X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কালের স্পর্ধা নেই বঙ্গবন্ধুকে বিস্মৃত করার

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
১৭ মার্চ ২০১৬, ১১:১১আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৬, ১১:৪০

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী ফিদেল কাস্ত্রো প্রথম সাক্ষাতে বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু আপনাকে দেখেছি’। এটা ছিলো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কাস্ত্রো'র মূল্যায়ন। ফিদেল কাস্ত্রো ছোটো-খাটো কেউ নন। তিনিও ছিলেন বিশ্বের সেরা বিপ্লবীদের একজন। প্রথম সাক্ষাতের সময় কাস্ত্রো নাকি বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ব্যাপী কাস্ত্রো পাল্লা দিয়ে চলেছেন। কোনও ষড়যন্ত্রই কাস্ত্রোকে নিঃশেষ করতে পারেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আত্মবিশ্বাসী সহজ সরল মানুষ, সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিলো পাক-মার্কিন চক্র। বঙ্গবন্ধু নির্মম মৃত্যুর পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছিলো। কাটার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন। তিনি নিউইয়র্কের এক প্রাইমারিতে বক্তৃতায় বলেছিলেন- তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সিআইএ-কে প্রতিরোধ করবেন আলেন্দে এবং শেখ মুজিবের মতো আর কাউকেও যেন হত্যা করতে না পারে।
১৯৭৪ সালে ভুট্টোকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ করাই ঠিক হয়নি। বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী লোক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিমান বন্দরে এবং শহরমূখী সড়কে একত্রিত হয়েছিলো। প্রচুর লোক সমাগম দেখে ভুট্টো মনে করেছিলেন তিনি বঙ্গবিজয় করে ফেলেছেন। পাকিস্তানে গিয়ে তিনি গভীর ষড়যন্ত্র পাকাতে দ্বিধা করলেন না আর ভুট্টোর সফরে উৎসাহিত হয়েছিলো বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের এজেন্টরা। সফরের সময় ভুট্টো অপমানজনক কথাবার্তাও বললেন। বাংলাদেশ যখন দু-দেশের সম্পদ বাটোয়ারা সম্পর্কে প্রশ্ন উপস্থাপন করলেন তখন ভুট্টো বললেন যে তিনি অর্থনীতি বিভাগের কোনও লোক সঙ্গে আনেননি এবং তিনি চেক বইও ফেলে এসেছেন। তিনি চিন্তাও করেননি যে বাংলাদেশ এ বিষয়টা উপস্থাপন করবেন। ভুট্টো কোনওভাবেই রাজী হচ্ছিলেন না সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ভুট্টো যদি জাতীয় স্মৃতিসৌধে না যান তবে তাকে দু’ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হবে কারণ বাংলাদেশ তার সফর বাতিল করে দেবে। অপমানিত হওয়ার ভয়ে কিছুটা অপমানিত হয়ে তিনি সাভার সৃতিসৌধে গিয়েছিলেন।সব কিছুরই প্রতিশোধ নিলেন ভুট্টো।
জেনারেল রাও ফরমান আলী তার বইয়ে বলেছেন- পাকিস্তানে ভুট্টোই হচ্ছে পাকা ষড়যন্ত্রকারী। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বে কাশ্মীরে অস্ত্রশস্ত্রসহ মোজাহিদ ঢুকানো হয়েছিলো ভুট্টোর পরামর্শে আর যুদ্ধও বাদানো হয়েছিলো তার পরামর্শে। এ সবই নাকি ভুট্টো করেছিলেন আইয়ুব খাঁনকে দুর্বল করে তাড়াবার ষড়যন্ত্র হিসাবে। আমেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক স্থাপনে দূতীয়ালী করেছিলেন ভূট্টো। সে ফাঁকে তিনি আমেরিকার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রও পাকিয়ে ছিলেন। সফলও হয়েছিলেন। শুধু বঙ্গবন্ধু নন স্বাধীনতার অন্য স্থপতিদেরও জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের দেশিয় এজেন্টরা। অবশ্য ভুট্টোর পরিণতিও ভাল হয়নি। আমেরিকাই তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। জেনারেল জিয়াউল হককে দিয়ে। লাহোরের মসি গেইটে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগতপত্র জনসভায় পাঠ করে শুনানো আর ঘৃণাভরে তা সমাবেশে টুকরা টুকরা করে ছিড়ে ফেলাকে আমেরিকা তার জাতীয় মর্যাদার অবমাননা বলেই স্থির করে নিয়েছিলো। কিসিঞ্জার সেদিন রাতেই ভুট্টোকে নিক্সনের পত্র জনসভায় পাঠ করা ও জনসভায় পাঠ করে ছিড়ে ফেলার পরিণতি সম্পর্কে হুশিয়ার করেছিলেন। ভুট্টো সেই পরিণতিও জীবন দিয়ে ভোগ করে ছিলেন। যাক বলছিলাম ভুট্টোর ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ সফরের কথা। সেই সময়কার পর রাষ্ট্রসচির ফকরুদ্দীন আহাম্মদ অবসরে গিয়ে ‘ক্রিটিক্যাল টাইমস’ নামে একখানা স্মৃতিচারণ ও আত্মজীবনী মূলক বই লিখেছেন। তাতেও দেখি তিনি ভুট্টোর এ সফরে উৎসাহবোধ করেননি।

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছিলো আওয়ামী লীগ তাকে সফলভাবে আত্মস্থ করতে পেরেছিলো এবং আওয়ামী লীগের সে সফলতার শেষ পরিণতিই ছিলো সফল মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। বঙ্গবন্ধু খুবই ধীর স্থির প্রকৃতির লোক ছিলেন। বাইরে দেখতে বঙ্গবন্ধুকে হয়ত কেউ চঞ্চল বলেও অবহিত করতে পারেন কিন্তু ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন রোজগার্ডেনে যেদিন আওয়ামী লীগের জন্ম হয় সেদিন থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্য রাত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কর্মকৌশল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তার প্রতিটি কৌশলই ছিলো কালজয়ী এবং অভ্রান্ত। দেশ  স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হলেন। এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের এক ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন। পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা ও প্রণয়ন করেছিলেন। কৃষি ধ্বংস হওয়ায় ১৯৭২ সালে ৪০ লক্ষ্য টন খাদ্য ঘাটতি হয়। অথচ এ খাদ্য ঘাটতির মাঝে ৯০ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দী, সোয়া লাখ ভারতীয় সৈন্য, ৩৭ হাজার বন্দী রাজাকার ও দালালের খাদ্য সরবরাহের কঠিন দায়িত্বও বঙ্গবন্ধুর সরকারকে পালন করতে হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সমগ্র বাংলাদেশে ৪৩ লক্ষ্য ঘর বাড়ি, ১৯ হাজার গ্রাম্য-হাট বাজার, ৩ হাজার অফিস ভবন, ৬ হাজার প্রাইমারি স্কুল ও মাদ্রাসা, ৯  শত হাই স্কুল ও কলেজ পুড়িয়ে দিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০০ শত রেল সেতু ধ্বংস হয়েছিলো আর ২০০ মাইল রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। দেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পাক সেনারা মাইন পোতার কারণে বন্দর দু’টাই অচল ছিলো। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বিধ্বস্ত ছিলো। মুদ্রা ব্যবস্থা প্রবর্তন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠন, তফসিলি ব্যাংক ও বীমা পুনগঠন ছিলো তখন সরকারের জরুরি কাজ। যুদ্ধের পরবর্তী কাজগুলো প্রায় যুদ্ধের মতোই ছিলো। আর তখন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন ছিলো খুবই বেশি।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ