X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেন বিশ্বকে এতটা মূল্য দিতে হচ্ছে?

রাশেদা রওনক খান
২৯ মার্চ ২০২০, ১৩:২৪আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২০, ১৩:২৬

রাশেদা রওনক খান দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে সারা বিশ্বেই করোনা নিয়ে যে প্রস্তুতি, সার্বিক পরিস্থিতি বলতে যা বোঝায়, তা ভালো না। আমাদের মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের অবস্থা খারাপ, এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডে বসে বলতে পারি, অন্য দেশের নাগরিকদেরও মনে হচ্ছে তাদের অবস্থা খারাপ। আসলে বিষয়টি পুরো বিশ্বের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, এর জন্য উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশ কেউই প্রস্তুত ছিল না। ফলে অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পলিসি বদলের বিষয়টি পলিসি মেকারদের প্রথম থেকে মাথায় আসেনি, আমি সারা বিশ্বের কথাই বলছি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস হতে যদি ইউরোপ, আমেরিকা ও ইংল্যান্ড করোনার প্রকোপকে কেবল ‘চাইনিজ সমস্যা’ না ভাবতো, তাহলে আজকে সারা পৃথিবী হয়তো এতটা ভোগান্তির শিকার হতো না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো কয়েকদিন আগেও এটিকে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ বলে ঠাট্টা তামাশা করেছেন। এখন আমেরিকানদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তিনি দেশকে করোনার প্রকোপ হতে রক্ষার জন্য কোনও ভালো উদ্যোগ নিতে পারেননি বলে প্রতিদিন ইন্টারনেটে ভাইরাল হচ্ছে তার সকল বক্তব্য, যেগুলো নিয়ে আমেরিকানরা খুব বিরক্ত। যদিও তাতে ট্রাম্পের খুব একটা আসে যায় বলে মনে হয় না।
ইংল্যান্ডের নাগরিকরাও তুমুল সমালোচনা করছে তাদের সরকারকে। এমনিতেই ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে বরিস সরকার কিছুটা চাপের মধ্যে ছিল, এর মাঝে নতুন সমস্যা করোনা পুরোপুরিই যেন বজ্রপাত হয়ে ধরা দিয়েছে। করোনায় যেদিন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন, সেদিন থেকেও যদি কঠোর লকডাউনে যেতো, হয়তো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকতো। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল, যেটা নিয়ে এখন ভোটারদের সমালোচনার মুখে পড়েছে বরিস সরকার। এখানে বলে রাখি, হার্ড ইমিউনিটি হলো প্রাকৃতিকভাবে শরীরের ভেতর আজীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হওয়া। তারা বলছে, করোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি সোসাইটির ভালনারেবল গ্রুপদের (বয়স্কদের) জন্য ভালো। কারণ আশপাশে হার্ড ইমিউনিটি থাকলে তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়াবে কম—এরকম একটা ধারণা নিয়েই ব্রিটিশ সরকার এখনও কাজ করে চলছে।

এবার আসি আমাদের প্রসঙ্গে, উন্নত বিশ্বের পথ ধরে আমরাও খুব একটা আমলে নেইনি, কেবল চীনের সমস্যাই ভেবেছি। 

গ্লোবালাইজেশনের যুগে এটা যে আমাদেরও ঘুম কেড়ে নেবে, সেটা ভাবিনি। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে, ‘এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় পথ চলা’, এই সহজাত প্রবৃত্তি হতে সারা বিশ্বের মানবের যেখানে মুক্তি নেই, সেখানে আমাদের মানুষজনের কীভাবে থাকবে? তাই মানুষের চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাঝেও তা সংক্রমিত হতে শুরু করলো। আরও পূর্বে সচেতন হলে হয়তো এই সংক্রমণের পরিধি কমানো যেতো। তারপরও বাংলাদেশ এখনও সময় পাচ্ছে, করোনার ভয়াবহতা বাংলাদেশকে যেন না ছুঁয়ে যেতে পারে, সেই প্রচেষ্টা এখন করতে হবে সরকারকেই।
আমরা পুরো মানব জাতিই আসলে বিষয়টির গভীরতা অনুধাবন করতে অনেক দেরি করে ফেলেছি। তবু বাংলাদেশে সংক্রমণের হার অনুযায়ী বলা যায়, এখনও সময় আছে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর! কীভাবে?
আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় লোকবল ও রিসোর্স দুটোই খুব কম। তারপরও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হলে সম্ভব। সাধ্যের মাঝে যতটুকু করা সম্ভব, করতে হবে আমাদের প্রত্যেককেই। সরকারি পর্যায়ে একটা গাইড লাইন থাকতে হবে, পলিসিগুলো সুস্পষ্ট হতে হবে। নয়তো মাঠ লেভেলে প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে ভুল কিছু করতে পারে। কারণ প্রশাসন কোনও একজন ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। প্রত্যেকের দায়িত্ব পালনে সতর্কতা ও মানবিকতার ছোঁয়া থাকা দরকার। যেমন, এসি ল্যান্ড-এর ঘটনা। তিনি মাঠ লেভেলে কীভাবে মানুষজনকে ঘরে যেতে বাধ্য করবেন, তার একটা গাইডলাইন থাকলে আজ এই চিত্র দেখতে হতো না। গরিব মানুষজন শাক-সবজি বিক্রি না করলে তাদের বাচ্চাদের খাওয়াবে কী? সেক্ষেত্রে করণীয় কী হবে—সেটা সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে। কান ধরে ছবি তুললেই তো সমাধান হবে না। দেশের গরিব খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো তারা ঘরে আটকে থাকবে না, পেটের ক্ষুধা মেটাতে তারা বের হয়ে আসবেই।

ডাক্তার ও নার্সদের যথাযথভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে অন্তত পিপিই দিয়ে, এই ব্যাপারে অন্যান্য যেকোনও দেশের তুলনায় আমাদের দেশ এগিয়ে থাকার কথা। কারণ আমাদের কাছে পোশাক শিল্প আছে, যা উন্নত দেশগুলোর কাছে নেই। তাই এই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, শিল্প থাকলে কী হবে, কারা বানাবে এই পোশাক? শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? সেসব নিয়েও পলিসি লেভেলে ভাবতে হবে কীভাবে একটি পোশাক কারখানায় কয়জন শ্রমিক করোনামুক্ত পরিবেশে নির্ধারিত দূরত্বে থেকে পিপিই তৈরি করতে পারে সেই ব্যাপারে।

কীভাবে ডাক্তার নার্সদের সেবা প্রদানের সময় জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারেও ভাবা দরকার। যদি বড় রকমের বিপদ চলে আসে, সেজন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রাইভেট সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে। অনেক ধনী ব্যবসায়ী সমাজ এগিয়ে আসতে পারে। এনজিওগুলো তাদের ক্ষুদ্রঋণের সুদ স্থগিত নয়, মওকুফ করে দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। অর্থাৎ সমাজের সকল স্তর হতে একটা সমন্বিত প্রয়াস থাকতে হবে, যেখানে সরকারের উচ্চপর্যায় হতে দায়িত্বশীল একটা চেন অব কমান্ড থাকবে, যেন কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে বিপদ ডেকে না আনতে পারে।

লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস দুর্ঘটনায় ৪৫ তীর্থযাত্রী নিহত
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস দুর্ঘটনায় ৪৫ তীর্থযাত্রী নিহত
পায়ুপথে ৭০ লাখ টাকা সোনা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল পাচারকারী
পায়ুপথে ৭০ লাখ টাকা সোনা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল পাচারকারী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ