X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজনৈতিক রঙ বদল

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১০ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩০আপডেট : ১০ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫৭

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আজ এই দল, কাল সেই দল। রাজনীতিতে এই দলবদল খুব স্বাভাবিক। এটি আদতে অভিনব কিছু নয়। কিন্তু কখনও কখনও অভিনব মনে হয়। রাজনীতি তো রহস্য বা রোমাঞ্চ তৈরি করার ক্ষেত্র নয়, রাজনীতি হলো জনসেবার ক্ষেত্র। এমন এক রোমাঞ্চকর বা অভিনব ঘটনার জন্ম দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী।
একসময়ের প্রথিতযশা আমলা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বেশ কিছুকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও ছিলেন। আওয়ামী লীগের মতো পুরনো ঐতিহ্যবাহী দলে বহু জনকে স্তম্ভিত করে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদের মতো প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে আসীন হয়ে সবাইকে এবং আওয়ামী রাজনীতিকেই চমকে দিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে ১৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন সাবেক আমলা ইনাম আহমেদ চৌধুরী। ওই নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক মনোনয়নের তালিকায় থাকলেও চূড়ান্ত মনোনয়নে বাদ পড়েন তিনি। মনোনয়ন না পেয়েই দল বদল করেন ইনাম চৌধুরী। 

ভোটের রাজনীতিতে ডিগবাজির ইতিহাস পুরনো। অতীতকালেও এমন অনেক ঘটনার নজির আমরা জানি। রাজনীতির ওপর থেকে সাধারণ নাগরিকদের এক বিরাট অংশের আস্থা এমনিতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে রাজার নীতিও আর নেই, নীতির রাজকীয়তাও উধাও। তারপরও যদি ইনাম আহমেদ চৌধুরীর মতো শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণির কেউ এমন করেন, তখন সমগ্র রাজনীতি নিয়ে নতুন করে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে বিপর্যয় তৈরি হয়। 

রাজনৈতিক দর্শন বা বিশ্বাসের প্রশ্নে ইনাম আহমেদ চৌধুরী কোথায় অবস্থান করেন, তার প্রমাণ বাজারে আছে। তার লেখা তিনটি বই–চিরঞ্জীব জিয়া, ছোটদের জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা–এখনও বিএনপি অফিসের সামনে বিক্রি হয়। 

তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখছি সামাজিকমাধ্যমে। অনেকেই বলছেন আওয়ামী লীগকে উপদেশ দেওয়ার মতো লোকের তো অভাব নেই। অনেক শিক্ষিত এবং ত্যাগী বুদ্ধিজীবী আছেন যারা দলের তীব্র খারাপ সময়েও দল ছেড়ে যাননি। ইনাম চৌধুরীকে উপদেষ্টা করে তাদের অপমান করা হয়েছে। আবার কেউ বলছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীতে সদ্য যুক্ত হওয়া সাবেক আমলা ইনাম আহমদ চৌধুরীর জীবদ্দশাতেই ভুলটি ভেঙেছে এবং তিনি তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই বঙ্গবন্ধুর দলে ফিরে এসেছেন।

সাধারণভাবে দেখলে বলতেই হবে ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে আওয়ামী লীগে নেওয়া এক অনর্থক কাণ্ড। অবশ্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ভালো বুঝবেন তিনি কেন তাকে দলে নিয়েছেন। 

বাঙালির সমাজে দল কবে এলো জানা নেই, তবে তার সৃষ্টিকাল থেকেই দলাদলি ছিল। নৈতিকতা বলে দলে থাকতে হলে দলের প্রতি অনুগত থাকতে হবে। ইনাম আহমেদ চৌধুরীর দীর্ঘ সময়ের আনুগত্য ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, বিএনপি এবং তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের প্রতি। একজন বুদ্ধিজীবী মানুষ কি পারেন রাতারাতি আদর্শ বদলে ফেলতে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ মেনে নিতে?

গত বছর ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সভা সমাবেশে, সেমিনারে, টেলিভিশন টকশোতে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপির পক্ষে কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিষোদ্গার করেছেন। বিত্তশালী অভিজাত সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে তার ক্ষমতা লাভের বাসনা ছিল মনের ভেতর। কিন্তু মনোনয়ন পাননি দল থেকে। বিত্তবানেরা যেভাবে অস্থির হয়ে ওঠেন ক্ষমতা লাভের জন্য, সেই অস্থিরতা থেকেই রাতারাতি বদলে ফেললেন দল। 

আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যার সাংগঠনিক ভিত্তি তৃণমূল পর্যায়েও শক্তিশালী। একটা দলে নানান ধরনের বা শ্রেণির মানুষ থাকলেও বেশি আছে লোভহীন, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব না করা অসংখ্য ত্যাগী কর্মী। এই দল কয়েকটি ঐতিহ্যপূর্ণ পরিবার দিয়ে গড়া দল নয়। আজ হঠাৎ করে এমন অভিজাতদের সমাবেশ ভয় ধরায় দলের ভেতর। 

স্বার্থের সংঘাত, মতের অমিল, ঈর্ষাকাতরতা, আমিত্ববোধের লড়াই সব দলের ভেতর থাকে। নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগেও আছে। এই দলাদলিতে মতাদর্শের ভিন্নতা কোনও কালেই তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়নি। সারকথা হলো ক্ষমতালাভের লড়াই। আপাতদৃষ্টিতে যা মতাদর্শ বলে মনে হয়, তা নিছক ছল। অগুনতি দল গড়ে ওঠে দলপতিদের স্বার্থের সংঘাত বা ক্ষমতা অর্জনের লড়াইয়ের কারণে। দল ভাঙা, নতুন দল গড়া, অন্য দলের অনুগত হওয়ার ট্র্যাডিশন এদেশে আছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরপর তিনবার শাসনক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দল হিসেবে এখন আরও নতুন ভাবনা ভাবতে পারে। ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে উপদেষ্টার পদে নেওয়া আওয়ামী লীগকে কী এনে দেবে, দেখার অপেক্ষায়।  

রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে কথা উঠলে বলতেই হয়, রাজনীতিতে আদর্শের উপস্থিতি খুবই সীমিত, যেখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক লাভালাভের বিষয় থাকবেই। বাংলাদেশে সামরিক শাসকরা ডিগবাজির বীজ বপন করেছিলেন। এই ডিগবাজিতে একজন রাজনীতিক ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়। দল কী পায়, সেটা বিবেচিত হয় খুব কম। আমাদের রাজনৈতিক দলের কাছে মূল ব্যাপার প্রার্থীর ভোটে জিততে পারা। সেই বিবেচনায় ইনাম আহমেদ চৌধুরী কি ‘উইনেবল চয়েস’। সময়ই বলবে। 

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ