X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

কার্বন ট্যাক্সের মাধ্যমে পৃথিবীর সুরক্ষা

জিশান হাসান
২৭ আগস্ট ২০১৯, ১৪:১২আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০১৯, ১৪:১৪

জিশান হাসান প্রতিদিনই সংবাদের মাধ্যমে আমরা নতুন করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারি। বিগত দশকে রেকর্ড পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে চলছে, এমন খবরের পাশাপাশি আমরা প্রায়ই মারাত্মক ঝড়, দাবদাহ ও বরফ গলতে থাকারও খবর পাই।
তারপরও আমরা কয়লা, তেল কিংবা গ্যাস পুড়িয়ে চলছি। এতে করে প্রচুর কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হচ্ছে, যা আরও উষ্ণ করে তুলছে পৃথিবীকে। কখনও কখনও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা প্রচণ্ড প্রকট হয়ে পড়ে। তবে এই পরিবর্তন ঠেকানোর পথ খুবই সহজ। শুধু বৈশ্বিক কার্বন ট্যাক্স নীতি বাস্তবায়নেই এই উষ্ণায়ন কমানো সম্ভব।
অর্থনীতিবিদরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, মুক্তবাজারে জীবাশ্ম জ্বালানির দাম সঠিকভাবে নির্ধারণে ব্যর্থ হওয়াটি বৈশ্বিক উষ্ণতায় প্রভাব ফেলছে।  

কয়লা, তেল এবং গ্যাসের প্রাচুর্য থাকায় তাদের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ হয় আসলে সেগুলোর উত্তোলনের খরচের ওপর ভিত্তি করে। সাধারণত সেটা কম দামই হয়। বিশেষ করে কয়লা, খনি থেকে যা ওঠানো সস্তা। 

দুর্ভাগ্যবশত কম দামের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রকৃত মূল্য সমাজে প্রতিফলিত হয় না। বিজ্ঞানীরা যেমনটা ধারণা করছেন, সে অনুযায়ী যদি আগামী শতকে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, তাহলে বিশ্বের বেশিরভাগ জনসংখ্যাই খরা, দুর্ভিক্ষ এবং খাবার ও পানি নিয়ে যুদ্ধের মধ্যে পড়বে। সিরিয়ায় ইতোমধ্যে এসব লক্ষণ দেখা গেছে।

জলবায়ুর এই চরম পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হবে অবর্ণনীয়। এই সংকটের যৌক্তিক ও অর্থনৈতিক সমাধান হতে পারে তেল, গ্যাস ও কয়লা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আমদানি কিংবা বিক্রির ওপর জীবাশ্ম জ্বালানি ট্যাক্স বসানো। এতে করে কয়লা, তেল এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবহার কমে গেছে। ফলে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ কমবে এবং ধীর হবে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রক্রিয়াও।

তবে বিভিন্ন দেশের সরকার কার্বন ট্যাক্সকে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা হিসেবে দেখে, যেখানে জনমনে অসন্তোষ ও কর্মসংস্থানের অভাব তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। ফ্রান্সে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ কার্বন ট্যাক্স বসাতে চাইলে নিম্ন আয়ের শ্রমিকরা ইয়েলো ভেস্ট নামে একটি আন্দোলন শুরু করে। কারণ এতে করে যোগাযোগ খরচ এবং রান্নার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছিল, যা তাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। 

তবে এরও একটি সমাধান আছে। প্রস্তাবিক কার্বন ট্যাক্স নীতির একটি সংস্কার করলে গরিবের ওপর তার প্রভাব কমতে পারে। এর নাম দেওয়া হয়েছে কার্বন লভ্যাংশ। সম্প্রতি ‘দ্য কেস ফর কার্বন ডিভাইডেন্ডস’ বইটিতে এর দারুণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ জেমস বোয়েস। এই আইনের আওতায় কার্বন ট্যাক্স থেকে প্রাপ্ত অর্থ ট্যাক্স দেওয়া জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া। যদি কার্বন ট্যাক্সের সব অর্থ এভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তবে অর্থনৈতিকভাবে এই বোঝা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে, আর এতে কর্মসংস্থানে কোনও প্রভাব পড়বে না। 

যেমন ধরা যাক একটি দেশের জনসংখ্যা ১০০ জন। তাদের ৫ জন ধনী এবং ৯৫ জন স্বল্প আয়ের মানুষ। ধনীরা কার্বন নিঃসরণকারী পণ্য যেমন গাড়ি কিংবা বিমানের টিকিট কিনে থাকেন। তারা সবার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। ফলে তারা প্রত্যেকে হয়তো এক হাজার ডলার কার্বন ট্যাক্স দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের জনগণ দেয় ১০ ডলার। 

মোট হিসাবে দাঁড়ায় (পাঁচজন ধনী ব্যক্তি দিচ্ছে এক হাজার ডলার করে)+ (৯৫ জন স্বল্প আয়ের মানুষ দিচ্ছে ১০ ডলার করে)= ৫ হাজার ৯৫০ ডলার। 

এখন যারা ট্যাক্স দেন তারা প্রত্যেকেই এখান থেকে সমপরিমাণ অর্থ ফেরত পাবেন। ফলে ৫৯৫০ থেকে প্রত্যেকে পাবেন ৫৯.৫০ মার্কিন ডলার। ফলে ধনীদের ব্যয় হবে ৯৪০.৫০ ডলার। এতে করে তারা কার্বণ নিঃসরণ কম করার চেষ্টা করবেন। অন্যদিকে স্বল্প আয়ের মানুষরা ১০ ডলার ট্যাক্স দিয়ে ফেরত পাবেন ৪৯.৫০ ডলার। এতে করে কার্বন ট্যাক্সের কারণে বেড়ে যাওয়া গাড়ি ভাড়া কিংবা গ্যাসের দাম দিতে সুবিধা হবে তাদের। একইসঙ্গে সরকার রাজনৈতিকভাবে যে রোষের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছিল, সেটাও থাকবে না। মোট ট্যাক্সের ক্ষেত্রে কোনও বোঝাও তৈরি করে না। কার্বন ট্যাক্সের কারণে জ্বালানি ব্যবহার ব্যয়সাপেক্ষ হয় এবং সবাই নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকতে থাকে। কার্বন ট্যাক্স যত বেশি হবে, তত দ্রুতই সবাই এই উপায়ের দিকে ছুটতে থাকবে। 

কার্বন লভ্যাংশ নীতিটি বয়েস আবিষ্কার করেননি; তিনি শুধু এই নিয়ে বড় একটি বই লিখেছেন। এই নীতিটি মূলত সিটিজেন্স ক্লাইমেট লবি গ্রুপ আবিষ্কার করে। জনগণ ও রাজনীতিবিদদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত করা এবং কার্বন ট্যাক্স ও লভ্যাংশ নীতির মাধ্যমে কীভাবে এই পরিবর্তন মোকাবিলা করা যায়, সেটা সম্পর্কে সবাইকে জানানোর চেষ্টা করে থাকে এই সংগঠনটি।

২০১৯ সালের শুরুর দিকে কানাডায় কার্বন ট্যাক্স ও লভ্যাংশ নীতি প্রয়োগ করা হয়েছিল। সেখানকার প্রাথমিক এই সাফল্যের পর সব দেশই তা অনুসরণ করতে পারে। এতে করে জলবায়ু পরিবর্তন অনেকাংশেই মোকাবিলা করা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ অনেক ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বসবাস করছে। তাই আশা করছি বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন, বাংলাদেশিরা এই কার্বন ট্যাক্স ও লভ্যাংশের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বন্ধ অভিযানে যোগ দেবে।

লেখক: পরিচালক, টুএ মিডিয়া লিমিটেড

/এমএইচ/এমএমজে/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ