X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্য এখন...

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৪:৪৬আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৪:৫০

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাদের স্পৃহা হারিয়ে ফেলছে। ২০১৬ সালে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর মাত্র কয়েকমাস ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন হয়ত বা সে কারণেই তারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু সৌদি আরব আর তুরস্ক স্থলপথে সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর ব্যাপার খুবই উদগ্রীব। ন্যাটো বলেছে তারাও স্থলপথে আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করবে। রাশিয়া বলেছে পশ্চিমা সেনারা সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনবে।
সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহাম্মদ আল আমিরি বলেছেন তারা সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত তবে সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রদান করবে আমেরিকা। যুদ্ধের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে সিরিয়ার সরকারি সৈন্যদের অবস্থান ভালো। পূর্ব-থেকেই আলেপ্পো প্রদেশের অর্ধেক অংশ সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর অধিকারে ছিলো এখন সরকারি বাহিনী অবশিষ্ট অংশও দখলে নেওয়ার জন্য প্রচণ্ড আক্রমণ চালাচ্ছে।
আলেপ্পো প্রদেশ হচ্ছে তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত, সিরিয়ার বৃহত্তম প্রদেশ এবং বৃহত্তম শহর। আলেপ্পোর পরিপূর্ণ দখল বাশার বাহিনী হস্তগত করতে পারলে যুদ্ধের দৃশ্যপটেই পরিবর্তন আসবে। বাশারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে তুরস্ক ও সৌদি আরব সাহায্য পাঠাচ্ছে আলোপ্পো সীমান্ত দিয়ে। বর্তমানে আলেপ্পো সীমান্তে কুর্দিরাও যুদ্ধ করছে তুরস্কের বিরুদ্ধে। কুর্দী বিদ্রোহীরা এখন অবস্থান নিয়েছে আলেপ্পো সীমান্তে। তুর্কী বাহিনী কুর্দীদের প্রতিনিয়ত আক্রমণ করছে কারণ তাদের অভিযোগ তুরস্কের কুর্দী ওয়ার্কাস পার্টির সঙ্গে এ কুর্দীদের যোগাযোগ রয়েছে। তুর্কী ওয়ার্কাস পার্টি তুরস্কে নিষিদ্ধ। তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে আমেরিকা। সিরিয়া বাহিনী ইরাক সীমান্তে পালমিরা দখলের জন্য প্রচণ্ড লড়াই করছে। তুরস্ক ইরাকও জর্দান সীমান্তের সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিতে সক্ষম হলে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের অবসান হওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে উঠবে।
এখন আইএস প্রাণহীন হয়ে পড়েছে এবং স্থল যুদ্ধে সিরিয়ান সরকারি বাহিনী ও হিসবুল্লাহ যৌথ আক্রমণে আইএস বাহিনী দলে দলে জর্ডান ও ইরাকে পালিয়ে যাচ্ছে তবে আল-নূসরা ফ্রন্ট এখনও মোকাবেলায় রয়েছে। আল-নূসরার যুদ্ধারা সিরিয়ারই লোক।
মধ্যপ্রাচ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর (২০১৫) রাশিয়ার বিমান আক্রমণের পর থেকে দৃশ্যপট দ্রুত বদলেছে। প্রত্যেকটি বিদ্রোহ কবলিত এলাকায় সিরিয়া বাহিনী বিদ্রোহিদের বিতাড়িত করে দখল নিচ্ছে। আলেপ্পো, লাতাকিয়ার বিরাট এলাকা সিরিয়ান বাহিনীর দখলে। ইদলিব, হোমস, হামা ইত্যাদি এলাকায় অভিযানে রয়েছে সিরিয়া বাহিনী। এসব অভিযানে রাশিয়ার বিমান আক্রমণ ও হিজবুল্লাহ’র অংশগ্রহণে সিরিয়ান বাহিনী খুবই কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পেরেছে।
সিরিয়ার অবস্থা দৃষ্টে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে তুরস্ক এবং সৌদি আরব। সৌদি আরব তার দেশের উত্তরাঞ্চলে ২০ দেশের এক সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে। ‘উত্তরের ঝড়’ নামের এ মহড়ায় ২০টি দেশের নৌ,  বিমান ও স্থল সেনারা অংশগ্রহণ করছে। সৌদি ও তার মিত্ররা যে কোনও আক্রমণ প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত, প্রতিপক্ষকে এই বার্তা দেওয়ার জন্যই নাকি এ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও ৩৫টি দেশ নিয়ে সৌদি আরব একটা জোট গঠনের কথাও বলেছে। অথচ প্রকৃত অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে মহড়ায় অংশ গ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রকৃত অর্থে বড় দেশগুলোর কেউই কোনও যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করবে না।

তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। তুরস্ক আক্রান্ত হলে ন্যাটোর সমর্থন পাওয়া হয়তো সম্ভব। কিন্তু তুরস্কের অভিলাষ পূরণের জন্য ন্যাটো কখনও কোনও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না।

ইরাকে আইএস-এর আক্রমণ কিন্তু গাড়ি বোমার মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইরাক সরকার রাশিয়াকে তার সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া এখনও ইরাকে বিমান আক্রমণ শুরু করেনি। কারণ ইরাকের অবস্থা সিরিয়ার মতো ঘোলাটে নয়। সিরিয়ার চলছে গৃহযুদ্ধ। যে কয়েকটা গ্রুপ বাশারের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তারা সবাই সিরিয়ারই লোক। তাদেরকে গৃহযুদ্ধ থেকে নিরস্ত্র করতে পারলে মূল সমস্যাটা সমাধানের পথে আসবে। এর মধ্যে বিদ্রোহীদের সাথে একটা আলোচনার প্রক্রিয়াও চলছে।

আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী চেষ্টা করছেন সবাইকে আলোচনার টেবিলে বসানোর জন্য। ২৭ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ বিরতির একটা তারিখও নির্ধারিত হয়েছে। বিদ্রোহীদের অবস্থা খুব ভালো যাচ্ছে না। হয়ত শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা ২৫ ফেব্রুয়ারির আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে। এখনও বিদ্রোহীরা বলছে রাশিয়া বিমান আক্রমণ বন্ধ করলে তারা আলোচনায় বসবে। কিন্তু রাশিয়া ও বাশারের সরকার বলছে আক্রমণও চলবে, আলোচনাও চলবে। এখন স্থির হয়েছে আলোচনা আরম্ভ হলে বিমান আক্রমণ বন্ধ থাকবে। শুধু আইএস এবং আল নূসারার ওপর আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে এখন প্রাইমারিগুলো নিষ্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু কোনও প্রার্থীই মধ্যপ্রাচ্যের ওপর কোনও কথা এখনও বলেননি। সম্ভবতো আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে হতাশ। কারণ রাশিয়া যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করেছে এবং নিজে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা তাতে বাড়াবাড়ি করতে গেলে একটা বড় রকমের যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আমেরিকার অর্থনীতির এখন কোনও বড় যুদ্ধের খরচ সামাল দেওয়ার সামর্থ নেই। এখন আশা করা যায় মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা ভালো অবস্থার দিকে হয়ত উন্নিত হবে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ