X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর ‘রিসিপশন’ ও ড. ইউনূস

শওগাত আলী সাগর
২৭ জানুয়ারি ২০১৬, ১৯:১৬আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০১৬, ১৯:২৬

শওগাত আলী সাগরসুইজারল্যান্ডের ডাভোসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যে একটি  ‘রিসিপশনের’  আয়োজন করেছিলেন, ঢাকার পত্রিকায় সংবাদ না হলে এই তথ্যটি অজানাই থেকে যেত। ঢাকার মিডিয়া অবশ্যটি খবরটি পরিবেশন করেছে ইউনূস সেন্টারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সূত্রে। বেশ বড়সড়ো এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূসের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার তথ্য থাকলেও ‘সংবর্ধনাটি’ কবে হয়েছে, সেই তথ্য নেই। ফলে এই ‘রিসিপশনের’ বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাড়তি খোজাখুঁজির ঝক্কি পোহাতে হলো।
ডাভোসে ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের’ সম্মেলনে জাস্টিন ট্রুডো এবার তারকাখ্যাতিতে ঝলসে উঠেছিলেন। ব্যক্তিগত স্মার্টনেসের কারণেই কেবল নয়, প্রথম দিনের বক্তৃতা দিয়েই তিনি বিশ্বনেতা আর বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি কেড়ে নেন। ফলে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে বিশ্বমিডিয়ার বাড়তি মনোযোগ ছিল জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি। আর তাকে ঘিরে সেলফি তোলার উৎসব তো ছিলই। অবস্থাটা শেষ পর্যন্ত এমন দাঁড়িয়েছিল যে, প্রতিনিধিদের কেউ-কেউ টুইট করেছেন, তারকা পপশিল্পী বুনোর চেয়েও এবার জাস্টিন ট্রুডো অধিকতর সেলিব্রেটি। সেই সেলিব্রেটি জাস্টিন ট্রুডোর রিসিপশনের খবর কি-না—কোনও মিডিয়াতেই নেই। এমনকি কানাডার মিডিয়ায়ও। হলো কিছু?
অথচ ডাভোসে কম করে হলেও ৯টি লাঞ্চ, ডিনার আর ব্রেকফাস্টে অংশ নিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। এগুলোর অধিকাংশই চিহ্নিত ছিল—‘প্রাইভেট মিটিং’ হিসেবে। বলে রাখা ভালো, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদিনকার কর্মসূচির পুরোটাই ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখে। তার মধ্যে কোনও কর্মসূচি যদি গোপনীয় বা ব্যক্তিগত হয়,  তাহলে সেটি চিহ্নিত থাকে ‘প্রাইভেট মিটিং’ হিসেবে। ‘প্রাইভেট মিটিং’-এর কোনও তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয় না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে একটি ‘প্রাইভেট কাজ’ করেছেন, সেটি জাতিকে জানিয়ে রাখা হয়। ডাভোসে জাস্টিন ট্রুডো যে ৯টার মতো লাঞ্চ-ডিনার-ব্রেকফাস্ট করেছেন। এর সবকটিই আসলে হয়েছে বিশ্বের বড়-বড় সব কপোরেশনের সিইও বা কোনও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে এইগুলো ‘প্রাইভেট মিটিং’ হিসেবে উল্লিখিত থাকলেও মিডিয়ায়ও এইসব লাঞ্চ  ব্রেকফাস্টের খবর এসেছে। খবর আসেনি কেবল প্রধানমন্ত্রী নিজে  যে রিসিপশনের আয়োজন করেছিলেন তারই।
জাস্টিন ট্রুডোর রিসিপশনের খবর মিডিয়ায় না এলেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন—এমন একটি রিসিপশনের খবর মিডিয়ায় ফলাও করেই প্রচার হয়েছে। চীনের ধনকুবের জ্যাক মা একটি  ‘প্রাইভেট রিসিপশন’-এর আয়োজন করেছিলেন ডাভোসে। বিশ্ব-অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে আসা অতিথিদের মধ্য থেকে বাছাই করা ৪০ ব্যক্তি আমন্ত্রিত ছিলেন ওই প্রাইভেট রিসিপশনে। জাস্টিন ট্রুডোও যোগ দিয়েছিলেন তাতে। এই রিসিপশনের খবর বেশ ফলাও করেই প্রচার করেছে মিডিয়া। এই রিসিপশনে গিয়ে তারকাশিল্পী বুনো, কেভিন স্পেসি, অসকার মনোনয়ন পাওয়া অভিনেতা লিওনার্দো  ডি ক্যাপরিওর সঙ্গে খোশগল্পে মেতে ওঠেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। ডি ক্যাপরিও অবশ্য রিসিপশনে পৌঁছন বেশ দেরি করে। জাস্টিন ট্রুডো তখন বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ডি ক্যাপরিওকে ঢুকতে দেখে তিনি থেমে যান এবং খানিকক্ষণ গল্প করেন। এই তারকাদের সঙ্গে সেলফিও তুলেন জাস্টিন ট্রুডো।

এইবারের ডাভোস সম্মেলনে  লিওনার্দো ডি ক্যাপরিও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সবার। এই রিসিপশনে যোগ দেওয়ার মাত্র এক ঘণ্টা আগে তিনি বিশেষ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। আর অ্যাওয়ার্ড নিয়েই যে বক্তৃতাটি তিনি দেন, তা পুরো সম্মেলনকে বেশ জোরেসোরেই একটা ধাক্কা দেয়। ওই বক্তৃতায় তিনি তেল,গ্যাস ও কয়লা কোম্পানিগুলোকে লোভী হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন,  ‘করপোরেট কোম্পানিগুলোর হাতে মানবতা জিম্মী হয়ে থাকবে, এটা চলতে দেওয়া যায় না। ‘সম্মেলনের মূল মঞ্চে বিশ্বের করপোরেট প্রধানদের সামনে এই বক্তৃতা ঝেড়ে ডি ক্যাপরিও রিসিপশনে এসে ট্রুডোর সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। টুডো অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছেন, ওই রিসিপশনে তিনি গিয়েছেন, কারণ ওখানে বুনো ও ডি ক্যাপরিওর মতো সেলিব্রেটিরা আমন্ত্রিত ছিলেন। অবশ্য ইউনুস সেন্টারের প্রেস রিলিজ আমাদের জানিয়েছে, জাস্টিন ট্রুডোর রিসিপশনে শিল্পী বুনো আর ডি ক্যাপরিও উপস্থিত ছিলেন আর বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাও করেছেন। আর কানাডার সিবিসি জানাচ্ছে, বুনো আর ডি ক্যাপরিও জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যাহ্নভোজে ঢু মেরে গেছেন।

ডাভোসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর যে রিসিপশনটাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছেন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস, কানাডা  সেটিকে মোটেও গুরুত্ব দেয়নি।  ডাভোস সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদিনকার যে কার্য বিবরণী প্রচার-প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রীর রিসিপশনের কোনও উল্লেখ ছিল না। এখনও নেই। এমনকি কানাডার মিডিয়াও এ নিয়ে কোনও সংবাদ প্রকাশ করেনি। কানাডা সরকারের এত বড় একটা আয়োজনের কথা সরকারি কর্মসূচিতে উল্লেখ থাকবে না কেন? যেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট মিটিংয়েরও উল্লেখ আছে। শুধু কি তাই, ডাভোসে জাস্টিন ট্রুডোর কর্মতৎপরতার অসংখ্য ছবি ফেসবুকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। কিন্তু রিসিপশনের কোনও ছবি তো পরের কথা, উল্লেখই করা হয়নি।  জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি মোহাম্মদ ইউনূস টুইট করে, মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে প্রচার করলেও  জাস্টিন ট্রুডো অসংখ্য ছবির ভীড়েও এই ছবিটিকে বিবেচনায় নেননি।

লেখক: টরন্টোর বাংলা পত্রিকা নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ