X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তচিন্তা ও খুনের জায়েজিকরণ

আমীন আল রশীদ
০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:২১আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:২৪

আমীন আল রশীদ কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ব্লগারদের বিরুদ্ধে যে কিলিং মিশন শুরু করেছিল উগ্রবাদীরা, সেই হত্যাকাণ্ডকে তারা ‘নাস্তিকের বিরুদ্ধে জিহাদ’ বলে জায়েজের চেষ্টা করেছিল। ২০১৩ সালে রাজীবকে খুন করার মধ্য দিয়ে যে ব্লগার হত্যা শুরু হয়, তারপর একে একে খুন হয়েছেন লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ ও নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন। যেদিন দীপনকে রাজধানীর আজিজ মার্কেটে ঢুকে খুন করা হয়, সেদিনই লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালানো হয় লেখক ও এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুর ওপর। শুদ্ধস্বর অভিজিৎ রায়ের বইয়ের অন্যতম প্রকাশক।
উগ্রবাদীদের হত্যা জায়েজের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হাতে কেউ খুন হওয়ার পরে তাকে ‘শিবিরকর্মী’ বলে চালিয়ে দেওয়ার কৌশলের মধ্যে খুব বেশি তফাৎ নেই। অর্থাৎ বিষয়টা এরকম, কেউ নাস্তিক হলেই কিংবা শিবিরকর্মী হলেই তাকে খুন করা বৈধ এবং এই সমাজ রাষ্ট্রে ভিন্নমত পোষণকারীর বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। সবশেষ সেই অধিকারবঞ্চিতের তালিকায় যুক্ত ব্যক্তিটির নাম আবরার ফাহাদ, যিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী।

গণমাধ্যমের খবর বলছে, আবরার ফাহাদ রোববার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। মধ্যরাতে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। এর আগের দিন শনিবার বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটে তিনি ফেসবুকে সবশেষ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে তিনি নিজের ভাবনা তুলে ধরেন। আবরার ওই স্ট্যাটাসে যা লিখেছেন, সেখানে কয়েকটা লাইন এরকম : ‘৪৭-এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনও সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।’

পুলিশ, সহপাঠী ও স্বজনদের বরাতে জানা যাচ্ছে, মূলত এই স্ট্যাটাসের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে রবিবার আবরারকে ধরে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তারপর তার মোবাইল ফোন চেক করা হয়। এরপর তাকে শিবিরকর্মী সন্দেহে বেধড়ক পেটানো হয়। যাতে মৃত্যু হয় আবরারের।

প্রশ্ন হলো আবরার ফেসবুকে যা লিখেছিলেন সেখানে কি রাষ্ট্রদ্রোহ ছিল, নাকি দেশপ্রেম? যদি তার বক্তব্যে ভারতবিরোধিতার গন্ধও থাকে, তাহলে বলতে হবে সেই বিরোধিতাটুকুর জন্ম দেশপ্রেম থেকেই এবং এটুকু বলার অধিকার যেকোনও নাগরিকের রয়েছে। বরং অনেকেই ফেসবুকে বা বিভিন্ন লেখায় এর চেয়ে অনেক কড়া ভাষা ব্যবহার করেন। কিন্তু আবরারকেই প্রাণ দিতে হলো। কারণ তাকে মেরে ফেলাটা ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য সহজ ছিল। এ জাতীয় খুনের পেছনে শুধু যে খুন হওয়া ব্যক্তির কোনও কাজই প্রধান তা নয়, বরং এখানে খুনিদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন এবং তারা যে ‘আনচ্যালেঞ্জড’, এটা বোঝানোও একটা উদ্দেশ্য থাকে। আবার আবরারের মুখে কিছুটা দাড়ি ছিল বলে তাকে সহজেই ‘শিবিরকর্মী’ বলে চালিয়ে দেওয়াটাও যেহেতু সহজ ছিল, ফলে খুনিরা সেই কৌশলটিই নিয়েছিল। কিন্তু পরে যখন কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকরা জানালেন, আবরারের পরিবারের লোকেরা আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং শিবিরের সঙ্গে আবরারের কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না, তখন সেই অপপ্রচারটি আর হালে পানি পায়নি। কিন্তু ধরা যাক আবরার সত্যি সত্যিই শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তারপরও কি ছাত্রলীগকে এই হত্যার অনুমতি দেওয়া আছে? একসময় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিবির যা করতো, যেভাবে প্রতিপক্ষের রগ কেটে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতো, সেই একই কাজ যদি বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে গড়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও করেন, তাহলে শিবিরের সঙ্গে তাদের আর কী পার্থক্য থাকে?

তবে বুয়েটের এই ঘটনায় দুটি বিষয় উল্লেখযোগ্য—১. ঘটনার পর দ্রুতগতিতে পুলিশ অপরাধীদের আটক করেছে, এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে সিসি ক্যামেরা এবং ২. সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভিন্নমতের কারণে একজন মানুষকে মেরে ফেলার অধিকার কারও নেই।’ দেশের সবচেয়ে বড় এবং ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার মুখ থেকে এরকম বক্তব্যই জাতি আশা করে।

আবরারের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ফেসবুকে যা লিখেছেন সেখান থেকে কয়েকটা লাইন উদ্ধৃত করা যায়—‘আওয়ামী লীগ যেকোনও বিরুদ্ধমতকে শিবির নামে চালিয়ে তার ওপর হত্যা-নির্যাতন করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করছে দেশে প্রচুর জামায়াত-শিবির রয়েছে।…আর শিবির-স্টিগমার যেরকম ব্যবহার-অপব্যবহার করা হচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে তারা এও প্রমাণ করে ছাড়বে, তাদের তুলনায় শিবির অপেক্ষাকৃত পবিত্র দল।’

তকমার রাজনীতি আমাদের দেশে নতুন কোনও প্রবণতা নয়। অর্থাৎ আমার বক্তব্যের সঙ্গে আপনার বক্তব্য বা ভাবনা না মিললেই আমি আপনার শত্রু। অথচ যেকোনও বিষয়ে দু’জন মানুষের ভাবনা দুরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং এই ভিন্নমতকেই বলা হয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি ও সৌন্দর্য। কিন্তু যেহেতু আমরা মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও অন্তরে এটা লালন করি না, ফলে কেউ যখন কোনও বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন, আমরা ধরেই নিই তিনি আমাদের শত্রু। যে কারণে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকারীদের মধ্যে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই জঙ্গিবাদের ভূত দেখেছিলেন। এর অব্যবহিত পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু প্রগতিশীল শিক্ষক, যারা তাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের অনেককেই আকারে-ইঙ্গিতে সরকারবিরোধী, বিএনপি-জামায়াতের দোসর ইত্যাদি গালি দেওয়া হয়েছিল।

চলমান রাজনীতি নিয়ে ভিন্নমতের কারণে বিষোদ্গারের শিকার হয়েছেন দেশ-বিদেশের একাধিক স্বনামধন্য অধ্যাপক ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। অথচ তাদের মতামত নিয়ে অ্যাকাডেমিক তর্ক হতে পারতো। কিন্তু রাজনীতির মতো সিরিয়াস ও জনপ্রিয় বিষয়ে অ্যাকাডেমিক তর্কের জায়গাটি এখন দখল করেছে গালাগাল, বিষোদ্গার আর নানাবিধ তকমা, এমনকি শারীরিক আক্রমণ। পরিহাস হলো, যে বিদগ্ধজনদের নানারকম আক্রমণ ও বিষোদ্গার করা হয়েছে, তাদের অনেকেই চিন্তা-চেতনায় প্রগতিশীল; মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এবং আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে তারা হয় আওয়ামী লীগের সপক্ষের কিংবা বামপন্থী বলে পরিচিত। অর্থাৎ কোনও অর্থেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার মানুষ নন। কিন্তু শুধু ভিন্নমত ও ভিন্ন ভাবনার কারণে তারাও গালাগালের শিকার।

উগ্রবাদীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে মৃত্যুবরণ করেন প্রথাবিরোধী লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। তিনি লিখেছেন, ‘যে বুদ্ধিজীবী নিজের সময় ও সমাজ সম্পর্কে সন্তুষ্ট, সে গৃহপালিত পশু।’ সুতরাং যে শিক্ষক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের সময় ও সমাজ সম্পর্কে সন্তুষ্ট নন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, কথা বলেন, যারা বৈষয়িক নানারকম সুবিধা পাওয়ার লোভে রাষ্ট্রযন্ত্রকে তেল দেন না, তারাই মূলত সমাজের অগ্রসর অংশ; তারাই সমাজের সৌন্দর্য, তারাই সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধার পাত্র। একটি সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্রে এই মানুষগুলোরই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হওয়ার কথা। মার্কিন সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচক নোয়াম চমস্কি সেদেশের সব দল ও মতের কাছেই গ্রহণযোগ্য এবং সবাই তাকে সমীহ করেন।

কিন্তু সেই সংস্কৃতির চর্চাটি যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা, সেটি ব্যবহারের জন্য আমরা আদৌ প্রস্তুত কিনা বা যারা এ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন, তাদের কতজন এই মাধ্যমটি ব্যবহারের যোগ্য, সেই প্রশ্নটিও মাঝেমধ্যে শুনতে হয়। শুধু অল্পশিক্ষিত লোকই নন, উচ্চশিক্ষিত এবং সমাজে সম্মানিত মানুষ হিসেবে পরিচিত অনেক লোকও ফেসবুকে যেসব কথাবার্তা লেখেন, নিজের মতের সঙ্গে না মিললে যেভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন এবং তকমা লাগিয়ে দেন, তাতে অনেক সময়ই মনে হয়, শিক্ষা-দীক্ষা-পদ-পদবি যাই হোক, মানুষ তার ভেতরটা পাল্টাতে পারে খুব সামান্যই। যদি এই পাল্টানোর ইচ্ছাটা তার নিজের  না থাকে।

বাস্তবতা এখন এমন, যারা ফেসবুকে সমসাময়িক নানা বিষয়ে নিজের ভাবনা ও মতামত শেয়ার করেন, তারা সব সময়ই কোনোভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ অথবা তকমার রাজনীতির শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। নিজের মতের সঙ্গে না মিললেই তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের লোক অথবা বিরুদ্ধবাদী বলে আখ্যা দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবেই যে একটি অসহিষ্ণু সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠছে, ফেসবুক তার একটি বড় আয়না। ফলে এই আয়নায় নিজেদের মুখটি দেখে চিনতে পারা এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা শুরুর কোনও বিকল্প নেই—যদি আমরা সত্যিই একটা মানবিক, পরমতসহিষ্ণু এবং গণতান্ত্রিক সমাজের কথা চিন্তা করি। সেইসঙ্গে আমাদের এটিও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার বিকাশ ও নতুন জ্ঞান তৈরির কারখানা; খুনের প্রশিক্ষণকেন্দ্র নয়। ভিন্নমত মানেই তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কিংবা ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলার অধিকার রাষ্ট্র, সংবিধান ও আইন যে কাউকে দেয়নি, সেটি প্রমাণ করতে হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের কোনও বিকল্প নেই।  

লেখক : বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর।

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ