X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

পৌরভোট ও ৫ জানুয়ারি

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
০৫ জানুয়ারি ২০১৬, ১৭:৩০আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০১৬, ১৭:৩৪

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশব্যাপী জাতীয় নির্বাচনের আমেজ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পৌর নির্বাচন। সাত বছর পর নৌকা-ধানের শীষের লড়াই দেখলো জনগণ। পৌরভোটের পর ৫ জানুয়ারি নিয়ে আবার মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ঢাকায় সমাবেশ করছে দুই দল- একইদিনে। গত বছর এই দিনকে নিয়ে যে হাঙ্গামা হয়েছে এবার কী হয় তাই উদ্বেগের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে জনগণকে। তবে দৃশ্যত মনে হচ্ছে বিএনপি আবার গতবারের মতো ভুল পথে হাঁটবে না।
৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে বহু প্রশ্ন থাকলেও এটা ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। শাসনতন্ত্র কাগুজে পুস্তকমাত্র। কিন্তু জাতির যদি এর প্রতি মর্যাদাবোধ না থাকে, জাতীয় শৃঙ্খলা থাকে না। সুতরাং শাসনতন্ত্রের মর্যাদাকে প্রয়োজনে দৃঢ় ভূমিকা নিয়ে রক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশে পশ্চিমাদেশগুলোর মতো নিরুপদ্রুপ নির্বাচন হবে তা প্রত্যাশা করা যায় না। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনেও কিছু উপদ্রুপ হয়েছে। তবে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে মনে হয়নি। ২৮টি সংগঠনের মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, পৌরসভার নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও তা কিন্তু পুরো নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি।
অবশ্য বিএনপি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ফলাফল নিয়ে জনমনে কোনও ক্ষোভ পরিলক্ষিত হয়নি। বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি তুলেছে এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সে দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। অথচ এর আগে যে দুটো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়েছিল সে দু’টি নির্বাচনের ফলাফলও তারা মানেনি।
পরাজিত পক্ষ নির্বাচনের ফলাফল ফল মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি এদেশে কখনও ছিল না। অনেক দোষত্রুটি ঘেঁটে ঘেঁটে বের করা সম্ভব হলেও নির্বাচন কমিশন পৌর নির্বাচনের দিন খুব দৃঢ় হাতেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের দায়িত্ব পালনে সক্রিয় ও আন্তরিক ছিল।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য এবং নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার জন্য বিএনপিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।পার্লামেন্টারি সিস্টেম অফ গভর্নমেন্টে একটা গঠনমূলক বিরোধী দল খুবই প্রয়োজন। না হয় শাসকদল কর্তৃত্ব পরায়ণ হয়ে উঠে। বাংলাদেশে তার অভাব প্রকট। বিএনপি ১০ বছর সংসদে এবং দুই বছর সংসদের বাইরে বিরোধীদল  ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সংসদে এবং বাইরে তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসা ছাড়া সে ভূমিকায় বিএনপিকে আশা করা যায় না। কারণ খালেদা জিয়া মনে করেন যে রাষ্ট্র শাসনের জন্য তার জন্ম হয়েছে। দলীয় প্রতীক নিয়ে (শুধু মেয়র) এবার নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে উভয়দল তাদের জনসমর্থন যাচাই করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৫২% ভোট আর বিএনপি পেয়েছে ২৮%।
জামায়াতে ইসলামী জোটে থাকলেও বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে পৌরসভার নির্বাচন করেনি। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে ৪০টা পৌরসভার মেয়র নির্বাচন করেছে। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নাকি নির্বাচন নিয়ে আলাপ করার কোনও আগ্রহও প্রকাশ করেনি। পৃথক পৃথক নির্বাচন করে উভয় দল এখন বুঝেছে কার কত জোর আছে।

নির্বাচন শেষ হয়েছে। উভয় দল নিজেদের অবস্থান বুঝতে পেরেছে। নির্বাচনের ফলাফল দেখে একে অপরকে ছেড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।  মধ্যপ্রাচ্যে আবু বকর বাগদাদীর অর্থাৎ আইএস এর পতন হলে মওদুদিবাদী, ওয়াহাবি, ছালাফি, আহলে হাদিস ইত্যাদি সংগঠনগুলো স্থবিরতায় ভুগবে। ঊনবিংশ শতাব্দিতে ওয়াহাবিরা ভারতে বহু সশস্ত্র বিদ্রোহ করেছিল। কিন্তু পতনের পর দীর্ঘ এক শতাব্দির মাঝে তাদের আর কোনও কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। এবারও একই অবস্থা হবে।

বিএনপির রাজনীতিতে চলছে বন্ধাত্ব। দীর্ঘসময় তারা আন্দোলনে রয়েছে। কিন্তু আন্দোলন জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। বরং ২০১৩ সালের শেষ ৪ মাস আর ২০১৫ সালের প্রথম ৯২ দিন বিএনপি/জামায়াত মানুষ মারার যে আন্দোলন করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে তাদের সঙ্গে গণ-মানুষের একটা শীতল সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সর্বোপরি বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা হিসাব করে দেখাচ্ছে যে বাংলাদেশের ৭২% শতাংশ মানুষ আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার মাঝে রয়েছে। তারা তাদের আরও অগ্রগগির প্রতীক্ষায়। সুতরাং নিশ্চিত সুখ দূরে ঠেলে দিয়ে কেউ অহেতুক ঝামেলা পোহাতে যাবে না।

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যাপক কোনও ভুল পদক্ষেপ না নিলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে কোনও আন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিএনপি-জামায়াত বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। পুনঃগঠিত হতেও তাদের যথেষ্ট সময়ের দরকার। আর বিএনপির রাজনীতিতে ক্রিয়েটিভ কোনও জিনিয়াস নেতৃত্ব নেই। আওয়ামী লীগ নবম সংসদ নির্বাচনের পূর্বে প্রতিশ্রুতি  দিয়েছিল তারা (১) ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বে (২)পদ্মা সেতু বানাবে (৩) যুদ্ধপরাধীদের বিচার করবে (৪) ২০২১ সালের মধ্যে তারা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবে। প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে বিএনপি বহু বিদ্রুপ করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ৭ বছরের মাথায় ডিজিটাল বাংলাদেশ কায়েম করে ছেড়েছে। বহু ষড়যন্ত্রের পরও পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেছেন-আরও বহু বড়শক্তি চাপ দিয়েছে; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাথা নত করেননি। যুদ্ধপরাধীর বিচার এখন চলমান। বহু অপরাধীর ফাঁসি হয়েছে। অবশিষ্ট অপরাধীদের বিচারও শেষ হবে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও উদ্যম অব্যাহত থাকলে আল্লাহ্ চান তো ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে।

শেখ হাসিনাকে অহেতুক বিশ্বের ১০০ ব্রিলিয়ান্ট নেতার তালিকায় ১৩নং এ স্থান দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা। ছেলে বলে জয় এ পদ অলঙ্কৃত করেননি। তিনি আইটির ওপর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সর্ব উচ্চ ডিগ্রিধারী। তিনি দেশের উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তিনি বলেছেন আগামী ২০২১ সালের মাঝে আইটি ক্ষেত্রে দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে মঙ্গার হাত থেকে উত্তরবঙ্গ মুক্তি পেয়েছে।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মাঝে ছাত্রদের মাঝে বই বিতরণ নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ বই বিতরণ করেছে। আদিবাসীরা বৃত্তি পাচ্ছে। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যও ছাত্রবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের থেকেও এখন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারী দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। যা আগে দেখা যায়নি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও উল্লেখ করার মতো একটা উদ্যোগ।

ইতিহাসের সঙ্গে সমান তালে পা ফেলে চলার এক যজ্ঞের আয়োজন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি সফল হলে জাতিও মুক্তি পাবে। শেখ হাসিনার নামও চির স্মরণীয় হয়ে ইতিহাসে থাকবে।বিএনপি সনাতন পথের পথিক। তার অনুসৃত পথ সমাজে আমূল পরিবর্তন আনতে পারেনি।

রাজনীতি হচ্ছে মানুষ নিয়ে কারবার। সুতরাং মানুষকে গহ্বর থেকে টেনে তোলার নতুন কৌশল অবলম্বন না করলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না। বিএনপি সে কৌশল অবলম্বনে ব্যর্থ হয়েছে। গতানুগতিক পন্থায় এখন আর সমাজ পরিবর্তনের উপায় নেই। এ জন্যই বলেছিলাম বিএনপির নেতৃত্বে ক্রিয়েটিভ কোনও লোক নেই।

দেশে দেশে লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে মিথ্যা রটনা করে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করা বৃথা। সরকার যদি জনসাধারণের আস্থা অর্জন করে থাকে তবে সরকার ফেলা সহজ নয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বাধ্যবাধকতাকেও জনগণ ইতিমধ্যে মেনে নিয়েছে। বিএনপিকেও সেটা মেনে নিতে হবে। সুতরাং বিএনপির রাজনীতি এখন নতুন গণমুখি চিন্তা-চেতনাকে আশ্রয় করে পল্লবিত হওয়া উচিৎ। না হয় তাদের পক্ষে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হওয়াই কঠিন হবে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঈদযাত্রার সময় দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত: জরিপ
ঈদযাত্রার সময় দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত: জরিপ
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ