X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২

সতর্কতা জারি হোক জনগণের পক্ষ থেকেও

তুষার আবদুল্লাহ
২৮ নভেম্বর ২০১৫, ২০:০৩আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৫:৩৮

সতর্কতা জারি হোক জনগণের পক্ষ থেকেও সতর্কতা কেবল রাষ্ট্রই দিয়ে যাবে, জনগণের দেওয়ার অধিকার নেই? প্রশ্নটি কেবল যে বাংলাদেশের ভূমি থেকে অঙ্কুরোদগম হয়েছে, তা নয়। বিশ্বজমিনে এখন এই প্রশ্নেরই চাষবাস চলছে। রাষ্ট্রগুলো এই প্রশ্নের চাষকে আগাছা ভাবছে বা মনে করছে বিচ্ছিন্ন ভাবনা। এই মনে করাটা কোনও রাষ্ট্রেরই হৃদয়ের কথা নয়। তারা জানে, এই প্রশ্নের অনিবার্যতা কত সত্য। কিন্তু এই সত্য কথাটি স্বীকার করে নিলে, তাদের অহংবোধ, কখনও-কখনও অস্তিত্ব অসার প্রমাণিত হয়ে যায়। আসলে রাষ্ট্রীয় মননের বসবাস বরাবরই মরুভূমির বুকে। তারা মরুভূমির বুকে নিজেদের ছাড়া আর কোনও অস্তিত্ব অনুভব করতে রাজি নয়। যখন একেবারেই অপারপর পক্ষগুলোকে অস্বীকার করা সম্ভব হয় না, তখন নিরুপায় হয়ে রাষ্ট্র মরুভূমির বালুতে মুখ গোঁজে। এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে যে রাজনীতি চলছে, তা ধর্মকেন্দ্রিক। মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার রাজনীতি শোষক শ্রেণির বরাবরই ছিল। সক্রিয় ছিল, আছে আর্য-অনার্য, সাদা-কালো, পূর্ব-পশ্চিম—নানাভাবে বিভক্ত করার ফর্মুলা। এর সঙ্গে ধর্মও যুক্ত ছিল। অঞ্চলভেদে বা ধর্মভেদে অন্দরে সীমিত ছিল সেই বিচ্ছিন্নতা। ধর্মগুলোর ভেতরেই সেই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজমান ছিল। তার প্রভাব যে বিশ্ব রাজনীতিতে পড়েনি, তা নয়। ওই বিচ্ছিন্নতাকে অবলম্বন করে বিশ্বরাজনীতির একাধিকবার মেরুকরণ হয়েছে। তবে সেই বিচ্ছিন্নতার বিষবাষ্প একযোগে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েনি। নয়-এগারোর পর নিরাপত্তার অজুহাতে মার্কিন আগ্রাসন যখন মুসলমানদের লক্ষ্য করে সক্রিয় হয়, তখন থেকেই মূলত ধর্মের সঙ্গে ধর্মের এবং ধর্মের ভেতরকার বিচ্ছিন্নতার লাভা উদগীরণের শুরু।

বিশ্বজমিনে ‘আল কায়েদা’ কাকতাড়ুয়া তৈরি করে, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি আবহ রচনা করে যার প্রতিপাদ্য হলো মুসলমানদের জন্যই পৃথিবীকে নিরাপদ রাখা যাচ্ছে না। বধ করা হলো আল-কায়েদা। ইরাক-লিবিয়া পরিণত হলো, শূন্যদশকের করদরাজ্যে। পাশাপাশি মুসলমানদেরও উস্কানি দেওয়া চলল, প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে। মুসলমানদের নানা জঙ্গি নামে ব্র্যান্ডিং করা হলো। এই জঙ্গি সংগঠনগুলোর অস্তিত্বের অজুহাত তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লীপনায় পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো, তৃতীয় বিশ্ব ও মুসলমান রাষ্ট্রগুলোকে চোখ রাঙাতে থাকে। মানবাধিকার, নিরাপত্তা, জঙ্গিবধের নানা ‘রেসিপি’ দিতে শুরু করে। পাশাপাশি ব্র্যান্ডিংয়ের দিকেও তাদের সমান মনোযোগ থাকে। যার ধারাবাহিকতায় বাজারে আসে ইসলামিক স্টেট বা আইএস। মধ্যপ্রাচ্যে উৎপাদিত এই ব্র্যান্ডটির এখন আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ চলছে। তবে আইএস বিপণনের বাজার থেকে যে সাড়া পাওয়া গেছে, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না পশ্চিমাগোষ্ঠী, তারা এখন মুসলমানের ভেতরকার উপগোত্রগুলোর ভেতরকার সাংঘর্ষিক অবস্থা, যা কোনও-কোনও দেশে নিছকই মনস্তাত্ত্বিক, আবার কোথাও সম্পর্কটা সম্প্রীতির। সেখানে আগুন জ্বালানোর ফন্দি করেছে। বাংলাদেশেই যেমন শিয়া-সুন্নির মাঝে কোনও বিরোধ নেই। সহ-অবস্থান আছে। উৎসব-পার্বণ যার-যার রীতিতে হলেও উদযাপনে যোগ দেন সবাই। সেখানে দুই দফা আঘাত হানা হলো। কেবল মুসলমানদের ভেতর গৃহদাহে উস্কানি দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছে না তারা। বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায় কখনই জঙ্গিদের তীরের লক্ষ্য ছিল না। খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে আইএসের নামে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে আইএস আছে। যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের নির্মূলের ছুঁতো করে শাসন করা সহজ হয়। মুশকিল হলো এই খেলার ময়দান কেবল বাংলাদেশ কিংবা তৃতীয় বিশ্বের দেশই থাকছে না। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় দেখেছি, ব্রিটেনে দেখেছি, প্যারিসেও দেখলাম। প্রতিটি ঘটনাতে নিজেদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে রাষ্ট্রগুলো। পাশাপাশি অন্য রাষ্ট্রগুলোকেও বলেছে আইএস থেকে সতর্ক থাকতে।

বাংলাদেশে চলছে ভিন্নচিত্র। এখানে বলা হচ্ছে ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন। কোনও একটি রাজনৈতিক দল দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। সরকার বা রাষ্ট্রের দিক থেকে যেহেতু শত্রু চিহ্নিতই আছে, সেহেতু শুধু বিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপানো কেন? বিচ্ছিন্ন ঘটনা নির্মূলে কেন সফলকাম হওয়া যাচ্ছে না? যারা ঘটনা ঘটাবার তারাতো ঘটিয়ে যাচ্ছেই। সরকারের বাইরে যে প্রধান রাজনৈতিক দল আছে তারাও যে ‘জঙ্গিবাদ’ খেলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, সেই নৈতিক অবস্থান তাদের নেই। সরকারে থাকাকালীন একই ভূমিকা তাদেরও ছিল। মাঝখান থেকে সাধারণ নাগরিকদের জল-স্থল কোথাও দাঁড়ানোর উপায় নেই।

নিরাপত্তাহীনতার চরমমূল্য তাদেরই দিতে হচ্ছে। এক সময় এই মূল্যের যোগফল হিসেবে দেখা যাবে, মূল্য আদতে দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রকেই। অদূরের পাকিস্তান যেমন দিয়েছে, তেমনটা পশ্চিমা দেশগুলোও দিতে শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নিজের সঙ্গে নিজের লুকোচুরি খেলা চলতে থাকলে, বাংলাদেশও সেই কাতারে গিয়ে পৌঁছবে। একথা সত্য আমজনতা অসাম্প্রদায়িক। তাকে সাম্প্রদায়িকতার চুল্লিতে ছুঁড়ে দেয় ধর্ম ব্যবহারকারী রাজনীতি ও বিশ্বরাজনীতির কূটকচাল। সেই চাল এখন যে বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্বজনগণ বুঝে গেছে, খবরটি রাষ্ট্রগুলোর নীতিনির্ধারকদের জানাতে হবে। সতর্ক করে দিতে হবে জনগণের তরফ থেকেই, ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে আর জনগণকে মসলা বানানো চলবে না। বিশ্বজুড়ে এই সতর্কতা জারির সময় এখন।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 *** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লিতে সংসদীয় প্যানেলের বৈঠকে যা আলোচনা হলো
বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লিতে সংসদীয় প্যানেলের বৈঠকে যা আলোচনা হলো
নতুন বন্দোবস্তের রাজনৈতিক দলের হাত ধরেই হবে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ: আখতার
নতুন বন্দোবস্তের রাজনৈতিক দলের হাত ধরেই হবে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ: আখতার
জুলাইযোদ্ধাদের স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বালন
জুলাইযোদ্ধাদের স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বালন
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়লো
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়লো
সর্বশেষসর্বাধিক