X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

সমাবেশে নেই হাসিনা, হরতালে নেই খালেদা

হারুন উর রশীদ
০৫ জানুয়ারি ২০১৬, ১৯:২৩আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০১৬, ২০:১৭

হারুন উর রশীদ উত্তাপ ছড়ায়নি। ছিল না কোনও আশঙ্কাও। এরপরও হয়তো কিছু হবে- এমন ভাবনাও হালে পানি পায়নি। অবশেষে নিরুত্তাপ তিন সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি। আরও একটু খোলাসা করে বলতে হয়, সমঝোতার মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পার করল ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা নির্বাচনে’র দ্বিতীয় বছর।
এবার উভয় দলই নানা শর্ত মেনে নিয়ে সমাবেশ করল। যদিও শর্তের অনেক কিছুই তারা মানেননি। তবে এই শর্তভঙ্গে জনদুর্ভোগ হলেও কোনও হাঙ্গামা বা অশান্তির কারণ ঘটেনি।
খালেদা জিয়া কোনও বাধা ছাড়াই নয়াপল্টনের জনসভায় গিয়েছেন। জনসভায় বক্তৃতা দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছেন। আর শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ বা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের সামনে কোনও জনসভাতেই যাননি। যতদূর জানি বিএনপিকে চাপমুক্ত রাখতেই প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে না যাওয়া। আওয়ামী লীগের দুই জনসভার মধ্যমণি ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা কথার গরমে শীতের উত্তাপ কমিয়েছেন। শ্রোতারা আরাম পেয়েছেন,  বিনষ্ট হয়নি শান্তি।
খালেদা জিয়াও অনেক গরম কথা বলেছেন, সরকারের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু দেননি সরকারবিরোধী কোনও কর্মসূচি। হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও শব্দগুলো এবার তিনি আর মুখে আনলেন না। চাইলেন সংলাপ, আলোচনা, গণতন্ত্র। আলাপ আলোচনার মাধ্যমই সংকটের সমাধান দেখলেন তিনি।
বিপরীতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ-এর সামাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, ‘আসুন শান্তিপূর্ণ রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যাই। দেশে নির্বাচন হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে একটি জীবনও হত্যার প্রয়োজন হবে না।’
আর এই উভয়পক্ষের ‘শান্তি সমাবেশ’-এর বিষয়টি আঁচ করা যাচ্ছিল আগে থেকেই। সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ রাজনীতিতে নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছিল। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছিল, তারা কোনও অবস্থায়ই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে না। তারা কথাও রেখেছে। সরে দাঁড়ায়নি। মেয়র পদে মাত্র ১৯টি পৌর সভার জয়ী হলেও বিএনপি এটাকে সফলতা হিসেবেই দেখছে। কারণ নির্বাচনের কারণে নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে এসেছে। আর কেথাও না থাকার চেয়ে কিছু থাকা ভাল। তবে এই আত্ম-উপলব্ধি বিএনপি’র আগে হয়নি। তারা সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েও ভোট শুরুর দুই ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন বয়কট করে। আসলে তারা বয়কটের জন্যই তখন নির্বাচনে গিয়েছিল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা নির্বাচন’ বিএনপি বর্জন করে। তারা চেয়েছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর তা আদায়ে ব্যর্থ হলেও নির্বাচনের আগে তিনমাস ধরে অবরোধ হরতাল এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় বাংলাদেশে তখন কমপক্ষে ৯৫ জন নিহত হন। একতরফা নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনেই কোনও নির্বাচন হয়নি। একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস করেন। আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ আসন পায়। এরশাদের জাতীয় পার্টি হয় সংসদে বিরোধী দল।

কিন্তু বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন না করত তাহলে চিত্রটি যে এমন হতো না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। এত লোকের প্রাণ যেত না। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ পেতেন না কেউই। নির্বাচনের মান কেমন হতো তা নিয়ে প্রশ্ন তখনও ছিল, এখনও আছে। কিন্তু নির্বাচনহীনতার চেয়ে যে নির্বাচন ভাল সে ব্যাপারে দ্বিমত করার সুযোগ আমি দেখি না।

বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জনের পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ সহিংসতার আন্দোলন বেশি দিন চলে না। এরপর বিএনপি দোটানায় পড়ে যায়। তাই উপজেলা এবং সিটি নির্বাচনে নির্দলীয়ভাবে অংশ নিলেও আন্দোলনের কথা বলেছেন শক্তভাবে। দু-একবার হরতাল দিয়েও দেখেছে।

এবার পৌর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা দ্বিধা কাটিয়ে পুরোপুরি নির্বাচনমুখি হয়েছে। নির্বাচনকেই আন্দোলন হিসেবে নিয়েছে। আর রাস্তার আন্দোলনের চেয়ে দল গোছানোকেই তারা এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। মঙ্গলবারের (৫ জানুয়ারি) সমাবেশে খালেদা জিয়াও সেই ইঙ্গিত দিলেন। গরম কথা বললেন, কিন্তু চরম কিছু করলেন না। তিনি গেলেন না হরতাল অবরোধের দিকে।

প্রয়োজনটা ছিল সরকার তথা আওয়ামী লীগেরও। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে তারা বলেছিল সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। তাই পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে বিএনপির অংশগ্রহণ আওয়ামী লীগের ইমেজের জন্য জরুরি ছিল। কারণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অন্যতম শর্ত হলো ভোটের হিসেবে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ। শুধু সরকারি দলের অংশগ্রহণই যথেষ্ট নয়। আর আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির পর এই গ্রহণযোগ্যতার সঙ্কটে ভুগছিল। তাই তারা চেয়েছে বিএনপি নির্বাচনে আসুক। পৌর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সেই চাওয়া পূরণ হয়েছে।

তবে সমীকরণটি এত সহজ নয়। বিএনপি এত সহজে নির্বাচনমুখি হয়নি। আর আওয়ামী লীগও এত সহজে বিএনপি’র প্রতি সহনীয় হয়নি। দৃশ্যমান তৎপরতার অন্তরালে দুই দলের আরও বড় কোনও হিসাব আছে। যা হয়তো আমরা জানি না। তবে এটা বোঝা যায় যে দুই দলই নিজেদের প্রয়োজনে শান্ত হয়েছে। হয়েছে আপসকামী। নতুন করে সবমঝোতার পথ ধরেছে।

এই আপাতত। সমঝোতায় আমরা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না হলেও আপাতঃ স্বস্তি পাচ্ছি। সামনে আর যদি কোনও নির্বাচন থাকে তাহলে স্বস্তি আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে আশা। তাই ইউপি নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাদের এই তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাই। আরও কোনও নির্বাচন বাকি আছে কীনা নির্বাচন কমিশন তা খোঁজ করে দেখতে পারে। আমার মনে হচ্ছে এখন নির্বাচনেই শান্তি।

তবে স্বস্তি পেরিয়ে শান্তি নির্ভর করে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের ওপর। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। যদি পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে জাতীয় নির্বাচন হয় তাহলে সেই নির্বাচন হবে ২০১৯ সালে। বিএনপি’র কি সেই নির্বাচনের জন্য আরও তিন বছর ধৈর্য থাকবে? আর যদি তারা অপেক্ষাও করে,  তাহলে নির্বাচন কমিশন কি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে?

সরকার কি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে?- এই প্রশ্ন আমি করলাম না। কারণ নির্বাচনটা নির্বাচন কমিশনের। রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে তা সফল হয়। তাহলে নির্বাচন কমিশন নিয়ে কেন আমরা আন্দোলন করি না? আমরা কেন একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং কার্যকর নির্বাচন কমিশনের জন্য মাঠে নামি না? কেন এডহক ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনি সরকার’-এর জন্য আমাদের এত রক্তপাত। মনে রাখা প্রয়োজন স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। যা করার এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য করুন প্লিজ।

লেখক: সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ