X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মুনাফা নয়, ভাবতে হবে দেশের কথা, মানুষের নিরাপত্তার কথা’

রাশেক রহমান
০৯ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৪৫আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৪৮

রাশেক রহমান বৈশ্বিক মহামারি আকার ধারণ করেছে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও আজ বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়েই আজ তাই কিছু ভাবনা থেকে লিখতে বসা। সম্প্রতি একদিন সকালের একটি ঘটনা। আমার এলাকা অর্থাৎ রংপুরের মিঠাপুকুরের ১৬ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন এলাকার এক ভাই যিনি ঢাকায় ভ্যান চালান, তিনি আমাকে ফোন করেন। তিনি বললেন, তার স্ত্রী ও কন্যা দুজনেই যথাক্রমে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও একটি সুয়েটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। অথচ তারা এখন পর্যন্ত মার্চ মাসে বেতনটা পাননি।
তবে বেতন দেওয়া নিয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির গড়িমসিকে আসলে নতুন কিছু বলবো না। কারও হয়তোবা সক্ষমতা আছে, আবার কারও নেই। তাও আমি জানি বেতনটা দেওয়া হবে নিশ্চয়ই। কারণ আমি জানি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সকল গার্মেন্টস শিল্পে প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন এবং বিভিন্ন ব্যাংকিং প্যাকেজের ঘোষণাও দিয়েছেন। বেতনটা হয়তোবা তাই হয়ে যাবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু আরেকটি কারণ আজ আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। 

গত ৪০ বছর ধরে তিলে তিলে আমাদের দেশে যে গার্মেন্টস শিল্প তৈরি হয়েছে, তা বিভিন্ন সময়ে ভাবমূর্তি সঙ্কটে ভুগেছে। কখনও বহির্বিশ্বের হর্তাকর্তারা প্রশ্ন তুলেছে যে আমাদের এখানে গার্মেন্টস শিল্পে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের দিয়ে আমরা কাজ করাই। কখনও প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীদের নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার বিষয় নিয়ে। কখনও প্রশ্ন তুলেছেন যে পরিমাণ মজুরি দেওয়া উচিত, একটা মানবিক আত্মসম্মানবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সেটা হয়তো আমরা দিচ্ছি না। সবকিছুকে ছাপিয়ে বাংলাদেশ আজকে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে একটা ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ এখন বাংলাদেশ। এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও আমরা কিছু বিষয় দেখি, যা সমগ্র জাতিকে হতাশ করে। এই সময়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে কেন্দ্র করে একটা বিতর্কের সূচনা হয়েছে যে গার্মেন্টস খোলা থাকবে কী থাকবে না? আর সেই স্থানে মনে হয় একটি বিষয়ে আলোকপাত করা দরকার। 

করোনাভাইরাস পরবর্তী পৃথিবীতে কোনও পাশ্চাত্য দেশের মানবাধিকার সংস্থা যদি কখনও প্রশ্ন করে, বাংলাদেশের কতিপয় গার্মেন্টস শিল্পের মালিকেরা কি দায়িত্বশীল? যারা তাদের কর্মীদের দরিদ্রতা ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের জোর করে এই লকডাউনের সময়ে তাদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা না করে ব্যবসায়িক মুনাফার জন্য কাজ করিয়েছেন। এই কারণে আমাদের দেশের পণ্যকে বর্জন করা উচিত বলে যদি কোনও বিদেশি সংগঠন বা বায়ার দাবি তোলে তখন কি আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এতো কষ্ট করে গড়ে তোলা গার্মেন্টস শিল্পকে হুমকির সম্মুখীন হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবো? দেখা গেছে যে গার্মেন্টসে অর্ডার আছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অনেকেই তা পূরণ করতে না পারলেও হুমকির সম্মুখে থাকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে সমস্ত দেশের এই শিল্প খাতকে ঘিরে গড়ে ওঠা ব্র্যান্ড ইমেজের কথাও আমাদের ভাবা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মুনাফা বলুন আর আয়-ব্যয়-প্রাচুর্য যাই বলা হোক না কেন, তা সবই অনর্থক হয়ে যাবে যদি আমাদের দেশের জনগণ সুস্থ না থাকতে পারে।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে হার, এই হার অতি দ্রুততার সঙ্গে, কিছু ক্ষেত্রে অকল্পনীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ার শক্তি নিয়ে আছে। এটাও একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য, সমস্ত পৃথিবীর যে কোনও দেশের পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার যে গতি, তা আসলে কল্পনারও বাইরে। সে জায়গায় কিছু মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু মার্কেটিং বা সেলসের কোম্পানিকে খুশি করার জন্য ১৭ কোটি মানুষের মাঝে থাকা আপনার, আমার, আমাদের এই দেশের সক্ষম জনগোষ্ঠীকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া কতটা বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত ছিল বা হচ্ছে?

যিনি গার্মেন্টস ব্যবসা করেন, তিনি তার সম্পদকে উপভোগ করার জন্যই সেটি করেন। যদি তাদের সন্তানেরা বাংলাদেশে থাকেন, তাদেরও উপভোগ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। যিনি গার্মেন্টসের মালিক, তিনি যদি এই দেশে থেকে থাকেন, তবে তিনিও এই সম্পদ উপভোগ করবেন। কিন্তু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে পড়ে সেই সম্পদের উপভোগ করা কি আদৌ সম্ভব? আমি তাই মনে করি, একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি না করে, একে অপরকে দোষারোপ না করে খুব দ্রুত আমাদের সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ও ভবিষ্যৎকে নিশ্চিত করার জন্য যত ক্ষতিই হোক, এই গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য যেগুলো জরুরি সেবার আওতায় পড়ে না, সেগুলোকে আপাতত বন্ধ করতে হবে। কারণ আমার দেশের সক্ষম জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্বের একটি অন্যতম অংশ।

গার্মেন্টস খোলা রাখার বিষয়ে একটি যুক্তি শুনেছি, যেটা যৌক্তিক বলে মনে হয়নি। পিপিই বানানোর জন্য গার্মেন্টস খোলা রাখা হচ্ছে। যেখানে বিশ্বজুড়ে পিপিই সঙ্কট, সেখানে এমন সিদ্ধান্তকে আমি হয়তোবা বাহবা জানাতাম। কিন্তু তাও পারছি না। কারণ পিপিই বানালেই শুধু হয় না। এর সঙ্গে পিপিইর মান নিশ্চিত করতে হয়, যাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। সেটা আদৌ করা হচ্ছে কিনা, তাও কিন্তু ভাবনার বিষয়। আরেকটি বিষয়ও এখানে উল্লেখ করার মতো। হয়তোবা এই গার্মেন্টস প্রস্তুত করে বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে, সেটি রফতানি করার আয়োজনও করা যেতে পারে। কিন্তু তাও প্রশ্ন থাকে একটা। সেই পণ্য নিয়ে কোন জাহাজ কোন বন্দরে যাবে? আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের যা রফতানি করা হয়, তার অধিকাংশই যায় ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও উত্তর আমেরিকায়। সমস্ত বিশ্বের যে অবস্থা, তাতে যে কয়দিনে পণ্য প্রস্তুত করা হবে, সেই অবস্থায় তা গ্রহণ করার জন্য কয়টা কোম্পানি প্রস্তুত থাকবে, এটাও একটা ভাবনার বিষয়। যেখানে বিশ্বের প্রায় সবাই লকডাউনে চলে যাচ্ছে, সেখানে অনেক সময় পছন্দ না হলেও বিষপান করতে হয়। তার থেকেও বড় কথা ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত অর্থবছরে ৩৫ বিলিয়ন রফতানি করার কথা সেখানে ইতোমধ্যে ২২ বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের হর্তাকর্তারা। এটি একটি বড় সফলতা। তিন বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে এটাও দুঃখজনক। কিন্তু বাকি যে ১০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাকি আছে, সেটা পূরণ করতে গিয়ে আমাদের দেশকে হুমকির মুখে ফেলে বিপদ বাড়িয়ে তোলার মতোই হয়ে যায়। আর তাই এটিকে ছোট করে ভাবনার অবকাশ নেই। 

হ্যাঁ এটা সত্য—বিজিএমইএ, বিকেএমইএ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কথা মেনে চলতে বলছে। সেগুলো মান্য করে কাজ চালানোর জন্য গার্মেন্টস খোলা রাখা যেতে পারে বলেও অনেকে বলছেন। এক্ষেত্রে নিজেকে নিজের আয়নায় দেখে আসলে প্রশ্ন করা দরকার আমরা কাকে ধোঁকা দিচ্ছি? যেখানে ১০ থেকে ২০ হাজার লোকও একসঙ্গে কাজ করে সেখানে কোনও ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতা বা কোনও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশাবলি পরিপূর্ণভাবে পালন করে কাজ করা সম্ভব? ইচ্ছে থাকলেও করা যাবে কিনা, সেই প্রশ্নও কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে। শুধু তাই না, আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকল ভাই ও বোনেরা তারা যে নিম্ন মজুরিতে আজকে কাজ করে, তাদের বাসস্থান কোথায়? তারা তো কোনও বস্তিতে থাকে নতুবা কোনও স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে থাকে। ফ্যাক্টরিতে একজন মালিক চাইলেই অনেক আয়োজন করতে পারেন একজন কর্মীর জন্য, কিন্তু সেই কর্মী যখন কর্মস্থলের কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে যাবেন তখন তার স্বাস্থ্য সুরক্ষার যে নির্দেশাবলি, সেগুলো মানতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা কী?

সম্প্রতি দেখছি যে বিজিএমইএ’কে দোষারোপ করা হচ্ছে, আমাদের প্রয়াত সফল মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী জনাব রুবানা হককে নিয়েও সমালোচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আসলে একটি কথা বলার আছে। একজন ব্যক্তি এতবড় ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারেন না। তবে এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক বক্তব্যে একটি কথা বলেছিলেন—তোমরা যদি সংখ্যায় কমও হও তবে তোমাদের কথায় যদি ন্যায্য থাকে তা আমরা মেনে নিবো। অর্থাৎ নেতৃত্বের জায়গায় যদি আপনি থাকবেন তখন ফ্যাক্টরি বন্ধ করার অধিকার ও ক্ষমতা আপনার থাকুক বা না থাকুক অন্তত নেতৃত্বের জায়গা থেকে যখন কোনও গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করবেন তখন তাদের নেতা হিসেবে আপনাকে বলতে পারতে হবে কী করা উচিত ও কী করা উচিত নয়। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব বাংলাদেশের সকল জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু তিনি একা তো এই কাজ করতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনি যে খাতের নেতা, সে খাতের কর্মীরা আগামী দিনে কীভাবে আপনার নেতৃত্বে কাজ করে যাবে, সুরক্ষার সঙ্গে তা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সুতরাং আমি মনে করি দেরি হয়েও এখনও দেরি হয়নি। খুব দ্রুততার সঙ্গে বিজিএমইএ’র সকল ফ্যাক্টরি বন্ধ ঘোষণা করা উচিত। এক্ষেত্রে ১০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গিয়ে বাঙালির অমিত সম্ভাবনার অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলতে পারি না। তাই কাউকে দোষ দেওয়ার পক্ষে আমি না। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে আমি আহ্বান জানাতে চাই এই বলে—আসুন আমরা সবাই সম্পূর্ণ লকডাউন মেনে চলি।

বর্তমানে আমরা এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে আছি। এখনও দেখা যাচ্ছে মার্চ মাসের বেতন পাননি অনেক গার্মেন্টসের কর্মচারী। এটা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ পুরো মার্চ মাসই তারা কিন্তু কাজ করেছে। এপ্রিল মাসের বেতন তো তারা মে মাসে চাইবেন। কিন্তু মার্চ মাসের বেতন তো তাদের দিতে হবে। শুধু তাই না ৪০ বছর ধরে আমরা যে গার্মেন্টস শিল্পখাত প্রতিষ্ঠিত করেছি সেখানে বেতন দিতে যেখানে সঙ্কট হয়ে যাচ্ছে তার মানে আমরা কিছু স্থানে হয়তোবা সঠিক কাজগুলো করতে পারি নাই। নইলে এতবড় শিল্পখাত তার কোনও কন্টেইনজেন্সি ফান্ড নাই এটা মানা কষ্টকর। যখন দেশে কোনও ধরনের সঙ্কট তৈরি হয় তখনই দেশে আপনাদের জন্য প্রণোদনা দেওয়া লাগে এটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রয়োজন হলে অবশ্যই প্রণোদনা নিতে হবে, কিন্তু এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন করা যেতে পারে নিজের কাছে। ৪০ বছর ধরে যে শিল্পখাত চলছে তা কেন এক দুই মাসের সঙ্কটে পড়লেই তার কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে হাত পাতা লাগে। এটা কতটা যৌক্তিক বা সম্মানের, সেটা ভাবনার সময়ও মনে হয় চলে এসেছে। আমি আমার কথায় যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি তবে ক্ষমাপ্রার্থী। 

অর্থনীতির সরল ভাষায় যেকোনও অর্থনীতির জিডিপির বহিঃপ্রকাশ ঘটে একটা ইংরেজি বর্ণমালার ক্যাপিটাল লেটার ‘Y’ দিয়ে। সেই ক্যাপিটাল লেটার ওয়াই কে সমীকরণের ভাষায় দেখানো হয় Y=C+I+ G+X-M অর্থাৎ আমাদের জিডিপি বলতে বোঝায় আমাদের কনজাম্পশান, আমাদের ইনভেস্টমেন্ট, আমাদের গভর্নমেন্ট এক্সপেন্ডিচার, এবং আমাদের এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের পরে যে ফল পাওয়া যায় সেটাই হলো আমাদের জিডিপি। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার আট শতাংশ ছিল। সেই হারে অবশ্যই আমাদের রফতানি খাতে গার্মেন্টসের ৩৫ বিলিয়নের এক্সপোর্টও আছে। সেই এক্সপোর্ট ভ্যালুর বিপরীতে এলসি এসেছে তার ব্যাক টু ব্যাক এলসিও খোলা হয়ে থাকার কথা আরও ৩০ বা ৩১.৫ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ আপনি আপনার কাঁচামাল আনার পরবর্তীতে দেশের রিটেনশান রয়েছে সাড়ে তিন বা চার বিলিয়ন ডলার। এই চার বিলিয়ন ডলারকে যদি গাণিতিক বিশ্লেষণে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে বর্তমানে আমাদের দেশের আট শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাত্র এক শতাংশ সে বহন করছে। বাকি সাত শতাংশই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার যে জনবান্ধব এবং জন মেইনারড কেইন্স-এর কেইনেশিয়ান ইকোনমিক মাত্রার নীতিমালা- সে কারণে এটা তৈরি হচ্ছে। আমাদের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বড় বড় মেগা প্রজেক্ট, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প, আমাদের অ্যাকটিভিটি জেনারেশনের যে কর্মকাণ্ডগুলো, এগুলোর মধ্য দিয়েই আমার দেশের প্রবৃদ্ধির যে হার সে হারের বাকি সাত শতাংশ সেটা কিন্তু সেখান থেকে আসছে। সুতরাং আজকে এই সঙ্কটের সময় গার্মেন্টস শিল্পকে যেমন প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে বাকি সাত শতাংশের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন অর্থাৎ শ্রমিক, দিনমজুর, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জোগানদার ও ব্যবসায়ী তাদের পরিণত যে প্রাপ্য বিল সেগুলো ছাড় করা প্রয়োজন। এই ছাড় করার মধ্য দিয়ে আপনি আমি দেখবো যে আমাদের অর্থনীতি পুরোপুরি না হোক কিছুটা হলেও জীবিত, সঞ্জীবনী জায়গায় থাকবে। সুতরাং শুধু রফতানি খাত নয়, অভ্যন্তরীণ খাতের দিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। কারণ আমাদের দেশের জিডিপির মূল চালক হচ্ছে আমাদের দেশের ইন্টারনাল কনজাম্পশান, আমাদের দেশের সরকারি খাতের ব্যয়, আমাদের দেশের বিনিয়োগের জায়গাগুলো। সুতরাং সেই জায়গাগুলো উপেক্ষা করা যাবে না। 

সবশেষে আবারও বলি বাংলাদেশের গার্মেন্টস হলো একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রফতানিকারক হলাম আমরা। সুতরাং এই ব্র্যান্ডকে রক্ষা করার জন্য আপনারা এমন কোনও কিছু করবেন না যেখানে করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর সুযোগ সন্ধানী মানুষ যারা আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তারা সকলে মিলে আমাদের কোনও নেতিবাচক তকমা দিতে না পারে। যেখানে মানুষে বলবে যে দরিদ্র অসহায় মানুষদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে জোর করে এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও তাদের দিয়ে আমরা কাজ করিয়ে নিয়েছি। যদি এই আহ্বান জানাতে গিয়ে কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করি। মনে রাখবেন করোনাভাইরাস এখনও বাংলাদেশে কিন্তু মহামারি নয়। এটাকে আমরা সচেতন হলে ঠেকাতে পারবো। এটি প্যানডেমিক যেটি বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে মহামারিতে রূপান্তরিত হবে যদি আমরা সময়োচিত ব্যবস্থা না নিতে পারি। আমরা সকলেই বাঙালি। আমরা সকলেই জানি আমাদের শক্তির জায়গা কী এবং দুর্বলতার জায়গা কী।

আমি আমার ক্ষুদ্র জায়গা থেকে মনে করি একটি সুন্দর সুস্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমাদের এক হয়ে ভাবতে হবে। যেখানে সঙ্কটকে মোকাবিলা করে আমাদের আবার সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য যদি আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়, তবে আমাদের একশত ভাগ সফল লকডাউনের আয়োজন করতে হবে। এই লকডাউন তখনই করা সম্ভব যখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাসেবা, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সেবা ও ব্যাংকিং সেবা ছাড়া অন্য সকল সেবাকে আমরা আপাতত বন্ধ করে লকডাউনের যে শর্তাবলি আছে সেগুলো পূরণ করতে পারবো। তখনই মনে করবো যে আমরা আবার সুস্থ হবো এবং নতুনভাবে পুনরুজ্জীবিত হবো। যেখানে নতুনভাবে জেগে উঠবে সবকিছু। জেগে উঠবে গার্মেন্টস শিল্পও। একই সঙ্গে অন্যান্য যে খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোও জেগে উঠবে। সুতরাং আমার দেশের পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন যখন লকডাউনকে সফল করার লক্ষ্যে আমাদের ওপরে একটু শক্ত হোন তখন আসলে ফেসবুকের ব্যবহার একটু চিন্তাভাবনা করে করলে ভালো হয়। কারণ অনেক সময়ে অযাচিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশের কারণে অনেক বড় কাজ ব্যাহত হয়ে যায়। আমরা সকলে মিলেই যদি এই লকডাউন চলাকালীন সময়ে আমাদের প্রশাসনকে সাহায্য করি,তবে আমাদের ভবিষ্যৎ যাত্রা নিরাপদ হতে পারে। আর সেটাই হোক আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। যেখানে আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে দেশকে নিরাপদ করে রাখবো তার নেতৃত্বে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

 লেখক: রাজনীতিবিদ

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ