X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার থার্টিফার্স্ট ডে!

হারুন উর রশীদ
৩১ ডিসেম্বর ২০১৫, ১১:৩২আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫, ১১:৩৬

Harun Ur Rashid_01শিরোনামটি ধার করা। মঙ্গলবার আমার সহকর্মী আবদুল হাকিম চৌধুরী কক্সবাজার থেকে পাঠানো একটি খবর পড়ে একগাল হাসলেন। তারপর  আমাদের বললেন, ‘এবার থার্টিফার্স্ট নাইট নয়, হবে ‘থার্টিফার্স্ট ডে’’। আর রহস্য উন্মোচন করে জানালেন, এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থার্টিফার্স্ট নাইটের সব আয়োজন দিনের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারে এবার বড় একটি আয়োজন আছে। থার্টিফার্স্ট থেকে শুরু হবে ইন্টারন্যাশনাল বিচ কার্নিভাল। কথা ছিল শুরু হয়ে দিনরাতই চলবে এই কার্নিভাল। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। কার্নিভাল তিনদিনই হবে, তবে তা শুধু দিনের বেলা। নিরাপত্তার কারণেই এই ব্যবস্থা।
এবার আমরা ঢাকার কী অবস্থা, তা জেনে নেই। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এরইমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন থার্টিফার্স্টে রাত আটটার পর ঘরের বাইরে থাকা মানা। রাজধানীর কোথাও জড়ো হওয়া যাবে না। বাইরে করা যাবে না কোনও আনন্দ আয়োজন। যা করার ঘরের মধ্যেই করতে হবে। গৃহবন্দি থার্টিফার্স্ট আরকি! যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা জানিয়েছেন তিনি। আরও অনেক কিছুর ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
আর সোমবারে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থার্টিফার্স্ট রাতে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন দেশবাসীকে। এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
থার্টিফার্স্ট নাইটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেরশে নিরাপত্তা জোরদার করে এটা বরাবরই দেখে আসছি। এটা করাই স্বাভাবিক। তবে রাতে সবাইকে ঘরের মধ্যে থাকার নির্দেশ সম্ভবতই এটাই প্রথম।
তাই স্বাভাবিকভাবেই জানতে ইচ্ছে হয় এবার কী এমন ঘটল যে, আমাদের থার্টিফার্স্ট রাতে ঘরে থাকতে হবে। বাইরে যেতে মানা। রাতের আয়োজন দিনেই শেষ করতে হবে।
এটা সত্য যে বাঙালির নববর্ষ পহেলা বৈশাখ। আর পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণের আয়োজন আমাদের সর্বজনীন জাতীয় উৎসব। তবে ইংরেজি নববর্ষ বরণের রেওয়াজও এখানে প্রচলিত। আর তা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে থার্টিফার্স্ট রাত ১২ টা ১ মিনিটে। আমরা যেমন কোনও উচ্ছৃঙ্খলতা সমর্থন করি না। তেমনি মানুষের স্বাভাবিক উৎসব আয়োজনকে বন্ধ করাও পছন্দ করি না।

কারা এটা বন্ধ করতে চান? উৎসবে কারা হামলা চালান? তা আমরা জানি। আমি মনে করি, সরকার এবং প্রশাসন হয়তো সেই আশঙ্কায় নাগরিকদের থার্টিফার্স্ট রাতে ঘরে রাখতে চাইছে। চাইছেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। কিন্তু হামলা তো এখন ঘরের মধ্যেও হচ্ছে। মসজিদে, মন্দিরে হামলা হচ্ছে। তাহলে ঘরের মধ্যে রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কি সম্ভব? আর সম্ভব হলেও আমরা তা মানব কেন!

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত কয়েকমাস ধরে সন্ধ্যা ছয়টার পর কেউ থাকতে পারেন না। সবাইকে পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। এটাও নাকি নিরপত্তার জন্য। এরপর হয়তো দেখা যাবে রাস্তাঘাটেও রাতে চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হবে।

আমার এখনও মনে আছে। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন আমরা দলবেঁধে রাত ১২ টার পর শহরে ঘুরতে বের হতাম। প্রায়ই রাস্তায় পুলিশ আটকাতো। আইডিকার্ড দেখার পর ছেড়ে দিত, তবে করত নানা মন্তব্য। এরমধ্যে একটি সাধারণ মন্তব্য থাকত,‌  ‘এত রাতে বাইরে কেন!’

আর নারীরা রাতে বাইরে কোনও বিপদে পড়লে এখনও তাদের একটি প্রশ্ন শুনতে হয়, ‘রাতে কেন একা বাইরে বের হয়েছেন?’

এই প্রশ্নগুলোর মধ্যেই রয়েছে অনেক সত্য। তার একটি হলো আমাদের সরকার, পুলিশ বা প্রশাসন নাগরিকদের জীবন নিরাপদ করতে পারেনি। না রাতে, না দিনে। রাতে নিরপত্তাহীনতা হয়তো দিনের চেয়ে আরও বেড়ে যায়। কোনও সভ্যদেশের নাগরিকদের শুনতে হয় না, ‘আপনি এত রাতে বাইরে কেন?’ কোনও নারী গভীর রাতে একা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে নিজেকে অনিরাপদ মনে করেন না।

আমরা গত কয়েকদিন ধরেই জঙ্গিবিরোধী অভিযানকে বেগবান হতে দেখেছি। আর গত কয়েকমাস ধরে বিদেশি নাগরিক হত্যাসহ জঙ্গিদের নানা সন্ত্রাসী হামলা দেখেছি। পুলিশ বলছে দেশে আইএস নেই, এটা জেএমবির কাজ। জঙ্গিরা বাংলাদেশে কী টার্গেট করে তা সাধারণ মানুষও জানে। ‘ইসলামবিরোধী’ বলে তাদের হুমকির ধরনগুলোও মোটামুটি সবার জানা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের হুমকি আর হামলার মুখে আমরা ঘরে ঢুকব না সবাই বের হয়ে আসব? আমরা আইএস না জেএমবি এই বিতর্কে আটকে থাকব, না প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেব?

আমি মনে করি, যদি হামলার আশঙ্কায় আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে জঙ্গিদের জয়। যদি আমাদের উৎসব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় প্রশাসন, তাহলে জঙ্গিরা তাদের সাফল্যে আরও বেশি উৎসাহিত হবে। তারপর একদিন দেখা যাবে দিনের আলোতেও মানুষ নিরাপদ নয়।

আর মনে রাখতে হবে বাইরের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে ঘরের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যায় না। দেশটাকে তো আর ঘর আর বাহির—এই দুভাবে ভাগ করা যায় না। দেশতো একটাই। দয়া করে ভাগ না করে দেশের মানুষের ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। নিরাপত্তার নামে ফেসবুক বন্ধের নেতিবাচক প্রভাব থেকে শিক্ষা নিন।

লেখক: সাংবাদিক

ইমইেল: [email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের স্বাক্ষর
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের স্বাক্ষর
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ