X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা লিট ফেস্ট-এ শশী থারুর, উজ্জ্বল উপস্থিতি

দাউদ হায়দার
০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:০৫আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৩৫

দাউদ হায়দার সংবাদপত্রে দেখলুম, ঢাকা লিট ফেস্ট বৃহস্পতিবার থেকে। এবং এই ফেস্ট আন্তর্জাতিক। বিশ্বের সাম্প্রতিক সাহিত্যের সঙ্গে মেলবন্ধন।
পৃথিবীর নানা দেশে ইদানীং সাহিত্যমেলা, সাহিত্য উৎসব, সাহিত্য সম্মেলন। মূল উদ্দেশ্য সাহিত্যবিষয়ক ভাবনার আদান-প্রদান। কোথায়, তথা কোন দেশে, দেশীয় ভাষায় কী লেখালেখি হচ্ছে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে কতটা আন্তর্জাতিক। কেবল গল্প কবিতা উপন্যাসই নয় রাজনৈতিক লেখায় মুক্তচিন্তার প্রকাশ, লেখার স্বাধীনতা অবাধ, সরকারি নিষেধাজ্ঞা (মূলত মধ্যপ্রাচ্য, তৃতীয় বিশ্বে) অমান্য করে লেখকের চিন্তার প্রাধান্য।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ গণতান্ত্রিক দেশে (সব গণতান্ত্রিক দেশে নয়, যেমন বিশ্বে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে) চিন্তা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অর্থাৎ সেন্সর, বাজেয়াপ্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন, বহু দেশের লেখক নির্যাতিত। হত্যা। কারারুদ্ধ। নির্বাসনে।
—এই নিয়ে বিশ্বের লেখককুলের সরব প্রতিবাদ, তীব্র সমালোচনা। লেখকদের রক্ষার্থে বৈশ্বিক সংগঠনও আছে। লড়াইও করে। কিছু ক্ষেত্রে সফলও। তবে ব্যর্থতার সংখ্যা বেশি। সরকার তোয়াক্কাই করে না।

বছর কয়েক আগে কায়রোর সাহিত্য উৎসবে গিয়ে মজার অভিজ্ঞতা, উৎসবকর্তা জানালেন, লেখায় বা বক্তৃতায় এ দেশের সরকারের সমালোচনা করবেন না। গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা, মানবাধিকার বিষয় নিয়ে কথা না বলাই ভালো। কোনও শ্রোতা যদি প্রশ্ন করেন, এড়িয়ে যাবেন। ঝামেলায় যাবেন না।

পৃথিবীর অনেক দেশেই ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে’ যোগদানের অভিজ্ঞতা আছে। সব উৎসবই আন্তর্জাতিক নয়। বরং আঞ্চলিকতার সমাবেশ। যেমন কায়রোর উৎসব (গত পাঁচ বছরে অবশ্য চরিত্র বদলেছে কিছুটা।)। অধিকাংশ লেখকই আরব দেশের। আঙুলে গোনা কয়েকজন বিদেশি।

ঢাকা লিট ফেস্টের বয়স নয়, হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটি-হাঁটি পা-পা। এখন দৌড়ুতে পারে। এখানেই সাফল্য। ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক। আলোচিত। সর্বার্থেই আন্তর্জাতিক। নানা দেশ থেকে লেখকের উপস্থিতি। সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও, যাঁরা আমন্ত্রিত, বহুমান্য। পাঠককুলে সম্বর্ধিত। হোক তা জনপ্রিয় কিংবা সাম্প্রতিক লেখক। ঢাকা লিট ফেস্ট যাঁদের নির্বাচন করেন, নিশ্চিত তাঁদের লেখার গুণাগুণ বিচার করেই আমন্ত্রণ। দুই-একজনের বেলায় হয়তো ব্যতিক্রম। কারণও আছে। শ্রোতা চান প্রিয় লেখকের সাহচর্য। দেখতেও।

ঢাকা লিট ফেস্টের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা, মনে করি, দেশীয় সাহিত্য, শিল্পসংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক বলয়ে পরিবেশন, অর্থাৎ, বিদেশি লেখকদের কাছে তুলে ধরা। চিন্তাচেতনার বিনিময়। লেখায়। আলোচনায়। তর্কবিতর্কে। এবারের উৎসবে আরও বহুবিধ অনুষ্ঠান। লোকজগান, সংস্কৃতির প্রচার। চমৎকার।

উৎসবে যোগ দিচ্ছেন শশী থারুর। উৎসবে নিশ্চয় অন্যতম আকর্ষণ, তারকা। বাংলাদেশের দুটি পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রায়শঃ প্রকাশিত। রাজনীতি নিয়ে লেখা। শশী বহুমান্য লেখক। বুদ্ধিযোগীও। রাজনীতিকও। বৈশ্বিক চিন্তাবিদ। শশীর ‘শো বিজনেস’, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান নভেল’ বহুল পঠিত উপন্যাস। নানা ভাষায় অনূদিত।

শশীর সদ্য প্রকাশিত THE PARADOXICAL PRIME MINISTER NARENDRA MODI AND HIS INDIA দারুণ হৈ চৈ, তুমুল পঠিত, ভারতে এবং বিদেশে বেস্টসেলার। নরেন্দ্র মোদি এবং নরেন্দ্র মোদির ভারতকে নিয়ে চাঁছাছোলা আক্রমণ, সমালোচনা, বিশ্লেষণ। বিজেপি ক্ষিপ্ত। ফুঁসছে। কিন্তু, শশীর যুক্তি, বিচারবিশ্লেষণে রা কাড়তে পারছে না। পারবেও না। বিজেপি’র তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা এমনিতেই ভোঁতা, আস্ফালনই নৃত্যকলা।

শশী একঅর্থে বাঙালি, যদিও কেরালার। শশীর বাবা কলকাতার ‘দ্য স্টেটসম্যান’-এ যুক্ত ছিলেন দীর্ঘকাল। শশীর লেখাপড়াও কলকাতায়। প্রথম প্রেমও। প্রথম স্ত্রীও বাঙালি, নাম, তিলোত্তমা। ওঁদের দুই পুত্র, ওঁরাও হাফ বাঙালি।

শশীর লেখালেখি শুরু দ্য স্টেটসম্যানের সাপ্তাহিক ‘দ্য জুনিয়র স্টেটসম্যান’-এ। শশী বাংলাও বলেন। ওঁর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও নিবিড়। পয়লা সূত্র, ঢাকার শামসুল বারী। তিনি তখন জেনিভায় জাতিসংঘের উদ্বাস্তু হাই কমিশনে কর্তা (জানিয়ে রাখা জরুরি, শামসুল বারীই বাংলাদেশের প্রথম শান্তি নোবেল পুরস্কার সম্মাননা প্রাপক। ১৯৭৪ সালে ভিয়েতনাম ‘উদ্বাস্তু বোট’ উদ্ধারে উদ্বাস্তু হাই কমিশনকে শান্তি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। উদ্বাস্তু কমিশনকে দেওয়া হলেও শামসুল বারীও প্রাপক।)। শশী, জেনিভার জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরে উচ্চপদস্থ। শামসুল বারীর স্ত্রী সুপ্রিয়া কলকাতার (শামসুল-সুপ্রিয়ার দুই কন্যা।)। তিলোত্তমা-শশীর দুই পুত্র। শশী-তিলোত্তমা কলকাতার। তো, ‘বাঙালি ছাড়া বাঙালিকে কে দেখিবে?’ বিভুঁইয়ে ওঁরা পরম ঘনিষ্ঠ, আত্মীয়। সম্পর্ক এখনো অটুট।

শশী যখন নিউ ইয়র্কে, জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে, ওঁর সহকারী আমাদের লেখক (প্রাবন্ধিক। সাংবাদিক) হাসান ফেরদৌস। দু’জনের সখ্য সম্পর্ক। দু’জনেই দু’জনের প্রশংসায় মুখরিত।

শশী ছিলেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি। সেক্রেটারি জেনারেলের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত। নিশ্চিত ছিল তিনিই হবেন। বাদ সাধে আমেরিকা।

শশী ভারতে ফিরে কংগ্রেসে যোগ দেন। ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রীও হন। চলতি বছরের নির্বাচনেও জয়ী। সাংসদ।

শশীর দুই বিপদ। অসাধারণ খুবসুরত। চমৎকার বক্তা। দারুণ কণ্ঠ, বাচনভঙ্গি। যুবতীরা ঝটপট প্রেমে পড়ে। সাড়া দিয়ে, মাঝেমাঝে, ঝামেলায়। কাবু হন না।

শশী ঢাকা লিট ফেস্টে, আমাদের গৌরব।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

/এসএএস/এমএমজে/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
বিশ্ব যকৃৎ দিবসফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ