X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তানের জন্য সূর্যাস্ত আইন

তুষার আবদুল্লাহ
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:৫৫আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:৫৭

তুষার আবদুল্লাহ দাবি তুলছি সূর্যাস্ত আইনের। লজ্জা এবং ব্যর্থতা থেকে এই আইনের দাবি তুলতে হচ্ছে। অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থতা স্বীকার না করে উপায় নেই। আমরা সারাদেশে দেখতে পাচ্ছি প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযান আমাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে। কেন এই অভিযান? সন্তানরা স্কুল-কলেজের পোশাক পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে যত্রতত্র। স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ের বাইরেও তাদের উদ্যানসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে। রাত দশটার পরেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে চায়ের দোকানের আড্ডাতে। অন্য বিনোদন কেন্দ্রেও মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের সরব উপস্থিতি। তাদের পোশাকে-চুলে উচ্ছৃঙ্খলতা। শোভন আচরণ অনুপস্থিত। এই সন্তানেরা সেলুলার ফোন-ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা রকম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তৈরি করছে গ্যাং গোষ্ঠী। আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকে। নিজেদের মধ্যে কলহে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। খুব কাছের বন্ধুকে হত্যা করতে দ্বিধা, ভয়, অপরাধবোধ কাজ করছে না তাদের। আমাদের এই সন্তানদের বয়স বারো থেকে আঠারোর মধ্যে। এর ওপরের বয়সীও আছে কিছু। তবে বারো থেকে আঠারো ভয়ঙ্কর।

সন্তানদের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে যে অভিযান চলছে, তা নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। তাদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারো চুলের ছাঁট ঠিক করে দিতে পারে না। নাপিতের দোকানে নিয়ে গিয়ে চুল ছাঁটতে বাধ্য করতে পারে না। বড় চুল,নাটক সিনেমার নায়কের মতো চুল থাকলেই কাউকে অপরাধী ভাবা ঠিক নয়। সুবোধ চুল নিয়েও কেউ অপরাধ করতে পারে। কথা মিথ্যে নয়। যারা এই যুক্তি তুলছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, তাদের ঘনিষ্ঠ বসবাস হয়তো অন্তর্জাল সমাজেই। পাড়া-মহল্লায় কতটা সময় দেন, তা নিয়ে সংশয় আছে। সুবোধ চুলের ছাঁট আছে যার, সে মাদকাসক্ত যেমন হতে পারে, তেমনি ভয়ঙ্কর কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এনিয়ে তর্কের সুযোগ নেই। কিন্তু মহল্লা বা পাড়াতে যে ছেলেটির চুলের ছাঁট সিনেমার নায়কের মতো, নানা রঙে রঙিন, তাকে দেখে প্রাথমিকভাবেই সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়। এবং খেয়াল করে দেখুন, ওই কিশোরের চলাফেরার মধ্যেও সঙ্গতভাবেই উগ্রতা ফুটে ওঠে। মহল্লার এলাকায় এই প্রকারের কিশোরদের সমন্বয়ে যে গোষ্ঠীটি তৈরি হয়, সেই গোষ্ঠী মহল্লার মধ্যে ঘটতে থাকা সব প্রকার অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। অনেকের আপত্তি আছে—জেলা পর্যায়ের কর্তারা কেন রাতের বেলা বিনোদন কেন্দ্র বা আড্ডার জায়গায় গিয়ে হানা দেবেন? আপনি আমি আমাদের কিশোর বেলায় কি এমন করে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়েছি? আপনি দিয়ে থাকলে সেটি আপনার পরিবারের অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ আমাদের সেই সুযোগ ছিল না। তাই বলে বলছি না, আমরা স্কুল পালিয়ে ইউনিফর্ম পাল্টে সিনেমা দেখতে যাইনি? খেলতে যাইনি? পার্কে ঘুরতে যাইনি? অবশ্যই গেছি। এই যাওয়ার দলের খুব কম অংশই অপরাধমূলক কাজ বা ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম। বাকিরা ঠিক স্কুল-কলেজ সময়ের মধ্যে ফিরে আসতাম। এই ঘটনা সপ্তাহে বা মাসে বড়জোর এক-দুই দিন ঘটতো। ছেলে-মেয়ে উভয়ের বেলাতেই ঘটতো ব্যাপারটা। যারা রোজ এই কাণ্ড ঘটাতো, তারা সংখ্যায় কোনও স্কুলেই এক-দুইজনের বেশি ছিল না। তাদের পরের হাল সম্পর্কে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল। অনেক বন্ধু অভিভাবক বিষয়গুলোর সমালোচনা করতে গিয়ে রবীন্দ্র, নজরুলের উদাহরণ টেনেছেন। আমার আপনার সন্তানরা সেই প্রকৃতি, ঈশ্বর প্রদত্ত মেধা নিয়ে এলে, তারা খুন-মাদকে-ধর্ষণে জড়িয়ে পড়তো না।

মনে পড়ে? স্কুল-কলেজ ফেরত আমরা মাঠে খেলতে গেলে বা বন্ধুদের আড্ডাতে গেলেও মাগরিবের আজান কানে ভেসে আসা মাত্র বাড়িমুখো হতাম। সন্ধ্যের পর কিশোর বয়সীদের রাজধানীর অলিগলিতে তো নয়ই, জেলা-উপজেলার পাড়া মহল্লাতেও খুঁজে পাওয়া যেতো না। নিজে আমি কৈশোর কাটিয়েছি কলাবাগান, রাজাবাজার, শুক্রাবাদ, গ্রিন স্টাফ কোয়ার্টার এবং গ্রাম বা বস্তি এলাকা বলে একদা শহুরে মানুষের কাছে পরিচিত আড্ডায়। কই, সন্ধ্যের পর তো পাড়া মহল্লা মুখরিত হয়ে উঠতো উচ্চস্বরে পাঠের ধ্বনিতে। সেই সময় মহল্লার কোনও সন্তান অস্বাভাবিক চুল রাখলে, অযথা বাড়ির বাইরে বের হলে, সবাই তাকে নিজের সন্তান মনে করে শাসন করতে পারতেন। আর এখন আমরা নিজের সন্তানদের শাসন করতে পারছি না। ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারছি না, যে সময়টায় তাদের ঘরে থাকা উচিত। এমন নয় যে শুধু নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের ছেলে-মেয়েরা শৃঙ্খলার বাইরে। বরাবর যারা শৃঙ্খলা ও শিষ্টাচারের মধ্যে থাকতো, সেই মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানদেরও এখন ঘরে রাখা দায়। তাহলে সমাধান কী? আপাতত আমরা আমাদের সন্তানরা সন্ধ্যার পর অপ্রয়োজনে বাইরে থাকছে কিনা, সেদিকে নজর রাখি। তাদের পোশাক, চুলের ছাঁট, ব্যবহৃত সেলুলার ফোনের মাধ্যমে আচরণে উগ্রতার প্রকাশ পায় কিনা, খেয়াল রাখি। তাহলে দেখবেন কিশোর গ্যাং, অপরাধ কত দ্রুত কমে আসে। আরেকটি কথা বলে রাখা দরকার, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করিয়ে দিয়েই ভাববেন না তাদের চালচলনে একটু ইউরোপ-আমেরিকার কায়দা আসুক। আপনার সন্তান যে মাধ্যমেই পড়ুক, তার কায়দা দেশীয় সংস্কৃতির মাপেই হতে হবে। যদি এই মাপ ঠিক রাখি, তাহলে আমাদের সন্তানদের বাগে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানের প্রয়োজন পড়বে না। সবশেষ কথা—আপনি সুন্দর হন,আপনার সন্তানও নিশ্চয়ই সুন্দর হবে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেসিস নির্বাচনের ৩৩ প্রার্থী
বেসিস নির্বাচনের ৩৩ প্রার্থী
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
উপজেলা নির্বাচনদলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ