X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিফটি-ফিফটি

হারুন উর রশীদ
০৮ মার্চ ২০১৬, ১৯:১২আপডেট : ০৮ মার্চ ২০১৬, ১৯:৪২

হারুন উর রশীদ এখন নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি দেখা হচ্ছে, ফিফটি-ফিফটি কনসেপ্টে। আমিও এর সঙ্গে একমত। আমিও চাই নারীদের জন্য অর্ধেক ছেড়ে দেওয়া হোক। নারীরা সেটা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন বলেই আমার মনে হয়। এখন শুধু শুরু করলেই হলো।  
কোথাও না কোথাও থেকে শুরুটা করতে হবে। শুরু করলে আমার ধারণা, ফিফটি-ফিফটি হতে সময় লাগবে না। শুধু আমরা পুরুষরা এটা দিতে প্রস্তুত কি না, সেটা দেখার বিষয়। কারণ এটা অনেকের কাছেই সিংহাসন হারানোর মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলা ট্রিবিউন একদিনের জন্য নারীদের হাতে পরিচালনার ভার ছেড়ে দিয়েছে। বছরে ৩৬৫ দিনে মাত্র একদিন। এই একদিনকে কেউ কেউ প্রতীকী মনে করতে পারেন। করছেনও হয়তোবা। কিন্তু প্রতীকী কোনও বিষয় দেখাতে এটা করা হয়নি। করা হয়েছে কাজটি শুরুর জন্য।  
আর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমাদের পুরুষ সহকর্মীদের অনেকেই প্রশ্ন করেছেন—তাহলে নারী দিবসে পুরুষ সহকর্মীদের কি ছুটি? আসলে তা নয় তারাও কাজ করবেন, তবে নেতৃত্বে থাকছেন নারী।
নারী দিবসে বাংলা ট্রিবিউনের সব সিদ্ধান্ত নারীরাই নিয়েছেন। সংবাদ, সম্পাদনা, কভারেজ, প্রশাসন, যোগাযোগ সবকিছু। আর এ সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবাই সহযোগিতা করেছেন। তবে অনভ্যস্ত বলতে একটি বিষয় আছে। সেটা কিন্তু একদিকের নয়, দুই দিকেরই। পুরুষ যেমন নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের শীর্ষে দেখতে পুরোপুরি অভ্যস্ত নয়, তেমনি নারীদের কেউ-কেউ অনভ্যস্ততার কারণে শীর্ষ পদে বসে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ইতস্তত করেন। আর এটা হলো চর্চার অভাব। তাই বিষয়টি চর্চার মধ্যে আনা জরুরি। চোখ সহনীয় করা দরকার। গ্রহণের মানসিকতা উদার করা দরকার।
বাংলা ট্রিবিউন নারী দিবসে নারীদের হাতে পরিচালনার ভার ছেড়ে দিয়েছে পুরোপুরি। এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, প্রধানবার্তা সম্পাদক, বার্তাসম্পাদক থেকে শুরু করে সব বিভাগীয় পদেই প্রধান হিসেবে নারীরাই কাজ করছেন। বিষয়টি এমন নয় যে, কাজ দেওয়া হয়েছে পদ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তারা তাদের পদের দায়িত্ব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো একদিনের জন্য কেন? সব সময় বা সারাবছরের জন্য কেন নয়? সেই প্রশ্নের জবাব নানা জন নানাভাবে দেবেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত জবাব হলো একদিনের জন্য নয়, নারীদের জন্য পৃথিবী উন্মুক্ত হোক সবসময়ের জন্য। বছরের সব দিনের জন্য নারীর জন্য সমতা নিশ্চিত করা হোক। এটাই আমার আহ্বান। বাংলা ট্রিবিউনও সেই নীতিতে বিশ্বাসী। সমতার নীতিতে বিশ্বাসী। এর ছোট্ট একটি পদক্ষেপ এটি।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী কর্মীদের একাংশ

এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা ট্রিবিউনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা মত দিয়েছেন। কেউ প্রশংসা করেছেন, কেউ বলেছেন, সাহসী সিদ্ধান্ত। আর ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান বাংলা ট্রিবিউনে এসে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত বলে প্রশংসা করেছেন।  তাদের এই প্রশংসা আমাদের উৎসাহিত করেছে।

আর বিপরীত মন্তব্যের মধ্যে আছে—‘‘খুবই হাস্যকর’,  ‘হা হা করপোরেট সম্মান। স্যরি, হাসি পাচ্ছে। কিচ্ছু করার নেই’, ‘এই একদিন কেন রে? এটাও পুরুষরা বুঝাতে চায়, নাও নারী, তোমায় দিলাম।’’

কিন্তু এই বিপরীত মন্তব্যগুলোতে আমরা নিরুৎসাহিত হইনি। আমরা বরং বোঝার চেষ্টা করছি, নারী-পুরুষ সমতার পথে গভীর ও স্থায়ী বাধাগুলো কোথায়? বুঝতে পারলাম একদিন করে কিছু হবে না। পুরুষ নারীকে কিছু দিয়ে বলছে, ‘তোমাকে দিলাম’—এটা দিয়ে হবে না। অথবা  নারীকে ভুলিয়ে রাখার এ এক নতুন কালচার! 

সুতরাং নারীকে সতর্ক হতে হবে। তাকে যেন নতুন কোনও ঘুমপড়ানী গান শোনান না হয়। সমতা নারীর জন্য কোনও দান বা উপহার নয়, এটা তার প্রাপ্য। কোন প্রতীকী নয় নারীকে সমতা-ক্ষমতা দিতে হবে স্থায়ীভাবে।  আর এটা নারীকে অর্জনও করতে হবে। আদায় করে নিতে হবে।

নারী দিবসে দায়িত্ব পাওয়ার পর বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক উদিসা ইসলাম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘কোনও আসনে কাউকে বসিয়ে তো নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে না, এটা জানা কথা। প্রতীকী যা কিছু তার উদ্দেশ্যই হলো, সম্ভাবনার বিষয়টি জানান দেওয়া। যে চেয়ারগুলোয় আমরা সাধারণত নারীদের দেখতে অভ্যস্ত নই, সেটা তারা নিজ গুণে অর্জন করবেন একদিন, সেই পথ তৈরিতে এসব প্রতীকী উদযাপন কাজের হতে পারে।’

উদিসা অনেক গভীর কথা বলেছেন। তিনি সাধারণভাবে বিষয়টিকে দেখেননি। আমি শুরুতেই বলেছিলাম যে, আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে, চর্চা করতে হবে। আর সেটাই শুরু করা দরকার। তাহলে গড়ে উঠবে সংস্কৃতি। সেই বিবেচনায় বাংলা ট্রিবিউনের এই নারী দিবসের একদিনের নারীর ক্ষমতায়ন অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের চোখকে অভ্যস্ত করতে অনেক কাজে দেবে। অভ্যস্ত হতে সহায়তা করবে।

যদি আমরা এই একদিনের জন্যই সারাদেশের সব প্রতিষ্ঠান নারীদের পরিচালনায় ছেড়ে দেই, তাহলে কেমন হবে। একদিনের জন্যই দেশটা নারীদের চালাতে দিননা! যারা এই উদ্যোগের সমালোচনা করছেন, তাদের বলি, আপনারাও এটা করুন। তারপর দেখবেন কিভাবে বাতাস ঘুরতে শুরু করে। চোখ অভ্যস্ত হতে শুরু করে। সংস্কৃতি কিভাবে পাল্টায়।

সংস্কৃতি পাল্টালে নারী নিজেই তার অধিকার বুঝে নেবে। সমতার দুস্তর ব্যবধান কমিয়ে আনবে। 

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ ধরনের অনেক উদ্যোগ আর কাজের মাধ্যমেই আমরা পাব প্ল্যানেট ফিফটি-ফিফটি।

লেখক: সাংবাদিক

ইমেইল:[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
মেটা-ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ
মেটা-ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো যুবকের
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো যুবকের
ড. ইউনূস মহাসমুদ্র, তিনি কেন পুকুর চুরি করবেন: দাবি আইনজীবীর
ড. ইউনূস মহাসমুদ্র, তিনি কেন পুকুর চুরি করবেন: দাবি আইনজীবীর
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ