X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪০ দিন পর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ!

প্রভাষ আমিন
১৮ মার্চ ২০১৬, ১৬:২১আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৬, ১৬:৪২

প্রভাষ আমিন বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি। তাদের আবেগের কোনও মাথা-মুণ্ডু নেই। কখন কাকে মাথায় তুলবে, কখন কাকে আছাড় দেবে, ঠিক নেই। মোহাম্মদ আশরাফুলের ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার খবরে চারিদিকে ছিঃ-ছিক্কার পড়ে গেল। যেই তিনি চোখের জলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন, বেশির ভাগ মানুষই তাকে ক্ষমা করে দিলেন। বলতে লাগলেন, ‘বাচ্চা মানুষ একটা ভুল করেছে। সেই ভুল তো আবার স্বীকারও করেছে। কজনই বা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায়।’ তাতে মনে হতে পারে, ভুল স্বীকার করলেই বুঝি বাঙালি ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু এ ধারণাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে মাহফুজ আনামের ক্ষেত্রে। ওয়ান-ইলাভেনের সময় অনেকেই ভুল, অপরাধ বা বাড়াবাড়ি করেছেন। কেউই তা স্বীকার করেননি। কিন্তু ভুল স্বীকার করেই যেন বিপাকে পড়েছেন মাহফুজ আনাম। এখন তিনি গোটা দেশ ঘুরে-ঘুরে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের রিজার্ভ লুটের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ড. আতিউর রহমান যখন পূর্ব নির্ধারিত কনফারেন্সে নয়াদিল্লি চলে গেলেন, তখন তার অনুপস্থিতিতেই তার মুণ্ডুপাতের মচ্ছব হলো, ‘তিনি কেন জানালেন না। তিনি কেন এত বড় ঘটনা ফেলে দিল্লি গেলেন। তার কাছে দেশের রিজার্ভের চেয়ে সেমিনার বড় হলো!’ ইত্যাদি-ইত্যাদি সমালোচনার ঝড়। পারলে নয়াদিল্লিতেই তার বরখাস্তের চিঠি পাঠিয়ে দেন কেউ-কেউ। এমনকি দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ-কেউ ড. আতিউর রহমানের অতীত নিয়েও টানাটানি করলেন, কথা তুললেন জাত-পাত নিয়ে। সেই ড. আতিউর রহমানই যখন চোখের জলে পদত্যাগের কথা বললেন, উল্টে গেল গণেশ। গণমাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমে এখন সহানুভূতির বন্যা, ‘পদত্যাগ করার মতো এমন সৎসাহস কজনের আছে?’ দুদিন আগে যারা ড. আতিউর রহমানকে প্রায় চোর বলে ফেলছিলেন, তারাই এখন তাকে মহাপুরুষ বানাতে চাইছেন।

তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। শেষ হলে জানা যাবে, রিজার্ভ লোপাটের ঘটনায় কারা জড়িত। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর সঙ্গে ড. আতিউর রহমানের দূরতম কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। তার সততা নিয়ে, দেশপ্রেম নিয়ে, দূরদর্শিতা নিয়ে আমার মধ্যে কোনও সংশয় নেই। ড. আতিউর রহমান যুগ-যুগ ধরে অসহায়, দরিদ্র মানুষের সামনে উদাহরণ হয়ে বেঁচে থাকবেন। গ্রামের ছেলেদের আমি সবসময় ড. আতিউরের উদাহরণ দেই। রাখালবালক থেকে যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়েছেন। তিনি গভর্নর হওয়ার পর অন্যদের মতো প্রচলিত ধারায় চিন্তা না করে আউট অব দ্য বক্স ভেবেছেন। তিনি ব্যাংকিং ব্যাবস্থাকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। ব্যাংকের দরজা দিয়ে যারা ঢোকার সাহস পেতেন না, এমন অনেক প্রান্তজন এখন ব্যাংকের সম্মানিত গ্রাহক। মোবাইল ব্যাংকিং দিয়ে তিনি বদলে দিয়েছেন ব্যাংকিংয়ের প্রচলিত ধারণা। একদম মাটি থেকে উঠে আসা একজন যখন রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে সুললিত কণ্ঠে প্রমিত উচ্চারণে মনোমুগ্ধকর কথা বলেন, আমরা অভিভূত হয়ে যাই। এমন একজন গভর্নর আমাদের আছেন ভেবে আমরা গর্বিত হই।

কিন্তু তারপরও তার পদত্যাগে আমি কোনও মহত্ব খুঁজে পাইনি। তিনি দাবি করেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আসলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ঘটনার ৪০ দিন পর স্বেচ্ছায় পদত্যাগের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। নয়াদিল্লি থেকে ফিরে তিনি চাকরি বাঁচাতে অর্থমন্ত্রীর বাসায় ছুটে গেছেন। অর্থমন্ত্রী যখন মুখের ওপর বলে দিয়েছেন, আপনি গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো চলবে, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছেন, পাননি। ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মনোভাব তিনি বুঝে গেছেন। নয়াদিল্লি যাওয়ার আগে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কিছু বলেননি। বরং এ বিষয়ে প্রশ্ন করে সাংবাদিকরা তার ঝাড়ি খেয়েছেন। কিন্তু দিল্লি গিয়ে তিনি ঠিকই মুখ খুলেছেন। নিজে বাঁচতে টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। আমার বিবেচনায় গোটা ঘটনায় তার সবচেয়ে বড় অপরাধ প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনা, মারাত্মকভাবে চেইন অব কমান্ড লঙ্ঘন করা। প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা পদত্যাগপত্রে ড. আতিউর রহমান লিখেছেন, ‘বিষয়টি এত জটিল ও অজানা যে, অনেকটা ভূমিকম্পের মতো মনে হচ্ছিল। কোন দিকে এই আক্রমণের ঢেউ আসবে, কখন আসবে, তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এই সাইবার আক্রমণটি জঙ্গি আক্রমণের মতোই মনে হচ্ছিল।’ পদত্যাগের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি ‘পাজলড’ হয়ে গিয়েছিলেন। এখানেই তার ব্যর্থতা আর অদক্ষতা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হয়, পাজলড হলে চলে না। বুঝে উঠতে পারা না পারাতেই দক্ষতা আর অদক্ষতার পার্থক্য। ড. আতিউর রহমান প্রমাণ করেছেন; তিনি সৎ কিন্তু দক্ষ নন।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
কুড়িয়ে পাওয়া সাড়ে চার লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইকচালক
কুড়িয়ে পাওয়া সাড়ে চার লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইকচালক
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং দ্বৈরথ
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং দ্বৈরথ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ