X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক রাখাল বালকের কান্না

হারুন উর রশীদ
১৫ মার্চ ২০১৬, ১৭:৪৪আপডেট : ১৫ মার্চ ২০১৬, ১৮:৩৮

হারুন উর রশীদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগের আগে কেঁদেছেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারের সময় তিনি বলতে গেলে অঝোরেই কাঁদলেন। আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমি সব সময়ই দেশের স্বার্থেই কাজ করেছি।’
ড. আতিউর রহমানের এই কান্না হয়তো অনেককেই কাঁদিয়েছে। কারণ, এখানে আমার ‘ট্রাজেডি’র মূল সংজ্ঞাটি মনে পড়ে গেল। শক্তিমান বা জনপ্রিয় পাবলিক ফিগারের পতনকে ট্রাজেডি বলে—এমনই পড়েছি পাঠ্যপুস্তকে। আর এই শক্তিমানের পতনে সাধারণ মানুষও আবেগে দ্রবীভূত হন, সমব্যথী হন। এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
তবে প্রাচীন গ্রিসে ট্রাজেডির শুরুটা কিন্তু মানবিক পতন ছিল না। সেটা ছিল পশু জবাই করার শোকাবহ উৎসব। আর সেউ উৎসবে যে করুণ গান গাওয়া হতো, তাই ট্রাজেডির করুণ সুর। কিন্তু কালের বিবর্তনে ট্রাজেডি এখন মানবিক। মানুষের জীবন কেন্দ্রিক। আর সত্যিই শক্তিমান মানুষের পতনে সাধারণ মানুষ আলোড়িত হন আবেগে—বলেন, হায়!
একজন মিনহাজুল শাওন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চ্যানেল ২৪-এ দেওয়া ড. আতিউর রহমানের সাক্ষাৎকার দেখে আবেগে দুই চোখ ভরে উঠল। গত সাত বছরে একদিনও ছুটি নেননি তিনি! যে টাকা চুরি গেছে, তা তার সন্তানের মতো! তিনি গত সাত বছরে যত কাজ করেছেন, তা কেবল একজন পিতা তার সন্তানের মঙ্গলের যা করেন, তাই করেছেন! এই আতিউর রহমান কথা বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলছেন! কেবল একজন ভালো মানুষই এভাবে কাঁদতে পারেন! জানি না  উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে আর কত অপরাধীরা এভাবে পার পেয়ে যাবে...!’
আর আমি এতক্ষণ ট্রাজেডি নিয়ে যা বললাম, তার প্রমাণও হয়তো আপনারা পেলেন।
ড. আতিউর রহমান যে দেশের স্বার্থে সব সময় কাজ করেছেন, এটা আমরাও বিশ্বাস করেছিলাম। সরকারও বিশ্বাস করে। তাইতে তাকে রাখাল বালক থেকে গভর্নর করা হয়েছে। তাইতো তাকে এবার একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে তাকে সম্মান জানানো হয়েছে।  কিন্তু একটি কথা মনে করিয়ে দেই, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৪ ফেব্রুয়ারি তার একুশে পদক পাওয়ার আগে। আর এই হ্যাক হওয়ার ঘটনা তিনি তখনও গোপন রেখেছিলেন। ফিলিপাইনের একটি সংবাদপত্রের কল্যাণে একমাস পর ৮ মার্চ তা জানা গেলেও তিনি ছিলেন চুপ। এই রিজার্ভ ডাকাতি নিয়ে যখন দেশজুড়ে হইচই, তখনও তিনি তার প্রেসউইং-এর মাধ্যমে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপরও দেশবাসী বা সরকারকে কিছু না জানিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি পাড়ি দেন ভারতে। কোনও এক পূর্ব-নির্ধারিত সেমিনারে পেপার পড়তে! বিষয়টি নিরোর বাঁশির মতো। রোম যখন পোড়ে নিরো তখন বাঁশি বাজান। আর আমরা দেখলাম, একজন বিশ্বাস ভঙ্গকারী গভর্নরকে। যিন রাখাল বালক থেকে গভর্নর হয়েছিলেন।

ড. আতিউর রহমান এক মোক্ষম ব্যাখ্যা দিয়েছেন সোমবার বিকেলে ভারত থেকে দেশে ফেরার পর। তবে তার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কৃপা পেতে চেষ্টা করেছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। কিন্তু পারেননি। বুধবার সকালে পেরেছেন পদত্যাগপত্র জমা দিতে। তিনি আগে হয়তো ভাবতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগপত্রই চান। কোনও কান্না বা ব্যাখ্যা নয়। নয় কোনও অজুহাত। কারণ ড. আতিউর রহমান যা করেছেন, তা প্রকাশ্য এবং সব্যাখ্যেয়।

তারপরও পদত্যাগের আগে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বললেন, ‘আমি টাকা উদ্ধারের আশায় বিষয়টি গোপন রেখেছিলাম, প্রকাশিত হলে এই কিছু টাকাও উদ্ধার করা যেত যেত না।’ হায়রে ড. আতিউর রহমান! সারাদুনিয়া জানে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ১৯ মিলিয়ন ডলার রক্ষা পেয়েছে হ্যাকারদের বানান ভুলের কারণে। আর আপনি তখনও কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছেন! 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে পোলিশ নাগরিক গ্রেফতার
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে পোলিশ নাগরিক গ্রেফতার
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ