X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেটে কেন এই অসহায় আত্মসমর্পণ!

রেজানুর রহমান
০৬ জুলাই ২০১৯, ১৭:০৪আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৯, ১৭:০৬

রেজানুর রহমান বলতে গেলে এটা তো এক ধরনের অসহায় আত্মসমর্পণ! কিন্তু কেন? বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কি এতটাই দুর্বল? পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে গিয়ে দলটি যে ধরনের পারফরমেন্স দেখালো, তাতে অনেক প্রশ্নই দেখা দিয়েছে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। তাই বলে এতটাই অনিশ্চয়তা? আগের দিন রাজা, পরের দিনই ফকির। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ খেলাটি ছিল এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে খেলাটি মর্যাদার লড়াই হয়ে উঠেছিল। কেন মর্যাদার লড়াই, তা বোধকরি বুঝিয়ে বলতে হবে না! কিন্তু মর্যাদার লড়াইয়ে এ কী করলো লাল-সবুজের বাংলাদেশ?
একে তো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ। তাও আবার ছুটির দিনে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেরা চারটি দলে ওঠার যোগ্যতা আগেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে ৫ম স্থানটি দখল করা যেতো। কত আশা, কত ভরসা। আর তাই ছুটির দিনে গোটা বাংলাদেশ মেতেছিল ক্রিকেট আনন্দে। আজ কিছু একটা হবেই হবে। শেষ ভালো যার সবটাই ভালো। এমন কতই না সমীকরণ কষেছিল দেশের ক্রিকেট পাগল কোটি কোটি মানুষ। আহারে! সব সমীকরণই ব্যর্থ হলো। আশার গুড়ে বালি পড়লো! যেখানে পাঁচে থাকার কথা বাংলাদেশের, সেখানে এখন সাতে। দক্ষিণ আফ্রিকা তার শেষ খেলায় জয় পেলে বাংলাদেশের অবস্থান গিয়ে দাঁড়াবে আটে। ১০-এর মধ্যে ৮ম স্থান। বাংলাদেশের ক্রিকেট কি এগুলো না পেছালো? এনিয়ে নিশ্চয়ই চুলচেরা অনেক বিশ্লেষণ হবে। ‘কী করিলে কী হইতো?’—এই নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনাও হবে। কিন্তু ক্রিকেট কি শেষ পর্যন্ত তার জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে?

এ কথা সত্য—বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ যে ধরনের অর্থাৎ যে মানের ক্রিকেট খেলেছে, তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ মোটেই সুখের হবে না। পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট লড়াইয়ের আগে খুব কি চাপে ছিল বাংলাদেশ? একইভাবে পাকিস্তান দলও তো নিশ্চয়ই চাপে ছিল? কিন্তু ওরা চাপ সহ্য করে খেলায় জয় পেলো। আর আমরা চাপ সহ্য করতে না পেরেই বোধকরি পাকিস্তানের সঙ্গে অসহায় আত্মসমর্পণ করলাম। পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা বলেই বাংলাদেশ দল লাল সবুজের নতুন জার্সি পরে মাঠে নেমেছিল। লাল আর সবুজ এই দুটি রঙের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের অনেক আবেগ জড়িত। আর সে কারণেই আমরা মায়া আর মমতা ছড়িয়ে বলি–‘লাল সবুজের বাংলাদেশ!’ বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ খেলায় বাংলাদেশের লড়াকু ক্রিকেটাররা যখন লাল আর সবুজের নতুন জার্সি পরে মাঠে নামে, তখন কত স্বপ্নই না উঁকি দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কোনও স্বপ্নই সফল হলো না! প্রশ্ন উঠতেই পারে, এর দায়ভার কার? আমাদের লড়াকু ক্রিকেটারদের? নাকি আমাদের ক্রিকেট কর্তা-ব্যক্তিদের?

ইতিহাস সব সময় বিজয়ীদের পক্ষে কথা বলে। বাংলাদেশ যদি কোনোভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে জিতে যেতো, তাহলে বোধকরি বাংলাদেশকে নিয়ে কোনও নেতিবাচক কথাই উঠতো না। প্রশংসায় ভেসে যেতো বাংলাদেশ! বাংলাদেশ দলের দুর্বল জায়গাগুলোর কথা হয়তো আর আলোচনাই হতো না! ৯টি খেলায় মাত্র ৩টিতে জয়। বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত না হলে হয়তো আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও জিতে জেতাম। এটা আমাদের ধারণা। সব ধারণাই সব সময় সত্যি হয় না। যেমন শক্তিধর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ যে মানের ক্রিকেট খেলেছে, সেই বাস্তবতায় তো ধারণা ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান টিকতেই পারবে না। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটা। বাংলাদেশই পাকিস্তানের কাছে টিকতে পারেনি।

সত্যি কি এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ টিকে থাকার মতো দল ছিল? এক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাইফ উদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান ও অন্য দুই একজন ছাড়া বাকিদের পারফরমেন্স কি সন্তোষজনক ছিল? তামিম ইকবালকে ভাবা হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভ! কিন্তু তিনি গোটা বিশ্বকাপে কি পারফরমেন্স দেখিয়েছেন, সেটা সবার জানা। ভারতের সঙ্গে খেলার দিন একটি সহজ ক্যাচ মিস করে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। আরেক ব্যাটিং স্তম্ভ সৌম্য সরকারই বা এবার বিশ্বকাপে কতটা অবদান রেখেছেন দলের জন্য? সাকিব আল হাসান আর মুস্তাফিজুর রহমান ও অন্য দুই একজন দলের জন্য কিছুটা অবদান রাখতে পেরেছেন বলেই না বাংলাদেশ দল একটা সময় পজিটিভ আলোচনার জন্ম দেয়। অথচ বিশ্বকাপে এবারের বাংলাদেশ দলটিকে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের সেরা দল। সেরা দলের এই নমুনা?

দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকের অনলাইনে ভার্সনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপ সাফল্য ও ব্যর্থতার ব্যাপারে দেশের ক্রিকেটভক্ত মানুষের অভিমত চাওয়া হয়েছে। ৬ জুলাই সকাল নয়টায় এই লেখাটি লেখার সময় ওই অভিমত কলামে দেখা যায়, তামিম ইকবালের পক্ষে ৭ হাজার ৭৩০টি ‘হ্যাঁ’ ভোট এবং ২৮ হাজার ৪৫৬টি  ‘না’ ভোট; সৌম সরকারের পক্ষে ৩ হাজার ৩১৯টি ‘হ্যাঁ’ ভোট এবং ৭ হাজার ৮৩০টি ‘না’ ভোট; মুশফিকুর রহীমের পক্ষে ৭ হাজার ২৫০টি ‘হ্যাঁ’ ভোট, ৪ হাজার ২২৪টি ‘না’ ভোট; লিটন দাসের পক্ষে ৭ হাজার ৩২৫টি ‘হ্যাঁ’ ভোট, ৩ হাজার ২৭৪টি ‘না’ ভোট; মাহমুদউল্লাহর পক্ষে ৬০০০ ‘হ্যাঁ’ ভোট, ৪৪১৫টি ‘না’ ভোট; মোসাদ্দেকের পক্ষে ৩ হাজার ২৮টি ‘হ্যাঁ’ ভোট, ৬ হাজার ৮১০টি ‘না’ ভোট; সাইফউদ্দিনের পক্ষে ৮ হাজার ৪৭০টি ‘হ্যাঁ’ ভোট, ১ হাজার ৮১৬টি ‘না’ ভোট; মাশরাফির পক্ষে ২ হাজার ৬৫০টি ‘হ্যাঁ’ ভোট,  ৮ হাজার ৬০২ ‘না’ ভোট এবং মুস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে ৯ হাজার ৭৪৩টি ‘হ্যাঁ’ ভোট, ১ হাজার ৪৮৪টি ‘না’ ভোট পড়েছে।

এটাই যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যদের ব্যাপারে আসল চিত্র তা বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ভক্তরা বর্তমানে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন এই অভিমত উদ্যোগ থেকে তার একটি ধারণা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের শেষ খেলাকে ঘিরে সত্যি সত্যি একটা প্রত্যাশার ডাল পালা বেড়ে উঠেছিল। মাশরাফি বিন মোর্তুজার এটাই শেষ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফির অবদানকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য হলেও বাংলাদেশ ম্যাচটিতে জেতার জন্য খেলবে। এটাই ছিল প্রেরণার উৎস। কিন্তু কার্যত তা কাজে আসেনি।

কথায় আছে–‘জিতলে রাজা। আর হারলে প্রজা।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যদি পাকিস্তানকে হারিয়ে সেরা পাঁচে জায়গা নিয়ে দেশে ফিরে আসতে পারতো তাহলেও রাজার মর্যাদা পেত। কিন্তু কেন তা পারলো না? আশা করি, এ ব্যাপারে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফিকে নিয়েও অনেক নেতিবাচক কথা হচ্ছে। তার মানে কি আমাদের ক্রিকেটে একজন মাশরাফি বিন মোর্তুজার অবদানের কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছি? বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যর্থতা দলটিকে চরম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। কাজেই ভক্তদের পক্ষ থেকে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে দলের মনোবল ভেঙে পড়ে। ‘ক্রিকেটে জিতলেও আছি, হারলেও আছি’—এই হোক সবার দৃষ্টিভঙ্গি। দল আজ জিতেনি। কাল নিশ্চয়ই জিতবে। এটাই হোক সমবেত দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জয় হোক।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ