X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘হীরক রাজার দেশে’

প্রভাষ আমিন
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:৪৯আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:১৭

প্রভাষ আমিন গত এক যুগে বাংলাদেশে যুগান্তরকারী পরিবর্তন ঘটেছে বলা যেতে পারে। এই সময়ে বাংলাদেশে অভাবিত উন্নতি হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক স্লোগান নয়, উন্নয়নের বিবেচনায় বাংলাদেশ সত্যিই বিশ্বে রোল মডেল। বিশ্বব্যাংকের প্রধান বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে সে দেশের মানুষের প্রত্যাশার লিমিট হলো বাংলাদেশ, তিনি যেন পাকিস্তানকে বাংলাদেশ বানিয়ে দেন। বেশকিছু সামাজিক সূচকে ভারতের চেয়েও এগিয়ে  বাংলাদেশ। পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের আগেই দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ মাথা নত করেনি। বরং নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের থোতা মুখ ভোঁতা করে দিয়েছে বাংলাদেশ।
অর্থ ছাড়ের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ আনলেও বিশ্বব্যাংক তা প্রমাণ করতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সাময়িকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলেও তা প্রমাণিত না হওয়ায় এবং নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শুরু করায় পদ্মাসেতুকে ঘিরেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে।কমেছে দারিদ্র্যের হার।

বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ, দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে। অনুন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।

এই যুগকে ‘যুগবদলকারী যুগ’ বলার কারণ, সত্তর ও আশির দশকের বাংলাদেশও আমরা দেখেছি। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর চেষ্টা থামিয়ে দেয় ষড়যন্ত্রকারীদের গুলি। এরপর ২১ বছর দেশে বিভিন্নভাবে চলে সামরিক শাসন আর দুঃশাসন। একসময় বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল বন্যা, ঝড়, সাইক্লোনের দেশ আর ভিক্ষার থালা হাতে ঘুরে বেড়ানো দেশ হিসেবে। একসময় মনে হতো, কিসিঞ্জার যে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন, তাই বুঝি সত্যি হতে যাচ্ছে।

কিন্তু সেই তলাবিহীন ঝুড়ি এখন উপচেপড়া। বাংলাদেশ এখন আর নেতিবাচক শিরোনাম নয়। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করছেন, তার কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি যেন উন্নয়নের বাই প্রোডাক্ট। উন্নয়নের সঙ্গে বাড়ছে বৈষম্যও। বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে হতদরিদ্র্যের সংখ্যাও।

দুর্নীতি সবসময়ই ছিল, আছে, থাকবেও। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশেই কোনও না কোনও মানের দুর্নীতি আছে। দুর্নীতিমুক্ত দেশ কল্পনায় পাওয়া সম্ভব, বাস্তবে নয়। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে দুর্নীতির এমন সব গল্প শোনা যায়, যা কল্পনাকেও হার মানায়। আগে দুর্নীতি নিয়ে নানা গল্প, কৌতুক শোনা যেতো। এখন সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। বাস্তব উদাহরণ কৌতুকের চেয়েও উদ্ভট। যেমন, সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) একটি দৈনিকের শিরোনাম ‘নিরাপদ পানির জন্য উগান্ডায় প্রশিক্ষণ’। সারাজীবন তুচ্ছ কিছু হলে  বাংলাদেশের মানুষ উগান্ডার উদাহরণ দিতো। আর এখন কিনা নিরাপদ পানি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বাংলাদেশের মানুষকে উগান্ডায় যেতে হচ্ছে। তাও এক দু’জন নয়, দফায় দফায় ৪১ জন গেছেন।

কিন্তু প্রশ্নটা হলো উগান্ডা আমাদের কী শেখাবে? উগান্ডার বেশির ভাগ মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। সেখানে চট্টগ্রাম ওয়াসা উগান্ডা থেকে কী শিখবে?

এই সফরে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি টাকা। আমরা ধরে নিতে পারি, উন্নত পানির আশায় উগান্ডায় ‘আনন্দ ভ্রমণ’-এ এই ৫ কোটি আসলে জলে গেছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ প্রশিক্ষণ নিতে উগান্ডা গেছে, এটা উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে বেমানান।

ক’দিন আগে পত্রিকায় দেখেছি, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে পুকুর ও দীঘি খনন-পুনঃখনন করতে চায় সরকার। এজন্য নেওয়া হয়েছে ৪২ মাস মেয়াদি একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের খনন কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে যাবেন ১৬ জন। এতে খরচ হবে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। নদীমাতৃক বাংলাদেশে খাল-বিল-নদী-নালা তো আছেই; দেশের বিভিন্ন স্থানে আছে অসংখ্য বিশাল বিশাল দীঘি। ৩/৪ শ’ বছর আগে জমিদাররা মানুষের পানীয় জলের সংকট দূর করতে এসব দিঘি খনন করেছেন। কুমিল্লাকে বলা হয়, ব্যাংক আর ট্যাংকের শহর। সেখানে অসংখ্য দিঘি আছে, একটি দিঘি আছে এত বড়, নাম যার ধর্মসাগর। ক’দিন আগে বরিশালে দেখে এলাম দুর্গাসাগর। সেই বাংলাদেশের মানুষকে যদি পুকুর কাটা শিখতে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে যেতে হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, তারা আসলে পুকুর খনন শিখতে নয়, পুকুরচুরি শিখতে বিদেশে গিয়েছিলেন।

পুকুরচুরির কৌতুকটা তো জানেন আশা করি। এক এলাকায় মানুষের পানীয় জলের সংকটের কথা বলে একটি পুকুর খননের প্রকল্প নেওয়া হলো। কিন্তু পুকুর খনন না করেই পুরো টাকাটা মেরে দেওয়া হলো। ক’দিন পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসবেন। এখন সংশ্লিষ্টদের টনক নড়লো, পুকুরের কী হবে? এই সময়ে তো খননও করা সম্ভব নয়।

দ্রুত তারা আরেকটি প্রকল্প নিলেন। এই পুকুরের কারণে এলাকার অনেক সমস্যা হচ্ছে। মশার কারখানা এই পুকুর। পরিবেশও দুষিত হচ্ছে। তাই এই পুকুর ভরাট করা হোক। দ্রুত প্রকল্প পাস হলো, পুকুর ভরাট হলো। বুদ্ধি থাকলে আসলে সব হয়। পুকুর খনন না করেই দুই দফায় টাকা মেরে দেওয়া হলো। এটাই হলো পুকুরচুরি।

তবে এখন বাংলাদেশে আর পুকুরচুরি হয় না। সাগরচুরি হয়, মহাসাগরচুরি হয়।

সম্প্রতি  ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে পরিবেশ অধিদফতর দেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২২১ কোটি টাকা খরচ করেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঋণের অর্থে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ নামের এ প্রকল্পের (কেইস) মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর, পরামর্শক ফি, গাড়ি কেনা ও ভবন নির্মাণে। তবে এই সময়ে দেশে বায়ুর মান আরও খারাপ হয়েছে। এই প্রকল্পে ১০ বছরে ২৯৬ জন কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণে গেছেন। এমনকী একজন কর্মকর্তা ১০ বারও বিদেশে গেছেন। একে পুকুরচুরি বললে পুরোটা বোঝা যায় না। জনগণের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ফিরিস্তি দিতে গেলে এই লেখায় কুলাবে না। সব প্রকল্প খুঁজলেই এমন কিছু না কিছু পাওয়া যাবে।

ক’দিন আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কেনা নিয়ে অনেক হইচই হয়েছে। এখন আসছে পর্দা। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৭ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছে। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য সাড়ে ৫ হাজার টাকা দামের বই কেনা হয়েছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে। এই লেখা লিখবো বলে, ক’দিন ধরে এ ধরনের উদ্ভট দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করছিলাম। পরে দেখি, আমার আর্কাইভ উপচে পড়ার দশা। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছি। উদাহরণ দিয়ে দুর্নীতির মাত্রা পরিমাপ করা যাবে না। দুর্নীতির বিষ এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। যেই মন্ত্রণালয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলি, মনে হয় সেই মন্ত্রণালয়েই দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক আফজলের দুর্নীতি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু অধিদফতরের লোকজন বলেন, আফজল  হয়তো কোনও কারণে ধরা খেয়ে গেছেন। কিন্তু এমন অনেক ‘আফজল’ আছেন অধিদফতরে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে কেনাকাটার নামে দুর্নীতিটা হয় সবচেয়ে বেশি। তিন কোটি টাকার যন্ত্র ২৫ কোটি টাকায় কেনার গল্প স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়ালও জানে। শুধু বেশি দাম দিয়ে কেনা নয়, অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনেও টাকা লোপাট করা হয়। যন্ত্র কেনা হয়, কিন্তু কখনও খোলাও হয় না। এমন উদাহরণও ভূরি ভূরি।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকার অস্বীকার করে। যেটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না, সেটার ক্ষেত্রে বলা হয়, দুর্নীতি হতে পারে। কিন্তু বর্তমান সরকার কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কিন্তু সে কথায় আর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের আমলে বারবার শেয়ারবাজার লুটের কি বিচার হয়েছে? সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের কি বিচার হয়েছে? বরং এখন ঋণখেলাপিদের আবার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা মেরে দেওয়া হলমার্ক গ্রুপকে আবার ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, দেশে উন্নতি নয় বরং দুর্নীতির মহোউৎসব চলছে। বিএনপির নেতাদের এই অভিযোগের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যারা দুর্নীতিতে দেশকে পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের লজ্জিত করেছিলেন, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার সেই বিএনপির নেই।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘বালিশ কিংবা পর্দা দুর্নীতি ঘটেছে কিছু কর্মকর্তার মাধ্যমে। এখানে কোনও রাজনৈতিক বা জনপ্রতিনিধির সংশ্লেষ নাই। এ দুটি দুর্নীতির ব্যাপারেই সরকার খুবই কঠোর। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন।’

আমি তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। বিএনপির হয়তো দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই। কিন্তু আমরা যারা আমজনতা, আমাদের ট্যাক্সের টাকা যদি কেউ দুর্নীতি করে লোপাট করে দেয়; আমাদের প্রশ্ন তোলার অধিকার আশা করি আছে।

শুধু প্রশ্ন তোলা নয়, আমরা সে প্রশ্নের জবাবও চাই। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘এ ধরনের ছিঁচকে কাজগুলো যারা করে, তারা নিশ্চয়ই এমপি বা মন্ত্রী নন। এটা হওয়া ভবনের মতো লুটপাটের বিষয় নয়। দেশটাকে লুটপাট করে খেয়েছে হওয়া ভবন। হাওয়া ভবন ছিল তখন খাওয়া ভবন। আমাদের সময়ে লুটপাটের জন্য ক্ষমতার কোনও বিকল্প কেন্দ্র তৈরি হয়নি। এটা আমি দাবির সঙ্গে বলতে পারি। বালিশ আর পর্দার সঙ্গে হাওয়া ভবনকে মেলানো যাবে না।’

আমি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও একমত। আমরা বালিশ আর পর্দাকে হাওয়া ভবনের সঙ্গে মেলাচ্ছি না। এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা একটি দলের সঙ্গে মেলানো উচিতও নয়। রাজনীতিবিদ হোক আর আমলা, আমরা সব দুর্নীতিবাজের বিচার চাই। মুখে ‘জিরো টলারেন্স’ বললে হবে না। কাজে প্রয়োগ করতে হবে।

দুর্নীতিবাজদের ধরতে হবে। নইলে শেখ হাসিনার উন্নয়নের অনেক অর্জন দুর্নীতির কারণে বিসর্জন হয়ে যাবে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ