে আছি এখন। অন্ধকার সময়ে। একে কোনও সভ্যতার বসবাস বলা যাবে না। কারণ সভ্য সমাজে শিক্ষক ছাত্রী ধর্ষণে নেশাতুর থাকে না। সাধারণ স্কুল, মাদ্রাসা কোথাও শিক্ষার্থী নিরাপদে নেই। একেকজন শিক্ষকের মুখোশ খসে পড়ে ধর্ষকের রূপটি প্রকাশিত। কোনও কোনও শিক্ষক শুধু শিক্ষার্থীকেই নয়, জিম্মি করে অভিভাবকদেরও লালসার শিকারে পরিণত করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী নিগৃহীত হওয়ার খবরটি নতুন নয়, বরং এ নিয়ে নানা অভিযোগ প্রমাণিত। প্রমাণের বাইরে লোকসমাজের ভয়ে লজ্জায় সইয়ে যেতে বাধ্য হওয়া অনেক অভিযোগ ফিসফিসিয়ে কান থেকে কানে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা এভাবে ধর্ষকে রূপ নিয়েছে, তা অজানাই ছিল। যখন আমরা ধর্ষকের মুখেই শুনি বিশ ছাত্রী ও তাদের মায়েদের কাউকে কাউকে ধর্ষণ বা অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করার কথা, তখন সমাজ স্তম্ভিত ও আতঙ্কে কুঁকড়ে যায়।
সত্যি কুঁকড়ে গেছি। সন্তান নিজ বাড়িতে নিরাপদে নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়ারীতে ১০ মিনিটের মধ্যে খেলা শেষ করে ফেরার কথা বলে ঘরের বাইর হয়েছিল যে মেয়েটি, তাকেই বাড়ির ছাদে পাওয়া গেলো শ্বাসরোধ অবস্থায়। পুলিশ বলছে হত্যার আগে শিশু মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়ে থাকতে পারে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়েও রেহাই নেই। ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেছে ক্যান্টিন বয়। স্কুল-মাদ্রাসার কথা তো আগেই বলা হলো। দ্বীনি শিক্ষা নিতে গিয়েও রক্ষা নেই। আর বাইরে? অন্ধকারের বিভীষিকা।

ফুটপাত, বাস, ট্রেন, লঞ্চ কোথাও মেয়েদের নিরাপদ যাত্রা নেই। মেয়ে নিরাপদ নেই তার কাজের জায়গাটিতেও। পরিবারের একদম নিকটজন দ্বারাও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এমনকি যে পুরুষকে সে বন্ধু বা ভালোবাসার মানুষ হিসেবে বেছে নিয়েছিল, সেই পুরুষটিই মেয়েটিকে অন্য এক বা একাধিক নেকড়ের থাবার দিকে ছুড়ে দিচ্ছে।

আমাদের বাহ্যিক উন্নয়ন হচ্ছে। বসার ঘর থেকে রাজপথ। উন্নয়নের জাঁকজমক সাজসজ্জা। বাহিরকে আমরা সাজিয়েছি এজন্য যে, আমাদের ভেতরটা কুৎসিত কালো হয়ে গেছে। সেই কালোকে আড়াল করার জন্যই বাইরের এই চটক রঙ? আমরা সুন্দরের সঙ্গে নেই। শিক্ষকের কাছে ছাত্রী নিরাপদ নেই যে সমাজে, বাবার কাছে কন্যা, ভাইয়ের কাছে বোন, প্রিয়তমর কাছে প্রিয়তমা, সেই সমাজকে আমরা সুন্দর সমাজ বলতে পারি না। ওই সমাজ যে রাষ্ট্রের অন্দরে, সেখানে উড়াল সেতু পাড়ি দিতে গিয়েও এলইডি বাতির আলোচ্ছ্বাস, মুছে দিতে পারে না ধর্ষিতা শিশুর ক্ষত-বিক্ষত শরীর।

আমরা কেন নৈতিক অধপতনে গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছি, মানসিক বিকৃত একটি সমাজ তৈরি হলো আমাদের? শুধুই কি বিদেশি গণমাধ্যম আর ইন্টারনেটের খোলা দরজা দিয়ে আসা ধুলোবালির জন্য আমাদের এই নৈতিক স্খলন? ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাকে দায়ী করতে চাই না। প্রথমত পারিবারিক অনুশাসন ভেঙে পড়েছে। সমাজে পারস্পরিক যোগাযোগে দেয়ালের পর দেয়াল তৈরি হচ্ছে। আর সেইসব কিছুর ওপরে রাজনৈতিক দূষণ। এই দূষণের জন্য আলাদা করে কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে দায়ী করলেও সঠিক বিচার হয় না। কোনও রাজনৈতিক দল শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চায় আছে। ক্ষমতাই যখন একমাত্র মাইলফলক, সেখানে মানুষ, তার অধিকার, নিরাপত্তা প্রাধান্য পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতায় কী করে বলি সভ্য আমি, সভ্যতায় বসবাস করছি।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে আবারও ১৩ জনকে ঠেলে পাঠালো বিএসএফ
মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে আবারও ১৩ জনকে ঠেলে পাঠালো বিএসএফ
নির্বাচনের ট্রেনে বাংলাদেশ 
নির্বাচনের ট্রেনে বাংলাদেশ 
ইসরায়েলি হামলায় ৬ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত, নিশ্চিত করলো ইরান
ইসরায়েলি হামলায় ৬ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত, নিশ্চিত করলো ইরান
ঢাকা মেডিক্যালের ফুটপাত থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার
ঢাকা মেডিক্যালের ফুটপাত থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার
সর্বশেষসর্বাধিক