X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবাধ্যতা

তসলিমা নাসরিন
২০ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৯:৩৭আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৫:০৩

অবাধ্যতা আমি এক অবাধ্য মানুষ। আমি সমাজের নীতি মানিনি। রাষ্ট্রের আইন মানিনি। সবকিছু অস্বীকার করে দুরন্ত-দুর্দান্ত ক্রমশ সামনে এগিয়েছি। সে কারণে লোকে আমার নিন্দা করেছে। নানা অপবাদ দিয়েছে। রাস্তাঘাটে, দোকানপাটে, মেলায়, মিছিলে যেখানেই দেখেছে আমাকে, ঢিল ছুড়েছে, গালিগালাজ করেছে। আমার সম্পর্কে অশ্লীল কথা লিখেছে পত্রিকায়। সরকার আমার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেছে। 

কেন আমি সমাজের নীতি নিয়ম মানিনি, সেটি প্রশ্ন। মানিনি, কারণ নারীর প্রতি সমাজের বৈষম্যমূলক আচরণ আমার চোখে অমানবিক ঠেকেছে। শুধু নারী নয়, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন ও তাদের ওপর সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অন্যায় আচরণ আমার পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই লেখায় এসব নির্মমতা ও বর্বরতার প্রতিবাদ করেছি। আমি ছিলাম সরকারি হাসপাতালের চিকিত্সক। সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের পত্রিকায় লেখালেখি করা বা বই প্রকাশ করা, সরকারি অনুমতি ছাড়া আইনবিরুদ্ধ। কিন্তু তবু আমি লিখে গেছি। মোদ্দা কথা, সরকারের অবাধ্য হয়েছি। কারণ, লেখার মাধ্যমে সমাজের সমস্যাগুলো মানুষকে জানানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে আমার মনে হয়েছে। আমি সবসময় যুক্তি পছন্দ করি, যখন আমার তেরো বছর বয়স, মা আমাকে বলতেন, ঘরের বাইরে যেও না, কারণ মেয়েদের ঘরের বাইরে যেতে নেই, যা খুশি করতে নেই। আমাকে বলতেন নামাজ পড়ো, রোজা রাখো, পরদা করো ইত্যাদি। এসব করার পেছনে আমি কোনও যুক্তি খুঁজে পাইনি। মেয়ে বলে আমাকে ঘরে বসে থাকতে হবে, বাইরে খেলার মাঠে, নদীর ধারে, আমার বয়সি ছেলেরা যাচ্ছে আর আমার যাওয়া চলবে না- এ আমি কিছুতে মেনে নিতে পারি নি। আমি মায়ের অবাধ্য হয়েছি। দৌড়ে চলে গেছি ঘরের গুমোট আবহাওয়া থেকে বাইরে খোলা আকাশের নীচে। আমাকে বলা হত অবাধ্য মেয়ে! বড় হওয়ার পর আমাকে বিয়ে দিতে চেষ্টা করেন আমার বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন; যাকে আমি চিনি না, জানি না, তার সঙ্গে। আমি বলেছি, এরকম বিয়ে আমি কিছুতেই করবো না। আমার মতে, এ রীতিমত অন্যায়। শুধু আমার বেলাতেই নয়, যখনই আমি দেখেছি অল্পবয়সি মেয়েদের জোর করে অচেনা লোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করা হচ্ছে, আমি ওদের বুদ্ধি দিতাম অবাধ্য হতে, কাজি যখন বিয়ে দেওয়ার আসরে জানতে আসবে বিয়েতে মেয়ে রাজি কি না তখন যেন সে সবার মুখের ওপর বলে দেয়- 'না'। অথবা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। সমাজের এই নিয়ম যেন মেনে না নেয়। নিজেদের নৈতিকতাবোধে যদি এমন ব্যবস্থাকে উদ্ভট মনে হয়, তবে মুখ বুজে মানা কেন! আমি এমনও দেখেছি, অনেক মেয়েই স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে, কিন্তু স্বামীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় না। কারণ সমাজের দৃষ্টিতে সেই মেয়ে হবে নষ্ট মেয়ে, খারাপ মেয়ে। অনেক মেয়েই ভাবে সমাজের যা নিয়ম, তাই তাদের মেনে চলা উচিত। নিজের বুদ্ধি এবং বিবেক দিয়ে ন্যায়- অন্যায় বিচার করবার ক্ষমতা বা সাহস কোনওটিই তাদের নেই। শুধু সমাজের নীতি আর নিয়ম নয়, আমাদের দেশের প্রচুর আইনই মেয়েদের স্বাধীনতাবিরোধী। বিবাহ আইনটি ধর্মের ভিত্তিতে গড়া। এই আইনে স্বামী একইসঙ্গে চারটি বউ রাখতে পারে ঘরে। কোনও নারী চায় না স্বামীকে আর তিনটি নারীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে। কিন্তু বেশিরভাগ নারীই বাধ্য হয় ধর্মের আইনের কাছে। যে সচেতনতা এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রয়োজন ধর্মীয় আইনের প্রতি মানুষকে অবাধ্য করার, সেটি অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এখনও তৈরি হয়নি।

 

'লজ্জা' নামে আমার একটি তথ্যভিত্তিক উপন্যাসে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর মুসলমানদের অত্যাচারের বর্ণনা তুলে ধরেছি। সরকার এই উপন্যাসটি বাজেয়াপ্ত করেছে। বাজেয়াপ্ত করার পেছনে কারণ দাঁড় করিয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতে পারে। আসলে বইটি সম্পূর্ণই সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে লেখা। আমি কিন্তু এরপরও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে আমার লেখা বন্ধ করিনি। একইরকম, ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় মৌলবাদ, ইসলাম নারীর অবস্থান নিয়ে আমার নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে সরকার আমার বিরুদ্ধে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে মামলা করেছে। পুলিশ আমাকে জেলে পুরতে এসেছে। যেহেতু জেল আমার জন্য নিরাপদ নয়, আমি ফেরারি আসামি হয়ে সরকারি আইনের প্রতি অবাধ্য হয়ে দু'মাস আত্মগোপন করেছিলাম। ধরা দিইনি। সমাজের ধার্মিক মানুষেরা আমাকে ফাঁসি দেওয়া এবং ইসলামি আইন অনুসারে আমাকে হত্যা করার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, মাথার দাম ঘোষণা করেছে। আমি ইসলামি আইনের প্রতি অবাধ্য হয়ে, সরকারি আইনের প্রতি অবাধ্য হয়ে, নিজের এবং যুক্তিবান আরও মানুষের সহযোগিতায় নিজের দেশ ছেড়ে এসেছি। এবং ধর্ম, মৌলবাদ, কুসংস্কার আর নারীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে আমার নিজস্ব ধারণা ও মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছি৷ কারণ নিজের যে সচেতনতা, বিবেক ও নীতিবোধ আমি ধারণ করি, তা আমাকে কোনও অন্যায় ও বৈষম্যের কাছে নতিস্বীকার করতে দেয় না।

দেশের সার্বভৌমত্বও আমি মানিনি, দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে আমাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাবান লোকেরা। আমি মনে করি, বাংলাদেশ গঠন করা উচিত ছিল পূর্ব ও পশ্চিম দুই বাংলা মিলিয়ে। কারণ একই ভাষার একই সংস্কৃতির বাঙালি বাস করেছে ভারতের পশ্চিম বাংলায়। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়েছিল ভারত। ১৯৭১- এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতভাগ ছিল সম্পূর্ণই ভুল। তবে ধর্মের কারণে যে দূরত্ব পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায়, তা থাকবে কেন! বাংলাদেশ হবে বাঙালির দেশ, সে বাঙালি মুসলমান হোক, হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক কী খ্রিস্টান হোক৷ দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যা পেয়েও আমার নীতিবোধের কারণে আমি দুই বাংলার একত্রীকরণের পক্ষে মানুষের সচেতনতা জাগাবার চেষ্টা করছি। রাষ্ট্র ও সমাজের নীতি আমার নীতির সঙ্গে মেলে না। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নিয়মই তো এই যে, ভিন্ন যেমন রাজনৈতিক মতবাদ থাকে, যে-কোনও বিষয়ে মানুষেরও নিজেস্ব মতবাদ থাকে, মতবাদ প্রচারে যখন সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বাধা আসে তখনই প্রশ্ন ওঠে অবাধ্যতার। আমি কি অচেতন পদার্থের মতো, গরু বা ভেড়ার মতো অনুসরণ করবো- যে যা বলে তা-ই? নাকি অবাধ্য হব! অবাধ্য হতে হলে প্রয়োজন সত্যিকার শক্ত নীতিবোধ, অসীম সাহস। এটা সবার থাকে না। রাষ্ট্রের কলাকৌশল বেশির ভাগ মানুষকে বোবা, বধির, বোধহীন এবং শাকসবজি বানিয়ে ফেলে।  

রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী সরকার বা একনায়কতন্ত্রের শাসন এলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়, তারা ঘনঘন আইন অমান্য করে, অবাধ্য হয়। কারণ জনগণের মতবাদ নিয়ে আইনকানুন তৈরি করা হয় না। গণতান্ত্রিক দেশে অবাধ্যতার পরিমাণ তুলনায় কম। কারণ জনগণের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে আইনকানুন সংশোধনের ব্যবস্থা থাকে। তারপরও দেখেছি গণতান্ত্রিক দেশেও মানুষ অবাধ্য হয় নিজের নৈতিক মূল্যবোধের কারণে। সুইডেনের মতো আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশে, মানবাধিকার যেখানে সযত্নে চর্চা করা হয়, দেখেছি অনেকে আইনকে অমান্য করে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি, দরিদ্র দেশের লোকেরা যখন সুইডেনে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় চায় এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া হয় না, তারা সুইডেনে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়, পুলিশ তাদের খোঁজে ধরে বেঁধে জোর করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবার জন্য, তখন অনেক মানবতাবাদী সুইডিশ সে-সব অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের নিজেদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখে এবং তাদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করে। আইনের চোখে এটি অন্যায়, কিন্তু এই অন্যায়টি তারা করে এটিকে ন্যায় বলে মনে হয় বলে। তাদের নিজস্ব মানবতাবোধ রাষ্ট্রের মানবতাবোধ থেকে ভিন্ন। তবে প্রশ্ন ওঠে, রাষ্ট্র কেন মানুষের মানবতাবোধ নিয়ে রাষ্ট্রেও মানবাধিকার নীতি তৈরি করে না! এর কারণ, সম্ভবত, জনগণের বেশিরভাগ অংশ তা চায় না। অথবা চায়, শাসকেরা রাজনৈতিক স্বার্থে তা পরিহার করে।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক যখন পূর্ব পাকিস্তানকে একটি কলোনি হিসেবে বিচার করে ব্রিটিশদের মতোই শাসন ও শোষণ করে চলছিল, তখন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তা মানেনি, তারা পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, পূর্ব পাকিস্তানের নিপীড়িত মানুষের নৈতিকতাবোধ তখন পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। এই করেই জন্ম হয় নতুন একটি স্বাধীন দেশের। মানুষের মানবতাবোধ এবং নৈতিকতাবোধ যখন হিংস্রতা, নির্মমতাকে মেনে নেয় না, তখন মানুষের মধ্যে সম্মিলন ঘটে, বৃহত্তর সম্মিলন অবশ্যই রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক নীতি পাল্টাতে সাহায্য করে। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যায়, রক্তপাত, হানাহানির বিরুদ্ধে মানুষই রুখে দাঁড়িয়েছে এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছে। মহাত্মা গান্ধীর নীতিবোধ মানুষের বোধকে জাগ্রত করেছে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার এবং রাজশাসন উপেক্ষা করার জন্য। মার্টিন কুথার কিং-এর নৈতিকতাবোধ অনুপ্রাণিত করেছে কালো এবং সাদা মানুষের মধ্যে বৈষম্য ঘোচানোর আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষকে শরিক হতে। নেলসন ম্যান্ডেলার নীতিবোধ রাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। মহান মানুষেরা চিরকালই মানবকল্যাণের পক্ষে তাদের নৈতিকতাবোধকে সজাগ ও অভংগুর রেখেছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে যায়নি অনেক আমেরিকাবাসী, তারা সরকারি হুকুম অমান্য করেছে, নিজেদের নৈতিকতাবোধকে বিসর্জন না দিয়ে দেশান্তরী পর্যন্ত হয়েছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে নৈতিকতাকে কঠোর রাখে, তাদের অনেককেই নানারকম মূল্য দিতে হয়, কেউ খুন হয়, কেউ দেশান্তরী হয়, কারও কারাদণ্ড হয়। তবু তারা নিজের কাছে নিজে শুদ্ধ থাকে। ইতিহাসে আবার এও দেখা যায়, নিজেদেও নৈতিকতাবোধ বিসর্জন দিয়ে নাত্সিব শাসনামলে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে লাখ লাখ ইহুদি, জিপসি, কমিউনিস্টকে হত্যা করেছে জার্মান সৈন্যরা। তাদের ভাষ্য, তারা সরকারি হুকুম মান্য করেছে। সরকারি হুকুম, সে যদি মানবতাবিরোধীও হয়, পালন করার যথেষ্ট নজির দেখা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। সরকারি হুকুম পেয়ে পুলিশ গুলি চালায় সরকারবিরোধী যে কোনও মিছিলে। পুলিশ তার নীতিবোধ বিসর্জন দিয়ে কাজটি করে। কারণ তারা মনে করে, সরকারি নীতিমান্য করাই পুলিশের পবিত্র কর্তব্য। কোনও কোনও পুলিশ আবার তা অমান্যও করে। এবং নিজের নীতিরক্ষার কারণে তাকে চাকরি হারাতে হয়, জেলে যেতে হয়, জীবনে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই ঝুঁকি সবাই নেয় না, বা নিতে পারে না। যুগে যুগে মানুষই হিংস্র ব্যবস্থার অনুগামী হয়েছে, আবার মানুষই তা অস্বীকার করেছে।  

বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন নীতিবোধ। সমাজের নীতিবোধের মান নিতান্তই আপেক্ষিক। এটি নির্ভর করে সেই সমাজের আর্থসামাজিক কাঠামো, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতির ওপর। আমরা মানবতার প্রশ্নে নীতিবোধ বিচারের মানদণ্ড একটি খাড়া করি। ধর্ম থেকে যারা নৈতিকতা শিক্ষা নেয়, তারা ধর্মের অমানবিক দিকটিকেও মহান বলে বিচার করে। ধর্ম নয়, যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেক ও হৃদয়ই হওয়া উচিত নৈতিকতা অর্জনের মূল ভিত্তি। মানবতার পক্ষে সুশিক্ষা মানুষের নৈতিকতাবোধকে বিশাল ব্যাপ্তি দেয় এবং আলোকিত করে। তবু মানুষ কারণে-অকারণে নিজের নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়েছে, দিচ্ছে। আমার মনে হয় পুরানো দিনের চেয়ে এখনকার যুগে অনেক সমাজেই আরও বেশি সহজ হয়ে এসেছে সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিবাদ করা। পুরনো দিনের ইউরোপে গির্জার বাধ্য না হলে পুড়িয়ে মারা হত। বর্তমানে গির্জার নিয়মকানুন মেনে না চলা আগের মতো আর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা হয় না। সমাজব্যবস্থা কখনও স্থিতিশীল থাকেনি, এর পরিবর্তন সবসময়ই হচ্ছে। যুগে যুগে মানুষ যদি সমাজব্যবস্থা নিয়ে না ভাবতো, না প্রতিবাদ করতো, তবে মজা পুকুরের মতো সমাজও হয়ে পড়তো স্থবির, দুর্গন্ধময়। স্রোত আছে বলেই, পরিবর্তন আছে বলেই মানুষ এবং তার সমাজ ক্রমশ সামনে এগোচ্ছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক, নৈতিকবোধ বাড়ছে, বোধের পরিসর বাড়ছে। অবাধ্যতা প্রগতির পক্ষে মঙ্গলজনকও বটে। তবুও এখনও কিছু কিছু দেশে পুরনো সমাজব্যবস্থাকে ধর্মের দোহাই দিয়ে বা অস্ত্রেও জোরে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই এর উদাহরণ।  

অবাধ্যতা শব্দটি নেতিবাচক। ধর্মের-রাষ্ট্রের-সমাজের সুস্থিতি রক্ষা করার জন্য জনগণের আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত। কিন্তু ধর্ম, রাষ্ট্র বা সমাজব্যবস্থা যদি মানুষের নৈতিকতাকে আঘাত করে, তবে মানুষের অবাধ্য হওয়াও প্রয়োজন। তখন অবাধ্যতা হয়ে দাঁড়ায় গঠনমূলক। আর, আরেক রকম অবাধ্যতা তো আছেই যা নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ। চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ, দাঙ্গা ইত্যাদিও পেছনে কারণ অনেকের নৈতিক অধঃপতন। ধর্মীয় সমপ্রসারণ, অর্থনৈতিক মন্দা, সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মানুষের নৈতিক অধঃপতনের জন্য অধিকাংশেই দায়ী।

লেখক: কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ